কাজী নজরুল ইসলাম
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্র সমসাময়িক, এক অসম্ভবের সম্ভাবনার যুগে সাহিত্য আর দ্রোহকে সঙ্গী করে তীক্ষ্ম, শাণিত, ঝরঝরে ভাষাশৈলী এবং প্রবল লক্ষ্যভেদী সাহিত্য নিয়ে দামাল, বেপরোয়া, ক্ষুব্ধ, নজরুলের (১৮৯৯-১৯৭৬) আবির্ভাব। নজরুল আজীবন অসত্য আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বাঁশি বাজিয়েছেন। আশৈশব অভাব অনটন—লেটো দলের বাজিয়ে, রুটির কারখানার মজুরের কাজ করে পেরিয়েছেন শৈশব থেকে কৈশোর, প্রবেশিকা পরীক্ষার আগে লেখাপড়ায় ইতি টেনে প্রথম মহাযুদ্ধে যোগদান—করাচির সেনা ছাউনিতে এই বাউণ্ডুলে লিখে ফেললেন তাঁর ‘বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী’। যুদ্ধ ফেরত নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা হাবিলদার কবি থেকে ‘বিদ্রোহী কবি’র যাত্রা সম্পূর্ণ করলো। ‘সাপ্তাহিক লাঙল’, ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব হাতে এলে তা আর নিছক সাহিত্য পত্রিকা নয় এক ‘প্রলয়োল্লাস’ ঝড়ে পরিণত হয়। রাজদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে হয়, এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড, নিষিদ্ধ হল ধূমকেতু পত্রিকা, নিষিদ্ধ হল তাঁর কবিতা। ততদিনে নজরুল লিখে ফেলেছেন ‘দোলনচাঁপা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, ‘প্রলয়শিখা’… আবার ছোটদের কবিতায় এনেছেন ছন্দের নান্দনিকতা। নজরুলের সাহিত্য সামাজিক শোষণ-নিপীড়ন, ঔপনিবেশিক শাসন, সমকালীন রাজনীতির সঙ্গে সাম্যবাদের ধারণাকে প্রবলভাবে স্থান দিয়েছে—নজরুলের সাহিত্য নিছক সাহিত্য নয়, সমকালীন-সর্বকালীন রাজনীতির ক্রান্তিকালও বটে।