ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৭৮৭-১৮৪৮) লেখক, সাংবাদিক, কলকাতার রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের অন্যতম নেতা। রামমোহনের সঙ্গে একযোগে ১৮২১ খ্রীষ্টাব্দে ভবানীচরণ ‘সংবাদ কৌমুদী’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। ইংরাজি শিক্ষিত নব্য বঙ্গসমাজে পত্রিকাটির ব্যাপক ভূমিকা ছিল। কিন্তু সতীদাহ-নিবারণ সম্পর্কিত বিষয়ে রামমোহনের সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় মাত্র ১৩টি সংখ্যা প্রকাশের পর ভবানীচরণ ‘সম্বাদ-কৌমুদী’র সংশ্রব ত্যাগ করেন এবং প্রকাশ করেন নিজ সম্পাদিত পত্রিকা ‘সমাচার চন্দ্রিকা’। রক্ষণশীল ভবানীচরণ সম্পাদিত ‘সমাচার চন্দ্রিকা’র প্রধান উদ্দেশ্য ছিল রামমোহনের সতীদাহ নিবারণ বিষয়ক মতামতের বিরোধিতা করা। তবে এ ছাড়াও নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে প্রবন্ধাদি সমাচার চন্দ্রিকায় প্রকাশিত হত। উল্লেখ করা যেতে পারে সতীদাহ নিবারণের বিরুদ্ধে ইংলণ্ডে আপীল করার উদ্দেশ্যে যে ‘ধর্মসভা’ গঠিত হয়, ভবানীচরণ ছিলেন তার সম্পাদক। ‘সমাচার চন্দ্রিকা’র পৃষ্ঠায় দক্ষ সাংবাদিক ও সম্পাদক হিসাবে স্বাক্ষর রাখলেও সে যুগের ইতিহাসে ভবানীচরণ রক্ষণশীল সমাজের প্রতিভূ এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির পুরোধা হিসাবেই চিহ্নিত।
নিজস্ব মতাদর্শকে প্রকাশ করতে এবং প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে ভবানীচরণ ব্যঙ্গাত্মক রচনার আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে ‘সমাচার চন্দ্রিকায়’ ১৮২১-২২ নাগাদ ‘বাবুর উপাখ্যান’, ‘শৌকীন বাবু’, ‘বৃদ্ধের বিবাহ’, ‘ব্রাহ্মণ পণ্ডিত’, ‘বৈষ্ণব ও বৈদ্য সম্বাদ’ প্রভৃতি যে বিদ্রুপ ও হাস্যরসাত্মক ছদ্মনামা রচনাগুলি প্রকাশিত হয়েছিল, গবেষকগণ সেগুলিকে ভবানীচরণের রচনা বলে অনুমান করেছে। এই ব্যঙ্গাত্মক রচনাগুলিরই পরিণত রসরূপ ভবানীচরণের ‘কলিকাতা কমলালয়’, ‘নববাবু বিলাস’, ‘নববিবি বিলাস’ প্রভৃতি রচনায় দেখা গেছে। সমাজ সন্দর্শনমূলক এই রসরচনার ধারাই ক্রমপরিণত হয়েছে টেকচাঁদ ও হুতোমের নকসায়।