চিত্তরঞ্জন দাশ
ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ (৫ নভেম্বর, ১৮৭০- ১৬ জুন ১৯২৫) এক অবিস্বরণীয় নাম। অসাম্প্রদায়িক বাঙলার প্রবাদপুরুষ চিত্তরঞ্জন দাশ পেশায় আইনজীবী হলেও স্বাধীনতা সংগ্ৰামে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯০৩ সালে প্রমথ মিত্র ও চিত্তরঞ্জন দাশ অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন, প্রতিষ্ঠাকাল থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি এই সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন। বহুবার কারাবাস করেছেন আবার বহু রাজনৈতিক বন্দীকে অসাধারণ মামলা পরিচালনার বলে মুক্ত করেছেন। ১৯০৬ সালে কংগ্রেসে যোগদান করেন। ১৯২০ সালে গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের সময় আইনসভা বর্জন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও কিছুদিন পর তিনি নিজেই অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব কংগ্রেস অধিবেশনে উত্থাপন করেন এবং ব্যারিস্টারি পেশা ত্যাগ করে পুরোপুরি দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯২৩ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে মতিলাল নেহেরুর সহযোগিতায় স্বরাজ্য দল গঠন করেন। চিত্তরঞ্জন দাস তাঁর স্বল্প রাজনৈতিক জীবনে যেভাবে সারা দেশে প্রভাব ফেলে দিয়েছিলেন তা তাঁর আগের অন্য কোন নেতার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আর সর্বভারতীয় স্তরে কোন নেতার পক্ষে এমন প্রভাব ফেলাও সম্ভব হয়নি।
বাংলা সাহিত্যের এক জন একনিষ্ঠ সাধক ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ, রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে হারিয়ে গিয়েছে তাঁর কবি পরিচয়। তাঁর স্বপ্লকালীন রাজনৈতিক জীবনই তাঁর জীবনের অন্য সব পরিচয় আড়াল করে দিয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সাহিত্যচর্চায় মগ্ন ছিলেন। রাজনীতির ব্যস্ত সময়েও তিনি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করেছেন। সে সময়ের বিখ্যাত মাসিক পত্রিকা ‘নারায়ণ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন চিত্তরঞ্জন। মোট পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর লেখা প্রথম প্রকাশিত হয় ‘নব্যভারত’ পত্রিকায়। তাছাড়াও তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হত ‘নির্মাল্য’ ও ‘মানসী’ পত্রিকাতেও। তাঁর লেখা প্রথম কবিতা ‘বন্দী’। তাঁর প্রথম কাব্য গ্ৰন্থ ‘মালঞ্চ’ ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯১১ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্ৰন্থ ‘মালা’, তৃতীয় কাব্যগ্ৰন্থ ‘সাগর সঙ্গীত’, ১৯১৪ সালে প্রকাশিত হয় চতুর্থ কাব্যগ্ৰন্থ ‘অন্তর্যামী’। তাঁর পঞ্চম তথা শেষ কাব্যগ্ৰন্থ ‘কিশোর কিশোরী’।