কামিনী রায়
হেমচন্দ্র আর রবীন্দ্রনাথের যুগের সন্ধিক্ষণে বাংলা সাহিত্যে কামিনী রায়ের আবির্ভাব। পিতা চন্ডীচরণ সেনের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর ভর্তি হন স্কুলে। বেথুন স্কুল থেকে সসস্মানে উত্তীর্ণ হন এন্ট্র্যান্স এবং এফ. এ. পরীক্ষায়। ১৮৮৬ সালে বেথুন কলেজ থেকে ভারতের প্রথম নারী হিসেবে সংস্কৃতে অর্জন করেন স্নাতক ডিগ্রি। কর্মজীবনে সামলেছেন বেথুন স্কুল এবং কলেজের অধ্যাপনার দায়িত্ব। ছিলেন নারী শ্রম তদন্ত কমিশনের সদস্য। শৈশবে মায়ের কাছে গোপনে পাওয়া বর্ণমালা শিক্ষা এবং পিতামহের কাছে পাওয়া কবিতা ও স্তোত্র আবৃত্তি শিক্ষাই তাঁর সাহিত্য বিশেষত কবিতার প্রতি তাঁর আকর্ষণের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। মাত্র আট বছর বয়স থেকে তাঁর কবিতা লেখা শুরু। পঁচিশ বছর বয়সে ১৮৮৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আলো ও ছায়া’। এরপর একে একে লিখেছেন ‘নির্মাল্য’, ‘পৌরাণিকী’, ‘মাল্য ও নির্মাল্য’, ‘অশোক সংগীত’ প্রভৃতির মতো আরও বেশকিছু কাব্যগ্রন্থ। এক সময় লিখতেন ‘জনৈক বঙ্গমহিলা’ ছদ্মনামে। তাঁর কবিতাগুলি জীবনে সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ-বেদনার সহজ সরল এবং সাবলীল প্রকাশ। স্বামী কেদারনাথ রায়ের মৃত্যু পর থেকে তাঁর জীবনের মৃত্যু বিচ্ছেদের শোকমিছিল চলেছে বহুকাল, যা তাঁর কবিতায় প্রতিফলিত। শিশুদের জন্য লিখেছিলেন ‘গুঞ্জন’ কবিতা সংগ্রহ। তাঁর নারীবাদী চিন্তার ছাপও দেখা যায় ‘বালিকা শিক্ষার আদর্শ’ প্রভৃতি বেশকিছু প্রবন্ধে। সাহিত্য সম্মাননা হিসেবে পেয়েছেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ‘জগত্তারিণী পদক’। হয়েছেন বঙ্গীয় লিটেরারি কনফারেন্সের সভাপতি এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহ-সভাপতি। ১৯৩৩ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর কামিনী রায়ের কাব্য প্রবাহ চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যায়।