সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
রবীন্দ্র বৃত্তে থেকেও যাঁদের কাব্য ছিল স্বতন্ত্র, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তাঁদের অন্যতম। জন্ম কলকাতায় হলেও শৈশব কেটেছে তাঁর কাশীতে। কাশীর থিওসফিক্যাল হাই স্কুলেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার সুত্রপাত। পরে কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি থেকে এন্ট্র্যান্স পাশ এবং স্কটিশ চার্চ থেকে আই. এ. এবং বি.এ. স্নাতক ডিগ্রি সহ পাশ করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরাজিতে স্নাতকত্তোর বিভাগে ভর্তি হন। ইংরাজির পাঠ আসমাপ্ত রেখেই ল'কলেজে আইনশাস্ত্র পড়া শুরু করেও রেখে দেন অসমাপ্ত। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় পিতার আইন ফার্মে শিক্ষানবিস হিসেবে, পরে কিছুদিন কাজ করেছেন বীমা কোম্পানিতেও। এরপর ১৯২৯ সালে রবীন্দ্রনাথ এবং সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ ও পরবর্তীতে করেন একাকী ইউরোপ ভ্রমণ। ১৯৩১ সালে তাঁর সম্পাদনায় ‘পরিচয়’ পত্রিকার যাত্রারম্ভ। সামলেছেন ‘দ্য স্টেটসম্যান’ এবং শরৎ বসুর ‘লিটেরারি’ কাগজের দায়িত্বও। অধ্যাপনা করেছেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে। অধ্যাপনা এবং পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি চালিয়েছিলেন তাঁর কাব্যসাধনা। ১৯২৮ সালে ‘কুক্কুট’ তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা। এরপর একে একে প্রকাশ পায় ‘তন্বী’, ‘অর্কেস্ট্রা’, ‘ক্রন্দসী’, ‘সংবর্ত’ প্রভৃতির মতো কাব্যগ্রন্থগুলি। প্রেম, রোম্যান্টিকতাই তাঁর কাব্যের মূল উপজীব্য হলেও তার সঙ্গে মিশেছে সমকালীন এক চিরন্তনী আবেগ। কাব্য ছাড়াও তিনি ‘স্বগত’ এবং ‘কুলায় ও কালপুরুষ’ নামে লিখেছেন দুটি প্রবন্ধগ্রন্থ এবং ‘প্রতিধ্বনি’ নামক একটি অনুবাদ গ্রন্থ। বিবিধ বিষয় বিদগ্ধ সুধীন্দ্রনাথের ভাষার প্রতিও ছিল অসামান্য পান্ডিত্য, যা তাঁর কাব্যের শব্দ চয়ন এবং ছন্দের কারুকাজে উজ্জ্বল সাক্ষী। ১৯৬০ সালে বিশ শতকের এই বিদগ্ধ কাব্যশিল্পীর কাব্যপ্রবাহ চিরকালের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়।