উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (৬ জুন, ১৮৭৯—৪ এপ্রিল, ১৯৫০) উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট চরিত্র। ১৯০৭ সালে বিখ্যাত আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় আন্দামানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত বিপ্লবীদের জন্য সেলুলার জেল যেন ওত পেতে ছিল, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে অন্যতম। অল্প বয়সে সন্ন্যাস নিয়ে দেশের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান, পরে ফিরে এসে চন্দননগরের ডুপ্লে কলেজ থেকে এফ.এ. পাশ করে কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন কিন্তু ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য পড়া শেষ করতে পারেন নি। কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিলেন তিনি। কলকাতার ডাফ কলেজে বি.এ. পাঠরত অবস্থায় যুগান্তর দলের সংস্পর্শে আসেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় তিনি ‘যুগান্তর’ ও ‘বন্দে মাতরম’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯০৭ সালে বিখ্যাত ‘আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা’য় মানিকতলার বাগানবাড়ী থেকে অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত, যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, কানাইলাল দত্ত, দেবব্রত বসু, হৃষিকেশ কাঞ্জিলাল ও আরও অনেক বিপ্লবীর সঙ্গে উপেন্দ্রনাথও ধরা পড়েন। ১৯০৯ সালে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। সেলুলার জেলে তাঁর দীর্ঘ কারাজীবন নিয়ে লেখেন ‘নির্বাসিতের আত্মকথা’। মুক্তি লাভের পরে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ‘নারায়ণ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন, বারীন্দ্রকুমার ঘোষের সঙ্গে ‘বিজলী’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। এর পর তিনি নিজ সম্পাদনায় প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক ‘আত্মশক্তি’। দেশ বিরোধী লেখার জন্য ব্রিটিশ সরকার আবার উপেন্দ্রনাথকে ৩ বছরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল। ১৯২৬-এ মুক্তি পেয়ে ফরোয়ার্ড, লিবার্টি, অমৃতবাজার পত্রিকায় সাংবাদিকতার কাজ করেন। ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে আমৃত্যু তিনি দৈনিক বসুমতী পত্রিকার সম্পাদনার কাজে যুক্ত থেকেছেন। শেষ জীবনে হিন্দু মহাসভার সাথে যুক্ত হন ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক হিন্দু মহাসভার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
© 2022 All Rights Reserved by ketab-e | This website is owned by Bestread Publications and Digital Services Private Limited. Design By Mindmine and Developed By Technophilix.