ক্ষিতিমোহন সেন তাঁর ‘বাংলার সাধনা’ (১৯৪৫) গ্রন্থে বাংলাদেশের সুদীর্ঘকালের সাধক ও সাধনার ধারা ও তার ভিন্ন ভিন্ন শাখায় প্রশাখায় অনুসরণ করেছেন।
নদীর পলিমাটিতে তৈরি এই বাংলাদেশ। যার উর্বর ভূমিতে বীজমাত্রই সজীব হয়ে ওঠে। তাই এখানে প্রাণধর্মের একটি বিশেষ দাবি আছে। পলিমাটির দেশ বলেই এখানকার ভূমি কঠিন নয়। তাই পুরাতন মন্দির প্রাসাদ প্রভৃতির গুরুভার এখানে সয় না। সেই সব গুরুভার এখানে ধীরে ধীরে তলিয়ে যায়। বাংলাদেশের তাই তীর্থ প্রভৃতি বেশি নেই। পুরাতনের ঐশ্বর্য তার খুবই কম।
বিধাতার আশীর্বাদে বাংলাদেশ পুরাতনের ভার মুক্ত। তবে জীবনসাধনার দায় বিধাতা তাকে বেশি করেই দিয়েছেন।
মানবপন্থী বাংলাদেশ প্রাচীনকালেও ভারতের শাস্ত্রপন্থী সমাজ নেতাদের কাছে নিন্দনীয় ছিল। তীর্থযাত্রা ছাড়া এখানে এলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হত। বাংলাদেশ চিরদিনই শাস্ত্রগত-সংস্কারমুক্ত। বৌদ্ধ জৈন প্রভৃতি মত এই দেশে বা তার আশেপাশে চিরদিন প্রবল ছিল। তখন মগধও বাংলার সঙ্গেই ছিল একঘরে অর্থাৎ স্বাধীন হয়ে। বাংলার বৈষ্ণব ও বাউলদের মধ্যেও দেখা যায় সেই স্বাধীনতা। তাদের সাহিত্যে ও গানে অলঙ্কার বা শাস্ত্রের গুরুভার তারা কখনও সইতে পারেনি। শাস্ত্রের বিপুল ভার নেই অথচ কি গভীর কি উদার তার ব্যঞ্জনা। এদেশের কীর্তনে-বাউল- ভাটিয়ালি প্রভৃতি গানে খুব সাদা কথায় এমন অপূর্ব মানবীয় ভাব ও রস সাধকেরা ফুটিয়ে তুলে গেছেন যে কোথাও তার তল মেলে না, কূল মেলে না। অপার মানবীয় ভারের কোথায় সীমা কোথায় শেষ? প্রাণের মতোই তা সর্বভারমুক্ত ও সহজ তার অতল অপারতার রহস্য।
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া