বিনোদিনী দাসী
ঊনবিংশ শতকের বাংলা রঙ্গমঞ্চের কিংবদন্তি অভিনেত্রী নটী বিনোদিনী। উত্তর কলকাতার নিষিদ্ধপল্লীতে জন্ম (১৮৬২)। শৈশব কেটেছিল চরম দারিদ্রে। বাল্যেই বিয়ে হয়েছিল কিন্তু স্বামীর ঘর করা হয়নি তাঁর। বারো বছর বয়েসে গঙ্গা বাঈজির হাত ধরে মাসিক দশ টাকা বেতনে বিনোদিনী যোগ দিয়েছিলেন ন্যাশনাল থিয়েটারে। ১৮৭৪ সালে ‘বেণীসংহার’ নাটকে দ্রৌপদীর সখীর ভূমিকায় মঞ্চে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। পরে বেঙ্গল থিয়েটারে যোগ দিলে অভিনেতা ও নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সান্নিধ্যে আসেন। মাত্র বারো বছর মঞ্চে অভিনয় করেন বিনোদিনী, এই অল্প সময়ে ন্যাশানাল, বেঙ্গল ও স্টার থিয়েটারে প্রায় ৫০টির বেশি নাটকে অভিনয় করেন। খ্যাতির শীর্ষে থাকাকালীন শিক্ষাগুরু গিরিশ ঘোষের প্রতি অভিমান ও স্টার থিয়েটার কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় নাট্যজগতকে হতচকিত করে অভিনয় জগত থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। বিনোদিনীর থিয়েটার পরবর্তী জীবন ছিল সাহিত্য সাধনার জীবন। ১৮৮৫ সালে ভারতবাসী পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ পেয়েছিল “রঙ্গালয় বিষয়ক পত্রাবলী”। গিরিশ ঘোষের সৌরভ পত্রিকায় লিখেছিলেন ‘হৃদয়রত্ন’ ও ‘অবসাদ’ কবিতা এবং কাহিনিকাব্য ‘আভা’। ১৮৯৭ সালে ‘বাসনা’ কবিতা সংকলন প্রকাশ পায়। ১৯০৩ সালে ‘কণক ও নলিনী’, যে কবিতা সংকলন বিনোদিনী উৎসর্গ করেছিলেন মৃতা কন্যা শকুন্তলার স্মৃতিতে। ১৯১০ সালে বিনোদিনী আত্নজীবনী লিখতে শুরু করেন নাট্যমন্দির পত্রিকায়, আশ্বিন ও কার্তিক সংখ্যার পর লেখাটি ছাপা বন্ধ হলে। গিরিশ ঘোষের কথায় ঐ অসমাপ্ত আমার কথা নামে প্রকাশ করেন, যার ভূমিকা লিখে দেন গিরিশ ঘোষ স্বয়ং।