কলকাতার সিমলার বিখ্যাত দত্ত পরিবারের সন্তান, নরেন্দ্রনাথ দত্ত ওরফে বিবেকানন্দের অনুজ- ভূপেন্দ্রনাথ দত্তকে (৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৮০- ২৫ ডিসেম্বর ১৯৬১) এই পরিচয়েই মনে রেখেছে আত্মবিস্মৃত বাঙালি। অগ্রজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েও আধ্যাত্মবাদ বা সন্ন্যাসের পথে না হেঁটে বদলে ভূপেন্দ্রনাথের গন্তব্য হয়েছিল বস্তুবাদ ও সমাজবিপ্লব। বস্তুবাদী তথা মার্কসীয় দৃষ্টিতে উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাস-রচনায় বাঙালিদের মধ্যে তিনিই ছিলেন পথিকৃৎ। প্রথম জীবনে ব্রাহ্মসমাজে সান্নিধ্যলাভ করেছেন পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর। পরে স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত হন, যুগান্তর দলের সদস্য থাকাকালীন দেশদ্রোহিতার অভিযোগে একবছরের সশ্রম কারাবাস করেন। ১১ ডিসেম্বর ১৮১৮-র ৩য় রেগুলেশন অনুযায়ী আন্দামানে দ্বীপান্তর পাঠানোর হুলিয়ায় যুগান্তর দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ভূপেন্দ্রনাথের নামও ছিল। এই সময় ভগিনী নিবেদিতার পরামর্শে ইংরেজ সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে ছদ্মবেশে ভূপেন্দ্রনাথ পাড়ি জমালেন মার্কিন প্রবাসে। ১৯১২ সালে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিবেদিতার কথামতই ইতিহাসবিজ্ঞান শাখায় স্নাতক হলেন। পরের বছর রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (এ. এম.) হলেন, স্পেশাল পেপারে ছিল সমাজতত্ত্ব ও নৃতত্ত্ব। আমেরিকাতে থাকাকালীন তিনি সান ফ্রান্সিসকোর গদর পার্টির সাথে যুক্ত হন, এবং কমিউজিমের পাঠ নেন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভূপেন্দ্রনাথ পাড়ি দিলেন জার্মানি পরে বার্লিন কমিটির সদস্য হন। এরপর লেনিনের সঙ্গে আলাপ, চিঠি চালাচালি, মতবিনিময়। দেশে ফিরে ট্রেড ইউনিয়ন, কিষাণসভা গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেন ভূপেন্দ্রনাথ। তিনি চেয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রাম আর শ্রমিক-কৃষক আন্দোলন একসূত্রে বাঁধা থাকুক, কারণ স্বাধীনতা বা বিপ্লব মানে শুধু ইংরেজ মেরে ইংরেজ তাড়ানো নয়, স্বাধীনতা মানে একটা সার্বিক পরিবর্তন!
© 2022 All Rights Reserved by ketab-e | This website is owned by Bestread Publications and Digital Services Private Limited. Design By Mindmine and Developed By Technophilix.