ধূর্জ্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও সমালোচক ধূর্জ্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৬১) মার্কসীয় নন্দনতত্ত্বের পুরোধা পুরুষ ছিলেন। ১৯০৯ সালে বারাসাত স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯১২ সালে রিপন কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ও অর্থনীতিতে এমএ (১৯১৮, ১৯২০) ডিগ্রি লাভ করেন। বঙ্গবাসী কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। পরে তিনি লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় (১৯২২-৫৪) ও আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৫৪-৫৯) অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৫ সালে লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে রিডার পদে উন্নীত হন এবং ১৯৪৯ সালে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৩৮-৪০ পর্যন্ত উত্তর প্রদেশ সরকারের প্রচার বিভাগের উপদেষ্টা এবং লেবার এনকোয়ারি কমিটির সদস্য ১৯৪৭ নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে তিনি মস্কোয় অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। একই বছর তিনি হেগ শহরে সোশ্যাল স্টাডিজ ইনস্টিটিউটে সমাজতত্ত্বের অতিথি অধ্যাপক হয়ে ‘সোসিওলজি অব কালচার’ বিষয়ে বক্তৃতা দেন (১৯৫৩-৫৪)। ১৯৫৫ সালে তিনি বান্দুং সম্মেলনে যোগ দেন এবং ১৯৫৭ সালে ইন্ডিয়ান সোসিওলোজি কনফারেন্সের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন।
দেশ-বিদেশের অজস্র পত্র-পত্রিকায় সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সাহিত্য ও শিল্প বিষয়ে মননশীল প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন স্বনামে বা ‘যুধিষ্ঠির দাস’ ছদ্মনামে। সবুজপত্র ও পরিচয় পত্রিকার সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ এবং নিয়মিত যোগাযোগ। ধূর্জ্জটিপ্রসাদ বাংলা গদ্যরীতিতে প্রমথ চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। অন্তঃশীলা (১৯৩৫), আবর্ত (১৯৩৭) ও মোহানা (১৯৪৩) তাঁর ত্রয়ী উপন্যাস। এতে সমকালের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশে নর-নারীর প্রেম ও আত্মজিজ্ঞাসার কথা আছে। ত্রিধারা তাঁর অপর উপন্যাস। গদ্যগ্রন্থের মধ্যে ‘আমরা ও তাঁহারা’ (১৯৩১), ‘চিন্তয়সি’ (১৯৩৩), ‘সুর ও সঙ্গতি’ (১৯৩৭), ‘কথা ও সুর’ (১৯৩৮), ‘মনে এলো’, ‘ঝিলিমিলি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাঁর প্রধান কয়েকটি ইংরেজি রচনা হলো: ‘Basic concepts of sociology’, ‘Diversities’, ‘Personality and the Social Science’, ‘Indian Music, An Introduction’, ‘Modern Indian Culture’, ‘Sociological Study’, ‘Problems of Indian Youth’, ‘Views and Counterviews’, ‘On Indian History’ ও ‘Realist’ প্রভৃতি।