উনিশ শতকের শেষ দশক বাঙালির ভাষিক আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার নানা প্রয়াসে পরিপূর্ণ। এই ভাষিক আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম রসদদার ছিলেন শিক্ষাবিদ, গবেষক, লোক-সাহিত্যবিশারদ, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার দীনেশ্চন্দ্র সেন (৩ নভেম্বর, ১৮৬৬-২০ নভেম্বর, ১৯৩৯)। ইংরাজি সাহিত্যে দ্বিতীয় বর্ষের পাঠকালে দীনেশচন্দ্রের বাসনা ছিল “বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি হইব, যদি না পারি ঐতিহাসিক হইব।…” সর্বশ্রেষ্ঠ কবি হয়তো হতে পারেননি; কিন্তু কবিত্বকে বিসর্জনও দেননি কোনদিন। তবে এইসবের বাইরে গিয়েও দীনেশচন্দ্র সেন হয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। বাংলার লোকায়ত সাহিত্য, পুঁথি নিয়ে যে গবেষণার রাস্তা তিনি দেখিয়ে গিয়েছিলেন সেই সময়, তা আজও বহু গবেষককে প্রেরণা যোগায়। ১৮৯০-এ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন কালে গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে প্রাচীন বাংলার পুঁথি সংগ্রহ করেন এবং সেসব উপকরণের সাহায্যে ১৮৯৬-এ “বঙ্গভাষা ও সাহিত্য” শিরোনামে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করেন। ১৯০৫ সালে বিনোদবিহারী কাব্যতীর্থের সহযোগিতায় শ্রীকর নন্দীর লেখা ‘ছুটিখানের মহাভারত’-এর পুঁথি এবং হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সহায়তায় মানিক গাঙ্গুলীর লেখা ‘শ্রীধর্মমঙ্গল’ পুঁথি দুটি দীনেশচন্দ্র সেন প্রথম প্রকাশ করেন। একে একে প্রকাশিত হয়েছিল হিস্ট্রি অব বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটারেচার (১৯১১), দ্য বৈষ্ণব লিটারেচার অব মিডিয়েভাল বেঙ্গল (১৯১৭), চৈতন্য অ্যান্ড হিজ কম্প্যানিয়নস (১৯১৭), দ্য ফোক লিটারেচার অব বেঙ্গল (১৯২০), দ্য বেঙ্গলি রামায়ণ (১৯২০)।
© 2022 All Rights Reserved by ketab-e | This website is owned by Bestread Publications and Digital Services Private Limited. Design By Mindmine and Developed By Technophilix.