দীনেশচন্দ্র সেনের ‘বাংলার পুরনারী’ একটি অনবদ্য সাহিত্য-সৃষ্টি। পূর্ব বাংলার গ্রাম্য কবিদের কাব্যগাথায় বাংলার নারী যেভাবে প্রতিভাত হয়েছে তারই অসমান্য কাব্যমিশ্রিত গদ্যরূপ এই পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে। নারীর আত্মত্যাগ, তার তিতিক্ষা, তার সহিষ্ণুতা, তার ক্ষমা, তার প্রেম, তার সন্তান-বাৎসল্য, তার পতিভক্তি, তার স্বামী সোহাগিনী থাকার বাসনা, তার সতীত্ব—এই সকল সামাজিক গুণকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে এই গল্পগুলিতে। বিপদে পড়ে নারীর উপস্থিত বুদ্ধি, তার সাহস, সততা, দৃঢ়তা, পরপুরুষের লোভাতুর আসক্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করার ক্ষমতা এ সবই এক ঘনীভূত আতিশয্যের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত করা হয়েছে এ সমস্ত কাব্যগীতে। এ সমস্ত গল্পের নারী চরিত্রগুলি সবই স্বতন্ত্র; প্রত্যেকেই আপন মহিমায় উদ্ভাসিত। কেউ কারও পরিপূরক নয়। দীনেশচন্দ্র লিখলেন: “এদেশে যে সকল কবি প্রাচীন কালে মহিলা-চরিত্র আঁকিতে গিয়াছেন, তাহার সমস্ত স্থানেই সে সকল চরিত্র সীতা-সাবিত্রীর ছাঁচে ঢালাই করা হইয়াছে; কিন্তু বাঙ্গালার এই পল্লীর ঐশ্বর্য্য কি বিরাট !” একই চরিত্রের পৌনঃপুনিকতা এই গল্পগুলির মধ্যে নেই। এক বিস্ময়কর বৈচিত্র্যের মাঝে নানা সাজে, নানা রূপে তাদের উপস্থাপনা। সব চরিত্র যে বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা নয়—রোমান্টিকৃত নারীর রূপ—যাকে ইংরাজিতে বলা হয় the romanticized image of women.
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া