আরোগ্য উপন্যাসে
মনোবিকলনের ছড়াছড়ি। কেশব তথাকথিত ভদ্রত্বের অভিমানী মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান কিন্তু
জীবিকার দায়ে সে আজ মোটর ড্রাইভার। চোরাকারবারী ব্যবসায়ের অংশীদার ধনী অনিমেষের সে
গাড়ী চালায়। অনিমেষের বিত্তোপার্জনের রহস্য তার জানা থাকায় সে অনিমেষকে মনে মনে
ঘৃণা করে, কিন্তু
অনিমেষের সুগায়িকা কন্যা সুন্দরী ললনার সান্নিধ্য তার ভাল লাগে। ললনা ধনীকন্যা
হয়েও অর্ধশিক্ষিত মোটর ড্রাইভার কেশবকে ছোট নজরে দেখে না, বরং
তার সঙ্গে দয়ার্দ্র ব্যবহার করে। এতে কেশব ললনার প্রতি
কৃতজ্ঞ এবং তার প্রতি এক ধরনের মুগ্ধতার আকর্ষণ অনুভব করে। সে সারাদিন ললনাদের
বাড়ীতে থাকতে ভালবাসে, কিন্তু সন্ধ্যা হলেই সহরতলী অঞ্চলে
অবস্থিত স্বগৃহে ফিরে যাওয়া তার চাই। সেখানে তার অন্য আকর্ষণ। মায়া নামক এক
পরাশ্রিতা গরিব বিধবাকে সে ভালবাসে এবং তার সঙ্গে প্রতি রাত্রে মিলিত হয়। একদিকে
ললনা অন্তদিকে মায়া এই বিপরীত আকর্ষণের টানাপোড়েনে কেশব মানসিক রোগাক্রান্ত হয়। সে
আরোগ্যের সন্ধানে এ-ডাক্তার সে-ডাক্তার দেখায়।
১৯৫৩ সালে প্রকাশিত মানিক
বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরোগ্য উপন্যাসে ফ্রয়েডীয় কামায়নের প্রবণতা লক্ষণীয়। উপন্যাসের শেষটায় অবশ্য কিছু ভিন্ন সুর পরিলক্ষিত হয়। উপন্যাসের শেষ
হয়েছে কেশবের এই উপলব্ধিতে, “সবার জীবন শুধরে দেবার লড়াই
শুরু করব ঠিক করতে রোগ যেন অর্ধেক কমে গেছে। লড়াই আরম্ভ করলে নিশ্চয়ই আরোগ্য।”
মানিক-সাহিত্যের এই সংগ্রামী সুরটাই হলো আসল সুর। খুবই মূল্যবান তার দ্যোতনা।
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া