‘দুই বাড়ি’ বিভূতিভূষণের মধ্য পর্যায়ের রচনা (১৯৪১)। রামনগর কোর্টের পসারহীন অখ্যাত মোক্তার নিধু-নিধিরাম রায়চৌধুরি, পিতৃবন্ধু যদু বাড়ুঁয্যে নিধুর পৃষ্ঠপোষক। মফস্সলের-মোক্তারের নানা সমস্যা, আদালতের প্রচলিত প্রথা, হাকিমদের বিশেষ প্রতিপত্তি- এই সবের মধ্যে দিয়ে নিধুর দিনযাত্রা, প্রেম-জীবনের অপেক্ষা… দুই বাড়ির একবাড়ি নিধুদের জীর্ণ দরিদ্র সংসার, অন্যবাড়ি রাস্তার ওধারে ‘জজবাবু’ লালাবিহারী চাটুয্যের সুরম্য অট্টালিকা, তিনি বহুদিন পরে দেশে দুর্গাপুজোর জন্য এসেছেন।
‘দুই বাড়ি’ শুধু স্থাপত্য-শিল্পের নিদর্শন নয়, দুই বাড়ি প্রতীক বটে। ‘দুই’ কিনা ‘এক’ নয়। বাহ্য আকৃতি, পরিবেশ, অবস্থা, শ্রেণীপার্থক্য সমস্ত দিকেই দুই বাড়ি দুই পৃথক মহল। তারা কখনও মিলতে পারে না।
লালাবিহারী চাটুয্যে এককালে মোক্তারী করেছেন ও সামনের বাড়ির ছেলে বলে প্রথম সাক্ষাতে পল্লীগ্রামের ভদ্রতায় নিধুকে আহারে নিমন্ত্রন করেন। ও বাড়িতে নিধুর অবাধ প্রবেশ, জজবাবুর মেয়ে মঞ্জুর সঙ্গের অবাধ বন্ধুত্ব অনেকে সন্দিহান দৃষ্টিতে দেখবেন কিন্তু বিভূতিভূষণ তাঁর পল্লীগ্রামকে চিনতেন। বিভূতিভূষণ যা স্বাভাবিক, যা অনিবার্য্য তাই লিখেছেন, দুই বাড়ির মিলন সম্ভব নয় তিনি জানতেন।
অনবদ্য প্রেমের ইঙ্গিত পাওয়া যায় শরতের নীল আকাশের নিচে দুই বাড়িতে। তেমন প্রেম একমাত্র বিভূতিভূষণ লিখতে পারেন অর্থাৎ ‘রজকিনীর প্রেম নিকষিত হেম, কামগন্ধ নাহি তায়’। দুই বাড়ির সমস্ত মাধুর্য্য ও বিশেষত্ব এই অধরা রাগিণীর ছন্দে ছন্দিত। বিভূতিভূষণের এই অপ্রধান ছোট উপন্যাসখানি লিপিচাতুর্য্যে তুচ্ছ সুখদুঃখের গ্রাম্য বিকাশের মধ্যে আগাগোড়া রসোত্তীর্ণ।
দারুণ
© 2022 All Rights Reserved by ketab-e | This website is owned by Bestread Publications and Digital Services Private Limited. Design By Mindmine and Developed By Technophilix.
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া