সাহিত্য হল সমাজের আয়না। মানবচরিত্র এবং মানবহৃদয়ের অতলস্পর্শী তলদেশ সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়। মানবসভ্যতার ইতিহাসের বর্ণময় অনুরণন শোনা যায় সাহিত্যের লোকায়ত আঙ্গিকে। লোকজীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ-বেদনা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ প্রভৃতির সাক্ষ্য বহন করে লোকসাহিত্য। আবহমানকাল থেকে লোকমুখে প্রচারিত অলিখিত গান, ছড়া, গল্প প্রভৃতিকেই লোকসাহিত্য বলা হয়। এগুলো কোন ব্যক্তিবিশেষের সৃষ্টি নয়। প্রাচীন, যৌথ গ্রামীণ জীবনের পটভূমিকায় এদের সৃষ্টি। লোকমানসের ধর্ম, সংসার, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের চিহ্ন ধারণ করে আছে লোকসাহিত্যের শরীর। মানবজীবনের চিন্তা-চেতনা ও শিল্পবোধের ফসল হল এই লোকসাহিত্য।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশের একজন লোকসাহিত্যের সংগ্রাহক। তাঁর সংগৃহীত নানান ছড়াগুলো প্রধানত মেয়েদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। তাই রবীন্দ্রনাথ প্রথমে ছড়াগুলোর নাম দেন ‘মেয়েলি ছড়া’, পরে ছড়াগুলোর নামকরণ করেন ‘ছেলেভুলানো ছড়া’। এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখেন “বাংলা ভাষায় ছেলে ভুলাইবার জন্য যে-সকল মেয়েলি ছড়া প্রচলিত আছে, কিছুকাল হইতে আমি তাহা সংগ্রহ করিতে প্রবৃত্ত ছিলাম। আমাদের ভাষা এবং সমাজের ইতিহাস-নির্ণয়ের পক্ষে সেই ছড়াগুলির বিশেষ মূল্য থাকিতে পারে, কিন্তু তাহাদের মধ্যে যে একটি সহজ স্বাভাবিক কাব্যরস আছে সেইটিই আমার নিকট অধিকতর আদরণীয় বোধ হইয়াছিল।” তাঁর মতে ছড়ার দেশে সম্ভব-অসম্ভবের মধ্যে সীমানাঘটিত কোনো বিবাদ নেই। এগুলো নিজস্ব গতিতে প্রবাহিত হয়ে আসছে। এতে না আছে তত্ত্বকথা বা নীতিপ্রচার বা প্রাণপণ প্রযত্ন। অর্থাৎ নিয়মের নানা রকম ছন্দ-অলঙ্কারের নিরলস পরিশ্রমে ছড়াগুলো রচিত হয়নি। এগুলো মানব মনের বিশেষ করে মেয়েদের মনের অনায়াস অথচ নান্দনিক প্রকাশ। বাংলা কাব্যসাহিত্যের আদি নিদর্শন তো এই ছড়াগুলোই, যা পরিবর্তীত হতে হতে বিবর্তিত হতে হতে আজ পুরাতন হয়েও নতুন। রবীন্দ্রনাথ একে শিশুর সঙ্গে তুলনা করেছেন। শিশু যেমন চিরপুরাতন, কিন্তু চির নতুন-মেয়েলি ছড়াগুলোও তাই। এদের মনের গতিও শিশুর মতোই-সুসংলগ্ন কার্যকারণসূত্র ধরে জিনিসকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অনুসরণ করা তার পক্ষে দুঃসাধ্য।
দারুণ
অসাধারণ একটি সাহিত্য ❤️
© 2022 All Rights Reserved by ketab-e | This website is owned by Bestread Publications and Digital Services Private Limited. Design By Mindmine and Developed By Technophilix.
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া