লেখক একালের রাধারানিদের প্রেম, আনন্দ, যন্ত্রণা খুঁড়ে গেঁথেছেন এক অনবদ্য কবিতা মালা ‘রাধারানি’। বৈষ্ণব মহাজন কবিদের প্রাণপ্রিয়া রাধারানি বহুরূপে এসে দাঁড়িয়েছেন কবির কাছে। মহাজন কবিদের মতোই রাধারানির পূর্বারাগ, অনুরাগ, অভিসার, মিলন আক্ষেপানুরাগ, আর বিষাদের কথা বলেছেন কবি। তবে ‘মেহেদি পাতার রঙ’-এর মতো নারীর স্বরে নয়, কবি নিজেরই স্বরেই বলেছেন রাধিকাদের কথা—‘তুমি তো দেবীই, দ্যোতমানা। তোমাকে দেখি আর আশ্চর্য লাগে। আমার কিশোরকালের নন্দিনী বৌদির মতো অমনি লালাভ ঠোঁট, আলতালাল পা। সত্যি সত্যি হাঁটলে পদ্ম ফুটেছে বলে ভ্রম হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। তোমাকে হাঁটতেও দেখি ঘর থেকে দরজা, দরজা থেকে ঘর।’ সাহিত্যের পাঠকদের অনায়াসেই স্মরণে আসে সেই চিরন্তন পংক্তি—“ঘরের বাহিরে দণ্ডে শতবার তিলেতিলে আইসে যায়।” কালের স্পষ্ট প্রক্ষেপ আর পুরাকাহিনির নানা চিহ্ন মিশে আছে কবিতায়। —“ঘোষমশাইয়ের ইচ্ছে নয় তুমি অফিসের পিকনিকে যাও।” কিংবা “আমি বাঁশি নয়, দূর থেকে দামামা বাজাই—ওঠো, জাগো, লড়ে যাও।” সমাজের সর্বস্তরের নারীর লাঞ্ছনা, অপমানের বেদনার কথা কবি বলেন এ কাব্যের প্রতিটি কবিতায়। ‘চিকন কালো জোঁক’-এর মতো প্রাণপণে শুষে নিতে চান রাইকিশোরীর ব্যথা আর অপমান, পাহাড় জঙ্গল পেরিয়ে এনে দিতে চান তার পায়ের তলার জমি। রাধারানিদের ‘দহন’ যেমন টের পান, তেমনি বিশ্বাস রাখেন নারীর প্রাণশক্তির ওপর, যে প্রাণশক্তির জোরে রাধারানিরা পেরিয়ে যাবে খানাখন্দ, কাঁটা, কদম। জীবন ব্যাপি নারীর লড়াইকে অভিবাদন জানান কবি। সহজ সোজা ভাষায় বলেন—“রাধারানি, অন্ধকারের বিদ্যুৎ, তার অসহ্য ছোবল, তার ব্যথা আর লাবণ্য আমার একার।” রাধারানিরা তাঁর কাছে ‘হ্লাদিনীর সারভূতা’। সবমিলিয়ে ‘রাধারানি’ এক আসামান্য প্রেমের কাব্য।
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া