সীতারাম (১৮৮৭) ঐতিহাসিক চরিত্র হলেও, ঐতিহাসিকতা এই উপন্যাসের প্রতিপাদ্য নয়, তা বঙ্কিমচন্দ্র গ্রন্থের বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করেছিলেন— “সীতারাম ঐতিহাসিক ব্যক্তি। এই গ্রন্থে সীতারামের ঐতিহাসিকতা কিছুই রক্ষা করা যায় নাই। গ্রন্থের উদ্দেশ্য ঐতিহাসিকতা নহে।”
সীতারাম উপন্যাসে শ্রী ও সীতারামের চরিত্রই মুখ্য। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ধর্মতত্ত্বের আলোকে এক হিন্দু ভূ-স্বামীর অধঃপতন বর্ণনা করেছেন। সীতারাম বীর, সাহসী, পরোপকারী ও বিচক্ষণ মহৎ ব্যক্তি। তিনি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলেও তার নাম রাখলেন মহম্মদপুর। হিন্দু-মুসলমানের বিরোধকে জীইয়ে রেখে রাজ্য প্রতিষ্ঠা মঙ্গলকর হতে পারে না বলেই তিনি মানতেন। কিন্তু এতো গুণ থাকা সত্ত্বেও তিনি এমন এক সুন্দরী নারীর রূপ মোহের কাছে ধরা দিলেন যিনি তাঁর স্ত্রী হলেও অপ্রাপনীয়। এই রূপমোহের বশবর্তী হয়ে তাঁর আসক্তি থেকে কামনা, কামনা থেকে ক্রোধ, ক্রোধ থেকে সম্মোহ, সম্মোহ থেকে স্মৃতিভ্রংশ, স্মৃতিভ্রংশ থেকে বুদ্ধিনাশ ও বুদ্ধিনাশ থেকে বিনাশ ঘটল। স্বাধীন রাজা সীতারাম নিজ বিবাহিতা স্ত্রীর ওপর নিজের অধিকার বিস্তার করতে না পেরে রাজ্যের ওপর বিশৃঙ্খলা ও নিজ কর্তব্যচ্যুতির স্রোত বইয়ে দিলেন। সীতারামের পতনের মধ্য দিয়ে তাঁর মহত্বকে স্মরণ করে উপন্যাসের শেষে সীতারাম চরিত্রের নৈতিক উদ্ধার-সাধনের প্রয়াস করেছেন বঙ্কিমচন্দ্র।
দারুণ
© 2022 All Rights Reserved by ketab-e | This website is owned by Bestread Publications and Digital Services Private Limited. Design By Mindmine and Developed By Technophilix.
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া