‘সোনার তরী’ রবীন্দ্রনাথের ঠিক প্রস্তুতিপর্বের পরবর্তী
কালের কাব্যগ্রন্থ। ‘সন্ধ্যা সঙ্গীত’ থেকে ‘মানসী’ পর্যন্ত সময়কে রবীন্দ্রনাথের সাধনা পর্বের প্রথম
যুগ বলে বর্ণনা করা হয়। ‘মানসী’র পর
এক বছর তিন মাস সময়ের ব্যবধানে ‘সোনার তরী’ (১৮৯৪) প্রকাশিত
হয়। এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি বাংলা ১২৯৮ সালের ফাল্গুন মাস থেকে ১৩০০ সালের অগ্রহায়ণ মাসের মধ্যে লেখা।
রবীন্দ্রনাথের কাব্যে বাস্তব জীবনজিজ্ঞাসা এবং অধরা সৌন্দর্যলোকের প্রতি তীব্র
আকাঙ্ক্ষা একীভূত হয়ে আছে। বাস্তব জীবনের রূঢ় পরিপ্রেক্ষিত থেকে কবি তাঁর
কল্পনার যাদুতে আমাদের কোন্ দূর এক স্বপ্নলোকে উত্তীর্ণ করিয়ে দেন। নদীমেঘলা
বাংলাদেশের এক অখ্যাত নদীতীরেই তিনি দেখতে পেলেন সোনার তরী বেয়ে অচেনা এক নেয়ে
তীরে তরণী ভিড়োয়, কখনও কবি নিজেই কোন
বিদেশিনী অপরিচিতার সঙ্গে নিরুদ্দেশে যাত্রা করেন। ‘সোনার তরী’তে প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং মানুষের সুখ-দুঃখকে এক সূত্রে কবি গেঁথেছেন। সৌন্দর্যের
হাতছানিতে কবির মুগ্ধতা, অন্যদিকে মানবপ্রীতিতে তিনি
উন্মুখর। ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’র তাঁর ব্যাকুল অভিসার, ‘যেতে নাহি দিব’ কবিতায় গভীর জীবনাসক্তি। এই দুইটি সুর ‘সোনার তরীতে’ ধ্বনিত
হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন—“আমি বুঝতে পারিনে আমার মনে সুখ-দুঃখ, বিরহ-মিলন-পূর্ণ ভালোবাসা প্রবল, না সৌন্দর্যের নিরুদ্দেশ আকাঙ্ক্ষা প্রবল; আমার বোধ
হয় সৌন্দর্যের আকাঙ্ক্ষা আধ্যাত্মিক জাতীয় উদাসী গৃহত্যাগী, নিরাকারের অভিমুখী।”
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া