প্রকাশিত হল ঋতুপর্ণা খাটুয়ার গুচ্ছ কবিতা— ‘অস্থির সময়ের কবিতা ও অন্যান্য’, নাম কবিতা সহ রয়েছে ‘পুরী’ ও ‘নায়িকা’ কবিতা দুটি।
অস্থির সময়ের কবিতা
১
এ উন্মাদ মহাদেশে স্নানঘরের তত্ত্ব আর খাটছে না।
শুধু শাওয়ারের তলায় দাঁড়ালেই যে শরীর ভিজবে
তা নয়, তীব্র বুলেট স্রোত, বুটের আঘাত, কাজহীন
পরিস্থিতি তোমাকে ভিজিয়ে দেবে। আক্রোশে ঘুষি
ছুড়বে শূন্যে, ক্রমে নেমে আসবে উদ্ধত হাত। বার বার
বার বার মনে হবে মখমলি উপত্যকায় সকলে একসাথে
বের হয়ে আসবে কুটিল দাঁতের ইঁদুরটিকে ধরতে, কিন্তু
এরও ভেতর ওরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে যাদের ফসলে
এখনও ইঁদুর হানা দেয়নি অথবা শস্যের তেমন কোনো
ক্ষতি হয়নি। প্রত্যন্ত উল্কাপাতের দিনে তারা দোর থেকে
বেরিয়ে দুষবে, তারা খসে পড়ে ফসল কুচলে গেছে রে
বেরাদর, নাই চিন্তা আর নাই, উল্কাপাত খুবই কম হয়—
২
মানুষ বিষয়ে আর কী লিখব? কী লেখা বাকি থাকছে!
জন্ম অথবা মৃত্যু এড়িয়ে তাই চলে যাচ্ছি কঙ্গো বেসিনে
(আমায় ওখানে যেহেতু কেউ বলবে না সুবিধাবাদী, সেকু)
সূর্যের আলো সরাসরি না পেলেও মারামারি করে মরে
যাচ্ছে না ঘাসচাপা মাটি। শেখার মতো কিছু নেই, এসব আমি
পড়েছি আগেই ভূগোল বইতে, টীকা লিখে পাঁচে পাঁচ আদায়
করেছি। ক্লাসরুম থেকে চোখ ফেরান এবার সমবেত মনুষ্যজাতি,
কেননা এখন বলতে চলেছি হান্টারগ্রিনরঙা জঙ্গলের দর্শন।
সহাবস্থান কেমন হয়, তা প্রতিটি জঙ্গল জানে, টিকে থাকার
লড়াই যেমন আছে তেমনি আছে স্বজাতের তরে প্রেমও।
টিকে
থাকার
লড়াই
স্বজাতের
তরে
প্রেমও—
এসব জানতে গেলে
মানুষকে আরও কত নীচে নামতে হয়!
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
পুরী
রূপ, শোনো, আমাদের আর একসাথে সমুদ্র যাওয়া হল না
এতটা জাদুবাস্তবতার মধ্যে দু-জনে আর বসবাস করছি না।
তোমার ঘরোয়া জগৎ হয়েছে, সেখানে থেকে র্যান্ডম কোনো
বন্ধুকে ডেকে কনফেস করা সম্ভব নয় যে আমার সঙ্গে থেকে
যাওয়া যায় অনায়াসে। রূপ, প্যানিকের দিনগুলোতে বার বার
ঘেমে-নেয়ে অসুস্থ হয়ে ভেবেছি, একবার বোধ হয় খোঁজ নেবে
কেমন আছি। যদিও সে দায় তোমার ছিল না, কিংবা আমিই
দিইনি কখনো। না তৈরি হয়েছে কোনো জড়িয়ে ধরার মুহূর্ত
না কোনো বাস্তব চুম্বনদৃশ্য! না কোনো প্যাথেটিক কমিটমেন্ট!
যা ছিল আমাদের তা হুবহু কোনো ইরোটিক সিনেমায় হয়।
সেক্সচ্যাট, শরীরী অ্যাপ্রোচ, স্নানঘরে ঘনিষ্ঠতা… এসবের বাইরে
যা এসেছে বারংবার ফিরে; রাতের সমুদ্র, ঢেউয়ের খেদ আর
চাপ চাপ অন্ধকার। তোমায় আঁচড়ে খাওয়ার বাসনা ছিল না—
শুধু আঁচড়ে তুলেছি জল প্রস্থানের পর শামুকের নরম দেহ, বালু
রূপ আমাকে নিয়ে একবার পুরী যাবে?
নায়িকা
গম্ভীর না হয়েও কোমল স্বভাবী একজন মেয়ের স্মার্ট হয়ে ওঠার
সরল পদ্ধতি নিয়ে যখন এই আলোচনা করছি আদিদেবের সাথে,
তখন আমার স্বপ্নে দেখা এক মেয়ে খুনির কথা মনে পড়ল,
যে কিনা তার প্রতিটি হত্যার আড়ালে রেখে যায় কোনো খুশবুদার আতর।
এ আতর সে পায় কোথায় জানি না, তবে বহুবার খুন করে ফেরার পথে
সে আমাকে দেখতে পায়— অন্ধকার ঝুল-বারান্দায় দাঁড়িয়ে
আমি তখন ভেবে চলছি পরবর্তী প্রচ্ছদের নির্মাণ-প্রকল্প,
আর একইভাবে সেই পাঁচ সাত লম্বা ফিট চেহারার মায়াময়ী ভেবে যাচ্ছে
পরবর্তী শিকারে নতুন সুগন্ধি ব্যবহারের গোপন কৌশল।
কীভাবে বশ করব ওকে? কীভাবে শিখব একটি নিখুঁত ফিনিশিং
যা দেখে মনে হয়— আমার করা প্রচ্ছদ বইয়ের ভেতরের সমস্ত পরত খুলে দিচ্ছে,
স্ট্রিপটিজ়ে পারদর্শী হয়ে উঠছে আমার আঁকা প্রতিটি খুনে ছবি?
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখিরনিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন