প্রকাশিত হল সৌমনা দাশগুপ্তর কবিতাগুচ্ছ ‘চাঁদের আছর ও অন্যান্য কবিতা’– নাম কবিতা ছাড়াও রয়েছে ‘ঢেউয়ের আয়না খুলে ধরে তার বই’, ‘ধানের বুকভরা অন্ধকার’, ‘মেঘ নামে স্বপ্নকোটরে’ এবং ‘মাতমের গান’ কবিতাগুলি।
ঢেউয়ের আয়না খুলে ধরে তার বই
শব্দেরা শীতঘুমে
এই ফাঁকে তুমিও জ্বালাও কাঠকুটো
গনগনে নীল আগুনের আঁচে
সেঁকে নাও অলিন্দ-নিলয়
জব্বর কাবাব হবে, সঙ্গে মেঘের পুডিং
কোরাল-ফসিলে ঢাকা বালুতটে
প্রবীণ কাছিম তুমি হঠাৎ বাড়াও মুখ
খোলশের থেকে
ঢেউয়ের আয়না খুলে ধরে তার বই
গল্পের দরজা খুলে এসেছেন গোয়েন্দা স্বয়ং
হত্যাকাণ্ডের পর সমস্ত হাতের ছাপ
মুছে ফেলে যেইভাবে দৃশ্যান্তরে
চলে যায় খুনি, তেমনই খেলা হবে
গুলতির থেকে আচমকা ছিটকে আসবে বাঁটুল
আর ক্ষতস্থান চেপে বসে পড়তে পড়তেও
তুমি মুচকি হাসবে, হাসবেন গোয়েন্দাপ্রবর
দু-জনে বসবে মুখোমুখি
তোমাদের টেবিলের নীচে বাস্তুসাপ
তোমাদের মাথার ওপর বাস্তুভার
গোয়েন্দা গল্পের থেকে তখনও বেরিয়ে আসছে
তরাই-ডুয়ার্স, ছোটো নদী, আর গুচ্ছ গুচ্ছ নুড়িপাথর
ধানের বুকভরা অন্ধকার
মেঘও একেকদিন সমুদ্র হয়ে ফুঁসে ওঠে
আর সে কী ঠমক-ঠামক তার
যেন চিরে দেবে দরজা-জানলা
চিরে দেবে দেয়াল-টেয়াল সব
স-অ-ব স-অ-ব ছিঁড়েফেড়ে
মাথা ঝাঁকিয়ে উঠবে শাল ও সেগুন
কথা হবে মেহগনি জারুলে শিরীষে
সাভানা ঘাসের বনে
ভেসে যাবে মায়া হরিণেরা
পাতায় পাতায় লেখা দৌড়
আয়নার ভেতর তখন গভীর জঙ্গল
আয়নার ভেতর তখন এক মাদি গণ্ডার
শৃঙ্গ উঁচিয়ে তেড়ে যাবে মদ্দাটির দিকে
এসব লফড়া দেখে মজা লোটে সক্কলে
ক্যামেরাও দ্যাখে, সে-ও লুটছে মজা
সফট-কপি ধরে রাখে পিডিএফ-এ
এবার গুণ টানো, নৌকা টেনে চলো বয়সভর
ছবির পর ছবি, পলির পর পলি
ঢাকছে ঢেকে যায় নদীর চর
সেখানে চাষাবাদ, সেখানে ভিটেমাটি
ঘরগেরস্তির অবান্তর খেলা ধুন্ধুমার
সেখানে কথা বলে বথুয়া লাফাশাক
ধানের বুকভরা অন্ধকার
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
চাঁদের আছর
রাতের শরীর থেকে খসে ধুলোর আস্তর
আবারও ঘূর্ণি ওঠে প্যাঁচানো স্ক্রুয়ের ঢঙে
উঠে যায় শঙ্খিল গতিতে
খড়খড়ি ফাঁক করে পাখিটি আমাকে ডাকে
ঝনঝন করে ওঠে হাড়ের কপাট
হেঁটে যাই রাতের উদ্দেশে
সব কিছু ভোজবাজি, চাঁদের আছর
হঠাৎ কামড় যেন জিভের ডগায়
কে এসে পরদা ঠেলে দাঁড়িয়েছে আমার উঠোনে
কুঁদুলে ষাঁড়টি ঠিক ঝোপ বুঝে কোপ মারে
ফেঁড়ে দ্যায় রাতের চাদর আর
টোটকা চালায় মওকা পেলেই
রাত হাসে কান এঁটো হাসি
তোশকের জ্বর
ফরাসের থেকে রক্তের ভাপ
এসব নিয়েই রাত একা জাগে
কুহেলি-প্রলাপে ডোবা রাত
মেঘ নামে স্বপ্নকোটরে
হাপর টানছে দিন
হাঁসফাঁস হাপরের থেকে
হানাদার হাওয়াটির থেকে
পালাতে চাইছে দিন
ওড়ে মাঞ্জা দেয়া জিভ
ওড়ে সুতো কাটা ঘুড়ি
টাল খায় হাওয়ার উজানে
অতি লোভে নষ্ট তাঁতি
তবুও তাঁতটি চলে নিজের মতন
জহুরি যাচাই করে আসল নকল
দেখে নেয় কাট ও ক্ল্যারিটি হিরেটির
ওইদিকে কেবলই মেঘ নামে, মেঘ নামে স্বপ্নকোটরে
ট্রাউট মাছের ঝাঁক উঠে আসে বরফের স্তর ফুঁড়ে
এমন বোশেখ দিনে বন্ধ জানলার কাচে জল শুধু জল
নিঙড়ে নিয়েছে দিন মেঘের গামছাখানি
বিকেলের বোজা আলো তারই ধরতাই নিয়ে
হেঁটে যাচ্ছে পাঁশুটে সন্ধ্যার পথে
মাতমের গান
গোয়েন্দা গল্পের ভেতর ঢুকে পড়বার পর আমি দেখতে পাচ্ছিলাম সেই যুবক ঈগলপাখিটিকে, নখ যার তীব্র তলোয়ার, চোখ যার অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মতোই ধারালো, দক্ষ শিকারি সে, একলা সে সোনালি ঈগল।
গোয়েন্দা গল্পের ভেতর ঢুকে পড়বার পর আমি দেখতে পাচ্ছিলাম সেই প্রবীণ ঈগলটিকে—পাহাড় চূড়ায় একা দিন গুনছে নিজেরই মৃত্যুর।
ঢলে পড়বার আগে দু-জনে দাঁড়ায় মুখোমুখি। কথা হয় আজনবি চালে। আয়নার থেকে ঠিকরে ঠিকরে ছুটে আসে আহাজারি, মাতমের গান। আয়নাও চোখ টিপ দিয়ে মৃদু মৃদু হাসে। যদিও হাসির বলগ তার পেটে গুলগুল গুলগুল…
জলের ভেতর তখন নিভে যাচ্ছে জ্বলন্ত অঙ্গার, ছাইপাতা জল… আমি সেখানে দাঁড়াই… আর পাহাড়ের দৃশ্য দেখতে দেখতে বরফপতনের দৃশ্য দেখতে দেখতে ততক্ষণে আমি টপকে যাচ্ছিলাম একের পর এক স্বপ্ন…
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখিরনিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন