প্রকাশিত হল বেবী সাউ-এর কবিতাগুচ্ছ ‘একটি সনেট ও অন্যান্য’। নাম কবিতা সহ ‘দুর্ভিক্ষ’, ‘অভিযোজন’, ‘বধ্যভূমি’, ‘সিলেবাস’, এবং ‘আত্মদহন’— এই পাঁচটি কবিতা এই কবিতাগুচ্ছে সংকলিত হয়েছে।
দুর্ভিক্ষ
বাঘের খাবার জোটাতে জোটাতে
আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম
ধুঁধলা চোখে দেখছিলাম
এই নদী
পাহাড় পর্বত
এমনকী নীল ঘন আকাশ
সবটাই নিরর্থ এবং অপাংক্তেয়
রাষ্ট্র জানাল, যেহেতু বাঘ রাজা
তাই বাদবাকি জাহন্নামে যাক!
অভিমানে সমস্ত জনগণ হেঁটে যাচ্ছিল আন্দামানের দিকে
জলের কুমির
সুযোগ বুঝে
নেমন্তন্ন জানিয়েছিল
জলখাবারের
কৃতার্থ আমরা
টেবিলে পৌঁছে দেখি,
থরে থরে প্লেটে সাজানো
আমাদের লাশ ও মস্তিষ্ক...
অভিযোজন
ধীরে ধীরে; অতি ধীরে ধীরে
সম্পর্ককে ফিরে পাচ্ছি
অভিনয় বৃথা যায়নি
বৃথা যায়নি মনসার কাছে মেনে নেওয়া পূর্বকৃত স্বাধীনতার ভুলত্রুটি
সাপের মুখ এগিয়ে আসছে দুধভরা পাত্রে
আলতো নত হয়ে,
হয়তো খানিক অধিক নত
হয়ে বলতে হয়েছে,
“কানা চোখ! আসলেই লক্ষ্মীমন্ত…”
বিনিয়োগের খেলায় গেরিলা লাফিয়ে উঠে
রাতবিরেতের দুঃস্বপ্ন ভেঙে জেগে ওঠে
অধিক আগ্রহী অন্ধকার
মুখাগ্নি করবে বলে দাঁড়িয়ে আছে বন্ধুবান্ধবরা...
বধ্যভূমি
আমার ভালোরকম মনে আছে—
ক্লান্ত বিধ্বস্ত চোখ নিয়ে
বাবা একবার বিড়বিড় করে বলে ফেলেছিল,
অপমান হজম করতে করতে মানুষ পাথর হয়ে ওঠে...
আর সেই পাথর চলে যায়,
দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে
তৈরি হয় সড়ক, রাস্তা
বড়োলোকদের রাজপ্রাসাদ
গরীবের কুটিরও মাঝেমধ্যে
আমি কঠিন কঠোর সময়ের দিকে তাকাই
দেখি বাঘ-ছাগলের খেলা
বুঝি, কর্মঠ বাঘের বুদ্ধির কাছে হার মানা সিংহ কেমন রাজা হয়ে ওঠে...
অপমান গুরুত্বপূর্ণ
কুমিরের গায়ের মতো করে তোলে মন এবং সময়কে
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
সিলেবাস
আমি কৃষ্ণ কিংবা কংস কাউকেই চিনতাম না
কৃষ্ণের গায়ের রং
কৃষ্ণের বাঁশির সুর
অথবা
ভূমি থেকে পর্বতকে তুলে ধরা
আশ্চর্য বটে! অত্যাশ্চর্য নয়!
কংসও অনুরূপ
রাজ্য এবং ভূমির অধিকার সবাই চায়
নারী এবং প্রজার অধিকার সবাই চায়
শুধু বুঝে নিতে হয়
শত্রুদমন করাটা একটা কৌশল
আর
ইতিহাসকে ঘোল খাওয়ানো
রাজা হওয়ার প্রথম শর্ত...
আত্মদহন
আমার তেমন কোনো শোকচিহ্ন নেই...
কেবল রাজপথে পড়ে থাকা খইয়ের গুঁড়োয় ফুটে ওঠে অনুশাসনের বারবেলা
নত হওয়া এই যে ধনেশের পালক
আদিম মানব থেকে ভেসে আসছে অরণ্যের
টুংটাং
আত্মহত্যাদের ছেড়ে আসি পাহাড়ের শীতে
পায়ের নূপুরে
বেজে ওঠে জন্মদিন
রোদের কনসার্টে কবিতার মেয়ে
খেলা করে একা
বারান্দায়
কতদিন পরে সূর্যাস্ত নামে
পৃথিবীর ঠোঁটে...
একটি সনেট
যে আমায় ডাকে, আমি তার কাছে যাই, অপবাদ।
এত অপমান প্রিয় হয়ে গেছি, মুখের উপর
বন্ধ করে দিল প্রিয়া, আমার স্বভাবজাত ঘর।
আমারই প্রেমিকা, তার প্রেমিক ডেকেছে এই ফাঁদে।
তুমি কি বাস্তুর ঘুঘু? এই প্রেম কেড়ে নিলে কেন?
জান্তব রাতের শব্দ শুনি দরজা বন্ধ করে আছে।
আমরা তো ফুলের বন্ধু, ছোটো ছোটো মুহূর্তের কাছে।
ঘূর্ণিঝড় এসে পড়ে আচমকাই মধ্যরাতে যেন।
আমার প্রেমিকা জানে পাখিরাও উড়ে চলে যায়।
শিশির শুকিয়ে যায় রোদ উঠলে, এতই সহজ।
এতই নরম সন্ধি, ছিঁড়ে যায়, বাঁধা পড়ে রোজ–
তবুও আড়াল তার নিজের কাহিনি লেখে প্রায়।
একটি প্রেমের কথা শুধু তবে একটি কবিতা?
সামান্য হাওয়ার স্পর্শ উড়িয়েছে বটগাছের পাতা।
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
Hindol Bhattacharjee
3 দিন আগেexcellent. well written. well craftd.
Meena Mukherjee
3 দিন আগেখুব ভালো লাগলো বেবী।। ❤❤
Meena Mukherjee
3 দিন আগেখুব ভালো লাগলো বেবী।। ❤❤
আশিস মুখার্জ্জী ।
1 দিন আগেঅসাধারণ সব কটি কবিতা । সহজ সরল আঙ্গিকে লেখা শব্দ মালার আকর হৃদয়ের গভীর প্রপাত হতে নিঃসৃত ।