১৯টি শারদীয় পত্রিকার সূচি থেকে উঠে আসা এই তথ্য আমরা নীরস ও শুষ্ক হিসেবেই পরিবেশন করছি৷ এতে রস-জল-শাঁস আমরা দিইনি।
খুবই গা-ছাড়া ভাবে একটা হিসেব করতে শুরু করেছিলাম আমরা। হিসেব কষার শুরুও হয়েছিল, খুব আলগা একটা পর্যবেক্ষণ থেকে। কিছুদিন আগে আমরা দেখছিলাম, সাময়িক পত্রে ভ্রমণ কাহিনিকার হিসেবে লেখিকার সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছে। এ থেকে একটা আলগা সিদ্ধান্তও তৈরি হয়ে যাচ্ছিল ভেতরে, আগের চেয়ে মহিলারা অনেক বেশি ভ্রমণ করেন। কেউ বলতে পারেন, খুঁটিনাটি বিষয়ে মহিলাদের দক্ষতা বেশি, এরকম ধারণা থেকেই, একটা সময়ে বুক কিপিং-এর কাজে মেয়েদের বেশি নিয়োগ করা হত। সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে পর্দার পিছনে যে বিপুল কর্মশক্তি, তার একটি ভূমিকার নামই ছিল,কন্টিনিউটি গার্ল।
এরকম আলগা ভাবনাসূত্র থেকেই এই সমীক্ষাটার কথা মাথায় আসে। অবশ্য এই হিসেবটা এতটাই সামান্য, যে, একে সমীক্ষাও বলা যায় কিনা, সে নিয়ে আমরা সন্দিহান। সমীক্ষাটা আমরা শুরু করেছি, পুজোসংখ্যা নিয়ে। আমাদের দেখার ছিল, পুজোসংখ্যা হিসেবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রকাশিত পত্রিকাগুলির উপন্যাসের লেখক ও লেখিকার অনুপাত। ওই একই পত্রিকাগুলিতে প্রকাশিত ভ্রমণকাহিনিতেও লেখক ও লেখিকার অনুপাত দেখতে চেয়েছিলাম আমরা।
ভ্রমণকাহিনিগুলির হিসেব করতে গিয়ে একটা সমস্যা হল, ১) যত পত্রিকার হিসেব আমরা করছিলাম, তার সবগুলিতে ভ্রমণকাহিনি প্রকাশিত হয়নি। ২) অন্তত দুটি ক্ষেত্রে ভ্রমণকাহিনির লেখকের নাম দেখে জেন্ডার বা লিঙ্গ পরিচিতি সম্পর্কে নিঃসংশয় হওয়া যাচ্ছে না।
আমরা সমীক্ষা করেছি ২০২৪ সাধারণাব্দ/১৪৩১ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত ১৯টি শারদীয় পত্রিকা নিয়ে।
বাছাইয়ের শর্ত ছিল, ১) প্রকাশিত পুজো-শারদ-উৎসবসংখ্যায় উপন্যাস থাকতে হবে, ২) সংখ্যাটি মহালয়ার আগে প্রকাশিত হতে হবে, ৩) সাধারণ অর্থে বাজারচলতি পত্রিকাই হতে হবে- অর্থাৎ, লিটল ম্যাগাজিন নয়, তবে মিডল ম্যাগাজিন, এমনকী যেসব পত্রিকা কেবল পুজো সংখ্যা-উৎসবসংখ্যা-শারদসংখ্যা-ই প্রকাশ করে থাকে, তারাও এর অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু যেসব লিটল ম্যাগাজিন ত্রৈমাসিক-বাৎসরিক সংখ্যা নিয়মিত প্রকাশ করে থাকে, তারা এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
কেতাব-ই'র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন manuscript.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
নামঞ্জুরি (Disclaimer)—
১) এই সমীক্ষা থেকে আমরা কোনো বিশ্লেষণে উপনীত হওয়ার দায় অস্বীকার করছি।
২) এই সমীক্ষার বিভিন্ন ফল তুলে ধরার সময়ে ব্যবহৃত মহিলা/নারী/লেখিকা এই পরিচিতিজ্ঞাপক শব্দগুলি অত্যন্ত আলগাভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
যে পত্রিকাগুলি নিয়ে সমীক্ষা করা হয়েছে তার তালিকা
১) দেশ
২) আনন্দবাজার
৩) পত্রিকা
৪) সানন্দা
৫) আনন্দলোক
৬) এই সময়
৭) বর্তমান
৮) প্রতিদিন
৯) আজকাল
১০) নব কল্লোল
১১) প্রসাদ
১২) বসুমতী
১৩) নন্দন
১৪) চর্যা
১৫) অন্তরীপ
১৬) হ্যালো টেস্টিং
১৭) অরণ্যমন
১৮) কৃত্তিবাস
১৯) কথাসাহিত্য
আমাদের হিসেব অনুসারে,
এই ১৯টি প্রাপ্তবয়স্কদের শারদ পত্রিকায় (২০২৪ সাধারণাব্দ/১৪৩১ বঙ্গাব্দ)-তে প্রকাশিত মোট উপন্যাসের সংখ্যা ৯৫। সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে প্রসাদ পত্রিকায়— ১২টি। সবচেয়ে কম, ২টি করে উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে তিনটি পত্রিকায়, আজকাল, হ্যালো টেস্টিং ও চর্যা।
যেসব পত্রিকাগোষ্ঠী দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশ করে, এই সমীক্ষায় তেমন পত্রিকার সংখ্যা— ৯। এর মধ্যে একা আনন্দবাজার গোষ্ঠীর প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রকাশিত শারদ পত্রিকার সংখ্যা— ৫। বাকি পত্রিকাগুলি হল, এই সময়, আজকাল, প্রতিদিন ও বর্তমান।
সমীক্ষার অন্তর্গত প্রকাশিত মোট ৯৫টি উপন্যাসের মধ্যে দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশকারী পত্রিকাসমূহতে ছাপা উপন্যাসের সংখ্যা ৪০। এই ৪০টি উপন্যাসের মধ্যে পুরুষ রচিত উপন্যাস ৩২, মহিলা রচিত উপন্যাস ৮। আনন্দবাজার পত্রিকাগোষ্ঠী কর্তৃক প্রকাশিত ৫টি পত্রিকায় ছাপা ২৬টি উপন্যাসের মধ্যে মহিলা লিখিত উপন্যাসের সংখ্যা ৩।
দৈনিক সংবাদপত্র গোষ্ঠী ব্যতীত সমীক্ষাভুক্ত অন্যান্য ১০টি পত্রিকায় প্রকাশিত ৫৫টি উপন্যাসের মধ্যে ৪০টি উপন্যাস লিখেছেন পুরুষ, মহিলা লেখকের সংখ্যা ১৫।
(চলবে)
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
KANAD MUKHERJEE
1 মাস আগেএই সমীক্ষাটা পড়লাম। বেশ ভাল কাজ। পরবর্তী প্রকাশের অপেক্ষায় রইলাম।
শাশ্বতী লাহিড়ী
1 মাস আগেজরুরি এবং অভিনব এই সমীক্ষার বিষয়টি। সমীক্ষাটি পরবর্তী গবেষণার ছাত্রছাত্রী দেরও উপজীব্য হতে পারে। তবে বিনীত অনুরোধ যে, যদি এই সমীক্ষাটির সঙ্গে এর বাস্তব কারণটিও অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে বোধকরি সমীক্ষাটি আরও তথ্য সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। সমীক্ষকদ্বয় কে সবিশেষ অভিনন্দন।