আধুনিক বাংলা গীতিকাব্যের প্রথম সার্থক কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তেমন শিক্ষিত না হলেও, স্বচেস্টায় সংস্কৃত, ইংরাজি এবং বাংলা সাহিত্যে অর্জন করেছিলেন আসামান্য বুৎপত্তি। সংস্কৃত এবং ইংরাজি সাহিত্যে প্রভাবিত হয়ে খুব অল্প বয়সেই শুরু করেন কাব্যচর্চা। তাঁর হাতেই বাংলা তন্ময় কাব্যের প্রচলিত ধারায় আসে মন্ময়কাব্যের পালাবদল। রূপ অপেক্ষা ভাবের উচ্ছলতাই ছিল তাঁর কাব্যের মূল আধার। প্রকৃতি, প্রেম এবং রোম্যান্টিকতা সঙ্গে গীতিরসের সুললিত উপস্থিতি, সহজ সরল ভাষায় তৎসম ও তদ্ভব শব্দের যুগপৎ ব্যবহার বিহারীলালের কাব্যকে দিয়েছিল এক অন্যমাত্রা। বিষয় বৈচিত্র, অনুভূতির সূক্ষতা, ছন্দ-অলংকারের সুনিপুণ ব্যবহার এবং প্রকাশ ভঙ্গির অভিনবত্বই ছিল তাঁর কাব্যের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য। রবীন্দ্রনাথের কাব্যগুরু, গীতিকবিতার ‘ভোরের পাখি’র কাব্যজগতে পদার্পন ১৯৫৮ সালে ‘স্বপ্নদর্শন’ কাব্যের মধ্যে দিয়ে। এরপর ‘সঙ্গীতশতক’, ‘প্রেমপ্রবাহিণী’, ‘সারাদামঙ্গল’, ‘সাধের আসন’ প্রভৃতির মতো লিখেছেন বিচিত্র বিষয়ের অসামান্য কিছু কাব্য। ‘ভারতী’, ‘কল্পনার’ মতো পত্রিকাগুলির ছিলেন নিয়মিত লেখক। কাব্যচর্চার পাশাপাশি ‘পূর্ণিমা’, ‘সাহিত্য-সংক্রান্তি’, ‘অবোধবন্ধু’র মতো বেশকিছু জনপ্রিয় পত্রিকাও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনায়। ১৮৯৪ সালের ২৪ মে থেমে যায় বাংলা গীতিকাব্যে মন্ময়তার সুত্রধর ‘ভোরের পাখির’ বিহারীলালের কাব্যিক উড়ান।
© 2022 All Rights Reserved by ketab-e | This website is owned by Bestread Publications and Digital Services Private Limited. Design By Mindmine and Developed By Technophilix.