সমস্তকিছুর মতো কবিতারও দেশ কাল আছে। তারও চেয়ে
বড়োকথা—সার্থক কবিতার রয়েছে একটা দেশ থেকে আরও নানা দেশে, এক কাল হতে অন্য অনেক কালে যেতে পারার সামর্থ্য। এই বইয়ের কবিতা যেমন
নিসর্গ পেরিয়ে প্রবাহিত সভ্যতার কাছে, সভ্যতা অতিক্রম করে
চলে গেছে মানুষ-মানুষীর মনোগত সময় ও অলক্ষ ইচ্ছায়।
তাই এখানে প্রান্ত-উপকণ্ঠ, ঐতিহ্য-আধুনিক, স্মৃতি-সত্তা সদা ভ্রাম্যমাণ। জ্যোৎস্নারাত্রির বিভ্রমের ভেতর যেভাবে রচিত হয়
আমাদের স্বপ্নের বাস্তব, সেরকম দোলাচলের মধ্যে দিয়েই
বিশ্বস্ত হয়েছে ‘গ্রামদেবতা’-র সত্য। সত্য যে বহুমাত্রিক,
তার প্রকাশ যে একরেখ নয়—বর্তমান গ্রন্থের লিখনাবলি তা স্বীকার করতে
করতে পল্লবিত বিচিত্র মাত্রায়, ফলে সংস্কার ভেঙে ফেলতে সে
অকুণ্ঠ। ভাষা ও সাহিত্যে সুস্নাত অধ্যাপক দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর অর্থে জানেন
আমাদের কথাই আমাদের কাব্য, কথনবিশ্বেই কাব্যের গতি অবাধ—অমন
বিশ্বাসে এ-বইয়ের কবিতাগুলি গদ্যকে অঙ্গীকার করেছে, পেয়েছে কাব্যের মুক্তি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একজন ‘তুমি’ কে দেখা
যাবে—কে তিনি? তিনি কি ঋকের বাক্? ‘গ্রামদেবতা’-র আত্মা ও ঈশ্বরী, সেই ‘তুমি’ কে অনুভব করবার
আলোড়নে পাঠাকমাত্রেই স্নিগ্ধ শ্বাসাঘাতে উজ্জীবিত হবেন, অধিকার
করবেন তাঁকে, নিজে অধিকৃত হবেন।
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া