৬১ বছর জীবনকালে সতীন সেনের প্রায় ৩১ বছরই জেলে কেটেছে। স্বাধীনতার আগে সাড়ে সাতাশ বছর কেটেছে ইংরেজের জেলে, বাকি সাড়ে তিন বছর আজাদ পাকিস্তানের জেলে। দেশভাগের পর খণ্ডিত ভারতের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অঞ্চলে চলে না এসে পূর্ববঙ্গেই রয়ে যান সতীন সেন, মনে করেছিলেন এখনো তাঁর অনেক কাজ বাকি। এপারে চলে এলে সতীন সেনের এই জেল ডায়েরী লেখা হত না। মুসলিম লীগ সরকার নির্লজ্জ স্বার্থসর্বস্বতা প্রকট করে গভর্নর-শাসন জারি করে ও নির্বাচনে বিজয়ী নেতাদের গ্রেপ্তার করে, তারই ফলশ্রুতিতে পটুয়াখালির বাড়ি থেকে সতীন্দ্রনাথ বন্দী হলেন ১৯৫৪ সালের ১ জুন।
১৯৫৪-র জুন থেকে ১৯৫৫-র ২৫ মার্চ পর্যন্ত সতীন্দ্রনাথকে পটুয়াখালি, বরিশাল, রংপুর, পাবনা, ঢাকার জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। জেল কর্তৃপক্ষের অবজ্ঞা এবং অনভিজ্ঞতার জন্য অল্প দিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অসুস্থতা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায়। ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে সতীন সেনের শেষ দিনগুলো কাটে। এবং মৃত্যুর দেড় ঘণ্টা আগে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
সতীন সেন নিয়মিত ডায়েরী লেখেননি, ডায়েরীর লেখা অনেক সময় সংক্ষিপ্ত। হয়ত এই দিনলিপি তিনি একান্তই ব্যক্তিগত রাখতে চেয়েছিলেন। জেল কর্তৃপক্ষের অবিবেচনা-অত্যাচার, কারাবন্দীদের নীতিগত দুর্বলতা, ব্যক্তিগত কাজের সমালোচনা- এইসবই তাঁর নিভৃত মনের আয়নায় প্রতিফলিত হয়েছে। যেন নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বলেছেন। একজন শান্ত, সমাহিত মানুষের মনের ছবি এই ডায়েরী— এক সংগ্রামীর শেষ সংগ্রামের প্রতিলিপি এই ডায়েরী।
দারুণ
© 2022 All Rights Reserved by ketab-e | This website is owned by Bestread Publications and Digital Services Private Limited. Design By Mindmine and Developed By Technophilix.
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া