‘বিজ্ঞানরহস্য’, ‘সাম্য’ ও ‘বিবিধ প্রবন্ধে’ এবং পরবর্ত্তী জীবনের অনুশীলন-তত্ত্বমূলক রচনাবলীতে বঙ্কিমচন্দ্রের মনের যে দিকটির পরিচয় মেলে, তাকে তাঁর গবেষণা ও অনুসন্ধিৎসাপরায়ণ গম্ভীর দিক বলা যায়। ‘বঙ্গদর্শনে’র সম্পাদক হিসাবে পৃষ্ঠাপূরণের এবং বিবিধ বিষয়ক আলোচনার মাধ্যমে পত্রিকার অঙ্গসৌষ্ঠব সম্পাদনের জন্য অর্থাৎ সাধারণ পাঠকের মনোরঞ্জনের জন্য বঙ্কিমকে আপাতদৃষ্টিতে অত্যন্ত লঘু বিষয় নিয়েও ব্যঙ্গ ও রসিকতার ভঙ্গীতে কলম ধরতে হয়েছিল— ‘কমলাকান্ত’, ‘লোকরহস্য’ ও ‘মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত’ বঙ্কিমচন্দ্রের বিপরীত বা লঘু দিকের পরিচয়। কিন্তু ঈশ্বর গুপ্তের সমাজবিষয়ক কবিতাগুলি যে অর্থে লঘু, বঙ্কিমচন্দ্রের এই সব হালকা রচনা সে অর্থে লঘু নয়। তাঁর হাসি বা ব্যঙ্গের পিছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপমান-লাঞ্ছনার জ্বালা ও বেদনার অশ্রু লুকিয়ে আছে। ‘বিবিধ প্রবন্ধে’ বঙ্কিমচন্দ্র যে সব চরম কথা বলতে পারেননি, ‘লোকরহস্যে’ ও ‘কমলাকান্তে’ বিদ্রূপের আবরণে সে সব কথা অতি সহজেই বলতে পেরেছেন। বাংলা দেশের চিরন্তন গতানুগতিকতার বিরুদ্ধে হুতোমের পরেই কমলাকান্তী বঙ্কিমের এই বিদ্রোহ। ভঙ্গীর দিক থেকে ‘লোকরহস্য’ও কমলাকান্তী বটে। বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং এই গ্রন্থকে “কৌতুক ও রহস্য” (প্রথম সংস্করণের টাইটেল পেজে) বলে উল্লেখ করেছিলেন।
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া