বঙ্কিমচন্দ্রের রজনী উপন্যাসে প্রেম কী, রূপ কী, সৌন্দর্য কী, দুঃখ কী, শারীরিক প্রেম কী, ঈশ্বর কী ইত্যাদি নানা বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। আবার এ-সব প্রসঙ্গের কীভাবে মীমাংসা করা যেতে পারে, তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র। গঠনশৈলী, চরিত্রায়ন ও বিষয়বস্তুর দিক থেকে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস-সমগ্রের মধ্যে রজনীর স্থান তাই বিশিষ্ট। বঙ্কিমমানস উপলব্ধির জন্যেও উপন্যাসটি সহায়ক হতে পারে নিঃসন্দেহে। রজনী-শচীন্দ্রনাথ এবং লবঙ্গলতা-অমরনাথের প্রণয় কাহিনি গড়ে তুলেছে রজনীর গল্পের কাঠামো। এর একদিকে রয়েছে পরিবার অনুমোদিত প্রেম, অন্যদিকে আপাত অস্বীকৃতির নেপথ্যে নারীর অন্তরে প্রবহমান গভীর প্রেম। জাগতিক জীবনের সঙ্গে প্রণয়ের যে দ্বন্দ্ব, অন্তর্গত প্রেম যে কত বিচিত্রপথগামী হতে পারে রজনী উপন্যাসে তার সমৃদ্ধ পরিচয় মেলে। নীতিবিহর্গিত প্রেমের অপরাজেয় রূপকে বঙ্কিমচন্দ্র সেকালের সামাজিক প্রেক্ষাপটে সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরেছেন।
‘রজনী’ ১২৮১-৮২ বঙ্গাব্দের ‘বঙ্গদর্শনে’ প্রথম প্রকাশিত হয়। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় এর দু-বছর পর ১২৮৪ বঙ্গাব্দে (ইংরাজি ১৮৭৭ সালে)। বঙ্কিমচন্দ্রের জীবদ্দশায় রজনীর প্রকাশিত হয়েছিল আরও দুটি সংস্করণ। উপন্যাসটির বিজ্ঞাপনে বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন, লিটনের Last Days of Pompeii উপন্যাসের অন্ধ ফুলওয়ালী নিদিয়াকে অবলম্বন করে তিনি রজনী চরিত্রটি নির্মাণ করেছেন। আর চরিত্রের জবানিতে কাহিনী বর্ণনার রীতি তিনি গ্রহণ করেছেন উইলকি কলিন্সের Woman in White নামক গ্রন্থ থেকে। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, চরিত্রচিত্রণ ও গঠনশৈলীর দিক থেকে বাংলা উপন্যাসে রজনীর অভিনবত্ব অনস্বীকার্য এবং বাংলা সাহিত্যের একটি সফল উপন্যাস।
দারুণ
© 2022 All Rights Reserved by ketab-e | This website is owned by Bestread Publications and Digital Services Private Limited. Design By Mindmine and Developed By Technophilix.
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া