‘সভ্যতার সংকট’ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখ শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রজন্মোৎসব উপলক্ষ্যে পুস্তিকা আকারে বিতরণ করা হয়েছিল। এই আশি-বর্ষপূর্তি উৎসবই রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় সর্বশেষ জন্মোৎসব। নববর্ষের সায়াহ্নলগ্নে উত্তরায়ণ প্রাঙ্গণে সমবেত আশ্রমবাসী ও অতিথি অভ্যাগতদের সমক্ষে পঠিত এই অভিভাষণই কবিজীবনের সর্বশেষ অভিভাষণ। কবির উপস্থিতিতে ক্ষিতিমোহন সেন সেদিন এই প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন। সত্যদ্রষ্টা কবির বাস্তব জীবন-অভিজ্ঞতার শেষ স্বাক্ষর বহন করছে এই প্রবন্ধটি।
আশি বছর বয়স অতিক্রান্ত অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ সমগ্র মানবজাতির জীবনে দেখেছেন সভ্যতার সংকট। মানব জাতির ইতিহাসে এই সভ্যতার সংকটে তিনি স্বভাবতই বিচলিত। এই প্রবন্ধ যখন লিখছেন তিনি, তখন শুরু হয়ে গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যে ইউরোপের জ্ঞান ও বিজ্ঞান একদিন সমস্ত মানব জাতিকে পথ দেখাবে বলে ভাবা হয়েছিল, সেই ইউরোপ আজ সমস্ত পৃথিবীর বুকে ডেকে এনেছে ধ্বংসের তাণ্ডব। রবীন্দ্রনাথ আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘প্রত্যহ দেখতে পেলুম, সভ্যতাকে যারা চরিত্র-উৎস থেকে উৎসারিতরূপে স্বীকার করেছে, রিপুর প্রবর্তনায় তারা তাকে কি অনায়াসে লঙ্ঘন করতে পারে’। কিন্তু ঔপনিষদিক চেতনায় উদবুদ্ধ হয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেছেন, একদিন পাশ্চাত্যের এই লালসার সামনে প্রাচ্যের ত্যাগের বাণীই প্রাচীর হয়ে দেখা দেবে। ‘আজ আশা করে আছি, পরিত্রাণ কর্তার জন্মদিন আসছে আমাদের এই দারিদ্রলাঞ্ছিত কুটীরের মধ্যে; অপেক্ষা করে থাকব, সভ্যতার দৈববাণী সে নিয়ে আসবে, মানুষের চরম আশ্বাসের কথা মানুষকে এসে শোনাবে এই পূর্বদিগন্ত থেকেই’। প্রবন্ধের শেষ রবীন্দ্রনাথের চরম আশাবাদই ধ্বনিত হয়। রবীন্দ্রনাথ আশা রেখেছেন মানুষের শুভ চৈতন্যের প্রতি। ‘কিন্তু মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ, সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রক্ষা করব’। প্রবলপ্রতাপশালীর ক্ষমতা ও মদমত্ততা ও অহঙ্কার পরিণতিতে বিনষ্ট হবেই এই তাঁর গভীর বিশ্বাস। উপনিষদের বাণী উদ্ধৃত করে তাই তিনি বলেন, ‘অধর্মেণৈধতে তাবৎ ততো ভদ্রাণি পশ্যতি…’ অর্থাৎ, অধর্মের দ্বারা মানুষ বাড়িয়া ওঠে, অধর্ম হইতে সে আপন কল্যাণ দেখে, অধর্মের দ্বারা সে শত্রুদিগকেও জয় করে। কিন্তু পরিশেষে একেবারে মূল হইতে বিনাশ পায়’।
দারুণ
অ-তুলনীয় ❤️ , সমাজ ও মানুষ যত সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষ তত-ই যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে, এবং সমাজের মধ্যে থাকা বিভিন্ন বৈষম্য আরও প্রক্ষর হয়ে উঠছে।
© 2022 All Rights Reserved by ketab-e | This website is owned by Bestread Publications and Digital Services Private Limited. Design By Mindmine and Developed By Technophilix.
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া