প্রকাশিত হল ‘অরণ্যার কবিতা’। অরণ্যা সরকারের এই গুচ্ছ কবিতায় রয়েছে— প্রকল্প, অন্যকথা, অনার্য স্বপ্নের রিলে রেস, গোপন কথাটি, এবং দুপুরের স্বগতোক্তি— এই পাঁচটি কবিতা।
প্রকল্প
‘প্রকল্প’, কী বানাও রোজ?
প্রতিটি চৌকোয় ধকধক করছে সাদা
একফালি অসুন্দর চাখতে গিয়ে
মেহনতি সংগীত হয়ে গেল রাগিনীচর্চা
রাত ঝেড়ে ঝেড়ে স্বরবর্ণ কুড়িয়ে নিল
একার আঙুল।
ওই দ্যাখ, রং উপড়ে নিচ্ছে ড্রয়িং খাতার বাগান
সহমত ফিরিয়ে নিল সম্পর্ক জ্যামিতি
কী বানাবে স্লিপিং পিলের বৃত্ত?
সাদার খিদেটুকু চটকেই বরং তৈরি হোক
পিঠ ও দেয়ালের জমজমাট বিচ্ছেদশিল্প।
অন্যকথা
‘উর্বরতা’, এভাবে ঝুঁকো না
খাদ পুঁতেছি, বাগানবাসী কিছু গান রাখা আছে
পুরোনো ছাতার একা কথা ওকে সঙ্গ দেয়
স্বরলিপি বয়সে ও কিছু পাখি পাবে, পাপ পাবে
বেশ আহ্লাদে চাঁদচচ্চড়ি বিলোবে
তারার নথ ছুঁইয়ে ঘুম ভাঙাবে নীল ইশারার
‘অরূপ অরূপ’ বলে অতৃপ্তি ডেকে গেলে
ফিরেও তাকাবে না কুসুমসরণি
থাক, থাক, প্রজ্ঞা রেখো না ওভাবে
ইঞ্চি ইঞ্চি প্রেম নীরবে শেখাবে
লাবণ্যেরও লড়াই থাকে, থাকে বিমূর্ত আক্রমণ
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
অনার্য স্বপ্নের রিলে রেস
এক-একটা জীবন থাকে। লেঙ্গি খাওয়া। জীবনের কাটপিস।
নদীপাখিকুয়াশা ফেরত। জন্মরুগ্ণ বিশ্বাসের ঘাটে উশখুশ নোঙর।
ব্যঞ্জনার দিকে যেতে চাওয়া,
অথবা চাওয়ার শব্দ বিমূর্তে ছড়িয়ে দেওয়া শুধু।
হলুদ জ্যাকেটে তার উত্থান, চলার তেষ্টায় কিছু সাজুগুজু শরবত
বহুবর্ণ পদচ্ছাপ শোনায় ফিরে-আসাদের প্যাথোজ। এগোয়।
আয়নাতাড়িত। গন্তব্য মানে না তাকে। পথও পলিকে তুলে নেয়।
মেগাসিটির দিকে চলে যাওয়া রাস্তায় শুধু পড়ে থাকে কলমি ডোবার ঋণ
ভাঙা স্লেটের বিষাদ, নরম উনুনে সরপরা দুধের কড়াই
সেসব কুড়োতে আসে অন্য কোনো জিভের যৌবন
গোপন কথাটি
কত যে স্নায়ুযুদ্ধ, দৌড়ঝাঁপ শেষ ট্রেনে বাড়ি ফেরে
অপেক্ষা রাখে না, বিস্ময় জমে না কোথাও
নীলের দরদামে সময় চলে যায়
যেতে যেতে মনে হয় ওই ঝুপুস ভিজে ওঠা বাড়িটিকে চিনি
দোলনচাঁপার ঝাড়, কলাবতী গোধূলি আমারই শব্দ সব
আমারই মায়ার আকর
এভাবে মানুষ উধাও হয়, অবুঝ নীল গজায় পাঁজরের ডালে
শরীর আমি হলে মানুষই নিভন্ত বীজ, জাল হাতে নেমে যাওয়া
উপশম থাকে কিছু ভুলে যাওয়া বন্ধুর নামে
খোঁজ থাকে
এত যে উঁকিঝুঁকি, তোলপাড়, বলো ঝরনা কলম
বলো সুলেখা দোয়াত
কিসের জন্য সব ? কাকে ঠিক ‘প্রকৃত’ বলে?
যাওয়া আর ফেরার প্রভেদ বুঝি না বলে
শূন্য বড়ো হয়, শূন্য ঝুলে থাকে
স্নানে যেতে যেতে হৃৎপিণ্ড বলে যায়
নিজেকে নিজের থেকে বাঁচাতে চেয়েছি শুধু
আর ঘরের জন্য খুঁজেছি একটা ঘর—
দুপুরের স্বগতোক্তি
বোতামের উপর ঝুঁকে আছে কুহক। ওর একটা স্থায়ী শীতকাল চাই। হিমগন্ধকে ক্রমাগত ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে বরফকাতর দুপুর। দুপুরগুলো মায়ের ক্লান্তি হয়ে গড়িয়ে নিচ্ছিল। একটা বয়স চাই দেখার।
এইসব দেখা থেকে উঠে আসতে পারে কিছু সাফ কথা। দৃশ্যফুঁড়ে ঢুকে যেতে পারে
প্রমিথিউস। ফসল হাতে আলো জ্বেলেছিল যে প্রথম মানুষ তাকে ‘ফিরে এসো’র মধ্যে রাখছি।
মদের সঙ্গে দুঃখ খাই না এখন।
সভ্যতাগুলো দলা পাকিয়ে পাকিয়ে আবার একটা আগুনগোলা।
ফুটো দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে ঘিলু, ডিপ্রেশন, অন্ধ লেফাফা
হে মহামান্য প্ল্যানিং, শীতশব্দে সহজ করো আমাদের গম্ভীর পাতাদের।
ডিসেম্বরেরও একটা ম্যাজিক বাড়ি চাই। ঠাণ্ডা বুক চাই বিলিয়ে দেবার মতো।
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন