preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
চর্চার অতিনির্ণয়
কথোপকথন

চর্চার অতিনির্ণয়

এই বিভাগ কথোপকথনের। নতুন। বিভাগীয় শুরুয়াৎ-এর জন্য সিন্ধু সোম-এর দ্বারস্থ হ’লে, তিনি কথোপকথন চালালেন রঘু জাগুলিয়ার সঙ্গে। রঘু জাগুলিয়া: সুন্দরবনে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। চার-পাঁচবছর হাতে গোনা কয়েকটি কবিতার পত্রপত্রিকায় লেখালেখি। নিজস্ব কোনো কবিতার বই নেই। ২০১৪ সালে কেমিস্ট্রিতে এমএসসি আর টিউশন পড়ানোর ফাঁকে কবিতা বই কেনা আর পড়া আর ইদানিং দলিত সাহিত্য, প্রান্তিকতার রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা। জীবনধারণের জন্য আপাতত চাকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই কথোপকথন, সিন্ধুর প্রস্তাবমোতাবেক, চলেছে হোয়াটসঅ্যাপ-এ। টাইম স্ট্যাম্প অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে, যাতে কথার পিঠে চলা কথার সময়ান্তর বোঝা যায়।

[27/10, 2:05 pm] সিন্ধু সোম: আচ্ছা রঘু, কবিতায় আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে তুমি সেদিন কিছু বলছিলে। একটু বিশদে বলো তো!

[27/10, 2:10 pm] রঘু জাগুলিয়া: আমি সম্পূর্ণ আঞ্চলিক লেখা কিছু কিছু পেলেও। একটা পুরো বই বা যেভাবে ভাষার কাজের উপর, বিভিন্ন চিন্তা দিয়ে গড়ে ওঠে তার সংখ্যা নেই বললেই চলে।

মানে, উৎপল যেভাবে ক্রাফ্ট আনেন, আমি বলি ঐ ক্রাফ্টে আঞ্চলিক বাংলা ভাষা দিয়ে হোক।

মানে আঞ্চলিক দিয়ে যেমন চাই পাঠ্যবই, সেই জায়গার ভাষাকে নিয়ে কেউ পড়ুক, তেমনি কবিতায়।

এত আঞ্চলিক ভাষা প্রতিটি ভাষায় লেখা হলে বাংলা ভাষা অন্য রূপ পেত।

[27/10, 2:12 pm] রঘু জাগুলিয়া: আগে তো লেখা হোক। তারপর তার আধিপত্য নিয়ে বলা হবে। আশ্চর্যভাবে থিওরাইজ করা হয়েছে। আধিপত্যবাদের চাপে, দুচারটে শব্দ দিয়ে আঞ্চলিকতাকে ধরা। প্রান্তিকতাকে ভাবতে চাওয়া। এইগুলো দেখতে পাই।

[27/10, 2:17 pm] রঘু জাগুলিয়া: কেন মানুষ আজও বুঝতে পারছে না, ‘কোনঠি যাইটু’, ‘কোনে যাও’ এরকম অ্যাকসেন্ট কলকাতায় এসে বলা খারাপ নয়। কিন্তু যেহেতু সংস্কৃতি মান্য করে রেখেছে, তাই ঐ শব্দে কবিতা লিখলে, গুরুগম্ভীর ভাব হয়ত স্খলন হয় এনাদের। সাধু ভাষা থেকে বা রবীন্দ্রনাথ থেকে কীভাবে শক্তি চট্টোপাধ্যায় নেন তার আলোচনা ফোটে। কিন্তু আঞ্চলিক শব্দের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েই রাখতে পছন্দ সকলে।

[27/10, 2:17 pm] রঘু জাগুলিয়া: ধরো এখন যারা সুন্দর কবিতা লেখেন, বিপ্লব করেন, তারা কেন লেখেন না?

[27/10, 2:18 pm] সিন্ধু সোম: আঞ্চলিক ভাষায় কেন লেখেন না কবিরা? কবিতা কেন লেখা হয় না বলো তো! যাঁরা লেখেন, তাঁরাও নিজেদের আঞ্চলিক কবি বা ‘লোককবি’ ভাবেন। নিজেই নিজেদের আদারাইজ করেন। অন্যরা তো করেনই। অথবা আইটেমাইজ করেন। কেন বাংলা ভাষার কবি বলা হবে না তাঁদের?

কেতাব-ই'র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন manuscript.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

[27/10, 2:18 pm] সিন্ধু সোম: আর প্রয়োগের দিক থেকেও সে সব কবিতার দর্শনগত, গুণগত মান খুব যে উন্নত, তা নয়! কেন বলে তোমার মনে হয়?

[27/10, 2:19 pm] সিন্ধু সোম: মানদণ্ডটা কি মান্যভাষার হাতে থেকে যাচ্ছে?

[27/10, 2:20 pm] রঘু জাগুলিয়া: হ্যাঁ এটা যেমন আছে...তেমনি আঞ্চলিক কবি বা লোককবির কবিতাটা কিন্তু আঞ্চলিক ভাষায় গড়ে উঠলেও, কবিতা কী বলছে সেটা বড় কথা। কবিতা কিন্তু বিশ্বমানের হয়।

[27/10, 2:21 pm] সিন্ধু সোম: ফাইন আর্টসে কি লোকালের জায়গা হয় না —এই জাতীয় কিছু ব্যাপার থাকে? শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে লোকগানের যে দূরত্ব? কিন্তু লোকগান তো যথেষ্ট পপুলার এবং সেলি্বেটেড, আঞ্চলিক কবিতা সেই জায়গাতে পৌঁছেছে না কেন?

[27/10, 2:22 pm] রঘু জাগুলিয়া: আমার তো তাই মনে হয়। মান্যভাষার হাতে কবিতা চমকাচ্ছে। একটুও তাকে নিয়ে কবিতায় ব্যবহার করায় মনোযোগ নেই।

ধরো কেউ একজন লিখছেন খুব সুন্দর একটা দর্শনের কথা। কিন্তু সেই দর্শনটা আঞ্চলিক ভাষায় হলে তার গুরুত্ব কমত না মোটেই। বরং আরও লোক কবিতা পড়ত‌। দূর গ্রামের এলাকায় কেউ লিখত তার নিজের ভাষায়। সেক্ষেত্রে কালেকটিভ আনকনসাসকে আরও বোঝা যেত।

[27/10, 2:22 pm] সিন্ধু সোম: না মানে কবিতাও তো নির্মাণ, কবিতাকে তো বিশ্বমানের করতে হবে! অথবা, কেউ বলতেই পারেন, আঞ্চলিক কবিতার সেই দায় নাই। সে বিশ্বমানের হওয়ার দায়কে অস্বীকার করছে তখন!

[27/10, 2:25 pm] সিন্ধু সোম: এটা একটা গত। ভাবনার গত। মান্যভাষায় কবিতা চর্চাকারীরা প্রান্তিক মানুষকে, আঞ্চলিক বলা মানুষকে সাধারণত মূর্খ ভাবেন। কিন্তু আঞ্চলিকেও বহু গূঢ় ধারণার কথা, ধাঁধা, প্রবচন, লোকায়ত দর্শন আমরা দেখেছি। তাহলে অসুবিধা কোথায়? পরিভাষার অসুবিধা যদি বলি, সে তো বাংলার মান্য ক্ষেত্রটিতেও কম না। তবু তো লোকে এ ভাষা ও ভাষা থেকে নিয়ে দিব্যি কবিতা লিখছে।

[27/10, 2:26 pm] রঘু জাগুলিয়া: ছোটো ছোটো চিত্রকল্প, মেটাফর, প্রতীক মান্য ভাষায় যেভাবে আনা হয়, সেরকম যদি আঞ্চলিক মেটাফরকে নিয়ে বা প্রতীকে তুলে আনা, তাকে নিয়ে কবিতায় এগিয়ে যাওয়াও একটা বিরাট রাজনীতি।

মনে হয় সাহস পায় না।

গানের কথা আলাদা। বরং গানে এটা হয়। তুমি যেটা লোককবি বললে সেটা হয় তাদের সাথেই।

[27/10, 2:28 pm] রঘু জাগুলিয়া: এই যে দেখছ বলছ, এটা কী ময়মনসিংহ গীতিকার মতন আজকের আঞ্চলিকতা হয়ত নেই। সেখানে অন্য প্রতীক অন্য চিত্রকল্প চলে এসেছে সেটাকে নিয়ে ভাবনার কথা।

[27/10, 2:38 pm] রঘু জাগুলিয়া: মূর্খ তো ভাবেন। তাছাড়া অ্যাকসেন্ট শুনে হাসে।

এর পিছনে আমাদের বেড়ে ওঠা, ইস্কুল কলেজের শিক্ষাও আছে। মাস্টারমশাইদের ঠিক করে দেওয়া আছে। কবিদের ছন্দ ঠিক করা আছে।

নিরক্ষর আর অশিক্ষিত দুটো এক নয় বলেই ভাবি।

নিরক্ষরের সামাজিক বোধকে নিয়ে ভাবনাচিন্তার পরিসর খুলে দেওয়াটা কম। যতক্ষণ না তার বাড়ি থেকে কেউ একজন প্রথাগত পড়াশোনা শিখে কথা বলবে ততক্ষণ সমাজ তাকে শুনবে না। কিন্তু যার অক্ষর জ্ঞান নেই, তার জীবনবোধ বা সামাজিক বোঝাপড়া প্রচুর।

গাছগাছঢ়ার নাম মুখস্ত, গাছগাছড়ার কটা নাম এখন আমরা জানি? আমার মেজজ্যাঠা ছিল বা আমার ঠাম্মা । জণ্ডিস হলে কালমেঘ মিছরির সঙ্গে বেটে গুলিবানিয়ে রোদে শুকিয়ে তুলে রাখত। বা আমার পোড়া হলে আমার অন্য এক জেঠা শামুকের নাড়িভুড়ি বের করে ফোড়ার উপর দেওয়ার আধঘন্টায় তৈরি হত ফোড়ার মুখ। কানের গোড়া ফাটলে কোদালে সর্ষের তেল দিয়ে ঘষে কানে দিত, সারত তাতে।

এসব তো ছিলই। কিন্তু এসব করে তারা এগিয়ে এনেছে আমাদের। কোনোদিন তাদের পুছিনি বড় হবার সাথে সাথে এসবের জন্য। যেহেতু গ্রামে কারেন্ট, সরকারী ডাক্তার নেই সেসব দিনে।

এইসব তো কবিতা তৈরি করেও কোথাও অবচেতনে।

[27/10, 2:39 pm] রঘু জাগুলিয়া: ফোঁড়া হলে

[27/10, 2:48 pm] সিন্ধু সোম: কিন্তু এসব তো কন্টেন্টের কথা। বিষয়ের কথা। ফর্ম এক রেখে, অনেকে তো এসব ব্যবহারও করেছেন। যেমন, স্বদেশ সেন এক বিশ্বপটের মাঝে একলাইন লোকাল মোটিফ এনে ফেললেন। বা সব্যসাচী সান্যাল লোকাল চরিত্র, কথক, কবি নির্মাণ করলেন। নিত্য মালাকার প্রচুর লোকাল মোটিফ ব্যবহার করেছেন। আরও বেশ কয়েকজনের নাম বলা যাবে। তাহলে এই কন্টেন্ট অনুযায়ী তাঁদের ফর্মটা বদলে আঞ্চলিক হচ্ছে না। সেটা বোধহয় খানিকটা তাঁদের কসমোপলিটান অবস্থানের জন্য। তাহলে কি আমরা ভূগোলগত একটা সীমা দেখব আঞ্চলিকের ক্ষেত্রে? কিন্তু কসমোপলিটান জীবনের বাইরেও তো লেখা হচ্ছে না। তুমি নিজেও মান্যভাষায় লেখ। কেন লেখা হচ্ছে না? বাধাটা কী হচ্ছে বলে তোমার মনে হয়?

[27/10, 2:51 pm] রঘু জাগুলিয়া: আমি কবিতা বলতে শিখেছি মান্য ভাষায়। এই মোটা দাগের শিক্ষার পিছনে একটা ইকোসিস্টেম থাকে।

সব্যসাচী সান্যাল বা স্বদেশ সেন যেটা করেছেন সে ভাষার সীমাকে ভাঙার। বিশ্বপটের তো ঠিক।

আমি বলছি গোটা বইটা থাকুক।

[27/10, 2:51 pm] সিন্ধু সোম: আঞ্চলিক ভাষাটাকে তো সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে হবে তার লোকায়ত দর্শন সমেত, কারণ সেই দর্শন আয়ত্তে না থাকলে, আঞ্চলিক ভাষা মৃত। আবার তার বিশ্বদর্শনের বোধ থাকতে হবে। এই দ্বৈত অবস্থান কি দিনের পর দিন কঠিন হয়ে পড়ছে? লোকে তো গ্লোবাল ভিলেজ গ্লোবাল ভিলেজ করে খুব লাফাচ্ছে। হাফ প্যান্ট করা হানি সিং ‘আংরেজি বিট’ বের করেছেন দশক দেড়েক আগে বোধ করি! সে সবে তবে লাভ কী হল? বাংলা কবিতার কি একটা বিশাল ক্ষেত্র বাকি রয়ে যাচ্ছে না?

[27/10, 2:51 pm] রঘু জাগুলিয়া: যেমন মিঞা কবিতা আছে

[27/10, 2:51 pm] সিন্ধু সোম: সেটা তো মিঞাদের পজিশনালিটির জন্য

[27/10, 2:53 pm] রঘু জাগুলিয়া:

এহানে শুক্কুরবারের হাট—

কলার কাঁদি নিয়ে হেঁটে যাও কিডা?

কচুশাক, কুমড়ার ফুল, মতিহার

হাড়িয়ার গ্লাস

লুঙ্গি—সঙ্গে কথা বলা চোখগুলা

গেঁথে যায় স্তব্ধতায়

যাও কিডা?

ছায়া দেখি তো আর বোজপার উপায় নি!

শুধু ছায়া হই গেছে সব

আলোর বাটপারি বুঝি না বেশি

তবে কি ছায়াপথে আছি?

এডা শুক্কুরবারের মেলা-হাট!

[27/10, 2:53 pm] রঘু জাগুলিয়া: এই লেখাটা দেখ। এটা কোনো পজিশনের জন্য নয়। সমস্ত কবিতা সে এই ভাষায় লিখতে পারত।

[27/10, 2:54 pm] রঘু জাগুলিয়া: তাতে সেটা হবে না বলা যায় না।

[27/10, 2:54 pm] সিন্ধু সোম: তুমি বা আমার পজিশনালিটিও কিন্তু আঞ্চলিক। তারপরেও গদ্যে আঞ্চলিক ব্যবহারের জন্য আমাকে যথেষ্ট আদারাইজড হতে হয়। অমিতাভ প্রহরাজ আমায় বলেছিলেন, আঞ্চলিক নাকি মশলা! সেটাও তাঁর পজিশনালিটির জন্যই হয়তো‌। মশলা ব্যাপারটা আআটেম সঙে থাকে। আইটেমাইজ করার এটা একটা পদ্ধতি। হয়তো সচেতন ভাবে নয়, কিন্তু অবস্থানের জন্যেই এমন মন্তব্য। আঞ্চলিকে তাঁর নিজের কোনও স্টেক ছিল না। এও শুনতে হয়েছে, আঞ্চলিক পজিশনালিটির নাকি অনেক সুবিধা। কলকাতার লোকের সে সুবিধাটা থাকে না। এ সেই জেনারেলদের সুবিধা নাই, সব ক্ষীর দলিতে খেয়ে যাচ্ছে-র মতো অবস্থা!

[27/10, 2:54 pm] রঘু জাগুলিয়া: মিঞাদের পজিশনালিটি যেমন পাচ্ছি, তেমনি কবিতাও তো পাচ্ছিলাম। ‘এইটা তোর কবিতা না’।

[27/10, 2:55 pm] রঘু জাগুলিয়া: গোটা কবিতাকে চ্যালেঞ্জ করছিল যেখানে।

[27/10, 2:55 pm] সিন্ধু সোম: অথচ ‘পরাণের গহীন ভিতরে’ কী সব কবিতা হয়েছে! কতদিন আগে বাংলাদেশ করে ফেলেছে! সৈয়দ শামসুল হকের আর কোনও কবিতাই আমার ভালো লাগে না। কিন্তু ঐ সিরিজটি অনবদ্য। সম্পূর্ণ আঞ্চলিকে!

[27/10, 2:56 pm] রঘু জাগুলিয়া: ক্ষীর খাওয়াটা একটা না জানার বা নিজেকে এসসি না বলার গুপ্তঘাতকের মতন।

[27/10, 2:56 pm] সিন্ধু সোম: হক যদি আঞ্চলিকেই আরও লিখতেন, হয়তো আরও ভালো ভালো কবিতা আমরা পেতাম।

[27/10, 2:56 pm] রঘু জাগুলিয়া: বাংলাদেশ পেরেছে।

[27/10, 2:57 pm] রঘু জাগুলিয়া: এপার বাংলা পরাণের গহীন ভিতরে র ভাষাটাকে কবিতায় হজম করতে পারেনি বলেই আমার মনে হয়।

[27/10, 2:57 pm] রঘু জাগুলিয়া: সাদিক হোসেন মিঞা কবিতা আগে পড়েছেন বলে মনে হয়। কাটা কবিতাগুচ্ছ ও হরিমলপুর মুসলিম রাজনীতি পাচ্ছি।

[27/10, 2:59 pm] রঘু জাগুলিয়া: কিন্তু এইটা তো বলতে হবে। যেমন আমার মনে হয়েছে, শরৎ মুখুজ্জে বা অমিতাভ দাশগুপ্তের কিছু লেখা আছে আমি এদিক ওদিক পড়েছি, আঞ্চলিক ভাষায়। কিন্তু সেগুলোর রাজনীতি বা কবিতা হিসেবেও খুব বিরাট কিছু মনে হয় নি আমার।

[27/10, 3:00 pm] রঘু জাগুলিয়া: কিছু আদিবাসীদের ভাষায় কবিতার আবৃত্তি শুনি।

কিন্তু যদি গোটা সব্যসাচী সান্যালের কবিতা ঐ ভাষায় হত কি এমন হত!

[27/10, 3:02 pm] রঘু জাগুলিয়া: লেখা হল না। মোটিভ নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। যেমন ‘সাকিনা কিনা’ স্বদেশ সেনের। সুর পাওয়া যায়। কিন্তু তাতে কী হবে।

আমার চাই গোটা ভাষাটা। তা তো করেননি স্বদেশ। নিজস্ব ভাষা তৈরির খেলা থাকে প্রতিটি কবির।

যদি কোনো আঞ্চলিক কবিতার একই ভাষার চারজন কবির কবিতা টেস্ট নেওয়া যেত তাহলে বোঝা যেত আসলে সেই ভাষাটার কিছু একটা হয়েছে।

[27/10, 3:05 pm] রঘু জাগুলিয়া: পরাণের গহীন ভিতর, ভালো লাগে ভাষাটার জন্য। কিন্তু কবিতা তো অনেককিছু দেবে। সেটাতে অসফল বই বলেই মনে হয়।

[27/10, 3:05 pm] সিন্ধু সোম: না, এইটা আবার সমস্যার। সব্যসাচী তাঁর পজিশনালিটির জন্যই ওই ভাষা বাছবেন না। সাঁওতালি ভাষাতে যার স্টেক আছে, সেই পজিশনালিটির কাউকেই তো বাছতে হবে প্রথমটায়। আমরা আঞ্চলিকের উপাদান হিসেবে কিছু ব্যবহার করতে পারি, এবং পাঠক হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে সাঁওতালী, রাজবংশী, নেপালী ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষা, যা বাংলায় বাংলাভাষার সঙ্গে ক্ষমতা সম্পর্কে প্রান্তিক, এইসব ভাষা শিখতে পারি। চর্চার জন্য, এই ভাষার সাহিত্য পড়ার জন্যই শিখতে পারি। কিন্তু এই ভাষাগুলো স্বতন্ত্র ভাষা। আঞ্চলিকও নয়, বাংলাও নয়।

[27/10, 3:06 pm] রঘু জাগুলিয়া: একদম।

[27/10, 3:08 pm] রঘু জাগুলিয়া: রাঢ়ী, কামরূপি, বাঙ্গালি, এইসব আঞ্চলিক ভাগ।

কিন্তু সুর যা শব্দ থেকে উঠে আসে, মুখের কথায়, তা কবিতার সুর হতে পারত। প্রচুর কাজ হতে পারত।

আঞ্চলিক বলে তাকেও একঘরে করে রাখা।

[27/10, 3:08 pm] সিন্ধু সোম: হতে পারে। কিন্তু সমসাময়িক কবিতার দর্শন দেখলে, দর্শনের দিক থেকেও বেশ সমৃদ্ধ। কিন্তু নাগরিক বোধের তৃপ্তি যদি আশা কর, কেন দেবে সেই কবিতা? সে তো নাগরিক জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না! সেই ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে কখনও আমাদের আদান-প্রদান হয়েছে কি এ ব্যাপারে? তারা কতটা জীবনবোধ দর্শন খুঁজে পায়, সেই খোঁজ আমরা নিয়েছি? নাকি নিজের বোধ প্রজেক্ট করছি?

[27/10, 3:09 pm] রঘু জাগুলিয়া: সেইটা বলছি না। পরাণের গহীন ভিতর ছাড়া অন্য একজন লিখতে পারত অন্য নামে। কিন্তু তা তো নেই।

[27/10, 3:10 pm] সিন্ধু সোম: কবিতা সাধারণত জেনারেলাইজেশন। কিন্তু তার বাহনকে, শরীরকে, প্রাণকে আঞ্চলিকের গণ্ডিতে ঠেললে তা আর থাকবে না। সেই কাঠামোটিতে তখন অবজেক্টিভ মাচাটি ধ্বসে পড়বে। তখন সেই ভাষাভাষীর রসগ্রাহীদের মতামতের গুরুত্ব বাড়বে। তাদের সঙ্গেও আদান-প্রদান করতে হবে। তাদের অনুভবকে মান্যতা দিতে হবে, র‍্যাদার শিখতে হবে। চর্চায় আনতে হবে আঞ্চলিক জীবনবোধ। সেখানে এক আমি নাই, বহু রয়েছে।

[27/10, 3:10 pm] সিন্ধু সোম: কী রকম? একটু বিশদে বল

[27/10, 3:13 pm] সিন্ধু সোম: কবিতা তো মুখের কথা নয়। ফলে মুখের কথার টেম্পোরাল সুর সেখানে ধরা পড়বে না। বরং তার নিজস্ব সুর তাকে খুঁজে নিতে হবে। সংলাপের সুর টেনে সে খুব বেশি দূরে এগোতে পারবে না। তাকে মুখ, চোখ, নাক, কান, চামড়া থেকে মন, সবকিছুর কথা হয়ে উঠতে হবে। সব ছাপিয়ে যেতে হবে হয়তো।

[27/10, 3:13 pm] রঘু জাগুলিয়া: ধরো আর একটা বই। পরাণের গহীন ভিতর। সেই আঞ্চলিক মানুষদের নাগরিক বোধকে নিয়ে। সেটা এই বিখ্যাত কবিতার নাগরিক বোধ হয়ত নয়।

তারা বাড়িয়ে তুলবে তাদের দর্শনকে। যেভাবে মান্য ভাষায় উৎপল বা শক্তি পাশাপাশি দুটো বিখ্যাত কবিকে পাই। তাদের লেখা পত্র তো আলাদা। দুজনেই জায়গা করে নিয়েছেন একই মান্যভাষার ভিতর থেকে।

[27/10, 3:14 pm] রঘু জাগুলিয়া: মুখের কথা কবিতা নয় এইটা বলা শক্ত। যে উপমা বা যে ন্যারেটিভ কবি লিখছে, সবকিছুই মিশে থাকে। অবশ্যই তুমি যেটা বলছ বুঝতে পারছি। আলটিমেটলি আমি লিখছি।

[27/10, 3:14 pm] সিন্ধু সোম: না, আমার আপত্তি এইখানে। তুমি লিনিয়েজের কথা বলছ। সেটা সব সময় কবিতা দেবেই, এমন কোনও মানে নাই। কিন্তু আর ‘দেওয়াতে অসফল’, আমি এই অংশটুকুর বিরোধিতা করলাম।

[27/10, 3:15 pm] রঘু জাগুলিয়া: হ্যাঁ ঠিক।

[27/10, 3:15 pm] রঘু জাগুলিয়া:

মোর বিটি বড় হয়ইছে

মোরা বৌ-বিটি এক খাটে ঘুমাচ্ছি

ওরা সরকারী লোক, পার্টির লোক

ওরা ছবি চায়, ভোটার কার্ড চায়

ভোট দিলে ঘর দেবে বলছিল

এবারটায় বাড়ি বাড়ি শাড়ি দিছে,

খাওয়ার টেবিল দিছে—

ভোটের দিন জর্দাপান, মাংসভাত

কচুপাতার সবজে দিনে ভোট

দেখতিছি, আমার বৌ-এর মুখ লাল

মেয়ের শাড়ি লাল

আমাদের সব ছবির রঙ লাল।

(এই লেখার কারিগর নিশীথ মাঝি, যার মুখে শুনেছিলাম কালো রঙের বিশেষত্ব)

[27/10, 3:16 pm] রঘু জাগুলিয়া: মুখের ভাষার কবিতা বলেই লিখেছি। এই ভাষা আমার নয় আবার নয় বলতেও পারি না।

[27/10, 3:16 pm] রঘু জাগুলিয়া: অন্যের থেকে শোনা।

[27/10, 3:17 pm] রঘু জাগুলিয়া: আমি কবিতাকে কোনো ঘেরাটোপে আর ভাবি না। যা খুশি হবে।

[27/10, 3:18 pm] সিন্ধু সোম: খুবই উমদা কবিতা। কিন্তু যে মুহূর্তে লেখা হচ্ছে, তখন তা আর মুখের থাকছে না। মুখ ছাপিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ মায় ছয়খানা ইন্দ্রিয় ছাপিয়ে যাচ্ছে, এইটাই বলতেসি। আবার এইটাকে জোরে জোরে পড়লে এটা অন্য একটা ক্ষেত্রে প্রবেশ করবে। লেখার ক্ষেত্রটাকে ছাপিয়ে যাবে। বোঝাতে পারছি?

[27/10, 3:18 pm] সিন্ধু সোম: আমিও ফ্লুইডিটির কথাই বলতেসি

[27/10, 3:18 pm] রঘু জাগুলিয়া: একদম একদম।

[27/10, 3:19 pm] রঘু জাগুলিয়া: আমি সেটা বুঝেছি বলেই তোমাকে আগে বলেছি।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

Image Description

সব্যসাচী

1 মাস আগে

Sindhu Som কাজটা করে যাও। ভাল হচ্ছে। তবে ওই স্টেকের ব্যাপারটাই মুখ্য। শেকড়ের কনসেপ্টও তাই। কমল চক্রবর্তীর প্রথমদিকের লেখাগুলো পড়লে সিংভূম-এর চরিত্র উঠে আসে। কিন্তু এই অনবরত ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তনের জায়গায় মানুষ স্টিক করতে চাইবে কেন? সে কবিতা লিখতে চাইছে। কবিতা একটা ভীষণ আনডিফাইন্ড আর্টফর্ম, অনেক স্বাধীনতা থাকে যার মূল হয়ত ইনভেস্টমেন্ট-এ তেমন খরচা হয় না বলে (অন্তত লিখতে, খ্যাতি বা প্রচারের জন্য যে লগ্নী লাগে তার কথা বলছি না)। হয় উপায়হীন মানুষ স্টিক করবে, নয় রাজনৈতিক একটা স্ট্যান্ডপয়েন্ট-এ স্টিক করার জন্য করবে। বা একাডেমিক মানুষ। রুদ্র পতি বা বিনোদ বেরার কথা এই সূত্রে মনে পড়ল। সুকুমার চৌধুরী বিদর্ভে থেকেও বহুকাল পুরুলিয়া নিয়েই থেকেছিলেন। সৈকত রক্ষিত, নির্মল হালদাররাও প্রথমদিকে জিয়োপোয়েটিক্যাল কাজ করেছিলেন। কিন্তু ওই আর কী, কবিতাই তো লিখতে এসেছে, আঞ্চলিক কবিতা নিয়ে সারাজীবন কাটানোর জন্য তীব্র একটা মোটিভেশান চাই। সেটা ডেমোগ্রাফিক বদলের জন্যই সম্ভব হয় না। আর যাদের শেকড়হীন অস্তিত্ব তাদের নিজস্ব সততা, ওই শেকড়হীনতাতেই, তাকে প্রশ্ন করার কারণ তো দেখি না।


Image Description

রঘু জাগুলিয়া

1 মাস আগে

খুবই রান্ডাম কথা বলেছি আমরা, আমি কলকাতা থেকে বাড়ি ফিরে যে ভাষাটায় কথা বলি সেটার ক্রিয়াপদ, বা অন্যান্য শব্দে মানুষের এক্সপ্রেশন বদলে যায়। এটা ডেমোগ্রাফিক চেঞ্জ তো আছেই। মেদনীপুরের একটা অরিজিন সুন্দরবনে এসেছে, কিন্তু তারা 'দিছু' বলে না। 'মোর' বলছে না। ইত্যাদি। এখন 'দিছে' বলে। 'দেখতিছি' বলে ইত্যাদি আমি বড় হয়েছি কিছুটা দেখতিছির মধ্যে। কবিতা কেন আটকে থাকবে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ভাষার মধ্যে এটা তো বুঝতে পারছি। আপনি কেন 'কালো পাথরে বাড়ি ২' তে ইংরেজীতে সম্পূর্ণ কবিতা লিখলেন, আর শান্তিনিকেতনের কাছাকাছি থেকেও, কেন একটা কবিতা বোলপুরের গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ ভাষায় লিখলেন না? এইটা আমি এখনো বুঝতে পারিনি।


Image Description

রঘু জাগুলিয়া

1 মাস আগে

খুবই রান্ডাম কথা বলেছি আমরা, আমি কলকাতা থেকে বাড়ি ফিরে যে ভাষাটায় কথা বলি সেটার ক্রিয়াপদ, বা অন্যান্য শব্দে মানুষের এক্সপ্রেশন বদলে যায়। এটা ডেমোগ্রাফিক চেঞ্জ তো আছেই। মেদনীপুরের একটা অরিজিন সুন্দরবনে এসেছে, কিন্তু তারা 'দিছু' বলে না। 'মোর' বলছে না। ইত্যাদি। এখন 'দিছে' বলে। 'দেখতিছি' বলে ইত্যাদি আমি বড় হয়েছি কিছুটা দেখতিছির মধ্যে। কবিতা কেন আটকে থাকবে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ভাষার মধ্যে এটা তো বুঝতে পারছি। আপনি কেন 'কালো পাথরে বাড়ি ২' তে ইংরেজীতে সম্পূর্ণ কবিতা লিখলেন, আর শান্তিনিকেতনের কাছাকাছি থেকেও, কেন একটা কবিতা বোলপুরের গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ ভাষায় লিখলেন না? এইটা আমি এখনো বুঝতে পারিনি।


মন্তব্য করুন

লেখক

সিন্ধু সোম-এর জন্ম ১৯৯৫। ছোটনাগপুরের কোলে বড় হয়ে ওঠা, অজয় ও বরাকরের মাঝে বিস্তীর্ণ এলাকায়। আদি বাড়ি বুলবুলি, মালদা। এ যাবৎ জলপাইগুড়ির বাসিন্দা। দিল্লি ইউনিভার্সিটি থেকে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স। সিন্ধু মূলত গদ্য লেখে। বাংলা আখ্যানের ‘মূল’ নামাঙ্কিত অংশটির আশেপাশে যে সব অখ্যাত নাভিশ্বাস, তাই সে গদ্যের উপজীব্য। সে ভাষা 'মান্য' বিশেষণ খসিয়ে কেবল বাংলাটুকু রাখতে আগ্রহী।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন