preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
দাদা, একটা ভালো থ্রিলার হবে?
রিভিউ

দাদা, একটা ভালো থ্রিলার হবে?

13 Jun, 2024.

ফি মাসে হইচই করে যে বাংলা থ্রিলারগুলি পাতে পড়ছে আর সেই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে নেত্য চলছে, সে সব কি আদৌ মুখে তোলার যোগ্য?

বাঙালির সব গ্যাছে। আগে যা ছিল সব ভালো ছিল, এখন যা হচ্ছে সব খারাপ— এমন একটা ফিকির তো আছেই। তা সে কথা আর পাঁচ জায়গায় সত্যি না হলেও হালের হইচই প্ল্যাটফর্মের থ্রিলার সিরিজ দেখে খুব বেশি করে মনে হয়। বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়াতে যদি কষ্ট হয় তাহলে বলা ভালো বাংলার সর্ববৃহৎ ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সাম্প্রতিক থ্রিলারগুলির পাশে বসাও যাচ্ছে না ঠিক করে! হইচই আর কতদিন কাঁচা কাঁচা, চেয়ে থাকা থ্রিলারগুলো দামী ডিনার সেটে পরিবেশন করে, পেইড রিভিউয়ের ফাইভ স্টার নিয়ে চুষবে? মাস কয়েক আগে রিলিজ হওয়া ‘অচিন্ত্য আইচ’ আর সম্প্রতি রিলিজ হওয়া ‘আবার রাজনীতি’ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু সংখ্যক দর্শকের যা নাল-ঝোল পড়ছে তাই দেখে সিরিজ দুখানা দেখতে বসেছিলাম। প্রচুর ঢপের কেত্তন থাকলেও দ্বিতীয়টি অবশ্যই একবার বিঞ্জ ওয়াচ করাই যায় কিন্তু মা কালীর দিব্যি বলছি, প্রথমটির মতো এত খারাপ কোর্টরুম ড্রামা সিরিজ জন্মে দেখিনি ভাই।

‘অচিন্ত্য আইচ’ নিয়েই আগে প্যাঁচাল পাড়া যাক। এমনিতে এই কোর্টরুম সিরিজ ব্যাপারটার হঠাত হিড়িক উঠেছে সে সিনেমা হোক বা ওটিটিতে। জনগণ এখন এটা ভালো খাচ্ছে। সেই আনন্দে ‘জলি এলএলবি থ্রি’-এর মেকিং শুরু হয়ে গেছে। বাংলা বাজারে দু-তিনটি ধারাবাহিক এই ট্রেন্ডের পিণ্ডি চটকাতে নেমে পড়েছে। ওদিকে নেটফ্লিক্স একটা মারকাটারি সিরিজ নামিয়ে ফেলেছে। সেই বহতা পানিতেই একটু গা ধুয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল হইচই! বলা হয়েছিল যে একটা সিরিজ আসছে যেটা নাকি বিরাআআআআআট ব্যাপার। বাপের জন্মে বাংলায় এমন কাজ নাকি কেউ দেখেনি।

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

সিরিজ শুরু কোল্ড ওপেনিং দিয়ে শুরু, যা নাকি এখনকার সব থ্রিলার সিরিজের স্টাইল। তা ওপেনিংটি ভালোই ছিল, আশা জাগানোর মত ভালো। কিন্তু যে দুই অভিনেতার অন স্ক্রিন টক্কর নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া একেবারে আহ্লাদে আটখানা, তাদের প্রথম সিনটি দেখেই মনে হলো সন্ধেবেলা টিভি খুলে একালের হিট ধারাবাহিক ‘গীতা এলএলবি’ দেখতে বসেছি! এমন অদ্ভুত মেগাসিরিয়াল মার্কা সিন পেয়ে সম্ভবত শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ও ভেবলে গেছিলেন। নাহলে এত মধ্যমানের অভিনয় করার মতো অভিনেতা তিনি নন। সিরিজের নায়ক ঋত্বিক চক্রবর্তী এই নিয়ে বোধহয় n-তম বার একটি আন্ডারডগ চরিত্র পেয়েছেন এবং এই ধরনের চরিত্রে উনি যেমন অভিনয় করেন, তেমনই করেছেন, অর্থাৎ ঋত্বিকসুলভ ভালো। কিন্তু ‘গোরা’-তে চরিত্রটি যেমন স্পষ্ট ছাপিয়ে ওঠে, দর্শকের মাথায় বসে যায়, এখানে তা হয়নি আর তার একমাত্র কারণ চিত্রনাট্যের দুর্বলতা।

সে দুর্বলতা যেমন প্লটে, তেমনি দৃশ্য নির্মাণে। লোয়ার কোর্ট মানেই সেখানে ছাগল-মুর্গি ঢুকিয়ে দিতে হবে? আর কোনোভাবে বোঝানো যায় না? আন্তর্জাতিক স্তরে কোর্টরুম ড্রামা বলতে যে নামগুলো মাথায় পপ আপ করে সেগুলো না হয় আর এখানে ড্রপ করলাম না। দেশের কাজগুলোই ধরুন না— ‘মামলা লিগাল হ্যায়’, যে সিরিজটি এখন সবার মুখে মুখে সেখানে লোয়ার কোর্টের ক্যাওস বোঝাতে একটি দৃশ্যই যথেষ্ট— এজলাসে জাজ ঢোকার আগে তড়িঘড়ি করে বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কাঠগড়ার ঘেরাটোপে যা সত্যিই লোয়ার কোর্টের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কিন্তু না, বাংলায় কোর্ট দেখাতে গেলে বাটি নিয়ে সেই ছেগলে যেতেই হবে!

সিরিজের কাস্টিং অসাধারণ। হুজ হু-দের হুড়ুমতাল একেবারে। একদিকে অলকানন্দা রায়, তার সঙ্গে লোকনাথ দে। অন্যদিকে দুলাল লাহিড়ি, সুরঙ্গমা— কিন্তু শুধু ভালো অভিনেতা নিয়ে নদী পার করা গেলে তো হয়েই গেছিলো। এত কাঁচা একটা গল্পের প্লট কী করে ওটিটি কেষ্টবিষ্টুরা পাশ করে দিলেন জানতে আর টি আই করা উচিত। কোর্টরুম ড্রামার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল সওয়াল-জবাব, একজনের যুক্তি অন্যজন কাটবে— সে সব কই? কোর্টরুম সিন মানে, হয় শাশ্বত একা ব্যাট করে যাচ্ছে— নয়তো ঋত্বিক একের পর এক সব প্রুফ ঘাড়েপিঠে সাবমিট করে কেস ক্লোজ করে দিচ্ছে। আর ক্রাইমের গল্প যেটা বোনা হয়েছে, যেভাবে খুনটি করা হয়েছে, সেটি দেখে হাসিও পায়নি, বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি- চ্যাংড়ামির তো একটা লিমিট থাকে ভাই! তাও দেখুন, স্পয়লার দিচ্ছি না, আসল গল্পের গরুকে বেঁধে রেখেছি গোয়ালঘরে। চাবি আছে, নিজেরাই দেখে নেবেন সে ওখানেই আছে নাকি গাছে চড়ে বসেছে। এই সিরিজের যদি ওয়ান লাইনার রিভিউ চান তবে তা হল… ‘হাতি ড্যাশ ড্যাশ ফুস!’

এবার একটু রাজনীতি হয়ে যাক? তা ‘রাজনীতি’-র প্রথম সিজন কিন্তু ভালো। সংলাপ জায়গায় জায়গায় একটু তাল ফসকালেও মেকিং সত্যিই প্রশংসনীয়। ‘কার্টুন’ এবং ‘শব্দজব্দ’-র পর সৌরভ চক্রবর্তীর উল্লেখযোগ্য ডিরেক্টোরিয়াল কাজ হিসেবে এই সিরিজটি অবশ্যই থাকবে। যদিও জাতীয় স্তরে পলিটিকাল থ্রিলার বলতে আমরা যা বুঝি ‘রাজনীতি’ তা হয়ে উঠতে পারেনি— কিঞ্চিৎ সিরিয়াল ছাপ ছিল। দ্বিতীয় সিজনে সেটা আর ছাপ নেই… চাপ হয়ে গেছে। ‘আবার রাজনীতি’ দেখতে বসে প্রথমেই যেটা মনে হয় গল্পের যেন তার কেটে গেছে। মানে গল্প লেখক ও চিত্রনাট্যকারেরা আগের সিজনের গল্পের ছেড়ে রাখা সুতোগুলো প্রাণপণে গোটাবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন আর সুতো ক্রমশই তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আর ‘অচিন্ত্য আইচ’-এর মতোই এই সিরিজেও মেগাসিরিয়ালের ভূত ভালোমতোই ঘাড়ে চেপে বসেছে। আগের সিজনের দেখা গিয়েছিল যে রাশি (দিতিপ্রিয়া রায়)-র বাবা (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) মারা গিয়েছেন। এর পরের সিজনে রিজপুরের সিংহাসন দখলে কনীনিকা ও দিতিপ্রিয়ার টক্কর দেখা যাবে এমনই আশা ছিল, কিন্তু এই দ্বিতীয় সিজনের বেশিরভাগটাই রাশি যেন ছেঁড়া ঘুড়ির মতো গোত্তা খেতে লাগল। প্রথম সিজনে চরিত্রটা যত পরিণত, ক্ষুরধার, দ্বিতীয় সিজনে ততই মেলোড্রামাটিক, ইমোশনাল নাটকেক।

শুধু তাই নয় ব্যাকস্টোরিটা যেভাবে ডেভেলপ করা হল, সেটাও খুবই দায়সারা গোছের। চিট ফান্ড প্রসঙ্গটা বুড়ি ছুঁয়ে দিয়ে পগারপার। আরও একটা অবাক কাণ্ড হলো গল্পে যারা পরস্পরের শত্রু, যারা একে অপরের বুক চিরে রক্তপান করবে বলে মুখিয়ে আছে, তারা কেউ কাউকে মারছে না। যেন মাঠে চরতে দিয়েছে— যেই এপিসোডিক ক্লাইম্যাক্সের দরকার হচ্ছে, তক্ষুনি খুন হয়ে যাচ্ছে বা লোকে হাতে-নাতে ধরা পড়ে যাচ্ছে! এই দ্বিতীয় সিজনের গল্পে একমাত্র চিত্তাকর্ষক মশলা হল দেবজ্যোতি অভিনীত ‘জিমি’ চরিত্রটি। এই চরিত্রটাই পরের সিজনটা টানবে। বাকি আসল চরিত্রগুলো একদম মিয়োনো মুড়ি হয়ে গেছে। লেখায়, এগজিকিউশনে, সাবপ্লট সাজানোয় মেগাসিরিয়াল যেন মামদো ভূতের মতোই ঘাড়ে চেপে বসেছে।

আর সেই দেখেশুনেই মনে প্রশ্ন জাগে, হ্যাঁ গা, তোমাদের কি আর ভাল্লাগছে না! ওটিটি আছে যখন, তখন কন্টেন্ট পুরতেই হবে, ভিউও বাড়াতে হবে। কিন্তু তার জন্য তো ‘টিভিপ্লাস’ নাম দেওয়া মধ্যমানের, সিউডো উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট সিরিজগুলো রেখেছে হইচই। থ্রিলারটা অন্তত থ্রিলারের মতো হোক। সেদিক থেকে দেখতে গেলে কিন্তু পুরোপুরি ফিমেল জোনের থ্রিলার ‘গভীর জলের মাছ’ বা ‘ইন্দু’ অনেক বেশি সৎ। ‘রাজনীতি’-র মেকিংয়েও সেই সততা ও স্মার্টনেস ছিল। ‘আবার রাজনীতি’-তে পুরোটাই মেগা-কনফিউশন। তাও ‘আবার রাজনীতি’ ‘খ’ না হলেও ‘গ’ পাওয়ার মতো সিরিজ, প্রথমেই বলেছি। ‘অচিন্ত্য আইচ’-এর মতো পুরোপুরি ট্র্যাশ নয়।

এখন ব্যাপার হলো, এত কথা লিখছি কেন? এত সময়ই বা ব্যয় করছি কেন? এই সময়ে হটস্টার বা নেটফ্লিক্সের অন্য থ্রিলার কেন দেখছি না? কেন তখন থেকে হইচই-এর ড্যাশে লাগছি, তার কারণ একটাই! আমি বাপু মধ্যবিত্ত বাঙালি আছি। বেগুন থেকে বার সাবান, টিপেটাপে দরদাম করে কেনা আমার অভ্যেস। পয়সা ফেলে যখন সাবস্ক্রিপশন নিচ্ছি, তখন কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেব। আমি দর্শক, আদ্যিকালের নতুন বউ নই যে পাতে যা দেওয়া হবে তা সোনামুখ করে গিলে নেবো। বাংলার সবচেয়ে বড় ওটিটি বলে হইচই বুক বাজিয়ে ঘুরবে আর ঘোড়ার ডিমের ঝাল রেঁধে দেবে ‘থ্রিলার’ বলে, এমন তো হতে পারে না। ভালো থ্রিলার পাতে ফেলুক— খুশি হয়ে দু-জনকে হইচইয়ের সাবস্ক্রিপশন উপহার দেবোখন।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

Image Description

nZkkAbWB

16 ঘন্টা আগে

1


Image Description

nZkkAbWB

16 ঘন্টা আগে

1


মন্তব্য করুন

লেখক

আত্রলিতা একটি ছদ্মনাম। লেখক একজন আইটি কর্মী।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন