preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
কবিতাগুচ্ছ
কবিতা

কবিতাগুচ্ছ

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতায় ইতিহাস, বর্তমান, দর্শন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তাঁর উচ্চারণ বহুদূরগামী, মগ্ন, এবং একইসঙ্গে যেন নির্বিকারত্বের দিকে ধাবিত।

কবীর বলেছেন

বিনা আলোকে বিনা আঁধারে, যে পুস্তক রচিত তা পাঠ করো। যেমন আমার সামনে উন্মোচিত হয়ে যায় সেই গঙ্গার ঘাট যেখানে কবীরের চোখ পরমবন্ধুর বাসা তৈরি করে দিচ্ছে অশ্রুতে, কবি আন্তোনিও মাচাদোর কিশোরী স্ত্রী লেওনোর ইস্কিয়ের্দোর কবর যেন একুশ শতকের শীতেও ছড়িয়ে রেখেছে যক্ষাভীতি, যেমন স্বপ্নক্লিষ্টের নিজস্ব অন্বয়-- একটা পূর্ণ মাকড়সার জাল কেন্দ্র থেকে পরিধি অবধি, প্রতিটা সুতো হিম নির্মাণের আলোয় স্পষ্ট করে দিচ্ছে শূন্য কেন্দ্র– সামান্য দূরে আটকে তুহিনের মৃত্যু-ছাঁচ পরা লাল প্রজাপতি

সন্ত রবিদাস

বন্দি থাকার সময় সিকান্দার লোদীর দুঃস্বপ্নে দেখা দিয়ে তাকে বাঁচান এমনটাই শোনা যায় বারাণসীর ঘাটে। আমি দেখি বাতাস ওলটাচ্ছে অন্ধকার ও আগুনের পৃষ্ঠা, পুরোনো ধারণার কাঠিন্যে ক্রমশ ছাইয়ের স্থাপত্য, নাছোড় স্বপ্নের গন্ধবিধুর সমীরণে সাপ আসে কামিনী জ্যোৎস্নায়, বান্ধবহীনতা এক দৃশ্যখাদক দৈত্য

আকুয়া রেজিয়া

যার বাংলা অর্থ রাজকীয় জল। পৃথিবীর সফলতম অ্যাসিডগুলির একটি যা প্রায় সমস্ত কিছু গলিয়ে ফেলতে পারে। যেমন ব্যর্থ পুরুষটি দিয়েছিলো তার প্রত্যাখ্যানকারিণীর চোখ। অ-বশ দৃষ্টি এখন কেবল নৈঃশব্দ্য রঙের। যেমন তার প্রাক্তন আলো। সর্বস্ব গিলে চুষে কামড়ে ফালাফালা করে দেওয়া রশ্মি কেবল সান্ধ্য পাখির মতো বাতাসের গন্ধ শুঁকছে, যেমন আমার ক্রমবধিরতা ও রক্তের আওয়াজ, সাধকের প্রতীক্ষা

মহসিন নাকভি

লিখেছিলেন আমরা থেকে গেলেও আমাদের কাল চলে গেছে। আমি দেখি প্রেতগ্রস্ত বাংলাভাষা পোড়া বইঘরের ছাইকাগজের উপর বেঁচে যাওয়া কয়েকটা অক্ষর। স্খলিত। যেভাবে আগে থেকে তৈরি মকবরা থেকে যায় মৃত সুলতানের অপেক্ষায়, শুকনো কাশের মতো বিকেল জুড়ে কেবলই হাওয়া দেয়, যেন প্রবঞ্চনার একটা নিজস্ব অধিবিদ্যা আছে, যেমন আছে নিজের প্রতিটি বীভৎস মৃত্যুর পরে স্ফুলিঙ্গ দিয়ে সেলাই করা সময়, যার মধ্যে পাথর কুঁদে তৈরি করা থাকে এক সাইকেল আরোহী যার সন্ধান-কল্প একটি জ্যান্ত নদী, সামনের সমস্ত রাস্তা সাপুড়ের অজ্ঞাতসারে খুলে যাওয়া ডালা

কবি মির জাফর জতল্লিকে

দিল্লি শহর ফাঁসি দিয়েছিল মুঘল সুলতান ফাররুখসিয়ারের বিরুদ্ধে কবিতা লেখায়। এখন দেখি আমার ভাষা ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মতো প্রকাশ্যে সমস্ত অস্থি-মজ্জা-অন্ত্র ছিন্নভিন্ন পড়ে আছে। যেন চৈত্রের নদীপাড়ের সামান্য আর্দ্র কাদায় আটকে আছে পশুর গলিত দেহ। গন্ধ আসছে কি? আমি কাঠের পেঁচা দিয়ে তৈরি করেছি আমার সমস্ত বর্ম। যেন আমার দেহের মাংস কেটে কেউ ছুড়ে দেবে অন্য প্রয়োজনে, নিরীহ তিমির মতো উঁচু হয়ে থাকা সন্ধ্যার পিঠ কেউ অকারণ রক্তাক্ত করবে ধারালো হারপুনে

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

সদর দরোজায় BBB

লেখা একটা বাড়ি ছিল আমাদের মফস্সলে। যেমন হত কম চলাচলের রাস্তায় ১৯৯০ এর দশক। বহু পরে জুরিখের এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাগৃহে গাইড বুঝিয়েছিলেন পাশ্চাত্য সংগীতের BBB, বাখ বেঠোফেন ব্রাহম্‌স। যেন বৃদ্ধ ব্রাহম্‌স প্রথম দুই নামের পাশে নিজেকে দেখে শিহরিত হলেন এইমাত্র, যেন কুয়াশা গ্রামীন উত্তর আল্পস পর্বতের কোনো ঘন জাঙালে হিমজমাট মাকড়সার জালে আটকে থাকা পাপড়ির মতো উচ্ছ্বাসের শব্দ এসে ঘিরে ধরল এই পাতা। এভাবেই বেঁচে থাকা ও শীতের মধ্যে দীর্ঘশ্বাসের একটা পায়ে চলা পথ ব্রাহম্‌স নিজের জন্য তৈরি করেছিলেন। যেভাবে অনেকটা দৌড়ে হাঁফিয়ে গেলে নাকে রক্তের গন্ধ জীবনের প্রমাণ দেয়, সেভাবেই বিকেল ও রাতের মধ্যে প্রতিটি সাদা সুগন্ধি ফুলের জন্ম গ্রীষ্মমণ্ডলে

ভাস্কর কামি ক্লোদেলকে

মানসিক হাসপাতালে জোর করে ধরে রাখার সময় তিনি আবিষ্কার করেছিলেন প্রতিটা পাথরে চাঙড়ে একটা প্রগাঢ় আগুনমূর্তি আছে। যেভাবে মফস্সলের রাস্তা শিস দিয়ে পেরিয়েছিলে শীতরাতে– যেভাবে প্রথম দেখা নভেম্বরের মেপলপাতা মানচিত্রের মতো ছড়িয়ে ছিল পরিত্যক্ত গির্জার রাস্তায়, যেভাবে শিকড় শিকার করতে গিয়ে দাউদাউ করে জ্বলে গেছে সমস্ত পুরোনো দিক, ঘড়ির প্রতহিংসাপরায়ণ বালি কম্পাসের সম্মোহনে খুলে দেখিয়েছিল ভস্মস্থাপত্যের জীবন্ত শহর

নিজের পঁয়তাল্লিশতম জন্মদিনে

লোকটা দিল্লির ম্যানহাটন বারাখাম্বা রোডের একটা বহুতলের ছাদে পার্টি দিয়েছিল, যদিও তখনও আমরা জানতাম না ছেচল্লিশ পেরোনোর আগে সে মারা যাবে। উঁচু সে ছাদ থেকে নম্র নভেম্বরের শহর ক্রমশ ভ্রমর ছড়িয়ে দিচ্ছিল শিরায়, যেন পেন্সিল দিয়ে একটানা লিখে চলেছে কেউ, মৃদু নেশার উচ্ছ্বাসে চোখ আবিষ্কার করে নিচ্ছে ঠাণ্ডা হাওয়ার দাপটে মাথা নামানো স্ত্রীমুখ, অথচ এখন বাতাস নেই, যেন সাহেবি উল্লাসে দলবদ্ধ পুরুষেরা টুপি ছুড়ে খেলা করছে। যেভাবে স্বপ্নের দাঁত চেপে ধরে আমাদের টুঁটি, সেভাবে দিনেরবেলা জোর করে পেঁচা ওড়ানোর খেলা আমাদের ব্যস্ত রাখে নিষ্ঠুরতার পুরাণ নির্মাণে


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

Image Description

SUBHASIS MANDAL

1 মাস আগে

অসামান্য একটি গুচ্ছ। শেষতমটি অতুলনীয়।


Image Description

রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়

1 মাস আগে

এমন কবিতা পড়তে পেরে ভারি আনন্দ হচ্ছে। এত টাটকা এবং আনকোরা, অনেকটা পাটভাঙা নতুন পাঞ্জাবির মতো! ❤️


Image Description

RANAJIT ADHIKARI

1 মাস আগে

এরকম একটি কবিতাগুচ্ছ পড়বার পর চুপ করে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। গুচ্ছ হিসেবেই পাঠ করা উচিত, যদিও 'কবীর বলেছেন', 'মহসিন নাকভি', 'নিজের পঁয়তাল্লিশতম জন্মদিনে' অসামান্য...। শুভ্র আমার প্রিয় কবি।


মন্তব্য করুন

লেখক

শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, জন্ম ১৯৭৮, কলকাতা। প্রকাশিত কবিতার বই ৫টি। বৌদ্ধলেখমালা ও অন্যান্য শ্রমণ কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্য আকাদেমির যুব পুরস্কার, পেয়েছেন মল্লিকা সেনগুপ্ত পুরস্কারও। স্পেনীয় সরকারের দেওয়া আন্তোনিও মাচাদো কবিতাবৃত্তি পেয়েছেন ২০০৮ সালে। পোয়েতাস দে ওত্রোস মুন্দোস সম্মাননা ২০১৪। স্পেনে চারটি কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে। ডাক পেয়েছেন মেদেইয়িন আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব ও এক্সপোয়েসিয়া, জয়পুর লিটেরারি মিট সহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে। অংশ নিয়েছেন Poetry connections India-Wales প্রকল্পে। দক্ষিণ আফ্রিকার কবি আরি সিটাস, ও স্পেনের কবি ফেরমিন এররেরোর সঙ্গে লিখেছেন যৌথ কাব্যগ্রন্থ। বর্তমানে দিল্লির ইন্সতিতুতো সেরবান্তেস এ স্পেনীয় ভাষার শিক্ষক।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন