preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
লোকটা
গল্প

লোকটা

আজ আড়ে আড়ে ডান দিকে চাইলাম। বুকের রক্ত হিম হয়ে গেল। লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। চলেই যেতাম, স্কুলে কৌশিক মাস্টার বলেছিল ভয়ের দিকে বুক চিতিয়ে তাকাবি। আর এটা হয়তো আদৌ ভয়ই না। নানা সমস্যায় থাকি। সংসারের জোয়াল টানতে টানতে অনেক সময় মানুষ ভীতু হয়ে যায়, আমারও সেই দশা। নাহলে কেউ আমায় ভীতু বলতে পারে কখনো!

কালকেও লোকটাকে এখান থেকে তুলেছিলাম। উবের চালাই। সাড়ে দশটা নাগাদ চিনার পার্কের কাছে একটা প্রিন্টিং প্রেসে মাল পৌঁছাবার থাকে। মাসকাবারি বন্দোবস্ত। অ্যাপ অফ রেখে, মাল পৌঁছে, বেলঘড়িয়া এক্সপ্রেস ওয়ে হয়ে সোজা বাড়ি। খেয়েদেয়ে বারোটার মধ্যে শুয়ে পড়তে পারি। কাল লোকটা উঠেছিল ৩ নম্বর গেটের কাছ থেকে। আজ খানিকটা এগিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার ভালোই! দেড়-শো/দু-শো যা হয়। ফিরতি পথ, অসুবিধা কী? লোকটা কোন্নগরে ঢোকার মুখে একটা মাঠের সামনে নামল। কিছু বলার আগেই ৬০০ টাকা বের করে দিল। বেশি চাই না কম— কিছু জিজ্ঞাসা না করেই হনহন করে হেঁটে চলে গেল।
আজও জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলাম— যাবেন নাকি?
যাব।

উঠে পড়ার পর চালাতে শুরু করলাম। আমার এমনিতে কাস্টমারের সঙ্গে বকবক করা স্বভাব। নাহলে গাড়ি চালানো খুব বোরিং কাজ। লোকটা যা গম্ভীর, কথাবার্তা খুব বলবে বলে মনে হচ্ছে না। আমিই শুরু করলাম।
এ-রাস্তায় এই সময় কিছু পাওয়া যায় না, সেই ডানলপ অবধি গেলে তারপর...
লোকটা চুপ। আমিই আবার কথা চালালাম।
আপনি কি রোজই এই সময় ফেরেন এখান থেকেই?
হ্যাঁ
প্রাইভেট অফিস, না?
হ্যাঁ, আমারই অফিস।
কীসের অফিস? মানে ব্যাবসা করেন? আমিও একটা ব্যাবসা করতে চাই, গাড়ি চালাতে আর ভালো লাগে না।
নানা ধরনের কাজ হয়।
আমার জন্য কিছু আছে নাকি? গাড়ি চালিয়ে, ইএমআই দিয়ে আর সংসার চলছে না।
এখুনি নেই, থাকলে জানাব।
আর কথা বাড়ালাম না। গাড়িতে স্পিড তুললাম।

বেশ রোজকারের ব্যাপার হয়ে গেল। ৬০০ টাকার এক্সট্রা ইনকাম মন্দ নয়। দু-দিন মন্দারমণি গেছিলাম। সোমবার রাতে দেখি একই জায়গায় লোকটা দাঁড়িয়ে। এসে জিজ্ঞাসা করলাম— যাবেন নাকি?
লোকটা উঠে পড়ল। আজ নিজে থেকেই বলল
দু-দিন এলে না?
বেড়াতে গেছিলাম স্যার। মন্দারমণি। খুব ভিড়ভাট্টা স্যার। জায়গাটা ভালো না। আপনি গেছেন মন্দারমণি?
অনেক আগে একবার গেছিলাম, কাজে। ... অনেক বছর আগে। নির্জন ছিল। দু-হাজার এক-ট্যাক হবে।
ওখানে আবার কাজ কী স্যার? লোকে তো বেড়াতেই যায় শুনেছি।
নির্জনতা আমার কাজের উপযুক্ত পরিবেশ।
আপনার ব্যাবসাটা কী স্যার? মানে কী করেন আপনারা? লোককে বেড়াতে নিয়ে যায়, সেইসব?
সে-কথা জেনে তোমার লাভ?
লোকটার গলার স্বর আগের থেকে ভারী। আমি চুপ করে গেলাম। যদি রেগে যায়। রোজের কাস্টমার হারিয়ে লাভ নেই। তবে আমি চুপ করে থাকতে পারি না। খানিক বাদে খেলা, রাজনীতি, উবেরে তত লাভ এখন আর হয় না— এইসব নিয়ে হাবিজাবি বকতে শুরু করলাম। আজও লোকটা ওই মাঠের কাছে নেমে গেল।

সকালে গাড়ি বের করিনি। আজ সন্তুর বিয়ে। আমার দু-তরফের নেমন্তন্ন। সতীশের বোনের সাথেই বিয়ে। সকাল সাতটায় উঠে গাড়ি নিয়ে যাব সন্তুর বাড়ি। মেলা কাজ। পাঁচটায় বরযাত্রী বের হবে। কাল রাতে গাড়ি ধুয়ে রেখেছি। ঘুমাতে প্রায় দুটো বেজেছে। ম্যাজম্যাজ করছিল শরীর। সন্তুর বাপ সেই লোক যে হিন্দমোটর থেকে অবসর নিতে পেরেছিল। গাড়ি নিয়ে সন্তুদের গলিতে ঢোকার দুটো গলি আগেই দেখলাম রাস্তা জুড়ে লোকে লোকারণ্য। এত সকালে কার বাপের বিয়ে লেগেছে কে জানে! ও বাবাঃ, পুলিশও আছে! জায়গাটা দেখে বুকের মধ্যে কেমন ধক করে উঠল। কালকে এখানেই লোকটা নেমেছিল। নানা কথা মনের মধ্যে পাক খেয়ে উঠল। প্রথমেই ভাবলাম কী দরকার ফালতু ক্যাচালে পড়ে। কিন্তু কৌতুহল দমাতে পারলাম না। গাড়িটা দূরে রেখে আস্তে আস্তে লোকের ভিড়ে মিশে গেলাম। একটা লাশ পড়েছে। মা কালীর দিব্যি, মনে হল ওই লোকটাই! কেন মনে হল জানি না। গিয়ে দেখলাম মাথাটা ছিন্নভিন্ন। তবে চেহারা দেখে মনে হল না সেই লোকটা। লুঙ্গি পরা। সামনের দোকান থেকে চা সিগারেট নিলাম। মুখটাকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে জিজ্ঞাসা করলাম
কে মার্ডার হয়েছে দাদা?
এই পাড়ারই গৌতমদা। কারও সাতে-পাঁচে থাকে না, দিলখোলা লোক। কী হল কে জানে! ওদিকে আবার আরেক কাণ্ড। সাতটা বাড়ি পরে এক ভদ্রলোক থাকেন। প্রাইভেট কোম্পানির বিরাট চাকুরে। দিন চারেক আগে সুইসাইড। তারও একমাস আগে বোসেদের ছোটো ছেলেটা গঙ্গায় তলিয়ে গেল। তিন-তিনটে অপঘাতে মৃত্যু। কী হচ্ছে কে জানে!
রাজনীতির লোক ছিলেন?
কে, গৌতম? না না। সবার খুব বন্ধু ছিল জানেন।
এই যে বললেন কারও সাতে-পাঁচে থাকত না।
দোকানে বিরক্ত চোখে আমাকে দেখল।
ধুর! ওটা তো কথার কথা। মানে গণ্ডগোলে থাকত না। সবাইকেই সাহায্য করত। একটা কলেজে পড়া ছেলে...
আমি দাম মিটিয়ে চলে এলাম। কেন জানি না মনটা খচখচ করছে। ওদিকে সন্তু তাড়া দিচ্ছে।
কীরে আর কতক্ষণ?
পৌঁছে বললাম— তাড়াতাড়ি আসব কী করে? তোদের গলির দুটো গলি আগে পুলিশ।
সন্তুর মুখটা কেমন হল, ভাঙা স্বরে বলল— হ্যাঁ গৌতমদা মার্ডার হয়েছে। কী বলি বল। সবাই গেছে। নন্তুও গেল। আমি আজ যাব কী করে? একটা শুভ-অশুভ ব্যাপার আছে না।
তোর বিয়েতে নেমন্তন্ন ছিল?
কার, গৌতমদার? ছিল তো বটেই, কত দিনের আলাপ বল। ওই মাঠে তো আমরা খেলতাম। ওটাও আমাদের পাড়া। এই মুন্সিদের বাড়ি দেখছিস, ওপাশটা দিয়ে ঘুরে গেলে ওখানে পড়বি।
কে আবার একটা সুইসাইড করেছে শুনলাম।
সন্তু ঘাবড়ে গেল।
কবে আজকে?
না, চার দিন আগে।
শুনিনি। চারদিকে শালা খারাপ খবর শুধু!
আচ্ছা তোদের এখানে একটা লম্বা মতো লোক থাকে? গোঁফ আছে, মুখটা বেশ সরু।
কে বলত? কী নাম?
নাম জানি না।
কী দরকার তোর?

চট করে আমার মুখে এসে গেল— আরে হারামি মাল, পরশু ওই গলিতেই নামল। অনলাইন পেমেন্ট করবে। মোবাইল টিপে খুটখাট করে বলল হয়ে গেছে। গাড়ি ছেড়ে দিয়েছি, পরে দেখি হয়নি। ৪০০ টাকা লস।
অ্যাপে তো নাম ফোন নাম্বার থাকে।
ধুর সব কাস্টমারকে অ্যাপে হয়? হাত দেখিয়ে উঠেছিল।
তুই যেমন বলছিস ওরকম দেখতে লোকটা রঘুদা। তবে তোর গাড়িতে চাপবে বলে মনে হয় না। ও ট্রেনে যায়। ওদিকে আজ যাব না রে। গেলেই গৌতমদার কথা মনে পড়বে। নাহলে দেখাতাম তোকে রঘুদাকে।

আমি বিশেষ কথা বাড়ালাম না। কেবলই মনে হচ্ছিল রঘুদা নয়। সারাদিন কীভাবে কেটে গেল জানি না। সন্তুর শ্বশুরবাড়িতে পাঁঠার মাংস করেছিল। এই পরিস্থিতিতে মুখে রুচল না। পরের দিনও গাড়ি বার করলাম না। একটা ভয় লাগছিল। ফালতু ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার।

তিন/চার দিন তিন নম্বর গেটের কাছ দিয়ে আসার সময় আর ডানদিকে তাকাইনি। স্পিডে বেরিয়ে এসেছি। ভয়টা কেন জানি না যাচ্ছেই না। তার সাথে যুক্ত হয়েছে অদম্য একটা কৌতুহল। লোকটার পাড়াতেই ঘটছে। হতেই পারে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। হতে পারে লোকটাই গৌতমদা। না-ও হতে পারে। হয়তো বেশি ভাবছি। আজ আড়ে আড়ে ডান দিকে চাইলাম। বুকের রক্ত হিম হয়ে গেল। লোকটা দাঁড়িয়ে আছে। চলেই যেতাম, স্কুলে কৌশিক মাস্টার বলেছিল ভয়ের দিকে বুক চিতিয়ে তাকাবি। আর এটা হয়তো আদৌ ভয়ই না। নানা সমস্যায় থাকি। সংসারের জোয়াল টানতে টানতে অনেক সময় মানুষ ভীতু হয়ে যায়, আমারও সেই দশা। নাহলে কেউ আমায় ভীতু বলতে পারে কখনো!
হেসে জিজ্ঞাসা করলাম— যাবেন নাকি?
লোকটা উঠে পড়ল। উঠেই বলল— দু-দিন দাঁড়ালে না যে?
আমি কথাটা খেয়াল করিনি ভালোভাবে। বললাম— শরীর খারাপ ছিল স্যার। গাড়ি বের করিনি।
লোকটা শব্দ করে হাসল। আমি আগে কোনোদিন একে হাসতে দেখেছি বলে মনে পড়ল না। বলল— আজ কোন্নগর নয়, কল্যাণী এক্সপ্রেস ধরে চলো।
স্যার ওদিকে তো যাব না। আমি তো এই সময় বাড়ি ফিরি। তাই আপনাকে কোন্নগরে নামিয়ে দিতাম।
তোমায় ১০০০ টাকা দেব।
না স্যার, যাব না। ফিরতে রাত হয়ে যাবে।
লোকটা আবার হাসল। আয়নায় দেখলাম মনে হল। তবে নিঃশব্দে। বলল— তাহলে ডানলপে আমাকে নামিয়ে দিও।
আপনার বাড়ি কোন্নগরে নয়? তাহলে অত রাতে যেতেন?
এবার আয়নায় দেখিনি। কিন্তু ঠিকই বুঝলাম লোকটা হাসল। ক্রুর হাসি।
তুমি ভাবছ মাঠের ধারে যে-লোকটা মার্ডার হয়েছে তাকে আমি মেরেছি?
একেবারে ব্যোমকে গেলাম। অন্তর্যামী নাকি? আমার মুখে কথা সরল না। লোকটার মুখে যেন খই ফুটছে।
তুমি রোজই এদিক দিয়ে যাও। গাড়ি থামাও না। স্পিডে বেরিয়ে যাও। আমি দেখেছি।
আমার হাত কাঁপছিল। ভয় না কি উত্তেজনায় ঠিক ধরতে পারছিলাম না। মালটা ভাড়াটে খুনি, সন্তুদের পাড়ায় ওই লোকটা কি যেন নাম... গৌতম, তাকে টপকেছে। দুর্গানগরের কাছে গাড়ি দাঁড় করালাম। একটা মাঠের পাশে। নির্জন। পিছন ফিরে জিজ্ঞাসা করলাম— আপনি কে বলুন তো? কী করেন?
যা-ই করি, ওই গৌতম সরকারকে আমি মারিনি। পরকীয়া কেস। নবগ্রামের দিকে একটা বিবাহিত মহিলার সাথে সম্পর্ক ছিল। ওর বর লোক লাগিয়েছিল।
কই কেউ তো সে-কথা বলল না? সবাই তো বলল উনি খুব ভালো লোক ছিলেন।
এসব কাজ কি লোকে, লোক জানিয়ে করে? আর এলাকার মেয়েও নয়।
কিন্তু আপনি এত কথা জানলেন কী করে?
আমি প্রায় চেঁচিয়ে উঠলাম। পাশ দিয়ে হুস হুস করে গাড়ি চলে যাচ্ছে। আলো এসে পড়েছে আমার মুখে। লোকটা আলো-আঁধারিতে। আমরা তখন গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছি।
উত্তেজিত হচ্ছ কেন? আমি গৌতম সরকারকে মারিনি। তোমাকেও মারার কোনো পরিকল্পনা আমার ছিল না। যদি না তুমি সন্তুর বিয়েতে গিয়ে এত কথা ভাবতে।
আমাকে মারবেন মানে?
আমি চিল্লিয়ে দিলাম। সোজা তুই-তোকারিতে নেমে এলাম।
ইয়ার্কি মারছিস না কি? আমি কী করেছি?
অভদ্রের মতো চেঁচিয়ো না। ভালো লাগে না। আমরা খুবই সফিস্টিকেটেড। কর্পোরেটের হয়ে কাজ করি। গৌতম সরকারের মতো হাভাতে পেঁচো মালকে মারি না। নিখিল চ্যাটার্জির নাম শুনলে সেদিন?
আমার গলার স্বর বসে গেল।
কে সে?
ওই, যে-লোকটা চার দিন আগে আত্মহত্যা করেছিল।
মনে পড়ল। বড়ো প্রাইভেট কোম্পানির চাকুরে। কর্পোরেট কথাটাও চিনতে পারলাম। তুবিদার নেতা সমরবাবুর আউরাতের মুখে শুনেছিলাম। কাউন্সিলার ছিল বাম জমানায়।
ও আপনি বড়লোকদের হয়ে মানুষ মারেন?
বলতে পারো।
তাহলে গৌতম না কে... ওকে মারলেন কেন? মানে ওর সাথে আপনার কী?
কিছুই না। একটা কাজের পর, দিন দশেক আমাদের পরিস্থিতির ওপর সকাল-বিকাল নজর রাখতে হয়। কেউ সন্দেহ করলে তাকেও ফেলে দিতে হয়। নিখিল চ্যাটার্জির দাম ছিল ৩০ লাখ টাকা। মাইনে পেত কোটি টাকার কাছে। ওর কম্পিটিটর এটুকু তো খরচ করবেই।
মাসে কোটি টাকা?
ধুর! বছরে। সেটাও কম নাকি?
মেরে ফেললেন?
মেরে ফেললাম। তারপর ওই চারিদিকের ওপর নজর রাখতে গিয়েই তোমার দিকেও নজর পড়ল। আমাদের লোক তোমার আর তোমার বন্ধুর কথা শুনেছে। রেকর্ড করেছে। আমায় রিপোর্ট দিয়েছে।
আপনার কোম্পানির আপনিই বস?
তোমার ভয় লাগছে না?
নাহ্‌। সন্তুর জন্য চিন্তা হচ্ছে। এই সাত দিন হল বিয়ে হয়েছে। ওকেও তো আপনারা মেরে ফেলবেন।
তুমি ভাবছ কেন? তুমি কি দেখতে আসবে? বিশ্বাস করো, মরে যাবার পর মানুষের আর কোনো অস্তিত্ব থাকে না।
থাকে না হয়তো। তবুও... ও কোনো দোষ করেনি। আমার ভালো বন্ধু।
ওকে মারবার দরকার হবে না। তুমি রাস্তায় অ্যাক্সিডেন্ট করবে। ও অত কিছু বুঝবে না। মাথা ঘামাবে না। তুমিও মাথা না ঘামালেই পারতে।
খুব বেশি ঘামাইনি স্যার। ঘটে গেছে। সারাদিন চাপের পর মোবাইলে থ্রিলার সিনেমা দেখি। টেলিগ্রাম বলে একটা অ্যাপ আছে না? ফ্রিতে পাওয়া যায়।
জানি। তোমার সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছি দিন দুই হল।
কী কী জানলেন? আমি যে মাধ্যমিকে ৬০% পেয়েছিলাম এটা জানেন?
না অতদূর না। আজই তুমি আমায় তুলবে, ভাবিনি।
মানে আমায় মারার জন্য খুব তৈরি হয়ে আসেননি।
দরকার হয় না জানো। আমরা অনেক ট্রেনিং নিই। মিলিটারিদের মতো। এ-কাজে ঢোকার আগে জানতাম না, কীসের কাজ। শুধু জানতাম সিকিউরিটি সার্ভিস। আমি তোমার মতো নিরস্ত্র চারটে লোককে একাই মেরে ফেলতে পারি। তারপর গাড়িটাকে রানিং রেখে, লরি দেখে একটু ঠেলে দেব। নিখুঁত টাইমিং। তুমি জানতে পারবে না। মরে গেছ তখন।
আমি হাসলাম। নিঃশব্দ হাসি। লোকটাকে নকল করলাম। নাহলে আমি হ্যা হ্যা করে হাসি। বললাম— নিরস্ত্র জানলেন কী করে?
কেন তোমার কাছে অস্ত্র আছে নাকি?
আছেই তো।

বলেই আমি পিঠের দিকে গুঁজে রাখা পিস্তলটা বের করলাম। তুবিদার এটা, আমায় দিয়ে দিয়েছিল।

আপনি সত্যিই আমার সম্পর্কে খোঁজখবর নেননি। নিলে ১৫ সালের রিষড়ার জোড়া মার্ডারের কথা জানতেন। আমি স্কুল লাইফ থেকে এসবে জড়িয়ে পড়ি জানেন। বাম জমানায় ধমকাতাম চমকাতাম। জামানার পরিবর্তনে আমরাও পার্টি চেঞ্জ করলাম। তেমন উন্নতি হচ্ছিল না। পরিবারের ওই তো দশা, দেখেছেন তো! নেতাদের ধরলাম, একটা গাড়ির লোন দিন; দিল না। তুবিদা বলল দুটো মালকে টপকালে সব হয়ে যাবে। একটাকে আমি নিজে হাতে টপকেছি। আরেকটাকে শ্যামল। দু-বছর জেলও খাটিনি। প্রমাণই ছিল না। নাহলে গাড়ির ডাউন পেমেন্ট কি আকাশ থেকে পড়ল? তারপর এই চার বছর চালাচ্ছি। মাঝে তো লকডাউন। পিস্তলটা তখন থেকেই আমার কাছে। তুবিদাই বলেছিল রাখতে, বছর পাঁচেক। সিটের নীচে রাখি। আজ মনে হচ্ছিল আপনাকে দেখতে পাব। কোমরে গুঁজে নিলাম। আমি মরে গেলে হবে না, স্যার। মা আছে, বোনটা... গাড়ির ইএমআই...

পিস্তলটা নামাও। চলে যাও। কথা দিচ্ছি আর কেউ কাউকে নিয়ে ভাবব না।
আপনারা বড়োলোক স্যার। বড়োলোকদের কথার দাম থাকে না। সমরদা বলত। ও ঠিক আপনি আমায়... আজ হোক কাল হোক...
বলতে বলতেই দুটো গুলি চালিয়ে দিলাম। কান ফাটানো আওয়াজ। ভাগ্যিস এই দিকটা খুবই নির্জন। ‘নির্জনতা আমাদের কাজের উপযুক্ত পরিবেশ’, লোকটা বলেছিল। এখন নিঃসাড়ে পড়ে আছে। সারাজীবন গরিবরাই মরবে নাকি? সমরদা বলত। তুবিদা, সমরদার ক্যাডার ছিল। আমরা চ্যালা। পিস্তলটা এখন গরম হয়ে আছে। বেশ ভালো লাগছে হাতের মধ্যে রাখতে। পা দিয়ে বডিটা রাস্তার ধার থেকে নীচে ফেলে দিলাম।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখিরনিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

Image Description

Abhinaba Bhowmik

2 দিন আগে

চমৎকার একটি গল্প। ক্লাইম্যাক্সটিও দারুণ।


মন্তব্য করুন

লেখক

ফ্রিল্যান্স সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। ফেসবুক আর ছোট পত্রপত্রিকা ছাড়া তেমন কোথাও লেখেননি।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন