প্রকাশিত হল অতনু চট্টোপাধ্যায়ের চারটি কবিতা— ‘মুহাজির’, ‘ডেমোক্রেসি’, ‘প্রতিষ্ঠান’, ‘এম.আর.আই’।
মুহাজির
যাচ্ছি তো যাচ্ছি মা— ফ্রিজের শীতল আলো, গাছের সধবা ফুল, বৃন্দাবন বিলাসিনী অবোধ সারং, সকল মাড়িয়ে দেখো হুড়মুড় উঠে পড়ছি বাসে। নেমে আসছি উদোম বালক। স্ক্যানিং মেশিন গিলে নিচ্ছে মাথা। নার্স এসে তুলে রাখছে প্যান্ট। রিপোর্টে, রিপোর্টে জোলো হাওয়া লেগে ঝাপসা হয়ে আছি। অবুঝ বেদনা তবু পশ্চিম নিবাসী বান্ধবীর ঢঙে ফোন ধরতে ভুলে যায়, অবহেলা করে।
ডেমোক্রেসি
পায়ের গোড়ালি বেয়ে কারা যেন পাতালে গড়িয়ে গেল! ঝুঁকে দেখি হাওয়া নেই, আলো নেই— প্রেসস্ক্রিপশন জুড়ে ডাক্তারের হিজিবিজি লেখা। কারা যেন ঠিক কাচের ওপারে ঝুলে আছে, সং। সরু সরু ডাঁটি বেয়ে লোহার হ্যাঙারে ফুল যেন, যেন-বা হলুদ ফিকে জল। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি, বসে পড়ি। প্রেশার, ওজন সব জানাজানি হয়ে যায়। মাইকে চেঁচিয়ে ডাকে নাম। কারা যেন কাচের ওপারে সংকোচে, রোমাঞ্চে চেয়ে থাকে, হাতে ধরা রিপোর্টের খাম।
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
প্রতিষ্ঠান
আলাভোলা ক্যাথিটার যাবে বিজ্ঞাপনে। যাবে, যেদিকে অলাতচক্র সাঁইসাঁই ঘোরে৷ একে একে জড়ো হবে পদাতিক, সাঁজোয়া কামান। বাহবা কুড়াবে কারও লংরেঞ্জ রাইফেল। কেউ যাবে বুকে হেঁটে, কেউ-বা ডানায়। জলাজমি, কচুবন অথবা ভাগাড় জবরদখল করা শেষকথা নয়। সকলের চাষাবাদ, গেরস্থালি, সুরলয়, হতে হতে একদিন যুদ্ধক্ষেত্র তথা মুক্তাঞ্চল মিলেমিশে যাবে, এই তো শরীর! ওর যত দোষত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ো। বহুত প্রাচীন এই সহবাস। দেখো যেন আসল কাগজে যাতনার নামখানা কাটা যায়। ওর যত অযথা খবরদারি, অকথা-কুকথা... ওর সাথে একবার মুখোমুখি বোসো।
এম.আর.আই
ধপ করে ইঁদারায় বালতি পড়ে গেল। থিকথিকে শব্দজল, ঢালু জল, নোনা জল টলমল করে। এই বুঝি চুম্বকীয় খেলা! উঠছি, নামছি যেন গভীর সাঁতার শেষে উঠে এল একে একে ফুটোপয়সা, কাঁটাতার, কড়ার হাতল। পলিথিনে মোড়া কার কাটামাথা দেখে আমি থম মেরে যাই। আরও উঠি, আরও নামি, হাত বাঁধা, চাদর মোড়ানো পায়ে ঝিঁঝি ধরে গেছে। দীর্ঘনিশ্বাসের ধুকপুক কানে আসে। জামরুল গাছ থেকে পড়ে গিয়ে বাবার পাঁজর মটমট ভেঙে গেলে তা-ও শুনে ফেলি। ক্যালাইডোস্কোপের নানারং খেলা শুরু করে। চুল দিয়ে ঘাড় বেয়ে নেমে এল শিরশিরে ঘাম। এরপরও বহুক্ষণ চোখ বুজে স্থির চেয়ে থাকি৷ তেমন কিছুই নয়, হাভাতে শরীর থেকে একে একে খসে যায় অপরাধবোধ।
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন