preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
শতবর্ষে গুরু দত্ত: বিষণ্ণতার নন্দনতত্ত্ব
রিভিউ

শতবর্ষে গুরু দত্ত: বিষণ্ণতার নন্দনতত্ত্ব

১৯২৫-এর ক্ষণজন্মা পরিচালক শতবর্ষে পদার্পণ করলেন এ বছর। তাঁর সিনেমা নির্মাণকে কেন্দ্র করে ‘গুরু দত্ত, দ্য মেলাঙ্কলিক ম্যাভেরিক’ শীর্ষক একটি আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল এবারের ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (KIFF)। বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মৈনাক বিশ্বাস, পরিচালক রমেশ শর্মা, সাংবাদিক লেখক সোমা এ চ্যাটার্জী, সত্য সারন ও রশ্মিলা ভট্টাচার্য।

ভালোবাসার সঙ্গে যেমন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে বিরহ ও দুঃখের মিশেল, তেমনই ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে গুরু দত্ত নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ব্যর্থ প্রেম এবং হতাশার ককটেল। তাঁর সমস্ত কাজের মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে এই বিষাদের প্রতিমূর্তি রূপটি। ১৯২৫-এর ক্ষণজন্মা পরিচালক শতবর্ষে পদার্পণ করলেন এ বছর। তাঁর সিনেমা নির্মাণকে কেন্দ্র করে ‘গুরু দত্ত, দ্য মেলাঙ্কলিক ম্যাভেরিক’ শীর্ষক একটি আলোচনার আয়োজন করা হয়েছিল এবারের ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (KIFF)। বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মৈনাক বিশ্বাস, পরিচালক রমেশ শর্মা, সাংবাদিক লেখক সোমা এ চ্যাটার্জী, সত্য সারন ও রশ্মিলা ভট্টাচার্য।

মাত্র ৩৯টি বছরের জীবন, ৩৯টি বসন্ত। তার মাঝেই জীবনের কী এমন রূপ দেখলেন গুরু যে এক অনন্ত বিষাদে ডুবে রইলেন চিরকাল! তাঁর পরিচালিত ছবিগুলির মধ্যে স্পষ্ট হয়ে রইল সেই বিষাদের ছায়া। যে তিনটি কাজকে তাঁর কেরিয়ারের সেরা ছবি হিসেবে ধরে নেওয়া হয় সেগুলি হল ‘পিয়াসা’, ‘কাগজ় কে ফুল’ ও ‘সাহিব বিবি অউর গুলাম’। এই ট্রিলজির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বিশেষ দ্বিমত নেই। যদিও এর মধ্যে শেষোক্ত ছবিটি তিনি প্রযোজনা করলেও পরিচালনা করেননি। সে-সময়ে বিপুল বাজেটে নির্মিত ‘কাগজ় কে ফুল’ ছবিটির বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ার পর পরিচালনা থেকে পিছিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে শুধুমাত্র বক্স অফিস দিয়ে গুরু দত্তের ছবির মূল্যায়ন করা যায় না।

আলোচনায় বার বার উঠে এল তাঁর ছবির নির্মাণশৈলীর কথা। মৈনাক বিশ্বাসের মতে চল্লিশ এবং পঞ্চাশের দশক মূলধারার হিন্দি ছবির জন্য অত্যন্ত সৃষ্টিশীল সময়। বলরাজ সাহানি, মজরুহ সুলতানপুরী, জ়োহরা সেহগাল, সাহির লুধিয়ানভি, কাইফি আজ়মি প্রমুখ ব্যক্তিত্ব যাদের সঙ্গে গুরু দত্ত কাজ করেছেন সেইসব ক্ষেত্রে স্বাধীনতা উত্তর সময়ে নগরজীবনের কাহিনি এবং আধুনিকতার একাধিক দিক তাঁর ছবিতে উঠে এসেছিল।

সোমা চ্যাটার্জীর কথায় উঠে এল গুরু দত্তের ছবির নায়িকাদের কথা। তাঁর মতে গুরুর ছবিতে নায়িকাদের বরাবরই শক্তিশালী চরিত্র হিসেবে দেখা গিয়েছে। স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে ছবিতে তাদের প্রত্যেকের উপস্থিতিকে গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবহার করা হত।

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

পরিচালক রমেশ শর্মার মতে বিষণ্ণতাকে উদ্‌যাপন করতেন গুরু। তবে সেই উদ্‌যাপনে ছিল না কোনো পাশ্চাত্যের ছোঁয়া। বরং উর্দু কবিতায় ভর করে গুরুর ছবিতে ভালোবাসা এবং বিরহের কাহিনি রচিত হয়েছে বারবার। তবে কাহিনিতে পাশ্চাত্যের প্রভাব না থাকলেও নির্মাণের ক্ষেত্রে হলিউডি ছাপ ছিল স্পষ্ট। এ ছাড়াও ছবিতে আলো নিয়ে বিভিন্নরকম পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে মার্কিন চিত্র পরিচালক ওরসন ওয়েলসের (Orson welles) সঙ্গে গুরুর তুলনা করেন তিনি। একইসঙ্গে তাঁর কথায় উঠে আসে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশে ঘটে যাওয়া সামাজিক অবক্ষয় ও মানুষের চারিত্রিক দুর্নীতি যা নিয়ে গুরু বরাবরই সোচ্চার ছিলেন তাঁর কাজের মাধ্যমে।

জীবনের অন্ধকার দিক, অপ্রাপ্তির হতাশা গুরু দত্তের কাজে উঠে এসেছে নানাভাবে। রশ্মিলা ভট্টাচার্যের মতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ছবির কাহিনি ও নির্মাণশৈলীতে এই অন্ধকারের প্রাবল্য দেখা যেতে থাকে। একে পরিচালকের নিজস্ব মানসিক টানাপোড়েনের প্রতিফলন বলে মনে করেন তিনি। প্রথমদিকের ছবির তুলনায় পরবর্তী ছবিতে এই প্রবণতা বেশি দেখা গিয়েছে। এই পর্যায়ে তাঁর মধ্যে ক্রমশ উঠে এসেছে সেলফ ডেসট্রাকশন বা আত্মবিনাশী চিন্তাভাবনা এবং নিজের প্রতি সংশয় বা আত্মবিশ্বাসের অভাব। ‘কাগজ় কে ফুল’ এবং ‘সাহিব বিবি অউর গুলাম’ ছবির ক্ষেত্রে এই প্রবণতা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

গুরু দত্তকে নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছেন সত্য সারন। সেই অভিজ্ঞতার ফসল তাঁর ‘Ten Years With Guru Dutt’ বইটি। গুরু দত্তের ছবির গানে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছেন বলে জানালেন তিনি। গুরুর ছবির অধিকাংশ গানে যে সুরের বিষণ্নতা রয়েছে হয়তো তার মধ্যে দিয়েই উঠে এসেছে ব্যক্তিজীবনে পরিচালকের ব্যর্থতা ও অন্তর্দৃষ্টির বিষয়টি।

সমস্ত আলোচনা থেকে যে মূল নির্যাস পাওয়া যায় তা হল গুরু দত্তকে শুধুমাত্র একজন চিত্র পরিচালকের গন্ডিতে আটকে রাখা যায় না। তিনি একইসঙ্গে কবিতার আঙ্গিকে সেলুলয়েডে মহাকাব্য রচনা করেছেন তাঁর নিজস্ব নির্মাণশৈলীতে। আবার একইসঙ্গে প্রতিবাদ করেছেন সমাজের একপেশে নীতির। দরিদ্র, পতিত মানুষের প্রতি উচ্চকোটি শ্রেণীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সিনেমার ভাষায়। একদিকে যেমন প্রেম, বিরহ, একাকিত্ব তাঁকে ভাবিয়েছে, অন্যদিকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছে নৈতিকতা, আত্মসম্মানবোধ এবং আদর্শ। স্বল্প জীবনকালে হয়তো খুব বেশি ছবি তিনি তৈরি করে যেতে পারেননি। কিন্তু এইসমস্ত দর্শনকে মিলিয়ে নিজস্ব প্যাশন ও স্টাইলের মিশ্রণে সেই সাদা-কালোর যুগে গুরু দত্ত যা দিয়ে গিয়েছেন তা এখনও সমান প্রাসঙ্গিক এবং আধুনিক পরিচালক নির্মাতাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে আজও।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

লেখক

স্কুল জীবন থেকে শখের লেখালেখিতে হাতেখড়ি। ২০১৭ সাল থেকে বিনোদন সাংবাদিকতা এবং সিনে সমালোচনার সূচনা।নেশা উপন্যাস লেখা। থ্রিলার ছবি একটু বেশি পছন্দের। উত্তমকুমার আর শাহরুখ খানের অন্ধ ভক্ত। পাহাড় আর ঘুম সমান প্রিয়।

অন্যান্য লেখা