প্রকাশিত হল সমিধ গঙ্গোপাধ্যায়ের গুচ্ছ কবিতা— ‘সমিধের কবিতা। ‘মেধার ঝুল কিংবা ক্ষতের স্ক্রিনটাইম’, ‘প্রকৌশল কিংবা আনকোরা গ্যের্নিকা’, ‘আগমনী নতুবা যৌতুক’, এবং ‘যোগ্যতা’— এই চারটি কবিতা।
মেধার ঝুল কিংবা ক্ষতের স্ক্রিনটাইম
শ্বাপদের হাফসেদ্ধ ডিমের ঘাড়ে
প্রাকৃত স্বৈরাচার
ছাঁকনি খোলার তালে কীরকম যেন এক ছাই
আরও নীরবতা পালন
আঁকশির সদালাপ ঠোঁটে নিয়ে পালাচ্ছে
ধ্বনির চামড়া
ওপাশে ক্যাফিন আর ক্যামেরার দঙ্গলে
সতর্ক শিকারের বিরক্তি হজম
এপাশে জাতে উঠছে নজরের সূক্ষ্ম পলিথিন...
দশকের ভোঁ ভাঁ
নীচু সংকলনেরই অনঙ্গপ্রেম
এই রং হচ্ছে
তো
এই ধমকাচ্ছে রগড়
‘পিচিক’ শব্দে এত লালিমা
দিবাকর ঠাকুরের জনপ্রিয় স্খলন মনে পড়ে
এখানে ড্রোনের মতো চোখ আর
সমবেদনায় কোনো অতিরেক নেই
বানিয়ে তুললে যদি...
হৃদয়ের নাথ সেই সতেরোর নামতায়
কীর্তিহোঁচট রেখে গেছে
শূন্যের ভ্রূণভাগ্য ঈর্ষণীয় হতে হতে
একটুর জন্য সেগুড়ে চুমুক
একটুর জন্য এই ঘাটছেঁড়া পানসিচলাচল
ব্যবহার্য হল না
হাতে লেখা ছুটি যেমন
মুলতুবির একপা আগে আগে...
প্রকৌশল কিংবা আনকোরা গ্যের্নিকা
মুখ্যত একজন হেরে যাওয়া লোকের সঙ্গেই
মশারি বেঁধেছ তুমি
রংচঙে বাহানার মতো এগরোলের দোকান
লালচেহলুদ সসে বিকেলের হারাকিরিস্বাদ
কালো হাতা তস্য কালো চাটুর উপর
ঘামে ভাজা শ্বাস একজোড়া
সীমানার নাকউঁচু সংকোচনের পাশে ঘনিষ্ঠ পঁচিশ ওয়াট
ঝিঁঝির ভাগেও ওই কাগজের টুকরো উদারতা
ক্ষণজীবী জিনসের পাশে ঢোলা কামিজের
সালোয়ারি হিংসেও মিনিটপাঁচেক
মাথাভেজা ডুবে আর কজনই বা গীতিকার পায়
আগুন ঝগড়ুটে
আর
ছ্যাঁকছোঁক আরও নির্জন
পেঁয়াজের স্তরায়নে লম্বা ও ধারালো পা টান করে
যারা শুতে আসে তারা নারী নয় পুরুষ নয়
নারীশ্বরও নয়
তবু চ্যাপটা দর্শনের খলখল হাস্যে তারা
ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে যায় লোকলৌকিকতা
প্রায়ান্ধ গলিপথ যেমন তেতো শসার আশ্রয়
ঈষৎ ঘাড় বেঁকা মোটর বাইকের পেটে সুগন্ধি
তরল আরাম
তারা হুট বলতে জন্মায় আর লজ্জা পেয়ে
আবার সেঁধোয়
মামড়ির ধূমজ্বরে
আদিম নেলপলিশে আধঢাকা নখের প্রস্রাবে
চারকোনা জগতের শতেক ফোকর মৃত মশার লার্ভা শুঁকে অভয়মুদ্রা সহ পৌত্তলিক
স্টিলের গেলাসে তেজি কুসুম গোলার মতো পুজোআচ্চায়
নির্বাচিত লঙ্কার শীৎকারে সামান্য বিরক্তি নিয়ে তাঁরা
বিড়ির কুহেলিকায় যান
এখানে কদিন পরে জাহাজের উড়োপথ হবে
খোসার ফাটল ছোঁবে সহজ দারোগা, সহজেই
গড়ানে আর্তনাদে একটাও ভুরু লাগবে না
প্রধানত নয়ানজুলির বুকে তোমার মশারি
পুঁটলি পাকানো চোখ আধশোয়া নিকেশের মতো
জলকাচা হলে আর জোর করে বাঁধতে হবে না
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
আগমনী নতুবা যৌতুক
‘আমি সুন্দর’
এই কথা বলার জন্য যদি তুমি প্রতিবার
আয়না ব্যবহার করো
তবে তোমায় বিশ্বাস করি না
তোমার শীতের কাছে একটা সুতির ক্ষত
গায়ে জড়িয়ে বসেছ তুমি
দূরে হেমন্ত ওর লোমশ লেজের কাছে
একমাত্র লালার অভিযোগ
ছত্রখান, বসে আছে
এখান থেকে কবিতার দুজাহাজে পা
মরুমাটির মতো সূর্যের ঘন হয়ে আসা
আর একটু বাতিঘরের মতো গাত্রদাহ
সেখানে যে জলটল উঠে আসছে তাকে
পানীয় বানাতে গেলে কতবার ন্যুব্জ ও মহৎ
লিখে লিখে আঙুলের প্রকার সোজা করতে হবে জানো?
ফলকে আঁকা প্রেম
উদাহরণে শ্যাওলা ও স্রোতের সিগারেট ছিনতাই
কিংবা একজন আকাট ভূত, তার গর্তের জায়গায় চোখ আর নীল ফুটছে ধীরে
এবং একগুচ্ছ ফেনা
যাদের অন্যমনস্কতা রোগা হয়ে গেছে
সুতরাং মৃত্যুবার্ষিকী একটাও মনে থাকতে পারে না
এইভাবে ঈর্ষা ফাটালে বেশ রং জমে যায়
বুলিয়ে যাওয়ার আগে শুধু মনে রেখো
যেকোনো ফোঁপানি যদি
ডাকবাক্সের ফুটোসুদ্ধ করে দিতে পারো
যথেচ্ছ লোপাট
অচিরে তোমার ঘুম একটি নতুন
উপগ্রহ পেয়ে যেতে পারে
যোগ্যতা
অঘোর, তুমি সাক্ষাৎ এসেছিলে
কণা কণা চুলের ঠিক নীচেই গোল কাটা দাগ
ঘাড় ও পিঠ যেটুকুর পর মগজ হতে পারে
তাদের মাঝবরাবর লম্বা সেলাই
টানলেই সমান দুভাগে স্পর্ধার যেকোনো
মহালয়া খুলে যাবে
আমি নাচেনার ভানে বাদবাকি সকলের ঝুঁকে পড়া পিঠে
একটা করে রুমালের গন্ধ রেখে আসছিলাম
সঠিক চোর আসতে আসতে অধ্যায় ও মশলা
দুইই ফুরিয়ে যাবে জেনেও
খালের নাগাল থেকে নৌকোদের পুনর্জন্ম চেয়ে আনছিলাম
ঢালের নাকখতে যেমন সৈনিকের মালিকানা
একরাতের চেয়েও সরেস, চিরকেলে
আমাকে মারতে মারতে ঘুম পাড়ালো যে ফুল
তার ভাপ জানালায় এলে ধরি
কাঁটার সমুখে
ওর মুখে মোমদানা, লাভার প্রদীপ
আরেকটু অন্ধকার জুড়োলে ওরাই গলে রক্ত হবে
সময়ের বাচালতা দেখাবে কেমন অপ্রতীম;
ঠোঁটের যমজ যত ছাইপাঁশ মরুদ্যান— বালিহীন
মেরুদ্যান— বরফের বিধর্মে
গলে যাওয়া অসম্ভব পোড়া কান পাশাপাশি শুতে শুতে
প্রণয়ী দাঁড়ার আঃ ফুটিয়েছে কত সহজেই
আগে জানলে না না এই যে এখন জানলাম
আর অক্ষুণ্ণ ভাষা নেই থালার উপরে রাখা হৃদয়ে আমার
জিভের তারুণ্য চেটে ভবিতব্য যতটা উদাস
হাসির ততটা ভাগ্য আরেকটিবার মাত্র দেখে ঘুরে যাব
ওই সিঁদুর যেভাবে বিকেলের দাদহাজা মাখে
পাপের গোপন যত্নে,
বিশ্রামের তন্দুর গ্রাহ্যে আনে না
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন