জ্যোৎস্নাময় ঘোষ
‘তাঁর (জ্যোৎস্নাময়ের) মৌলিকতা এই (সমাজ) সমস্যাকে দেখবার দৃষ্টিতে এবং পাঠকের কাছে তাকে গল্পের মধ্য দিয়ে উপস্থাপনা করার বিশিষ্ট ভঙ্গীতে। অর্থাৎ বাস্তবতা সম্পর্কে সঠিকতর জ্ঞানই তাঁর সিদ্ধির চাবিকাঠি। এই বাস্তবতা বলতে তিনি সরাসরি নিজের রাজনৈতিক বক্তব্যকে গল্পে উপস্থাপিত করা বোঝেননি, উপস্থাপিত সমস্যাটির চরম ঐতিহাসিক সমাধানটিও বলে দেবার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠেননি, তিনি বাস্তবতা বলতে এঙ্গেলস্ কথিত সেই বাস্তবতাকে বুঝেছেন যা পরিস্থিতি ও ঘটনার মধ্য থেকেই প্রত্যক্ষ হয়।…
‘...স্পষ্টতই জ্যোৎস্নাময় বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তশ্রেণীর জীবনযাত্রা ও তৎসংক্রান্ত বিবিধ সমস্যাকে। বিশেষত মফস্বল শহরের নীচুতলার মানুষজন কীভাবে দারিদ্রের চাপে নেশা ও অপরাধ প্রবণতার শিকার হয়, তা তাঁর একাধিক গল্পের বিষয়বস্তু। এবং যে দক্ষতার সঙ্গে তিনি অপরাধ জগতের বিচিত্র ক্রিয়াকল্প ও মনস্তত্ত্বের খোঁজ দিয়েছেন... গল্পে তা বিস্ময়ের ব্যাপার। ...চোর মাস্তান ওয়াগান ব্রেকার কীভাবে গুণ্ডা, পুলিশ ও চোরাকারবারির বৃহত্তর মাফিয়ার শিকার, তা প্রত্যক্ষ হয়েছে এবং এইভাবে গুণ্ডাতন্ত্রের পুরো-টাই ধরা পড়েছে ও তা কীভাবে রাষ্ট্র অনুমোদিত তাও গোপন থাকেনি।...
‘...সমাজে শ্রেণী শোষণকে তিনি কোথাও স্থূলভাবে চিত্রিত করেননি— শ্রেণী শোষণের সত্যের উপলব্ধিকেই তিনি পাঠকের মধ্যে শৈল্পিকভাবে সঞ্চারিত করতে পেরেছেন। এবং সমস্যা সমাধানের যে ইঙ্গিত তিনি কোথাও দিয়েছেন তাও এসেছে গল্পের হাত ধরে, তীব্র অনুভবের চাপে, কোথাও বা রূপকাকারে। ফলে তাঁর লেখা রাজনৈতিক ও শৈল্পিক উভয় মানদণ্ডেই উত্তীর্ণ হতে পেরেছে।’
—গ্রন্থ সমালোচনা ‘জ্যোৎস্নাময় ঘোষের গল্প’। স্বপক্ষ প্রকাশন, আগস্ট, ১৯৮১।