preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
আবাহন
গল্প

আবাহন

রঙ্গিনীর তীরে, জলের ধারাটি যেখানে পুব হতে দক্ষিণে বেঁকেছে, সেখানে দেবালয়। এ অঞ্চলের মধ্যে একসময় মন্দিরের গর্ভগৃহের শীর্ষটি সর্বাপেক্ষা উচ্চ ছিল, এখন নতুন রাজার নতুন প্রাসাদের উচ্চতা তাকে ছাপিয়ে গেছে। কোন প্রাচীনকালে এই প্রস্তর নির্মিত দেবালয়ের স্থাপনা, বয়সের বলিরেখায় রক্ষিত সে কাহিনি যারা বলত, তারাও আজ নেই। শুধু রয়ে গেছে কাহিনির রেশ, আর তার সফেন বিস্তৃতি।

ছৈলার হাত টেনে ধরে অজদা বলল— যাস কোথা? জানিস নে কি, আজ মন্দিরে ঢোকার সময় সন্ধ্যে পেরোলে, তবেই? আর এই বকুল ফুলগুলো? কি করবি? মালা গাঁথবি বুঝি? আজ যে আমাদের ঘরে পুজো করার নিষেধ লো। শুনিস নি? ওই যে ওই ওরা ডেকে ডেকে বলছে, ক’দিন ধরেই তো বলছে। মন্দিরের বাইরে কড়া নজর লাগিয়েছে। কিছুই কি জানিস নে? তুই কি লা? ভয় নেই তোর?

সত্যই। ওই শোনা যাচ্ছে দুন্দুভির শব্দ, সাথে কাড়া নাকাড়া, লোক-লস্কর, সেপাই-পেয়াদা। আর আছে রাজধ্বজা। গ্রীষ্ম-প্রভাতের স্বচ্ছ আকাশে সে উচ্চ উদ্ধত রক্তিম ধ্বজা দূর হতে চোখে পড়ে, যেন নিজেই নিজের জয়গানে ব্যস্ত, যেন তার রক্তচক্ষু অনেক নিচে সাধারণ মানুষগুলোর ওপর চিরকালীন পাহারা বসিয়েছে। কৌথুমপুরার এই বিস্তৃত প্রান্তর পেরিয়ে, রঙ্গিনী জলধারার উপর দিয়ে মাঝে মাঝেই এমন ভেরী-দুন্দুভির ঘোষণা শান্ত, একদা সুন্দর একান্তে বসবাসকারী গ্রামগুলির বক্ষে আঘাত করে, জারি করে নিত্য নতুন নিয়মের বন্ধন। কর্মে এরা কৃষক, কয়েক ঘর কামার-কুমোরও আছে, আছে অন্যরাও। তারা কাজ করত আপন মনে, সুখ ছিল কত— তার হিসেব ছিল না, কিন্তু আনন্দ ছিল ষোল আনার জায়গায় আঠারো আনাই। ক্ষেতের ধারে, নদীর জলে, মাটির গৃহগুলির অন্তঃপুরে খুশির কলতান বইত, জীবনপথের ক্ষুদ্র কাঁটার ক্ষতগুলির ওপর কেমন করে জানি আপনা-আপনিই প্রলেপ পড়ত। নানা কাজের মাঝে মুখ তুলে দেবালয়ের শীর্ষে স্থাপিত মঙ্গলকলশের দিকে তাকিয়ে তারা মনে মনে প্রণাম করত, বৃদ্ধ পুরোহিত দুই হস্ত প্রসারিত করে আশীর্বাদ করতেন— ভক্তি কিংবা কর্ম কোনোটাই বেড়াজালে বাঁধা পড়ে নি তখন।

সেকাল অতীত এখন। রঙ্গিনীর ধারাটি শুষ্ক হয়েছে, উপলশ্রেণীর মাঝে হারিয়েছে গতি। কৌথুমপুরায় বৃষ্টি বরাবরই কম হত। ওই দূর পাহাড়ের ওপর যে প্রস্রবণ থেকে নদীর জন্ম, তার প্রাণশক্তিতেই এ অঞ্চলের মানুষজন বাঁচত। সেই উৎসটি যাচ্ছে শুকিয়ে, আর তাই এই ভূমিও তার যৌবনকাল বিস্মৃত হয়েছে, আনন্দের রস নিম্নগামী হয়েছে। চাষের জল পাওয়া আজকাল দুস্কর। লাঙলের ফলা শুষ্ক পৃথিবীর বক্ষ চিরে ফেলে নির্দয়ভাবে, তবু অঙ্কুরের উদ্গম হয় না। প্রজারা গিয়েছিল রাজার কাছে সমাধান খুঁজতে, পরিবর্তে পেয়েছে আরো বেশি করে খাজনার নিদান। তার ওপর সবচেয়ে বড় কথা, সিংহাসনের দাবিদার গেছে বদলে। নতুন রাজা তার অস্তিত্ব নিয়ে এতটাই সঙ্কটে যে, নিজেকে জারি করতে না পারলে আর প্রজাদের ওপর জারিজুরি না খাটাতে পারলে তার সিংহাসনে বসাটাই বুঝি বৃথা হয়। প্রজারা তাই তাদের ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারণ করবে, নাকি প্রণত হয়ে রাজার পাদুকা পরিচর্যা করবে— সেকথা ভেবে ভেবে অন্তরের খুশিটিকে বিদায় দিয়েছে। দিনশেষে নক্ষত্রখচিত আকাশের নিচে তাদের গল্প-গুজবের, হাসি-তামাশার, গান-সুরের আসর বসে না আর। সে স্থান দখল করেছে ভয়— অজানা নিত্য সঞ্চরমাণ ভয়। এই বুঝি কাল সকালেই রাজদ্বারে তলব পড়ল— এমনটি ভাবতে ভাবতে তারা শয্যায় আশ্রয় নেয়, তারপরেও অনিদ্র রজনী যাপন করে।

রাজাও জেগে থাকে তার রত্নখচিত প্রাসাদান্তঃপুরে, পাছে তার নিদ্রার অবকাশে কেউ মাথা তুলে বলে— যাও রাজা, তোমায় মানি নে। তাই নিত্যদিন হট্টে আপণে তার দূত প্রভুর নকল করে, রাজার কণ্ঠস্বরের অনুরণনে বলে— চোপ রও। বৃদ্ধ অসহায় বিক্রেতা, যে হয়ত কিছু শস্যদানা নিয়ে পসার সাজিয়েছিল, অথবা যে মালিনী বসেছিল পূজার জন্য রকমারি পুষ্পসম্ভার নিয়ে, তারা যদি শুধোয়— চুপ করব কেন গো? কী করেছি আমরা? তার উত্তরে রাজপেয়াদা চোখ পাকিয়ে বলে— তা জানি না, তোমাদেরও জানবার দরকার নেই, তোমরা শুধু চোপ রও।

কেতাব-ই'র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন manuscript.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

এই চোপদারিতে গ্রামের প্রধানেরা স্বেচ্ছায় যোগ দেয়, নইলে তাদের প্রধানত্ব রক্ষা হবে না যে। তাছাড়া, রাজার গলার মুক্তোমালার দিকে ভারি নজর তাদের। সে মালার একটি মুক্তোও তাদের জোটে নি আজ পর্যন্ত, কিন্তু তারা আশা হারায় নি। তাই তো ক’টা মানুষ গোষ্ঠে, জলাশয়ের ধারে, গাছের নিচে দাঁড়িয়ে একসাথে দুটো কথা বললেই তাদের মনে হয়, এই বুঝি বেনিয়মের কথা কইছে তারা, মুক্তোমালা হাতছাড়া হল বলে। বেয়াদপদের হাতকড়া পরাবার হুকুম চাই— এই বলে তারা রাজার কাছে ছোটে। কৌথুমপুরায় মানুষের নিত্য জীবনচর্চায় জীবনের অংশটুকুই বাদ পড়তে থাকে নিয়ত।

এমন করে চলছিল দিন, চলছিল রাত— অথবা কিছুই যেন চলছিল না। তারপর এখন প্রভাতের ওই শব্দনাদ— গ্রামগুলির কর্ণকুহরে আঘাত করে করে পথ চলছে। আজ যে বিশেষ দিন। বৈশাখ মাসের পূর্ণিমায় আজ দেবতার আবাহনের দিন।

রঙ্গিনীর তীরে, জলের ধারাটি যেখানে পুব হতে দক্ষিণে বেঁকেছে, সেখানে দেবালয়। এ অঞ্চলের মধ্যে একসময় মন্দিরের গর্ভগৃহের শীর্ষটি সর্বাপেক্ষা উচ্চ ছিল, এখন নতুন রাজার নতুন প্রাসাদের উচ্চতা তাকে ছাপিয়ে গেছে। কোন প্রাচীনকালে এই প্রস্তর নির্মিত দেবালয়ের স্থাপনা, বয়সের বলিরেখায় রক্ষিত সে কাহিনি যারা বলত, তারাও আজ নেই। শুধু রয়ে গেছে কাহিনির রেশ, আর তার সফেন বিস্তৃতি। পরম্পরার নিয়ম মতো বৎসরের এই দিনে, প্রতি বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে দেবতা আসেন ঘরে ঘরে, আসন গ্রহণ করেন। দেবালয়ের পূজা সমাপনে, পূর্ণ জ্যোৎস্নায় দেবতার আবাহন হয় সাধারণ মানুষের গৃহে। কি উচ্চ, কি নীচ— সকলের সে অধিকার। ধনীর অট্টালিকায় এই উৎসবের সম্ভার যেমন, তেমনই হীন দরিদ্র মানুষের একচালাতেও দীপ জ্বলে, আলপনা পড়ে, পুষ্পপাত্রটি সুন্দর করে সজ্জিত হয়, ভোগের থালায় শ্রদ্ধার অন্ন নিবেদন হয়। যদিও সমগ্র রাত্রি জাগ্রত থেকেও দেবতাকে কেউ কোনোদিন দেখে নি, তবু হৃদয়ের পূজায় ভক্তির উপচার কম পড়ে নি কখনো, প্রতীক্ষা আর বিশ্বাসের ধারাটি রুদ্ধ হয়ে যায় নি। এই দিনটি তেমন করেই উদযাপিত হয়েছে, যেমন করে দীর্ঘকাল ধরে হয়ে আসছে।

অজদার প্রশ্নের উত্তরে ছৈলা চুপ করেই থাকে। গত পূর্ণিমায় সে দ্বাদশ বৎসর অতিক্রম করেছে, অজদা তার থেকে বয়সে কিছু বড়। বয়সের পার্থক্য হলে কী হবে, তারা দুইজন প্রাণের সখি। কিন্তু এখন অজদার হাত ছাড়িয়ে ছৈলা রওনা দেয় নিজ গৃহের দিকে। সে শুনেছে বৈ কি নতুন রাজার নতুন নিয়ম, বিগত এক পক্ষকাল ধরেই এই কাড়া-নাকড়া সহযোগে প্রতিদিন শুনছে সে। নতুন নিয়মে, দেবতার আবাহন কেবল রাজার গৃহেই হবে। রঙ্গিনীর তীরের গ্রামগুলির কোথাও আজ রাতে দীপ জ্বলবে না। সন্ধ্যায় উন্মুক্ত হবে দেবালয়ের দ্বার, সকল প্রজাকে সেখানেই সমবেত হতে হবে। প্রধানরা মাথাপিছু হিসাব রাখবেন কে এল, আর কে এল না এই উৎসবে। প্রসাদ বিতরণ করা হবে প্রতিজনকে। তারপর রজনীর জাগরণ। সকলে প্রত্যক্ষ করবে কেমন করে দেবতা তাঁর বিগ্রহ হতে বাইরে এসে রাজার প্রাসাদে গমন করেন। যদি আর কোথাও আলোক না জ্বলে, তবে রাজার প্রাসাদ বিনা দেবতার আর তো কোথাও যাবার স্থান নেই— এমন যুক্তি রাজার, সাথে বারংবার মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়েছে মন্ত্রী, সেনাপতি, বিদূষক ও প্রধানরা।

ওই মন্দিরেই ছৈলা কাজ করে— মন্দির পরিষ্কারের কাজ। শুধু সে কেন, তাদের পল্লীতে সকলেই এই কাজই করে। শোনা যায়, যবে থেকে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা, তবে থেকেই এই কর্মে তারা নিয়োজিত। তাই বিগ্রহ স্পর্শ করার অধিকার কেবল বৃদ্ধ পুরোহিতের হলেও ছৈলাদেরও কম আপন নয় ওই দেবালয়। তবে আজ তার কাজে যেতে খানিক বিলম্ব হবে, নিজের গ্রাম পেরিয়ে সে গিয়েছিল বকুলের ফুল তুলতে। বকুলের মালা গাঁথতে চায় সে, দেবতার পায়ে দেবে। যদি দেবতা নাও আসেন, আসনটি তো পাততেই হবে আজ রাতে।

ফুলগুলি সযত্নে একটি বেতসপাত্রে রেখে টিলা বরাবর দ্রুতপদে নেমে গেল ছৈলা। উঁচু প্রস্তরভূমিতে তাদের পল্লী। ছোটবড় টিলা, তারপর অর্ধমৃত শস্যের ক্ষেত্র, সেসব পেরিয়ে চলতে থাকে সে। পথে আরেকটি উচ্চ ভূমিতে স্থাপিত পুরাতন রাজপ্রাসাদটির দিকে ফিরে তাকায়— সেটি পরিত্যক্ত, জরাজীর্ণ। বর্তমান রাজা দেবালয় সংলগ্ন অঞ্চলে রঙ্গিনীর তীরে নূতন প্রাসাদ বানিয়েছে। তার চাকচিক্য আর দুর্লঙ্ঘ্য উচ্চ প্রাচীর দূর হতে চোখে পড়ে। প্রাচীন শাস্ত্রে নাকি লেখা আছে রাজাই দেবতা। ছৈলার শাস্ত্র জানবে কেমন করে, তার যে অক্ষরজ্ঞান নেই। সমগ্র কৌথুমপুরায় কেবল রাজা আর রাজপুরুষদের বালকদের জন্য পাঠশালা আছে একটি। তাতে প্রবেশ রাজার অনুমতিসাপেক্ষ।

দূর থেকেই ছৈলা দেখতে পেল, অনেক মানুষ দেবালয়ের দ্বারের সামনে জড়ো হয়েছে। তার মধ্যে দরদ, বতধন, দরদাস, আরো কয়েকজনকে সে চিনতে পারল। এরা সকলেই তার পল্লীবাসী, সকলেই তার মতো মন্দিরের নিত্য কর্মের কাজে এসেছে। আজ ঠিকমতো মন্দিরের অঙ্গন সম্মার্জন না করলে, তোরণ না সজ্জিত করলে পূজা হবে কেমন করে? কাছে গিয়ে ছৈলা শুনল, রাজার দ্বাররক্ষীরা চোখ রাঙিয়ে তাদের চলে যেতে বলছে। হাতে তাদের বল্লম।

সুরিদাস বললে— আমরা চলে গেলে কেমন করে চলবে গো? পুজোয় বাধা হবে যে।

রক্ষীরা তেড়ে এলে, বললে— রাজার আদেশ।

বৃদ্ধ সুভগ অনুনয় করল— শোনো বাবারা, এমন করে আমরা রোজদিন এই মন্দির পরিস্কার করি। ওই দেখো ঘণ্টাটা— কেমন চকচক করছে— ওটা রোজ আমি নিজ হাতে ধুই। যেতে দাও বাবা, ভেতরে যেতে দাও।

রক্ষীদের মধ্যে হোমরা-চোমড়া মেদবহুল অসুরের মতো দেখতে যে, সে এগিয়ে এসে সুভগকে মৃদু ধাক্কা দিল, কর্কশ গলায় বলল— সেসব দেখাশোনার জন্য জন্য লোক আনা হয়েছে ভিন রাজ্য থেকে। এখন যাও, সন্ধ্যাকালে এসো সব। তেমনই রাজ আদেশ। আর শোনো, আজ রাতে কেউ দীপ জ্বালাবে না ঘরে, আসন কেউ পাতবে না দেবতার। এই রাজ্যে একটিই আসন পাতা হবে— রাজার গৃহে।

সকলে গুঞ্জন করতে করতে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। কেবল ছৈলা দাঁড়িয়েই রইল। মন্দিরের তোরণ পেরিয়ে নাটমন্দির, তার ভূমি মার্জনের দায়িত্ব ছৈলার। নিজ হাতে অতি যত্নে সে তার প্রতিটি কোণ ধোয়-মোছে। বালিকার দ্বাদশ বৎসরের কোমল মনটিতে প্রস্তরনির্মিত নাটমন্দিরের প্রতি বিরহ প্রবল হয়ে উঠল। দরদ কাছে এসে তার ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে বলল— মন খারাপ করিস নে মা। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন ঘর চল।

ছৈলার সাতকুলে কেউ নেই। বাপ জন্মের আগেই গেছে, আর মা মারা গেছে সেই গত বন্যার সময়। রঙ্গিনী নদীতে সেবার হঠাৎ বান ডেকেছিল। লোকে বলে দেবতার রোষ। ছৈলার মনে আছে, বন্যা থামার সাতদিন পর মা মারা গেল। যেতে যেতে ছোট্ট মেয়েকে বলে গেল— দেবতার আবাহনের আসন পাতিস মা, প্রতি বোশেখ পুন্নিমেতে। ভুলিস না, কখনো ভুলিস না।

ছৈলা বলেছিল— দেবতা তো কখনো আসেন না মা। কেউ দেখে নি তাঁকে। তবে কেন পাতব?

রোগক্লিষ্ট মুখে মা হেসে বলেছিল— দূর পাগলি, দেবতা কি রোজ রোজ আসেন? কিন্তু তাঁর আসনটি না পাতা থাকলে, যেদিন তিনি আসবেন, সেদিন কি করবি মা? সেদিন তাঁকে কোথায় বসাবি?

সেই থেকে প্রতি বৈশাখী পূর্ণিমায় ছৈলা দেবতার আবাহনের আয়োজন করে। উপচার সামান্যই, তবু আয়োজনের ত্রুটি হয় না। এবারেও সে নিজের হাতে করে দশটি মৃৎপ্রদীপ গড়েছে, তাতে সুন্দর রঙ দিয়েছে। বকুলের একটি চারা তার মা বড় আশা করে লাগিয়েছিল প্রাঙ্গণের দক্ষিণ প্রান্তে। সে এখন মাথায় বেশ বড়ো হয়েছে। তার দীর্ঘ শাখায় ঘন সবুজ পত্রসম্ভার গ্রীষ্ম-বাতাসে কম্পিত হয়, তবু কখনো ফুল আসে না। এই ঋতুতে ছৈলা বড় আশা করেছিল ফুল ফুটবে, কিন্তু প্রকৃতির মতিগতি বোঝে, সে সাধ্য কার! তাই তো পরের ঘর থেকে ফুল তুলে আনতে হল। সেসব তো হল, কিন্তু এবারে যে রাজামশাইয়ের কড়া নিষেধ। পুজো করা চলবে না, দেবতার আবাহন করা হবে না। কী করবে ছৈলা?

নাটমন্দিরের প্রতি বিরহ ছৈলার অন্তরটিকে এমন করে গ্রাস করল যে, সূর্য ওই পাহাড়ের ওপারে অস্ত যেতে না যেতে সে আবার উপস্থিত হল দেবালয়ে। মন্দির উন্মুক্ত এখন সকলের জন্য। উন্মুক্ত বললে ভুল হয় বুঝি, দ্বারের কাছে রক্ষী হিসেব রাখে কয়জন প্রবেশ করল। আরো দেখে, তাদের হাতে অস্ত্র নেই তো? রাজার প্রাণ বড়ই দুর্মূল্য যে।

ভিতরে প্রবেশ করে ছৈলা দেখল বৃদ্ধ পুরোহিত বিগ্রহের সম্মুখে পূজার নৈবেদ্যর পাত্রটি সাজাচ্ছেন। বিল্বপত্র, সিন্দুর, শস্যকণা। সাথে মঙ্গলকলস, শঙ্খ। বিগ্রহের কোনো নির্দিষ্ট মূর্তি নেই, একটি শ্বেতশুভ্র প্রস্তরমাত্র। ছৈলা পুরোহিতকে বহুবার জিজ্ঞাসা করেছে— দেবতা এমন কেন?— পুরোহিত হেসে সস্নেহে উত্তর দিয়েছিলেন— ইনিই তো দেবতা। এমন নিরাকার। জগৎ জুড়ে যাঁর রূপের খেলা, তাঁকে কি পাথর কুঁদে বানানো যায় রে?— বড় শক্ত লেগেছিল সেসব কথা, তবু ভালো লেগেছিল ছৈলার।

সহসা কাড়া নাকাড়া বেজে উঠল, শিঙায় পড়ল ফুঁ। রাজা আসছে। তার প্রাসাদ থেকে দেবালয় পর্যন্ত একটি পথ তৈরি করা হয়েছে, রক্তিম পুষ্পে সজ্জিত সে পথ। ছৈলার সেই প্রথম রাজদর্শন। শুধু সে কেন, প্রজাবর্গের অনেকেই প্রথম দেখল রাজাকে। রাজপ্রাসাদের ওই উচ্চ প্রাচীরের বাইরে রাজা কদাচিৎ আসে। শীর্ণ তার দেহ, ভারে নত হয়ে কুব্জসদৃশ, চক্ষু দুটি ঘুর্ণায়মাণ জ্বলন্ত অঙ্গার, অসংখ্য কুঞ্চিত রেখা মুখের উপর দিয়ে আড়াআড়ি চলে গেছে, যেন এ ধরার সকল কুটিলতা মনের ভিতর থেকে উঠে এসে ওইখানে সঞ্চিত হয়েছে। পরনে রক্তাম্বর, গলায় অনেক মালা— হীরে-মণি-মুক্তো। পূজার পোষাকেও মাথার উপরের রাজমুকুটটি তেমনই আছে, আছে রাজছত্রও।

রাজার আগমনের সাথে সাথে পাত্র-মিত্র, প্রজা-পরিষৎ সকলে উঠে দাঁড়াল। জয়ধ্বনি উঠল রাজার, মন্দিরের গাত্রে তার প্রতিধ্বনি দ্বিগুণ হয়ে ফিরে ফিরে এল। কেবল পুরোহিত নিজ আসন ত্যাগ করলেন না। যেমন করে পূজার উপচার সজ্জিত করছিলেন, তেমন করেই আপন মনে নিজের কাজটি করে যেতে থাকলেন। রাজা তার পাশে গিয়ে রক্তচক্ষু মেলে গর্জন করে বলল— তুই এখানে কি করছিস? তোকে তো ছুটি দিয়েছি কবেই।

বৃদ্ধ পুরোহিত মুখ না তুলে মৃদু স্বরে বললেন— তা মহারাজ, আপনি ছুটি দিলেই তো হল না। আমি দেবতার দাস। তিনিই এই কর্মে আমায় নিযুক্ত করেছেন, তিনি ছুটি না দিলে আমার ছুটি হয় কেমন করে?

রাজা চীৎকার করে বলল— তুই আমার বেতনভোগী জীব। তোকে যেতে হবে। এই মন্দিরে এবার থেকে আমিই পূজা করব। আমিই বসব ওই তোর আসনে। রক্ষী—।

রাজার হাঁক শুনে অস্ত্রধারী রক্ষী অগ্রসর হবার পূর্বেই পুরোহিত স্ব-আসন ত্যাগ করলেন। শান্ত ভঙ্গীতে করজোড়ে বিগ্রহকে প্রণাম করে গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। তারপর বহু নির্বাক নিশ্চুপ লজ্জাবনত মানুষের সম্মুখ দিয়ে ধীর পায়ে তোরণদ্বার দিয়ে নির্গত হলেন।

ছৈলার চোখ ভরে জল এল। সে চাইল একবার পুরোহিতকে ডাক দিতে। কিন্তু প্রবল শব্দতাণ্ডবে তার সূক্ষ্ম কণ্ঠ হারিয়ে গেল অতি সহজেই। সেও প্রহরীদের ঠেলে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করছিল, এমন সময় তাদের গ্রামের প্রধান কোথা হতে এসে তার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল, বলল— এই ছুঁড়ি। তোর আর সব সঙ্গীসাথীরা কোথায়? তোদের পাড়া থেকে আর কাউকে দেখছি না কেন? সকাল সকাল এসেছিল সব ঝামেলা পাকাতে, এখন পুজোর সময় নেই কেন? যা যা, শিগগির ডেকে আন। বল রাজ আদেশ।

ছৈলার হাত ছেড়ে দিলে সে নাটমন্দিরের সোপান পেরিয়ে এল ছুটতে ছুটতে। তার বুকের মধ্যে তখন ধকধক শব্দ হচ্ছে, যেন হৃদ্‌পিণ্ডখান উপড়ে আসবে এখনি। তার মাঝে পিছন থেকে প্রধানের কণ্ঠ তার কানে এল— আর রাতে যেন কোনো ঘরে দীপ না জ্বলে। মনে রাখিস— রা-জ-আ-দে-শ।

আকাশে মেঘ ছিল ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন। তাদের সরিয়ে অমলিন পূর্ণ চন্দ্র পুব দিগন্তে উঠল। শীতল জ্যোৎস্নার চাদরখানি এই রুক্ষ প্রান্তরের উপর দিয়ে প্রসারিত হল বহুদূর। আজ ছৈলার পল্লীতে কারো ঘরে দীপ জ্বলে নি। কেউ দেবালয়েও যায় নি, কিন্তু দেবতার আসনও পাতে নি নিজ নিজ গৃহে। সেই অসীম আকাশের নিচে তরল আলোকে ছৈলা তার গৃহপ্রাঙ্গনে এসে দাঁড়াল। সম্মুখে বিস্তৃত প্রান্তর, রঙ্গিনী বা দেবালয়— কিছুই দেখা যায় না এখান থেকে। সহসা তার মনে হল, ওই ভেরীনাদ, রাজশাসন, প্রধানের উচ্চকিত সংলাপ— সকলই মিথ্যা। যেন এসব কোনোকালেই ঘটে নি, যেন কেবল এই নিশাকালে দেবতার আগমনের প্রতীক্ষাটুকুই সত্য।

ছৈলা গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশ করে মৃৎ প্রদীপগুলি নিয়ে এল। পৃথক ভাবে বহির্দ্বার বলতে কিছু নেই তার গৃহে। যেখানে উপকরণের স্বল্পতায় দিন যায়, সেখানে চুরির ভয় নেই, দ্বাররক্ষারও বালাই নেই। তাই তার নিকানো পরিচ্ছন্ন অঙ্গনটি যেখানে শেষ হচ্ছে, সেখানে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে ভূমিতে রাখল সে। দেবালয় থেকে শূন্য মনে ফেরার পর সে এই অঙ্গনের চারিদিক বরাবর আলপনা দিয়েছে। বকুলের মালা গেঁথেছে, পরমান্ন প্রস্তুত করেছে শুদ্ধ অগ্নিতে। মা যে তাকে বলেছিল, দেবতা আসবেন। আজ যদি কেবল রাজার ঘরেই দেবতা আসেন, তা আসুন, ছৈলার তাতে কষ্ট হবে না। কিন্তু তার মায়ের কথাটি সে ভুলবে কেমন করে?

—কি করছিস লো?— খুব নিচু কণ্ঠস্বর শুনে ছৈলা মাথা তুলে তাকাল, দেখল অজদা দাঁড়িয়ে। রুপোলি জ্যোৎস্নার মৃদু আলোকে অজদার দুই চক্ষে ভয় আর আর্তি। নতজানু হয়ে বসে সে আরো ভয়ার্ত স্বরে বলল— নিষেধ আছে যে সই, রাজার নিষেধ।

—থাকুক নিষেধ। মা বলে গেল যে— দেবতার আসন পাততে হবে।

ছৈলা কথাগুলো বলছিল বটে, কিন্তু তার বক্ষের মধ্যে ভয়ের বাসা তেমনই ছিল। দেবতার জন্য বকুল বৃক্ষের নিচে কাঠের পিঁড়ি পাততে পাততে তার হাত কাঁপছিল, নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছিল। তবে সে রাত্রিতে ওই সুদূরব্যাপী চন্দ্রালোকে এমন কিছু শক্তি ছিল, যা তার অন্তরে একটি গভীর বিশ্বাস প্রোথিত করেছিল।

অজদা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছৈলার কার্যকলাপ সব দেখল, তারপর ব্যাকুল হয়ে বলল— আমার তবে কী হবে সই? আমি যে একটা প্রদীপও গড়ি নি এবার। এই এক তুই ছাড়া আর তো কেউই গড়ে নি।

ছৈলা তখন বাকি নয়টি প্রদীপ অজদার হাতে তুলে দিল নিঃশব্দে। অজদা আঁচলে সেগুলিকে বেঁধে নিয়ে উজ্জ্বল মুখে বলল— যাই, সকলকে দিয়ে আসি।

কেমন করে ওই নয়টি প্রদীপ দিয়ে সমগ্র পল্লী আলোকিত করা যাবে, সেকথা ভাবল না দুই বালিকার কেউই, কেবল মুক্তির একটি বাতাস বয়ে গেল দুজনার মধ্যে।

অজদা চলে যেতে ছৈলা বকুল বৃক্ষের নিচে সেই পিঁড়িটির সামনে বকুলের গাঁথা মালাটি হাতে নিয়ে প্রতীক্ষা করতে লাগল।

কখন বকুলের সুঘ্রাণ তার চক্ষুতে নিদ্রাঘোর এনেছিল তা সে জানে না। সহসা কিসের এক অপার্থিব অনুভূতিতে তার মুদিত নয়ন খুলে গেল। যেন এক অপরিমেয় দীপ্তি তার চতুষ্পার্শ্ব উদ্ভাসিত করেছে। সে দেখলে এক ভাস্বর অতি দীর্ঘ মূর্তি তার সম্মুখে দণ্ডায়মান। দেবতা? তবে কি সত্যই দেবতা এসেছেন তার গৃহে? তবে যে মা সত্যই বলেছিল। দেবতার চোখের দিকে তাকানো যায় না, এত জ্যোতি। ছৈলা নতজানু হয়ে দেবতার পদপ্রান্তে মাথা রাখল, বকুলের মালাখানি রাখল সেখানেই। বকুলবৃক্ষের নিচে পাতা আসন গ্রহণ করলেন দেবতা।

ছৈলার সমগ্র দেহ মন তখন অবশ হয়ে এসেছে। দুই চোখ ছাপিয়ে ধারা বইছে। সে সামান্য বালিকা, এই বিপুলা পৃথিবীর কেই বা তাকে চেনে। তবু তো দেবতা তাঁর গৃহেই এসেছেন। কিন্তু অত জ্যোতির মাঝেও বিষাদের একটি ছায়া যেন দেবতার মুখমণ্ডলে প্রত্যক্ষ করল সে। যে দেবতার বিগ্রহটি দেখলে তার মনের মাঝে অকারণ আনন্দের প্রবাহ উপচিয়ে পড়ত, সে দেবতা এমন বিষণ্ণ কেন?

ছৈলা জিজ্ঞাসা করলে— ঠাকুর, বিষাদ কিসের?

দেবতা বললেন— আমি চললাম বালিকা। তোমাদের এই কৌথুমপুরা ত্যাগ করে, ওই দেবালয় ত্যাগ করে।

চমকে উঠে ছৈলা বলল— সেকি ঠাকুর? কেন যাচ্ছ আমাদের ছেড়ে?

—যেখানে সুন্দর নেই, সেখানে দেবতার পূজা হয় না। যা আড়ম্বরের জালে বদ্ধ, অবিনয়, ঔদ্ধত্ব যেখানে একমাত্র সাধন, সেখানে সকলই কুৎসিত। সেখানে আমার বাস নেই।

—তবে আমাকেও সাথে নাও ঠাকুর। আমার যে কেউ নেই।

—সে কেমন করে হবে? তুমি চলে গেলে এই কুৎসিত মানুষদের সুন্দর কী— তা শেখাবে কে? তুমি বরং অন্য বর চাও বালিকা।

—আমার যে আর চাইবার কিছু নেই। ওই তোমার গৃহে আমার কাজ। সেখানে যদি তুমিই না রইলে, তবে কাজই বা কিসের?

—ওই যে বললাম, সুন্দর কী, কেমন— তা মানুষকে শেখানো তোমার কাজ। এই যেমন তুমি মাটির প্রদীপটি গড়েছ নিজের হাতে, যেমন করে মালা গেঁথেছ— এই সবই সুন্দর। তাই শেখাবে তুমি। এরপর আর কী বর চাও— সেকথা ভেবে বলো বালিকা।

—তবে রঙ্গিনীতে জল এনে দাও। চাষের কাজ হয় না জলের অভাবে।

—তথাস্তু। আর কোনো বর?

—তাহলে আমার এই বকুল গাছে ফুল এনে দিও।

প্রসন্ন হেসে দেবতা বললেন— তবে তাই হোক। নদী ভরা হোক, বৃক্ষ প্রাণবান হোক। আমি প্রত্যাবর্তন করব, এমনই কোনো বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে। দীপ জ্বালিও, বকুলের মালা গেঁথো।

দেবতা বিদায় নিলেন।

ভোর হয়ে এল। মানুষের কোলাহলে চোখ খুলল ছৈলার। কারা যেন ছুটে ছুটে চলেছে ওই টিলার দিকে। ছৈলার দেখল তার হাতে বকুলের মালাটি আর নেই, কিন্তু বকুলের সুবাস তার সমস্ত গৃহাঙ্গন জুড়ে। সে অবাক হল, এক রাতে তার বকুলগাছ ঝেঁপে ফুল এসেছে— অজস্র। সবুজ পত্রপল্লব ছাপিয়ে সাদা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বকুলের গুচ্ছ।

সম্পূর্ণরূপে বোধ তার তখনো ফেরে নি, অজদা ছুটতে ছুটতে এসে বলল— দেখে যা লো সই— কী হয়েছে—। বলেই তেমন ছুটতে ছুটতে দূরে মিলিয়ে গেল।

ছৈলাও ছুটল— টিলা লক্ষ্য করে। দিবারম্ভের রক্তিম আলোকে টিলার উপর তাদের সমগ্র পল্লী সমবেত। বৃদ্ধ পুরোহিতও সেখানেই দাঁড়িয়ে। ছৈলা হাঁপাতে হাঁপাতে তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়াল, তারপর উত্তর-পশ্চিমে অবনত ভূমির দিকে দৃষ্টি ফেলে দেখলে— যা দেখলে তা বিশ্বাস করা কঠিন হল। রঙ্গিনী আর পূর্বের মতো ক্ষীণতনু নেই, শরীরে তার সহসা জোয়ার ডেকেছে বুঝি। তার বিপুলা জলরাশি ফুলে ফুলে উঠছে, এ প্রান্ত হতে ও প্রান্ত প্লাবিত হয়েছে, ভেঙেছে তার দুই পাড়, উথাল পাতাল জলতরঙ্গে আচমকা বিস্তার পেয়েছে তার প্রায় নষ্ট হতে বসা সত্তাটি। তারই সাথে সে গ্রাস করেছে দেবালয় ও দেবালয় সংলগ্ন রাজপ্রাসাদ। টিলার উপর থেকে দেখা যায়, দেবালয়ের চূড়ায় লম্বালম্বি ফাটল, স্তম্ভগুলি জলের মাঝে বেঁকেচুরে দণ্ডায়মান, রাজপ্রসাদের উচ্চ প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষটুকুও চোখে পড়ে না। চোখে পড়ে ভগ্ন রাজছত্র, রাজধ্বজা— ভেসে যায় দুরন্ত তরঙ্গের স্রোতে।

কেউ বললে, কাল অনেক রাতে ওই পাহাড়ের ওপর বৃষ্টি এসেছিল, তার জল বান ডেকেছে রঙ্গিনীতে। কেউ বলল, রাজাকে সেই স্রোতে ভেসে যেতে দেখেছে। সাথে পাত্র-মিত্র-পরিষৎ-প্রধান— কে কোথায় গেল— কেউ সংবাদ রাখে নি।

ছৈলা পুরোহিতের গাঁ ঘেঁষে এল। তারপর অতি মৃদু স্বরে বললে— দেবতা বলেছেন, আবার আসবেন। বলেছেন, বকুলের মালা গেঁথে রাখতে, আসন পেতে রাখতে— প্রতি বোশেখ পুন্নিমেতে।

উদ্বেল অশ্রু মুছে বৃদ্ধ পুরোহিত বললেন— বেশ তো, তবে তাই হোক। তুমিই সকলকে শিখিও মা।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

Image Description

Nandita Ghosh

2 মাস আগে

সুন্দর লেখনী ও গল্প

মন্তব্য করুন

লেখক

গার্গী ভট্টাচার্য বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতনে অধ্যাপনারত। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃততে ডক্টরেট, বিশেষ বিষয় বেদান্ত। আই-আই-এস, সিমলাতে ইউ-জি-সি আই-ইউ-সি-এর অ্যাসোসিয়েট সম্মানপ্রাপ্ত। জানেন প্রাচীন ভারতীয় লিপিসমূহ। তাঁর প্রকাশিত বাংলা বইগুলি হল- অপ্রধান উপনিষদের অনুবাদ (২০১৫), ‘উপনিষৎ- অনুবাদ ও দারা শুকো’ (২০২১), ‘পুরাকল্প’ (ঐতিহাসিক নভেলা-সংগ্রহ: ২০২২), অঙ্গ হতে অনন্ত: উপনিষদে ‘শরীর’ ও ‘আমি’ (২০২৩)। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও রিসার্চ জার্নালে তাঁর ২৮টিরও বেশি প্রবন্ধ প্রকাশিত। শখ আছে ছবি আঁকায়, ঝুলিতে রয়েছে বিভিন্ন পুরস্কার ও ন্যাশানাল স্কলারশিপ।

অন্যান্য লেখা