ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সুনয়নার অনেক বন্ধু আছে। ছেলেদের মধ্যে অনেকেই তার প্রেমে পড়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত সে কারুর প্রেমে পড়েনি। ফলে প্রেমটা আর গড়েও ওঠেনি। যদি প্রেম গড়ে উঠত সে জিজ্ঞাসা করত যে, সে অর্থাৎ তার প্রেমিক শুধুমাত্র চুলের জন্য তাকে অপছন্দ করে কি না। এই অজানা তথ্যটি তার আর জানা হল না! সুনয়নার বরং বিশ্বাস ছিল যে, আজ পর্যন্ত যেসব পুরুষ তার প্রেমে পড়েছে তারা তার চুলের জন্যই তাকে আরও বেশি ভালোবেসেছে।
সুনয়নার চুল নিয়ে সমস্যা আজ নতুন নয়। চুল ওর মনের মতো কিন্তু চুল বাঁধা কখনোই মনের মতো হয় না। কোথাও যেতে গেলে অন্যান্য সাজগোজে তেমন সময় লাগে না। কিন্তু চুল সেট করতে গেলে ওর কালঘাম ছুটে যায়। তার চুল এখন স্টাইল ছেড়ে জীবন সাথি নির্বাচনেও অংশ নিতে চলেছে।
বান্ধবী স্মিতার বিয়ে। ওর বাড়ি দমদমে। ক্লাসের সবাই তাকে বলত দমদমের স্মিতা। কারণ দুইজন স্মিতা ছিল ক্লাসে। দু-জনেই সাহা। ফলে তাদের নামকরণ একজন দমদমের স্মিতা। অন্যজন চন্দননগরের স্মিতা। চন্দননগরের স্মিতার বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের ব্যাচের সকলেরই প্রায় বিয়ে হয়ে গেছে। দমদমের স্মিতার বিয়েতে যাওয়া নিয়েই দেখা দিয়েছে সমস্যা। এই সমস্যা শুধুমাত্র সুনয়নার একার। সেই চুল নিয়েই সমস্যাটা। অন্যান্য সমস্ত ব্যাপারেই সুনয়না যথেষ্ট মডার্ন। কিন্তু চুলের ব্যাপারে সে এখনও মা-ঠাকুমাদের আমলেই পড়ে আছে। কুচকুচে কালো একঢাল কোঁকড়া কোঁকড়া চুলে তার পিঠ ছেয়ে থাকে। লম্বায় হাঁটু স্পর্শ করে। সুনয়না তাই চুল কাটে না। বন্ধুরা এই নিয়ে কিছু বলতে গেলেই সে বলে— ‘যাদের চুল নেই বা বাজে চুল তারাই চুল কাটবে বা বিভিন্ন ডিজাইন করবে!’
সুনয়নার চুল ভালো তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আজকাল এমন চুল কেউই পছন্দ করে না। সুনয়না তা বিশ্বাস করে না।
বলে— ‘আমার আসল চুলটাই তো ভালো। অপছন্দ করার কোনো কারণ দেখছি না!’
বলে— ‘অন্তত লম্বা চুলের জন্য কেউ আমার প্রেমে পড়বে না এই চিন্তাটা তোদের বড্ড বাড়াবাড়ি।’
ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সুনয়নার অনেক বন্ধু আছে। ছেলেদের মধ্যে অনেকেই তার প্রেমে পড়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত সে কারুর প্রেমে পড়েনি। ফলে প্রেমটা আর গড়েও ওঠেনি। যদি প্রেম গড়ে উঠত সে জিজ্ঞাসা করত যে, সে অর্থাৎ তার প্রেমিক শুধুমাত্র চুলের জন্য তাকে অপছন্দ করে কি না। এই অজানা তথ্যটি তার আর জানা হল না! সুনয়নার বরং বিশ্বাস ছিল যে, আজ পর্যন্ত যেসব পুরুষ তার প্রেমে পড়েছে তারা তার চুলের জন্যই তাকে আরও বেশি ভালোবেসেছে।
তার বান্ধবীরা প্রায় প্রত্যেকে জামাকাপড় পালটানোর মতো বয়ফ্রেন্ড পালটায়। আর সকলের কাছেই প্রেম মানেই শরীর। সে প্রথম প্রথম এসব শুনে যত অবাক হয়েছে তার বান্ধবীরা ততোধিক অবাক হয়েছে তার কথা শুনে। সুনয়না নাকি তখনও পর্যন্ত শরীর সম্পর্কে কিচ্ছু জানে না। কারও সাথেই তার নাকি কোনোরকম শারীরিক সম্পর্ক হয়নি।
সোমলতা তো শুনে হেসেই বাঁচে না।
মহুয়া বলে— ‘তোর তো জাদুঘরে থাকা উচিত রে! এখানে কী করছিস?’
লোপা বলে— ‘তার মানে তুই এখনও ভার্জিন?’
সোহিনী বলে— ‘ওই, আজ রাতে চলে যা আমার এক্সের সাথে।’
বলে কবীরকে ডেকে বলে— ‘এই মালটাকে একটু ঝাড়তে শিখিয়ে দিস তো আজ!’
বলে চোখ মারে। কবীর তাদেরই ক্লাসমেট। সে সরু চোখে সুনয়নার দিকে চাইলে সুনয়নার বমি পেয়ে যায়!
সে বলে— ‘ছি!’
সোহিনী ফিসফিস করে বলে— ‘আরে ছোটোখাটো চেহারা হলে কী হবে রে! ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে যা দেয় না!’
সুনয়না ছুট্টে পালায়!
বান্ধবীদের সাথে তার এর পরেও কথা হয়নি তা নয়। হয়েছে। কিন্তু তাকে কেউই চিনতে পারে না। অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকে তার মুখের দিকে। একটা বেমানান কিম্ভুত প্রাণী যেন সে।
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সে নিজেই হাত-পা দুমড়ে মুচড়ে হুড়মুড় করে একজনের প্রেমে পড়ে গেল। ছেলেটার নাম রাহুল। একটু যেন কেমন ছেলেটা! পড়াশুনায় খুব ভালো। সে অনেকেই হয়। বিষয় সেটা নয়। বিষয় হল এইটাই যে রাহুলের গানের গলা অসাধারণ! অবিকল হেমন্ত মুখার্জি! ফাংশান-টাংশান করে। এই বয়সেই এদিক-ওদিক গান গাইতে যায়। ওর বেশ ভালোরকম ফ্যান-ফলোয়ার আছে। মাথায় সে মেয়েদের মতো চুল রেখেছে। ঘাড়ের নীচ পর্যন্ত চুলের ঢল নেমে এসেছে। মাঝে মাঝে পনিটেল করে। কখনো-বা মেয়েদের মতোই একখানা খালি গার্ডার দিয়ে রাখে। সুনয়নার তো বেশ লাগে। কিন্তু সে কারোর প্রেমে পড়ার মতো ছেলে নয়। সুনয়না কখনো নিজে থেকে ওর সাথে কথা বলতে যায় নি। চেষ্টাও করেনি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত মেয়েরা ওর সাথে কথা বলার জন্য পাগলের মতো আচরণ করত! ও দেখত। দু-চোখ মেলে। অন্যরা হাসলে সুনয়নাও হেসেছে। কিন্তু ব্যাপারটা তার ভালো লাগেনি। বন্ধুরা মানে বান্ধবীরা টিকিট কেটে এনে বলত— ‘রাহুল, চ মুভি দেখতে যাবি?’
কেউ-বা খাবার এনে সেধেছে! কিন্তু রাহুল কোনো মেয়েকেই পাত্তা-টাত্তা তেমন একটা দেয়নি। যখন বহু মেয়েরাই তার প্রেমে পড়ে তাকে প্রপোজ করত, রাহুল মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলত—
‘আচ্ছা, তোকেও যদি আমি ভালোবাসি বলি, কী করবি তুই তখন?’
বেশিরভাগ মেয়ে বলেছে, ‘চুমু খাব’, ‘জড়িয়ে ধরব’। কয়েকজন তো সোজাসুজি হোটেলে যাবার অফারও দিয়েছে।
এমনও নাকি কেউ কেউ বলেছে— ‘প্রেম-ফ্রেম করতে হবে না। হোটেলে চল। যাবি?’
অবাক হয়ে চেয়ে থাকা রাহুলকে বলেছে— ‘চাপ নিস না বস! জোর করে বাঁধিয়ে ঘাড়ে চাপবার মতলব নেই আমার। প্রোটেকশান আমিই নিয়ে যাব। বিয়ে করে শালা দাসী-বাঁদির জীবন কে কাটাবে রে!’
রাহুল নিজের চুলের মধ্যে হাত চালিয়েছে আর মুচকি হেসে সকলকেই রিজেক্ট করেছে।
একদিন সুনয়না বলে ফেলেছে তার মনের গোপন কথাটা। বলেছিল দমদমের স্মিতাকেই। তাতে দমদমের স্মিতা বলেছিল—
‘মালটাকে আমার তেমন একটা ভালো লাগে না। মানে ভালো লাগে ঠিকই কিন্তু ভালোলাগাটা ভালোলাগাই। ভালোবাসা-টাসা নয়। তোর মতো ভালোবাসা হলে দাদাকে বলে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতাম।’
বলে হি-হি হা-হা করে খুব হাসছিল!
স্মিতার দাদা মন্ত্রীর ডান হাত। সে ইচ্ছে করলে এসব অবশ্য জলভাতের মতোই করতে পারে!
সুনয়না বলেছিল— ‘আমার যে কী ভীষণ ভাল্লাগে ওকে!’
দমদমের স্মিতা হাসে।
বলে— ‘ওর প্রেমে কে পড়েনি বল! কিন্তু ও কারুর প্রেমে পড়ে না!’
সুনয়নার তখনই থেমে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সে পারেনি। যদিও পুরো দুই বছর সে আর একবারও রাহুলের দিকে ফিরেও চায়নি। নিজেকে একটু একটু করে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।
সে ভেবেছে যে, সে ভুলেই গেছে। কিন্তু পাশ করার পর যখন বাড়ি থেকে পাত্র দেখা শুরু হল সে বুঝতে পারল যে, সে রাহুলকে এতটাই ভালোবাসে যে তার পক্ষে অন্যকে ভালোবাসা একেবারেই সম্ভব নয়।
এই ভালোবাসা এতটাই গভীর যে সে রাহুলকে না পেলে বরং অবিবাহিত থেকে যাবে আজীবন কিন্তু অন্য কাউকে গ্রহণ করতে পারবে না। আজ বিয়ে বাড়িতে রাহুলও নিমন্ত্রিত। সুনয়না জানে রাহুল আজ খুবই বিজি থাকবে। রাহুল আসবে মানে গান তো হবেই। তাই আজ সে স্পেশাল সাজতে চায়। এমনভাবে সে আজ সাজবে যেন রাহুলের নজরে পড়ে যায়। সব্বাই যেন তাকেই দেখে। তার একমাত্র উপায় হল তার এই পিঠ ছাপানো চুলকে বিশেষ কোনো রূপে সাজানো! তো সে কীভাবে চুলকে সাজাবে এই নিয়ে নানাজনে নানারকম যখন বলছিল তখন বন্ধু রীণা হঠাৎ বলেছে— ‘তুই বরং পার্লারে যা!’
কথাটা মনে ধরেছে সুনয়নার! সে তাই সকালেই সেজেগুজে চলে এসেছে পার্লারে। পার্লারের গেটের পাশেই একটা বাচ্চা ছেলে গোলাপ ফুল বিক্রি করছে। বিয়ের মরশুম চলছে তো। তাই সমস্ত জায়গাতেই ফুল বিক্রি হচ্ছে। বাচ্চাটার মুখটা করুণ দেখাল। কিন্তু গোলাপ কেনার কোনো তাগিদ অনুভব করল না সুনয়না। সে পার্লারে ঢুকতেই মেয়েগুলো মুগ্ধ চোখে চেয়েছে তার দিকে। যে চুল সে কোনোদিন কাটেনি আজ পার্লারে সে চুলের গোছা খুলতেই পিঠময় ছড়িয়ে পড়ল সেই চুলের ঢল।
মেয়েরা বলল— ‘কী সুন্দর চুল আপনার!’
একজন বলল— ‘এত্তো সুন্দর চুল জীবনেও দেখিনি!’
সুনয়না বলে— ‘কেমন ডিজাইনে মানাবে আমাকে?’
একজন বলল— ‘বিয়েবাড়ি নিশ্চয়ই!’
অন্য একটি মেয়ে বলল— ‘বোবল করুন।’
ঠিক এই সময় স্মিতা মানে দমদমের স্মিতা একটা ছবি পাঠাল। রাহুলের। অর্থাৎ রাহুল এসে গেছে বিয়ে বাড়িতে।
সেই সময় পার্লারের অন্য একটি মেয়ে বলল— ‘না, আপনি পিগটেল করুন বরং!’
একজন চুলগুলো ধরে আদর করতে করতে বলল— ‘আপনার এই ঢেউ খেলানো চুলের রাশির জন্য আলাদাভাবে ঝুঁটি করুন।’
স্মিতার পাঠানো একটা ভিডিয়ো খুলতে যথেষ্ট সময় নিচ্ছিল। এইমাত্র সেটা খুলল। রাহুল গান গাইছে। ‘আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি, আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি...!’
সেই একই অনুভূতিতে আক্রান্ত হয় সুনয়না! কী যে আছে রাহুলের উচ্চারণে! সুনয়না কেঁপে উঠল। সেটা রাহুলের কণ্ঠে, না কি তাকে দেখে, না কি চুলে হাত দেওয়ায়, সে বুঝল না!
অন্য একজন মেয়ে তখন বলল— ‘নাহ! আপনি আফ্রো পাফস্ করুন বরং!’
একজন চুলের গোড়ায় হাত দিয়ে বলল— ‘পাইনাপলস্ করলে দারুণ লাগবে কিন্তু আপনাকে!
একজন বলল— ‘না। আপনি স্ক্রঞ্চি করে দেখতে পারেন বরং!’
আবার ভিডিয়ো ঢুকল হোয়াটসঅ্যাপে।
‘অলিরও কথা শুনে বকুল হাসে...!’ গান এইটুকু গাইতেই পরের লাইনটা গাইল স্মিতা! মানে দমদমের স্মিতা! মানে বিয়ের কনে!
‘কই তাহার মতো তুমি আমার কথা শুনে হাসো নাতো...!’
বুকের মধ্যে লঙ্কা বাটার জ্বলন হচ্ছে সুনয়নার!
কী বিশ্রি হেড়ে গলা স্মিতার! তবুও তো রাহুল গাইতে দিল। সুরের সাথে মিলন ঘটালো সুরের!
ঠিক সেই সময় একজন মেয়ে সুনয়নার চুলে হাত দিয়ে বলল— ‘গোগো করালে সব থেকে ভালো হবে।’
ভীষণ সুন্দরী একটা মেয়ে চুলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে বলল— ‘কী নরম গো তোমার চুল! আহ!’
একজন চুলের একটা গোছা ধরে বিনুনি করতে করতে বলল— ‘আমার কথাটা বিশ্বাস করুন। আপনার চুলগুলো যেমন রেশমের মতো নরম, তেমন মেঘের মতো কালো। এই চুল যেমন খুশি বাঁধুন না কেন দারুণ লাগবে!’
এই সময় আবার রাহুলের গান। আবার রাহুলের সেই চোখ! সুনয়না ভেবে পায় না রাহুলের কোন জিনিসটা ওকে বেশি টানে! কণ্ঠ, চোখ না কি কোনো মেয়েকেই পাত্তা না দেওয়া? না কি সব? সমস্তটুক?
রাহুলের গান আর বসতে দিল না সুনয়নাকে। রাহুল তখন গাইছিল— ‘যখন ডাকল বাঁশি তখন রাধা যাবে যমুনায়...!’
গানের মাঝখানে হঠাৎ স্মিতা রাহুলের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসল। বলল— ‘রাহুল, আই লাভ ইউ! আমি তোকে সত্যি ভালোবাসি! এতদিন বুঝতে পারিনি! তোকেই আমার চাই।’ কে ভিডিয়োটা করেছে তা বুঝতে পারছে না সুনয়না। রাহুলের প্রতিক্রিয়াও সে ক্যামেরা-বন্দি করেনি। ভিডিয়ো শেষ!
পার্লারের মেয়েরা সুনয়নার চুল ধরে আরও কিছু বলছিল।
আরও কত ধরনের চুল বাঁধা যায় সেইসব কথা! ইতিমধ্যে অনেক মেয়েরা এসেছে। চুল বেঁধেছে। চলেও গেছে। সবাইই সুনয়নার দিকে বিশেষ তাকিয়েছে আর জীবনেও তার চুলে কাঁচির ছোঁয়া লাগেনি তা শুনে অবাক হয়েছে। পার্লারের মেয়েগুলো চুলের রাশি ছাড়তেই চাইছে না। সুনয়না জীবনেও চুল কাটেনি! আজ এই বিয়ের তারিখ বলেই কি তার এমন অনুভূতি হচ্ছে? চুলে হাত দিলে একটা মেয়ের যে এমন তীব্র ভালোবাসার নেশা জাগে তা তার অজানা ছিল! এতকাল নিজের চুল সে নিজেই বেঁধেছে। অন্যে চুল ছুঁলে এভাবেই বুঝি যুবতী হয়ে ওঠে মেয়েরা? জানত না সুনয়না! জীবনে আর কখনো সে নিজের চুল ছোঁবে না! বার বার অন্যের হাতে তুলে দেবে! মুগ্ধ বিস্ময়ে সুনয়না দুই চোখ বন্ধ করেছিল! শরীরের প্রতিটি রোমকূপের কেন্দ্রে সেই অনুভূতি পৌঁছে যাচ্ছে যেন তড়িৎ তরঙ্গের মতো! বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছে সুনয়না! জীবনে প্রথম তার ভালোলাগার কুঁড়ি চিনতে পারল সে ! সে জানে যে তার চুল একদম আসল চুল। আজ পর্যন্ত কোনো কাঁচি ছুঁতে পারেনি এই চুলের গোছার একটি চুলকেও! অনুভূতি গভীর হলে সে বুঝল যে ভালোবেসে ভালোবাসা ছুঁয়ে দিলে বুঝি মরে যাওয়াও যায়! শরীর ও মন মিলেই একজন মানুষ পূর্ণতা পায়!
সে ভিডিয়োটা আবার দেখল। তারপর আবার। যতবার দেখছে ততবার বুকের মধ্যে লঙ্কাবাটা ছড়িয়ে পড়ছে!
সুনয়না হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল!
মেয়েগুলো তখনও সুনয়নার চুলের রাশি ধরে আদর করছে! ভালোবাসার হাতগুলো তখনও উষ্ণ! সুনয়না উঠে দাঁড়াতেই অবাক হয়ে ওরা বলল— ‘কেমন করে বাঁধবেন বলুন ম্যাম!’
সুনয়না বলল— ‘ছাড়ুন!’ অর্থাৎ চুল ছাড়ুন। কিন্তু মেয়েগুলো তখনও চুলের রাশি ছুঁয়ে রয়েছে প্রেমিকের প্রথম ছোঁয়ার মতো!
সুনয়না তার দুই হাত দিয়ে চুলের গোড়া ধরে একবার জোরে ঝাড়া মারল। মেয়েগুলোর চোখে-মুখে শক্ত ঝাঁটার কাঠির মতো আঘাত করল চুলের রাশি! একই চুল! একটু আগেই সে ছিল রেশমের মতো মোলায়েম! মেয়েরা সব্বাই সরে যেতে বাধ্য হল। সুনয়না বেরিয়ে এল।
পার্লারের সামনে সেই বাচ্চাটা। ঢোকার সময় যে করুণ চোখে চেয়েছিল সুনয়নার দিকে। এখন সে অন্যদিকে চেয়ে রয়েছে! ততক্ষণে সুনয়না তার সেই পিঠ ছাপানো চুলের রাশি হাত খোঁপা করে বেঁধে নিয়েছে। অন্যের স্পর্শে যে চোখদু-টি তার মোলায়েম হয়ে বুজে এসেছিল এতক্ষণ, তা এবার পুরো খোলা। এবার ছেলেটির থেকে দুটো গোলাপ কিনল সে।
গাড়িতে বসে খোঁপায় গুঁজল একটা গোলাপ। অন্য গোলাপটা মুখের সামনে ধরে, মিষ্টি হেসে একটা চুমু খেল আর ড্রাইভারকে বলল— ‘দমদম চলো।’
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন