preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
পাঠপ্রতিক্রিয়া: আসলে ভালবাসার গল্প
রিভিউ

পাঠপ্রতিক্রিয়া: আসলে ভালবাসার গল্প

26 Mar, 2025.

রাজীব রায় গোস্বামীর ‘আসলে ভালবাসার গল্প’-র পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখেছেন ড. সমীর দে। কেতাব-ই পাঠপ্রতিক্রিয়া প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় স্থানাধিকারী এই পাঠপ্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হল কেতাব-ই ব্লগে।

‘আসলে ভালবাসার গল্প’, সত্যি সত্যি যেন তেলরঙে আঁকা একটি ছবি। আমি নিজে একজন মফস্বলের মানুষ। কাজেই চরিত্রগুলো খুব চেনা। এই উপন্যাসের ‘জার্নি’ যতগুলি চরিত্রকে নিয়ে তারা আমার চেনা জীবনেরই এক একটি দলিল স্বরূপ। যেখানে সকল সমঝোতা প্রস্তাব কার্যত নাকচ। শুরুতে এই উপন্যাসকে ‘শান্তিকামী’ বলে মনে হলেও, কিছু দূর যাওয়ার পরই বোঝা যায়, এই উপাখ্যান কী ভাবে আপাত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বার করে আনছে, চরিত্রের পুঁজ-রক্ত। যার ক্ষরণে অভ্যস্ত আমাদের মধ্যবিত্ত যাপন, কিন্তু যাকে কোনোদিন আয়নায় ফেলে আলাদা করে দেখা হয় না আমাদের। চেনা জীবন নিয়েই যে নিখুঁত বুননে এক দুর্দান্ত গল্প বলা যায়, তা এই উপাখ্যানে বহুদিন বাদে আবার স্পষ্ট।

এই উপন্যাসের একটি চরিত্র হল ‘সিমু’। যার রাজনীতিতে শিক্ষার থেকেও বিশ্বাস অনেক বেশি। আজও তার মাথার মধ্যে বেঁচে আছে মার্ক্সবাদের স্বপ্ন। বিপ্লব আর সমাজতন্ত্রের খোঁজ আজও জারি তার, যা এই সময়কালে দাঁড়িয়ে খানিক ব্যতিক্রমী বলেই ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি। এই চরিত্র তৈরি করার জন্য লেখক যে বিশেষভাবে যত্নবান হয়েছেন তা চলতে চলতে ক্রমশ স্পষ্ট হয়। এবং শেষে এই চরিত্র যে পরিণতির দিকে এগিয়ে যায় তা একইসাথে অভূতপূর্ব এবং হয়ত বা কিঞ্চিৎ ‘মরবিড’ও। ওই ‘মরবিডিটি’ই যেন এক দীর্ঘস্থায়ী দাগ কেটে যায় পাঠকের মননে। সুতীব্র নীল এক ‘স্যাডিস্টিক প্লেজার’-এ ছেয়ে যায় ধূসর মস্তিষ্ক। বলা বাহুল্য এই ‘বেদন’ আকর্ষণ বড়ই অমোঘ।

সিমু ছাড়াও আরও এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেন কাকাবাবু, সিমুর রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু। কাকাবাবুর কথা বলতে গিয়ে লেখকের কথামুখ (এই জায়গাটা পড়লেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে লেখকের কলমে এক অন্য মায়া আছে।) থেকে কিছু কথা সরাসরি তুলে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

‘আলেখ্যর এক স্থানাঙ্কে দেখা যায়, কাকাবাবু সিমুর স্বপ্নে এসে উপস্থিত। চেতন অচেতনের মাঝে দাঁড়িয়ে তিনি বিভ্রান্ত পথিকের জন্য রেখে যাচ্ছেন জলসত্র আর সরাইখানা, “জান সিমু, মার্ক্স এক নয় , একাধিক। কোনও মার্ক্সই এক নয়, একমাত্র নয়। কোনও মার্ক্সই নিশ্চিতভাবে জীবিত নয়, কোনও মার্ক্সই আবার নিশ্চিতভাবে মৃত নয়। মার্ক্স আসলে সবসময় নড়ে যান, সরে যান। তাঁকে যে যেভাবে ব্যাবহার করে সেইভাবে। ঈশ্বর কিন্তু অনড় তাই মার্ক্স ঈশ্বর নন। মার্ক্সবাদীরাই মার্ক্সের মুখোশ পড়ে নিজেদের ঈশ্বর বলতে চান...।” সিমুর চোখ বুজে আসে ঘুমে। ওড়ে লাল নিশান, হাওয়ায় হাওয়ায়’।

উপাখ্যানের আরও একটি অনুচ্ছেদ উল্লেখ না করে পারলাম না, “সুদীপ ঊর্ণার সারা শরীরে হাত বোলাতে থাকে। বোলাতেই থাকে। ধীরে ধীরে সেই হাত নীচে নেমে আসে। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় কী যেন খুঁজে বেড়ার সুদীপ। কী খুঁজছে ও!

ডা. সরকার কী যেন বলেছিলেন? হ্যাঁ , মনে পড়ে সুদীপের। সার্ভিক্স। জরায়ু মুখ। সার্ভিক্স যখন ধরা ছোঁয়ার মধ্যে থাকে না, তখন ফার্টিলিটির সম্ভাবনাটা বাড়ে। সুদীপ এখন কি একবার দেখে নিতে চায়, কতটা উর্বর ঊর্ণার জমি? সুদীপ হাত বোলাতে বোলাতে অন্যমনস্ক হয়ে যায়।

হঠাৎ, সিমুর ক্লান্ত চোখ দুটো ভেসে ওঠে। সিমু, সারা জীবন তুই বৃথাই খুঁজে যাচ্ছিস সার্ভিক্স। জরায়ু মুখ। যেখানে হাত রেখে তুই বুঝতে চাইবি, কতটা উর্বর তোর যৌথ খামারের জমি। খুঁজেই যাবি জরায়ুর মুখ কিন্তু কোনোদিনও পাবি না।

আজ, সিমুর সাথে অফিস থেকে ফেরার পথে দেখা হয়েছিল। তাই কি সুদীপের মাথায় এই উদ্ভট যুক্তির জাল? না হলে, এইসব বিকট শব্দরা ওর মাথায় এখন উদয় হবে কোত্থেকে!”

সব শেষে যে কথাটা বলতে ইচ্ছে করে, তা হল, বহুদিন বাদে এই রকম একটি উপাখ্যান পড়লাম, যেখানে সেইরকম কোনও উল্লেখযোগ্য কাহিনি না থাকলেও (এই উপন্যাসের যা গড়ন তাতে তার কোনও প্রয়োজন আছে বলেও ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি না।) ‘আনপুটডাউনেবল’। আজ যখন চারদিকে তন্ত্রমন্ত্রতে খানিক ভূতের নির্যাস মিশিয়ে ইতিহাসের হামানদিস্তায় (লিখতে পারলে তন্ত্রমন্ত্র, ভূত-ভবিষ্যৎ, ইতিহাস-পুরাণ ইত্যাদি-প্রভৃতি নিয়েও খুব ভালো উপন্যাস লেখা যেতে পারে। এবং উক্ত বিষয়গুলোর সাথে আমার বিন্দুমাত্র বিরোধ নেই। বরঞ্চ বিষয়গুলো আমার বেশ প্রিয়। আমি বলতে চাইছি যে হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা সেই সব লেখার কথা, যেখানে তন্ত্র-ভূত এবং ইতিহাসের অদ্ভুত এক পাঁচন বা সস্তা ককটেল বানিয়ে ‘পাঁচ পাবলিক’-কে খাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।) পেষাই করে বাজারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, তখন এই ধরনের উপন্যাস এক খোলা বাতাসের মত। যা পাঠকের ভিতর বেশ খানিক আশার সঞ্চার করে এবং নতুন করে এই বিশ্বাস জাগায়, যা শাশ্বত তা শাশ্বতই বটে এবং তা এই বাজারেও পাওয়া যায়।

ধন্যবাদ কেতাব-ই প্রকাশনাকে, এই রকম একটি ‘কাহিনি-বিহীন’ কিন্তু আদ্যন্ত একটি মায়াবী উপন্যাস খুঁজে বার করার জন্য।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

মন্তব্য করুন

লেখক

ড. সমীর দে শিবপুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিক্সে এম.এসসি., দুর্গাপুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে অপারেশনস রিসার্চে এম.টেক. এবং শিবপুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে অপারেশনস রিসার্চে পিএইচডি করেছেন। বর্তমানে কলকাতার জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গণিতের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর ১৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা এবং প্রায় ১৩ বছরের গবেষণার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ২০টি বই, ৫টি বইয়ের অধ্যায়, ৪১টি গবেষণাপত্র, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রকাশিত করেছেন। অপারেশনস রিসার্চ, সফট কম্পিউটিং এবং ফাজি অপ্টিমাইজেশন তাঁর গবেষণার বিষয়।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন