preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
শূন্যকে যেমন শিখছি
কবিতা

শূন্যকে যেমন শিখছি

প্রকাশিত হল শুভ্রা মুখার্জির গুচ্ছ কবিতা— ‘শূন্যকে যেমন শিখছি’।

এক

ঈশ্বর আঁকি রোজ, আর জলে-তেলে মাখামাখি হয়ে গড়িয়ে যায় তার মুখের আদল। তুলি থেকে ধেবড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছ, আবছা হয়ে কোথায় তলিয়ে যাচ্ছ, হে পরমেশ্বর। কর্ষণবিলাসী তুমি, আমি গাছতলা কুপিয়ে বসে আছি, এসো। ধুনিতে আগুন জ্বেলে আহ্বান করি, এসো। ওভাবে গড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা তোমাকে সাজে না, তুমি শান্ত হও, ছায়ায় বসে খানিক জিরিয়ে নিয়ে দেখো হে পরমতম, প্রাণ খুঁজে পাবে। জল থেকে খুঁজে পাবে তোমার মৎস-অবতার। নৌকা বাঁধো, টান করে ধরে রাখো সমস্ত স্থাবর জমিন। এই রণাঙ্গনে ক্লান্ত কেরানির মতো ঢুলে পড়া তোমাকে মানায় প্রভু? বরং প্রশ্ন-ট্রশ্ন করো, মানুষের মাথায় কিলবিলে পোকা ছেড়ে দাও। চারিদিকে দাউদাউ অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে দিয়ে নির্ভেজাল তামাশা দেখো খাটিয়ায় বসে। গলদা চিংড়ির সাথে দু-মুঠো ভাত মেখে তোমার নিকটে রাখি, ভোগ খাও, তিনপাদ দোষ দাও মানুষের হতাশ মৃত্যুকে। তারপর তুমি ক্লান্ত, বিবর্ণ মুখ; তুলি থেকে তেল-জলে লুতুপুতু হয়ে গড়িয়ে যাচ্ছ নাথ। ভোর হয়ে এল, তুমি জিরান গাছের রস খেয়ে উলটে পড়ে আছ কবিতা বা গঁদের আঠায়। স্থান-কাল, লোকজন তোমার খড়ের নীচে সম্পৃক্ত হয়ে আছে। সচ্চিদানন্দ, মৃদুহাস্য স্বরূপ তোমার আমি প্রতিদিন আঁকি, প্রতিদিন চোখের পলকে গলে যায়...

দুই

প্রতিটি বিড়াল ও কুকুরের সাথে আমার সখ্যতার এক বিস্তৃত ইতিহাস আছে। মাঝেমধ্যে আমি সেই ঢাউস খাতা খুলে বসি, কয়েকপাতার পর আমি সেই খাতার ঢাউসে হারিয়ে যাই। এই পদ্ধতি নির্দিষ্ট রয়েছে বহুকাল। চাকা ঘোরে, চাকার গর্ভে বসে আমিও খানিক ঘুরি এবং কুকুর-বিড়াল কোলেকাঁখে মা ষষ্ঠী হয়ে বসে থাকি। চাল-কলা, নৈবেদ্যে শাড়ির পুঁটুলি আসে। আমি ঠায় বসে থাকি, সজ্জায় টাচআপ দিয়ে নিজেকে মুগ্ধ দেখি জলের বিম্বনে। দেখি মাথা জুড়ে আনখা সবুজ আকাশ, তাতে মায়া মায়া পদ্মবন। অচেতন হয়ে পড়ে থাকি, কোনো এক ফাঁকে কাঠের তক্তা থেকে বিড়ালীর শিশু খসে পড়ে, জলের অকূল জুড়ে উলুধ্বনি, আমার যে মৃত্যু-ফাঁড়া কেটে গেল বিড়ালীর সন্তানের কৃপা পেয়ে। সেই থেকে বিড়াল-কুকুর পুষি, সাথে নিয়ে ঘুরি, কুকুরের পা-চাটা স্বভাব ভালো লাগে। স্বপ্নহীন কুণ্ডলী পাকানো জীবন ভালো লাগে, বিড়ালীর সন্তান শোক আলগা নেশার মতো স্মৃতিকে প্রছন্ন করে দেয়। খাতায় যা লেখা হয় তা এক সখ্যতার ইতিহাস, তাই নাড়িচাড়ি, খাতার ঢাউসে ঢুকি, শিশু বিড়ালের থাবা, শিশু কুকুরের লেজ আমার মুখের দিকে ভক্তিভাবে তাকিয়ে রয়েছে। আমি এক মেকআপ চড়ানো স্নেহময়ী ষষ্ঠীপুতুল...

তিন

নীতির প্রশ্নে তুমি আমাকে এনেছ। এখানে ছড়িয়ে, ওখানে সামান্য ছিটিয়ে তারপর প্রশ্নবিচিত্রা হাতে দিয়ে গরম মার্কেটপ্লেসে খামোকাই ছেড়ে দিলে। রাস্তা চিনি না, ঠোক্কর খেতে খেতে নীতিমালা বুকে করে হাঁটি। গোলাপের ছাঁটা ডাল, তোমার বাড়ির উচ্ছিষ্ট, ফলের খোসা এসমস্তই পায়ে পায়ে এসে পড়ে। আমাকে বিহ্বল করে, আংশিক স্তব্ধ করে। এ্যাই, আমি রাস্তা চিনি না। সরগরম মার্কেটপ্লেস থেকে ঠিক কোনদিকে হেঁটে গেলে এক কপি উত্তরমালা পাব!  ঘেঁটে ঘেঁটে দেখে নেব নীতি ও আদর্শ নিয়ে বেশ্যাদের অমূল্য মতামত। দেখব শরীর প্রশ্নে ঢিলে লুঙ্গি ও পাজামার বক্তব্য। আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান, এভাবেই কত ফল কত ফুল নীতিমালার চারপাশে ঘুরছে। আর আমি গনগনে মার্কেটপ্লেসে ঠোক্কর খেতে খেতে সেই অপূর্ব পাঠক্রম বুকে চেপে দৌড়ে বেড়াচ্ছি। এ্যাই, জানো তো আমি রাস্তা চিনি না আসলে...

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

চার

সহবত শিক্ষার ক্লাসে আমি শূন্য পেয়েছি। সেই শূন্য আমার ভেতর ঘোরে, আর থেকে থেকে ফুঁসে ওঠে। দুর্বিনীত হয়, স্যাটাভাঙা উত্তেজনা নিয়ে আর্যভট্ট-আর্যভট্ট বলে হাঁকাহাঁকি করে। সহবত শিক্ষার ক্লাসে আমার ডিমোশন হয়েছে। এখন শূন্য শ্রেণীর থেকে পুনরায় পাঠ শুরু হল। বইয়ের ভেতর কত আঁকিবুঁকি, কত কত নির্লিপ্ত রং, সামান্য ভালোলাগে। এভাবে চললে আর এগোনো যাবে না, ঘুরে-ফিরে সেই সেই মানুষের মাথা আর হৃদয় বিষয়ে এসে পড়ব। এভাবে চললে আর প্রোমোশন হবে, পাঠক্রমের অরেঞ্জ ল্যুপে এইভাবে ঘুরে যাব। বেঞ্চের তলায় হাত পেতে মাননীয় জনদের বেত খাব, ধাক্কাধাক্কি ও সুরুচিসম্পন্ন খিস্তি খাব। তারপর?  আমাকে প্লিজ আর একটু সময় দিন বলে ছেনাল কান্নাকাটি জুড়ে দেব৷ সহবত শিক্ষার ক্লাসে ফি-বছর আমি শূন্য পাই, অসুবিধা কমে গেছে ইদানিং এ-বিষয়ে। আমি ডিমোশন পেতে পেতে শূন্যের গোলাপি ল্যুপের ভিতর ঘুরে চলি, শূন্য আমার ভেতর ঘুরে চলে, আর থেকে থেকে কেঁপে ওঠে, ঘুমের আকাঙ্ক্ষা বাড়ে...

পাঁচ

কত লোক লটারি পাচ্ছে প্রতিদিন। জানি আমি লটারি পাব না, তবুও দোকানের আশেপাশে ঘুরি। কোন নাম্বার থেকে কোন নাম্বারে গড়িয়ে যাচ্ছে ভাগ্য, সেই খেলা মন দিয়ে দেখি। হিসাবে গড়মিল, কাটাকুটি, রোজ এক মুগ্ধ নয়ন নিয়ে মানুষের সঞ্চয়প্রবণতা দেখি। আরও কত কিছু দেখার রয়েছে, হিজলের ছায়া, বিলিতি পুঁইয়ের ফুল, রেইন লিলি। তবুও আমি এসব দেখি না, মানুষের সাথে মানুষের ঘর্ষণ দেখি শুধু। শরীরে শরীর ঘষে গেল, ভাগ্যের সাথে ভাগ্য, নুন-চামড়া উঠে যাওয়া দেখি। দেখি মানুষ মানুষের মুখে থুতু দিচ্ছে, খিস্তিখেউড় দিয়ে উদ্ধার করে দিচ্ছে বিগত কয়েক প্রজন্মকে। দেখি মানুষ মানুষের মুখে চুমু দিচ্ছে, মিষ্টি গুঁজে দিচ্ছে, বিরহের বাতাসে গুঁজে দিচ্ছে জ্যোৎস্না। এইসব দেখি আর লটারির টিকিট থেকে দূরে সরে যেতে থাকি। দোকানি ফিচেল হাসি দিয়ে বলে, ‘এ যাত্রায় আপনার আর হবে না’। আমি তার সাথে নিয়মিত তাস-পাশা খেলি, কাগুজে রাজনীতি নিয়ে কচকচি করি এবং দিনশেষে ভাগ্যফল ও লটারির রেজাল্ট জেনে ঘরে ফিরে আসি। ঘরের দেওয়াল জুড়ে অজস্র ফার্ন গাছ, সোনালতা ও পূর্বজদের মহীরুহ সমান ছবি। ফার্নগুলির শরীরে আঙুল বুলাই, সোনালতা কোলেপিঠে বড়ো হতে চায়। আমার হৃদয় জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে মস-অ্যাগেট, আর এই ঝকঝকে খাঁচার ভিতর মানুষের সঞ্চয়প্রবণতা দীর্ঘজীবী হতে চেয়ে হিক্কাপ তুলছে। জবুথবু হয়ে সকালের অপেক্ষায় থাকি৷ লটারির দোকানে গিয়ে গেঁড়ে বসি, আজ দোকানের বামদিক ঘেঁষে পাতাল বিদীর্ণ করে শিবশম্ভু জেগে উঠেছেন। তেলে-ধুপে-সিঁদুরে ও দুধে পিছলে যাচ্ছে ভাগ্য। এর ভাগ্য ওর কাছে, ওর ভাগ্য সুপ্রসন্ন মাহুতের কবজির তলায়। কারও ভাগ্য আমার বুকের দিকে দৃঢ় হয়ে ছুটে আসতে গিয়ে এখন ঘন দুধে স্লিপ কেটে আটত্রিশ সাইজের স্তনে আটকে পড়েছে। এই খেলা উত্তপ্ত মন নিয়ে দেখি। দোকানি চায়ের বাটি, পাশার ঘুঁটি নিয়ে এসে আমার গা-ঘেঁষে বসে। লটারি পাচ্ছে কিছু লোক, হাইব্রিড ক্যাকটাসও। এই নাম্বার থেকে ওই নাম্বারে ভাগ্য গড়িয়ে যাচ্ছে, অবিরাম এই খেলা দেখি...

ছয়

ভোররাতে ভূতে পেলে যে কাহিনি লেখা যায় তাই লিখি। বিষাদে ঝুলে পড়া রাস্তা, মেহগনি ফুল আর প্রেত হয়ে বেঁচে থাকা কিছু মানুষের কথা লিখতে ইচ্ছে হয়। জীর্ণ বাড়ি থেকে আরও জীর্ণ বাড়ির দিকে লতিয়ে উঠেছে লাউলতা, ইতিহাসের সংগ্রামী অধ্যায়। নীচু বাড়ির আলপনা গড়িয়ে গিয়েছে বলেই না তুমি সেখান থেকে খুঁজে পেলে হলুদ ফুল, গোপনে রাখতে পারার মতো কথা আর কুন্ঠিত হাসির অধ্যায়। লেজহারা কালো টিকটিকি উজ্জ্বল  আলোর দিকে তাকিয়ে রয়েছে, যেমন করে অসুস্থ লোক চেয়ে থাকে অপ্রিয় পথ্যের দিকে। একটানা বারো বছর ঘুরতে ঘুরতে ভিখিরি বুঝেছে তার কথা এ-গলিতে সকলেই জানে। লেঙ্গি খাওয়া কুকুরের পাশে বসে বসে তার এই খুচরো পয়সা গোনার রীতি লোকমুখে জনপ্রিয় বেশ। মরে গেলে তল্পি ঝেড়ে দেখা হবে কাঙালের ভেক ধরে কত সম্পদ সে জমিয়ে ফেলেছে। মজা হবে, ঘরে ঘরে তাকে নিয়ে বেশ মজা হবে। কম পাওয়ারের আলো জ্বলা বাড়িগুলি উৎসাহে উজ্জ্বল হবে কিছুদিন। মেহগনি ফুলের ওপর কিছু আধপাকা ছেলেপুলে মারাত্মক মস্তি নেবে ভিক্ষের টাকায়। গোল হয়ে কুকুরের চারপাশে পোকা ও পিঁপড়ে ঘুরবে। কবি ও সারস ঘুরবে, মশা ও বোমারু বিমান উড়বে। এইসব ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতে ভিখারির ভোররাত আমার রাতের মধ্যে এসে ঢুকে পড়ে। চাদরের সাদায় শুয়ে বাকিটুকু সময় রূপকথা বুনে আমার ঘরের মেঝে থইথই করে চলে যাবে, আলো থেকে শুরু হবে আহির ভৈরব, মৃদু থেকে চড়ায় ওঠার পর সেই রাগ ধুপ করে খাদে পড়ে যাবে। মানুষের তো কাজ আছে, অন্ন-বস্ত্র খোঁজা নিয়ে তাড়াহুড়ো আছে। গাড়ি-ঘোড়া, বাস-ট্রেন, ঘাম ও অর্থহীন হাসির ফোয়ারা আছে। মোড়ে মোড়ে সস্তা চমক আছে। এবং রয়েছে মাঝরাতে ঘুমন্ত জারুল গাছের তলা দিয়ে গুঁড়ি মেরে, বিষণ্ণ-ঝুঁকে পড়া গলির ভিতর ফেরার বাধ্যতা। ফের ভোররাত, লকলকে লাউয়ের লতা এবাড়ি-ওবাড়ি ছেড়ে, ভিখিরি ঝুলি ছেড়ে ফাঁকা রাজপথে উজিয়ে উঠেছে। রাস্তা ভূতের হাতে, রাস্তায় প্রেতদেহ... লাউশাক ভরপুর লতিয়ে উঠেছে।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

Image Description

Technophilix India

1 সপ্তাহ আগে

কী চমৎকার একটি লেখা।


মন্তব্য করুন

লেখক

জন্ম বাঁকুড়া জেলার নিত্যানন্দপুর গ্রামে। বর্তমানে হুগলির বাসিন্দা। বাংলায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পড়ার সময় সাহিত্যে আগ্রহ জন্মায়। কবিতা এবং গদ্য দুই ধারাতেই সাবলীল। গত কয়েক বছরে প্রকাশিত হয়েছে তিনটি কাব্যগ্রন্থ এবং একটি গদ্যগ্রন্থ। এ ছাড়া কথকতা থেকে ২০২৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে প্রথম উপন্যাস ‘24 মুন ম্যানসন’।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন