preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
জামিন: পর্ব ৩
ধারাবাহিক

জামিন: পর্ব ৩

14 Dec, 2024.

পিয়া-রাশিদের মার খাওয়ার ছবিও ফোনে চলে এসেছিল। কিন্তু মুছে দিয়েছে এক-দেড় ঘন্টার মধ্যেই। আর তারপরেই তো ঐ ফোন থেকেই বারবার ওদের জানিয়ে দিচ্ছে, ছ-তারিখ আসতে হবে থানায়। মেয়েগুলো ভয় পেয়েছে। সত্যি ভয় পেয়েছে! যারা ফোন নিয়ে লড়ছে বাড়িতে বসে, তারা কী করে বুঝবে আচমকা ঘুষি, লাথি, লাঠির বাড়ি, রডের বাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিম্বা থানার সরু দম-আটকানো ঘরের ভেতরে কেমন লাগে?
এইভাবে ভয় দেখিয়ে কি সব থামাতে পারবে? মেয়েদের ‘ইতনা বড়া, ইতনা গহেরা, ইতনা জরুরি আন্দ্‌লন’ চুপ হয়ে যাবে? দেবিকা জানে না। দেবিকা শুধু জানে বাঁচাতে হবে মেয়েগুলোকে।

পাখির ডাক দু-একটা শোনা যাচ্ছে। রোজের অভ্যাসমত চোখ চলে গেল পায়ের দিকে দেওয়ালে। ঘড়িতে চারটে বাজে। মা-কালীর ছবির দিকে একটা প্রণাম ঠুকে দেবিকা উঠে পড়ল। অনেক বছর হয়ে গেল, ঘড়িটা ঠিক সময় দিচ্ছে। এখন সময় জানতে সবাই মোবাইল দেখে। পিয়ার বাপ দেখে, পিয়ার বাপের মা সেও দেখে। শাশুড়ির অবশ্য সুইচটেপা ছোট ফোন। হাড় ক্ষয়ে পা-কোমর চলে না কিন্তু মাথাটা দিব্যি ঠিক আছে, চোখেও ভাল দেখতে পায়। শুয়ে শুয়েই বুড়ি ফোনে আত্মীয়-রিস্তেদার সবার খবর রাখে। ঐ ফোনের সময় দেখেই দেবিকার উপর যত চিৎকার, ‘আরে সুবেহ কা দশ বাজ গাইল, আভি নাস্তা ভি না দেওল…  ই কা, ডাইন আওরাত হায় রে! মুঝে মারহি ডাল না!’

পিয়ার বাপকে বলে ফোনটা দেবিকাই কিনে দিয়েছিল। টিভিটা খাওয়ার ঘরে। মেয়েদের সঙ্গে, বোনঝিদের সঙ্গে কথা বললে, ভাল সময় কাটবে। এখন এই ফোনটার জন্য দেবিকাকে গাল খেতে হয়। এক মিনিট দেরি সহ্য হবে না শাশুড়ির। ফোনটা না থাকলে কি বুড়ির হাত থেকে দেবিকা বেঁচে যেত? না… মোটেই না, তাহলে দেয়াল ঘড়ি দেখে… অবশ্য বুড়ির দেয়ালে কোনো ঘড়ি লাগানো নেই। দেবিকা জানে তাহলেও ও ছাড় পেত না। বুড়ি সবসময় দেবিকার দোষ খুঁজে বেড়ায়। ফোনে চার্জ না থাকলেও, একটা বাজতে পারে না ভাত দেওয়ার জন্য গালাগালি শুরু করে, সাড়ে এগারোটাতেই স্নান চাই। নাহ… ফোনটা বুড়ির কাজে লাগে বটে কিন্তু না থাকলেও ‘কুছ ভি বদলাতা নেহি’। 

বুড়ির দুনিয়ার বাইরে দেবিকা, পিয়া, পিয়ার বন্ধুরা, রাশিদের যে দুনিয়া সেখানে অবশ্য মোবাইল একটা ‘যাদু-যন্তর’। চোখের পাতা ফেলতে যেটুকু সময় লাগে তার আগে ছড়িয়ে পড়ছে খবর। দেবিকাদের সময়ে মানে যতদিন না সে, সাউ ফ্যামিলির বৌ হয়ে সংসার আর কিরানার দোকানকে নিজের জগৎ বানিয়ে ফেলল, তার আগে পর্যন্ত  টিভিতে, রেডিওতে, পেপারে-আখবারে খবর আসত ততটুকুই, যতটা কাগজ, টিভির মালিকেরা জানাত। কিন্তু আজ, কী বলে পিয়া…হ্যাঁ সোশ্যাল মিডিয়ায় একেবারে জিন্দা, জ্যান্ত সিনেমার মত সব ঘটনা, ছবি ছড়িয়ে পড়ছে সারা দুনিয়ায়। এই ফোনেই তো ঐ সোশাল মিডিয়ার রাজত্ব! ফোন না থাকলে, কী করে মানুষ দেখবে সেইসব খবর। বাবা বলে, ‘বেটি…এও আসলে আমাদের বুরবাক বানানোর খেল! ফোন কম্পানি, ঐ কী বলে কীসব বুক, টিউব সেইসব কম্পানি, কত টাকা কামাচ্ছে? আর দেখ না, খবর দেখছে কজন? তার বদলে, আচ্ছে সে দেখ…কারখানার গেটের দারোয়ান থেকে ম্যানেজার সময় পেলেই ফোন বার করে, কী যেন বলে ছোট ছোট সিনেমার মত রিল দেখছে তাতে কত যে নোংরা কিসিমের কিসসা, ওখানে নাকি খেল-কুঁদ হয়! তো অ্যায়সা খেল চল রাহা হ্যায় যো জুয়া হ্যায়…পহলে হপ্তার টাকা সাট্টায় উড়িয়ে দিয়ে বৌকে পাঠাত লোকের বাড়ি কাজ করতে, তারপর সেই পয়সাও ছিনিয়ে লিত। আভি ফোনকে অন্দর মে ওহি জুয়া, সাট্টা, খুদকুশি ভি কর রাহা হ্যায় কিতনে লোগ। জুয়া না খেলেও নাকি বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা ঐ ফোনের খেলা খেলতে গিয়ে নিজেকে খুন করছে! আজব না রে মা, ইয়ে গজব কা চিজ। তুই খবরের কথা বললি, ছেলেরা বলে, ওদের যদি পসন্দ না হয়, তবে যা তুমি জানাচ্ছ, সেইসব ফুটো, ভিডিও…সব মুছে দেবে, আর কেউ দেখতে পাবে না!’’

ঠিক… বাবার কথা মিথ্যে না। তা যেমন হচ্ছে, আবার তেমনই যে খবরটা বন্ধ করে দিচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে অন্য কেউ একটু পালটে দিয়ে অন্যভাবে তাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। যারা আটকাচ্ছে, তাদের ক্ষমতা অনেক বেশি, কিন্তু পিয়াদের এই যুগের ছেলেমেয়েরাও তো কম যায় না। ঠিক, ঐ যে বাঙালিদের মা-মনসার গল্পে লক্ষ্মীন্দরের লোহার বাসর ঘরে, কালসাপটা ফুটো খুঁজে নিয়েছিল…এরাও রাস্তা তৈরি করে নিচ্ছে। সারা জীবনে এতবড় শহরটা ঘুরে দেখা হবে না দেবিকার। কিন্তু সেই শহরের কোটি কোটি লোকেরা এক মিনিটে নাকি এক সেকেন্ডে জেনে যাচ্ছে… কতবড় অন্যায়টা ঘটল, ঘটে গেল বা তার ‘বিরোধ’ করারা জন্য কী হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে, কখন  হবে। বহুৎ ছেলেমেয়েকে নাকি ধরে নিয়ে যাচ্ছে, জেলে পুরছে…তবুও তো বন্ধ হচ্ছে না। পিয়ার ফোন থেকে দেবিকা সব দেখেছে। পিয়া-রাশিদের মার খাওয়ার ছবিও ফোনে চলে এসেছিল। কিন্তু মুছে দিয়েছে এক-দেড় ঘন্টার মধ্যেই। আর তারপরেই তো ঐ ফোন থেকেই বারবার ওদের জানিয়ে দিচ্ছে, ছ-তারিখ আসতে হবে থানায়। মেয়েগুলো ভয় পেয়েছে। সত্যি ভয় পেয়েছে! যারা ফোন নিয়ে লড়ছে বাড়িতে বসে, তারা কী করে বুঝবে আচমকা ঘুষি, লাথি, লাঠির বাড়ি, রডের বাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিম্বা থানার সরু দম-আটকানো ঘরের ভেতরে কেমন লাগে? 

এইভাবে ভয় দেখিয়ে কি সব থামাতে পারবে? মেয়েদের ‘ইতনা বড়া, ইতনা গহেরা, ইতনা জরুরি আন্দ্‌লন’ চুপ হয়ে যাবে? দেবিকা জানে না। দেবিকা শুধু জানে বাঁচাতে হবে  মেয়েগুলোকে। যে যেভাবে পারে, তাকে সেভাবেই বাঁচাতে হবে। ও বাঁচাবে পিয়াকে, রাশিকে। কিছুতেই পুলিশের হাতে তুলে দেবে না। কাল রাতে, রাশি মেসেজ করেছে পিয়ার ফোনে,

‘কাকিমা, তুমি আমার আরেকটা আম্মা…’

আম্মা, মা…যদি দেবিকার বিয়ে না হত…বিয়ে হলেও পিয়া ‘কোক মে’ না আসত! তখন কী করত সে? এই মেয়েদের বাঁচাতে যেত না! জন্ম থেকে একটা মেয়ে, নোংরা নজর, নোংরা হাত, নোংরা কথাকে এড়িয়ে চলতে চলতে একদিন এমন একটায় জায়গায় আসে যে তাকে সেখানে মুরগির মত ছাল ছাড়িয়ে ‘বোটি বোটি’ করে কাটা হয়…তার ‘বিরোধে’ সেও কি ‘উজাগর’ হয়ে যেত না? কে জানে… ‘আভি তো পহেলা কাম…’

‘মাঁঝলি বহু, উস কোনা পর কাচরা রহে গায়া…ক্যা শোচ রাহে হো, ইস সুবহে সুবহে পে! কোন খায়ালমে ডুবে হো?’

পিয়ার বাপের গলা। সে তো ছটার সময় ওঠে! এত তাড়াতাড়ি? দেবিকা উঠোন ঝাড় দিতে দিতে আড়চোখে ‘ঝাড়ু’ হওয়া জায়গার কোথায় এখনও নোংরা আছে, দেখার চেষ্টা করে। ফাঁকা গোয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁতন করছে পিয়ার বাপ। বছর চারেক হল, গরুটাকে বেঁচে দিয়েছে শাশুড়ি। দুধ বন্ধ হয়ে গেছিল। দেবিকা বেঁচেছে। দুই বৌ বা বাড়ির আর কেউ না দিত খড়-ভুষি, না করত গোয়াল পরিষ্কার, গরুকে চান করানো থেকে সব কাজ দেবিকাকেই করতে হত। দুই জা বলে দিয়েছিল, তারা কেউ দুধ খাবে না। দুধ বিক্রির টাকা জমা পড়ত শাশুড়ির আঁচলে।

‘গাইমাতা কী সেওয়া করনে সে সোয়ার্‌গ নসিব হোতা হ্যায়! সোয়ার্‌গ নসিবের কিতনা রাস্তা, দূর কা-নজদিখ কা, বরুফ কা পাহাড় চড়নে কা পীড়া সহন কর কে ভগবানজি কি মন্দির দর্শণ করনে সে ভি যা সাকতে হ্যায় সোয়ার্‌গ। ঔর ঘর মে  আচ্ছি বহু কি মাফিক শাস-শসুর-পতি-জেঠ-জেঠানি কা সেবা সে ভি সোয়ারগ মিলতা হ্যায়’

কেতাব-ই'র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন manuscript.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

দেবিকার হঠাৎ জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করে, কাকে সে জিজ্ঞাসা করবে সে জানে না, কিন্তু সওয়াল তার জিভের ডগায় চলে আসে, ‘এক বুজুর্গ, ষাট সাল কি আওরাত… যিসকি ইজ্জত গায়ি, এক ট্রেন লোগ কে সামনে…ফির মার ভি দি গায়ি... জানবার ভি ইস সে বেহত্তর…উসকি আতমা কাহা গ্যায়ি আব? সোয়ার্‌গ ইয়া নরক? শায়দ… ভটক রাহি হ্যায়! লোগ ক্যাহতে হ্যায়, অপঘাত সে মরে তো…মুক্তি নেহি মিলতা! গয়া মে যাকে পিন্‌ডদান করনা পড়তা হ্যায়।’

না…কিছুই বলে না দেবিকা। শুনবে কে? পিয়ার বাপ, চলে গেছে ঘরে। সকালের কাজ সারবে, পুজো সারবে, তারপর তাকে চা দিতে হবে। তার আগে দেবিকাকে স্নান সেরে নিতে হবে। সে তাড়াতাড়ি করে ঘরে ঢোকে। পিয়ার বাপ মুখ ধুয়ে বেসিনের সামনের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গালের বাসি দাঁড়িতে হাত বুলোচ্ছে

‘হামে চায়ে দে দো!’

‘আভি? আভি তো তুমহারা ল্যাট্রিন ভি নেহি হুয়া, নাহায়া নেহি।’

‘যো কহে রাহে হ্যায়, ওহি করো, প্যাহেলে চায়ে বানা দো…নি্নদ নেহি হুয়া, তবিয়ত বৈঠ যায়েগা! চায়ে দো!’

‘পেহেলে নাহাকে আউঁ…না, নাহাকে রসুই মে ক্যায়সে ঘুঁষে?’

‘মাই সো রাহা হ্যায়। কোই কুছ নেহি কহেগা। তুম চায়ে বানা দো জলদি।’

‘নেহি, পাঁচ মিনিট মে,  নাহাকে আতি হুঁ।’ 

পিয়ার বাপ বোঝে, দেবিকাকে থামানো যাবে না। কথা বলতে বলতে বাথরুমের দরজার সামনে চলে এসেছিল সে। এবার সরে গেল। দেবিকা বাথরুমের দরজা বন্ধ করার পর, আবার পিয়ার বাপের গলা শুনতে পেল। এবার উচ্চ মাত্রায়,

‘আরে সুনো, তুমহারা ওহ কাসেম আয়া থা। মাফ করনা গলত বোল দি। তুমহারি বচপন কে দোস্ত…কাসেম আয়া থা। তুমহারি খবর লে রাহা থা।’

ভোরবেলার ট্যাঙ্কে জমে থাকা ঠান্ডা জল শরীরে পড়লেও সারা শরীরে যেন পায়খানার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল। লোকটা এইজন্য ভোরবেলায় উঠে পড়েছে। এইসব কথা শোনাবে বলে। ছিঃছিঃ আর কতদিন? পিয়া এতবড় হয়ে গেল, কলেজে পড়ছে। এখনও?

‘আচ্ছা পিয়া কি দোস্ত রাশি কা,  তুমহারা কাসেম  সে কিসিতরাহ কি রিস্তেদারি হ্যায় ক্যা ?’

গা ঘিনঘিন করছে দেবিকার। চায়ের কাপ খাবার টেবিলের ওপর বসিয়ে দিয়ে সে পিয়ার ঘরে যাচ্ছিল।

‘কিঁউ জবাব নেহি দিয়া?’

‘বো লোগ ইউপি কা হ্যায়, ঔর রাশি বাঙ্গালি হ্যায়। ক্যায়সে রিস্তে বনে?’

‘আরে, হামারে ভিতর আজকাল বাঙ্গালি-বিহারি কি শাদি নেহি হো রাহা?’

‘তো?’

‘আরে উনলোগো কা বাঙ্গালি-বিহারি-ইউপি-ভাইয়া, ইসব কুছ নেহি হোতা হ্যায়!’

‘ইসসে তুমহারা মতলব ক্যা? ঔর সুবহে সুবহে সুবহে সুবহে কাসেম কো লেকে কিউ পড়ে হো?’

দেবিকা এখনও শান্ত স্বরে কথা বলে চলেছে। মেয়েরা আজকাল রাত জেগে পড়ে। ওদের কথার আওয়াজে যেন পিয়ার ঘুম না ভাঙে।

‘নেহি,কাল কাসেম আন্ডা দেনে কে লিয়ে আয়ে থে! ব্যাস উসকা রামকাহানি শুরু। …জিজাজি এক বিড়ি পিলাও। দিয়া এক বিড়ি। লেকিন ইস বার, আপনি ঘরকা হালত, খানাপিনা, জুগাড় কি তকলিফ নেহি বাতায়া।’

পিয়ার বাপ আচমকাই হাসে। গা-জ্বালানো হাসি,

‘দেখো, তুমহে ভি অ্যায়সে হি হালত মে রহেনা পড়তা, না খানা, না কাপড়া…’

দেবিকা না দাঁড়িয়ে, পিয়ার ঘরের দিকে যেত শুরু করে। পিয়ার বাপ উঠে এসে ওর হাত ধরে বলে,

‘আরে রুকো, রুকো …হাম তো তুমহারা দেব্‌তা হুঁ। শুনকে যাও…উস আদমি কাল ইয়ে,যো করকে পিয়া মুসিব্বত মে পড় গ্যায়ি। উসিকা বাত কর রাহা থা। ওহ যো শীতলামন্দির কা মোড় পর, যো পহেলা বালা রাতদখল হুয়া থা না, ওহাঁ, উসকা লেড়কি ওর বিবি আয়ি থি। ওহি লেকে আয়া। ফির ঔর কায়ি রোজ ওহ লোগ গ্যায়ে। লেকিন জরুর ওহ… পরশু যাহা পিয়া গ্যায়ে থে ওহাঁ নাহি গ্যায়ে, আগার যাতে শালেকো ইতনা মার পড়তা, কে শায়েদ ইস দেশ সে ভাগ কে পাকিস্তান যানা পড়তা…’

দেবিকা স্থির দৃষ্টিতে পিয়ার বাপের দিকে তাকায়,

‘তুম থক নেহি যাতে হো! ইতনা সাল হো গ্যায়া? কারখানা কা ব্যারাক মে সাথসাথ রহতে থে হাম, স্রিফ ইস কারণ সে তুম…ঘিন আতা হ্যায় মুঝে। ঐর ইয়ে বাত কহনে কে লিয়ে ইস সুবহে সুবহে মে, তুম?’

পিয়ার বাপের হাসি মিলিয়ে যায়,

‘নেহি…হাম বোল রহে থে, তুম একবার রাশি কো বোলো, কাসেম সে বাত করনে কে লিয়ে? উনলোগোঁ কি বহুত সারে সংস্থা হ্যায়, বহুত পয়সা হ্যায় উনকে পাস। আচ্ছি আচ্ছি ওকিল হ্যায়। ওহ লোগ, বলতে হ্যায় কে আওরাত সে হি ইনসান জাহান্নাম পে… ফির ভি, রাশি হ্যায় না উনকা কৌম কা লড়কি! তো চুটকি সে  ছুড়া লেঙ্গে। বেল মিল যায়েগি, বেচারি কা।’

পিয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে দেবিকা সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে। আজ সকালে সেই দোকান খুলবে। যতই চেঁচাক শাশুড়ি, নাস্তার বখত হলে উপরে যাবে না। পিয়ার বাপ চায়ের কাপ হাতে সিঁড়ির শুরুতে দাঁড়ায়,

‘শুনো যো ভি হো! পিয়াকে লিয়ে ম্যায় যাউঙ্গা। তুম ঘর পর রহো। কিসি কা চিন্তা করনে কা দরকার নেহি হ্যায়? মেরা পয়সা সস্তা নেহি হ্যায়!’

পয়সা নাকি ধর্ম, কোনটা সমস্যা পিয়ার বাপের?... এ কি, এই সাতসকালে বাবা একেবারে দোকানের সামনে? দেবিকা এগিয়ে গেল। বাবা সাইকেল থেকে নামল না। উকিল রাজি হয়েছে। পিয়ার জন্য দশ আর রাশির জন্য দশ মোট কুড়ি হাজার লাগবে। এদিক ওদিক, আরও যা আছে সব মিলিয়ে পঁচিশ হাজার।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

মন্তব্য করুন

লেখক

জন্ম কলকাতায়, ১৯৭১ সালে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলায় এম. এ। খবরের কাগজ বিক্রি থেকে মার্কেট-রিসার্চ ইত্যাদি নানারকম পেশা পেরিয়ে স্কুলশিক্ষকতায় স্থিতু। শিক্ষকতার প্রথম ষোলো বছর ইছামতীর তীরে বসিরহাটে বসবাস। সেই অভিজ্ঞতাই গল্প লেখার প্ররোচক। কবিতা, প্রবন্ধ দিয়ে লেখালেখির সূত্রপাত হলেও গল্পকারই প্রধান পরিচিতি। প্রকাশিত বই: উন্মেষ গল্পগ্রন্থমালা-২ (কলকাতা), চুপিকথা (ঢাকা)।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন