পরদিন ভোরের আধো আলোয়, সেই আমগাছটার নীচে, যেখানে রোজ ডাকে মাছরাঙা পাখি, পড়ে থাকে এক নিথর দেহ। কিন্তু, কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায় না কোথাও। অলকার গল্পের যা ঠিক উল্টো। চন্দ্রাহত, মুনস্ট্রাক অলকানন্দা, সেই গল্প ছুঁয়ে ছুঁয়ে লেখে, ভেজা বাতাসে উড়ে যাওয়া পাপড়ি আর জ্যোৎস্নার এপিটাফ।
অলকানন্দা সেনগুপ্তের মস্তিষ্কের অন্ধকারে ‘ফারমেন্টটেড’ হতে থাকে অদ্ভুত সব ভাবনা, রাত্রিদিন। সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও আরও একটা পরিচয় আছে তার। এইসময়ের উঠতি গল্পকারদের একজন সে। সেই জন্যই কী নিজের ভিতরে সে পায়— কেবলই মৃগ-নাভির গন্ধ! হতেও পারে।
কিছুদিন ধরেই একটা অদ্ভুত গল্পের ভাবনা ঘুরছে মাথায়, যেখানে সবশেষে একটা সুইসাইড নোট পাওয়া যাবে, কিন্তু থাকবে না কোনও ‘বোকাবোকা’ মৃতদেহ। তবে গোদা চিন্তার জাল ছিঁড়ে বার হতে পারছে না কিছুতেই।
গল্পের নায়ক অথবা নায়িকা সুইসাইড নোট লিখল। বাড়িতে রেখে বেরিয়ে পড়ল। অতঃপর পাহাড়ি খাদে ঝাঁপ, অথবা জনমানব শূন্য স্থানে রেললাইনে গলা কিম্বা ছোট্ট ডিঙি নৌকা নিয়ে মহাসমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া। ধুসস... এই সব লেখার আজ আর কোনও মানে হয় না...
যাই হোক, অবশেষে একটা স্কেচ মাথায় এসেছে। বসেছে আজ ডাইরি নিয়ে। কিন্তু দু-চার অক্ষর লেখার পর যা ঘটল, সেটা অভাবনীয়। এল সেই অদ্ভুত খাম। যাতে একটা চিরকুট আর কিছু গোলাপের পাপড়ি, ঠাসা।
রবিবার। ছুটি। তা সত্ত্বেও ফিটনেস ফ্যানাটিক অলকানন্দা আজ জিমে যায়নি। কারণ, একটু অন্যভাবে গা ঘামাতে ইচ্ছে করছিল। নিজের তৈরি রুটিন সে নিজেই ভেঙে ফেলে, যখন তখন। আকস্মিক কোনও এক অনাস্থা প্রস্তাবে।
একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি উনিশটা। আপস অ্যান্ড ডাউনস বার দশেক। তারপর, সিটআপ আর স্ট্রেচিং। কিন্তু, এত কিছুর পরেও যথেষ্ট ক্লান্ত লাগেনি আজ। আবার শুরু করেছিল সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা। তবে পরের বার একটু অন্যভাবে। ক্রসওয়াইজ। এক নম্বর ধাপের ডানকোণায় জোড়া পায়ে প্রথম পদক্ষেপ, তারপর আলতো লাফে পরের ধাপের বামকোণায়। শুরু থেকে শেষ, শেষ থেকে শুরু।
এইভাবে চলে আরও বার দশেক। যখন ফুসফুসের চলন সবে একটু দ্রুততর, পায় সেই মিষ্টি আওয়াজটা।
বড় আমগাছের একটা ডাল এসে পড়েছে জানালায়। সেখানে বসে আছে পাখিটা। গত তিনদিন ধরেই আসছে। ও কী বুঝতে পেরেছে, পৃথিবী জুড়ে আজ সবাই যতটা একা, অলকানন্দা তার চেয়েও একা! ফোনে খুব বেশিক্ষণ আলাপচারিতা চালিয়ে যাওয়ার মত বন্ধুও নেই তার?
যে একাকীত্বকে ভালোবাসে নন্দা, তা অন্য। খোলা আকাশের নীচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিসরে ‘একা’ হওয়া আর প্রাসাদোপম বাড়ির নির্দিষ্ট সীমার মাঝে ‘একা’ হওয়া, সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাবা চলে যাওয়ার পর থেকেই, বাগান ঘেরা এত বড় বাড়িটায়, আনাচে কানাচে ‘লোনলিনেস’ জমাট বাঁধছে প্রতিদিন। একাকীত্বকে আজকাল খুব ঠান্ডা আর ধারালো মনে হয় তার। বরফের ছুরির মত।
মাকে মনেই পড়ে না। বাবাও নেই, বছর খানেক হল। আর বাকি রইল সায়ন্তন। তার সাথেও দূরত্ব বাড়তে বাড়তে আজ লক্ষ যোজন। হ্যাঁ, কাল সে একটা ফোন করেছিল বটে। কিন্তু সেটা প্রায় একমাস পর, অ্যান্ড হি ওয়াজ লাইং অলসো।
—অলকা বিলিভ মি... হঠাৎ করে একটা অ্যাসাইনমেন্টে আটকে গেলাম বুঝলে। এইরকম আনসার্টেন... এইভাবে যে আটকে যাব... আই কান্ট ইম্যাজিন। নাহলে লাস্ট মান্থেই একটা ট্রাই করতাম।
গত বছর পুজোয় আসার কথা ছিল, আসেনি। ক্রিসমাসে আসার কথা ছিল, আসেনি। এখন কাজের দোহাই দিচ্ছে।
—ভাগ্যিস অ্যাসাইনমেন্টটা এসে পড়ল।
অলকার তিনখানা নির্লিপ্ত শব্দে ঘেঁটে যায় সায়ন্তন।
—পার্ডন...
—আমি এখন রাখছি বুঝলে।
ফোন কেটে দেয় অলকানন্দা।
ডেকেই চলেছে পাখিটা। ডাকের কায়দাটা ভারি অদ্ভুত। পর পর চারটে শিস। একই কায়দায়। তারপরই, গলার কাছটা কাঁপিয়ে ‘গুড়গুড়’ করে একটা আওয়াজ। যেন আগের ছেড়ে দেওয়া শব্দকে ফিরিয়ে আনছে। রিওয়াইন্ড।
আগের অনেক কিছুই ফিরে এসেছে আবার। খারাপের মধ্যেও কিছু ভালো লাগা নিয়ে। সেটা বহুদিন বাদে আবার বুঝতে পারছে। এত বড় বাড়িতে একা একা থাকার জন্যই কী সেই বোধগুলো পাকিয়ে উঠছে ভিতরে? হতে পারে।
কাল হাফ-ডে ছিল। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে। ছাদে দাঁড়িয়ে দেখেছে টোয়াইলাইট। পিছনের বাঁশঝাড়টার কথা ভুলেই গিয়েছিল অলকানন্দা। গতকাল বহুবছর পর, ঝিরিঝিরি পাতার মধ্যে দেখেছে ফিনফিনে আলো। সন্ধ্যার আগের অন্ধকারটাকে অনুভব করেছে আবার, আর ওই অন্ধকারের তরঙ্গ ঢুকিয়ে নিতে চেয়েছে নিজের ভিতরে। তারপর, বুঝতে চেয়েছে শরীর বেয়ে আলোর ওঠানামা।
বাগানবাড়ির ডানদিকে, অনেকটা জমির উপর পরিত্যক্ত কারখানাটা। যার চারপাশের জমি ছেয়ে গেছে বড় বড় শন ঘাসে। সেইখানে, ছোটবেলায় ফেলে আসা বেজিদের সেই পরিবারটাকে আবিষ্কার করেছে ফের।
লোডশেডিংয়ের রাতে, বাবার চেনানো লুব্ধক আর কালপুরুষও খুঁজে পেয়েছে সে নতুন করে। মা দেখো, ওই আকাশে নৌকা খোলা আছে। মা জানো, আমি আজ আকাশ ভরা তারা...!
কেতাব-ই'র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন manuscript.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
অলকানন্দা একদৃষ্টে তাকিয়েছিল পাখিটার দিকে। কী পাখি ওটা? উপর দিকটা নীল। পেটের কাছটায় হলুদ। ঠোঁটটা লাল। মাছরাঙা হতে পারে। বেশ খানিক ডাকাডাকির পর উড়ে যায় লাল-নীল পাখি। জানালা থেকে সরে আসে সে। আয়নায় এসে দাঁড়ায়।
থ্রি-কোয়ার্টারের উপর একটা টি-শার্ট। ডাস্টি ব্লু পুশ-আপ বক্ষ বন্ধণীতে পীনোন্নত পয়োধর। কোনও এক শিল্পীর তৈরি পাথর কাটা মূর্তি যেন।
ডানদিকে কাত হয়ে নিজেকে দেখে। কোমরে হাত দিয়ে একবার, তারপর হাতটা পিছনে নিয়ে আর একবার। বাঁদিক ফিরেও চলে একই নিরীক্ষণ। নয়নাভিরাম। নিজ-অঙ্গ দর্শনে মুগ্ধতা জাগে নিজেরই।
আবার দাঁড়ায় আরশির সোজাসুজি। স্ট্রেইটেন চুল নেমে গেছে অনেকদূর অব্ধি। ধরে দু-হাত দিয়ে। মাথার উপর তুলে বাঁধে। তারপর বুকের উপর সেঁটে থাকা মাছরাঙা পাখি দুটোকে ছুঁয়ে দেখে। দু-এক মুহূর্ত পর মুঠো খুলে উড়িয়ে দেয়।
ডিভানের উপর রাখা ফোনটা বেজে ওঠে। সায়ন্তন। রিসিভ করে না। দূরভাষের পাশে গল্পের ডাইরিটা। উপুড় হয়ে পড়ে। সেই পাতাটা বার করে, যেখানে নতুন কাহিনির পয়েন্টসগুলো লেখা আছে।
এইটা সেই গল্পটা যেখানে অকুস্থলে আসবে পুলিশ, একটা সুইসাইড নোট পাওয়া যাবে কিন্তু কোনও মৃতদেহ পাওয়া যাবে না। খোলা পাতা সামনে নিয়ে বসে থাকে বহুক্ষণ। অবশেষে কিছু বাক্য লেখে,
“পৃথিবীর গভীরতম অসুখ এখন; তবু এক-ফালি মেঘ উড়ে যায় আজও চাঁদটার ঠিক নীচ দিয়ে। বড় নরম। পেঁজা তুলোর মত। এই সব মেঘের দল যখন ডানায় ভর করে ভাসে, তখনই এক সোঁদা গন্ধ ভেসে আসে, পাশের বাড়ির জুঁই খেত থেকে, গাভীর মত...
আজ বাতাসটা বেশ ঠান্ডা। রাত পোশাকটা পরেই ছাদে উঠে এসেছিল সে।
কামিনী ছুঁয়ে থাকা ভেজা জ্যোৎস্না এসে ঝাপটায় তার শরীরে...”
আবার থামতে হয় অলকানন্দাকে। এই কয়েকটা লাইনের থেকে আর বেশি এগোতে পারে না কিছুতেই। না, বাঁধা ছকের বাইরে বার হতে হবে, হবেই। আবার, আবার ভাবতে থাকে। খনন করতে হবে, খনন। বার করে আনতে হবে নতুন নতুন আইডিয়া। অযথা ছাই ভস্ম লিখে কী লাভ!
এই ঘরটা স্টাডি কাম বেডরুম। দেয়ালে কার্ল লুইস, নাদিয়া কোমানিচি, পিট সিগার, বব ডিলান— কে নেই! এরপরই অদ্ভুতভাবে সেই কোলাজে ঢুকে পড়েছে জীবনানন্দর বিভিন্ন কবিতা। লাইনগুলো বিরাট বিরাট প্রিন্ট আউট নিয়ে সাঁটা হয়েছে দেয়ালে। দেখলেই বোঝা যায় স্কিলড ইন্টেরিয়ার ডিজাইনারের কাজ।
এত লাইনের ভিতর আবার আলাদা করে নজর কাড়ে দুটো বাক্য। যা লাল কালিতে লেখা,
ফিরে এসো সুরঞ্জনা:
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;
দুই দেয়াল ঘেঁষা বইয়ের র্যাক। জঁ-পল সার্ত্র থেকে শুরু করে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। দুরন্ত কালেকশন।
বিরাট ঘরের এককোণায় একটা ম্যান্ডোলিন। সেগুন কাঠের জলচৌকির উপর হেলিয়ে রাখা। পাশে রুপোর বিশাল এক ফ্লাওয়ার ভাস। মানিপ্ল্যান্ট জাতীয় বাহারি লতা এসে মেঝেকে ছুঁয়েছে, অদ্ভুত এক পেলবতায়।
ছোটো ডিভানটা ঠিক মাঝামাঝি নয়, কিঞ্চিৎ ধার করে রাখা। বাকি অংশে কার্পেট বিছানো, দেয়ালের রঙের সঙ্গে অনিবার্য সামঞ্জস্যে।
বছরের এই সময়টায় যতটা গরম থাকে অন্যবার, এইবছর তা নেই। কাচের জানলার ওই পারে জলজ হাওয়া, খেলা করছে তো করছেই। গেটের ডানদিকেই কৃষ্ণচূড়া গাছটা। ফুল ঝরছে তো ঝরছেই।
নীল পাখিটার একটা পালক খসে পড়েছিল কাল। নীচ থেকে নিয়ে এসে ডাইরিতে রেখেছিল অলকা। পালকটা বার করে। আবার এসে দাঁড়ায় বেলজিয়াম গ্লাসের সামনে। পালক বোলাতে থাকে সারা শরীরে। একে একে পোশাক খুলে উড়িয়ে দেয় বাতাসে। ডাস্টি ব্লু আর নীল পালক…
ওই সময়ই কলিং বেলের আওয়াজটা পেয়েছিল নীচ থেকে। কে আবার এই সময়? দ্রুত বিন্যস্ত করে নিয়েছিল নিজেকে।
সিঁড়ি দিয়ে নেমে সোজা গেলে বার্নিশ করা কাঠের দরজা। উপর দিকে কাচ। ওয়ান-ওয়ে ভিউ। ভিতর থেকে বাইরে দেখা যায়। খোলার আগে দেখে নেয় ভালো করে। না কেউ নেই কোথাও। তাহলে নিশ্চয়ই পিওন। সে এসেছিল এবং চিঠিটা দিয়ে আর দাঁড়ায়নি।
দরজা খোলে। একটা লাল খাম পড়ে আছে মার্বেলের উপর। দেখে বোঝা যায় কোনও অফিসিয়াল লেটার নয়। তাহলে কে! কে তাকে ডাক পাঠালো এই অবেলায়! ত্রস্ত হাতে খাম তুলে নিয়ে চলে আসে ভিতরে। আলোর দিকে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে একটানে। ভিতরে গোলাপের পাপড়ি ঠাসা। ছিটকে যায় দু-একটা। উড়তে থাকে এলোপাথাড়ি।
খামের একেবারে নীচে এক-ফালি কাগজ। যাতে লেখা—
মানুষ আসলে বোকা/ একটাও গোলাপের পাপড়ি দেখেনি ছুঁয়ে/ এই অখণ্ড অবসরে/ হলাহলে শুধু পুড়িয়েছে নিজেকে...
এই লাইনগুলো কার। কোন কবির? উদ্ধার করতে পারে না কিছুতেই।
তবে উল্টো পিঠের লেখাটা চেনা,
ফিরে এসো সুরঞ্জনা:
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;
মানে কী? অলকানন্দার মত চরম রোমান্সে ভেসে বেড়ানো মেয়েও খাবি খায়। কিচ্ছু বুঝতে পারে না। শুকনো পাপড়ির দল, ঘুরতে ঘুরতে নেমে আসতে থাকে সাদা পাথরের উপর।
দুই
সন্ধ্যাবেলা ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নামে। ম্যান্ডোলিনটা নিয়ে কার্পেটের উপর বসে নন্দা। আদর করে যন্ত্রটাকে। বাজায় না।
কারখানার দিকের জানলাটা খোলা। জলের ছাঁট আসছে। উঠে যায়। ফ্যাক্টরি শেডের উপর বড় আলো একটা। ভেজা সবুজ ঘাস ভেপার আলোয় উজ্জ্বল। বাতাসের দাপট বাড়ে। ভিজে যায় অলকানন্দা।
আচ্ছা কে পাঠাতে পারে ওই খাম? অলকার কলিগরা অনেকেই চেনে তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা ঝরনাটাকে। যারা ওকে জানে, তাদের মধ্যেই কেউ এটা পাঠিয়েছে নিশ্চয়ই। খামের উপর অলকানন্দার ঠিকানাটা লেখা কিন্তু প্রেরকের জায়গাটা ফাঁকা।
এরপরই মনে হয়, কে পাঠিয়েছে এটা নিয়ে এত ভেবে কী লাভ! আসল কথা এটাই যে, এমন কেউ তাহলে সত্যিই আছে, যে বলতে পারে—
মানুষ আসলে বোকা/ একটাও গোলাপের পাপড়ি দেখেনি ছুঁয়ে/ এই অখণ্ড অবসরে/ হলাহলে শুধু পুড়িয়েছে নিজেকে...
অনেক রাতে, বৃষ্টি কমলে ছাদে উঠে যায় অলকানন্দা। হাতে গোলাপের পাপড়ি ভর্তি সেই খাম। আকাশে চাঁদ। দু-একটা তারাও।
“পৃথিবীর গভীরতম অসুখ এখন, তবু এক-ফালি মেঘ আজও উড়ে যায় চাঁদটার ঠিক নীচ দিয়ে। বড় নরম। পেঁজা তুলোর মত...” —এই লাইনগুলোই আজ লিখেছিল সে।
দুই হাত মেলে দেয় দু’দিকে। মরা জোছনায় ওড়ে তার স্বচ্ছ রাত-পোশাক। খামটায় একটা ঝাড়া মারে, জোরে। উড়তে থাকে পাপড়ি আর হাত-চিরকুট। বৃষ্টিভেজা ছাদে দাঁড়িয়ে অলকানন্দা এক এক করে ছোঁয়ার চেষ্টা করে উড়ে বেড়ানো পুস্পদল। রেলিংয়ের উচ্চতা কম। অখেয়ালে কখন যেন চলে আসে সীমানায়। হঠাৎ পিছলে যায় পা।
ফিরে যায় সুরঞ্জনা নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে।
পরদিন ভোরের আধো আলোয়, সেই আমগাছটার নীচে, যেখানে রোজ ডাকে মাছরাঙা পাখি, পড়ে থাকে এক নিথর দেহ। কিন্তু, কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায় না কোথাও। অলকার গল্পের যা ঠিক উল্টো। চন্দ্রাহত, মুনস্ট্রাক অলকানন্দা, সেই গল্প ছুঁয়ে ছুঁয়ে লেখে, ভেজা বাতাসে উড়ে যাওয়া পাপড়ি আর জ্যোৎস্নার এপিটাফ।
সত্যি মানুষ আসলে বোকা/ একটাও গোলাপের পাপড়ি দেখেনি ছুঁয়ে এতোদিন...!
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
অগ্নীশ্বর চক্রবর্তী
2 মাস আগেচমৎকার একটি গল্প।