preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
মির্জাপুর: মা যা হইয়াছেন এবং হইবেন
রিভিউ

মির্জাপুর: মা যা হইয়াছেন এবং হইবেন

রতিশঙ্কর গুড্ডুকে বলেছিল, ‘হাম ভি পেলে গ্যায়েথে, তুম ভি পেলে যাওগে’… চার বছর অপেক্ষার পর মির্জাপুর সিজন থ্রি’তে দর্শক কী পেলো! ‘পেলে’ যাওয়া ছাড়া…

নির্দিষ্ট সময় অন্তর রকমারি নির্বাচনে জনগণের লাভ হোক বা না হোক একটা দিব্যি মৌতাত হয়। সেই মৌতাতেই মজে ছিলাম মাস দুয়েক। একগাদা ইউটিউব চ্যানেল দেখছিলাম। কোনগুলোকে পাত্তা দেওয়া চলে আর কোনগুলোকে বিজেপি-বিরোধী গোদি মিডিয়া বলে এড়িয়ে যাওয়া যায়, এই সব গূঢ় বিষয়ে প্রচুর সময় নষ্ট করে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলাম এবং অবশ্যই নিজের পিঠ নিজেই চাপড়াচ্ছিলাম। এসবের মধ্য দিয়েই উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রভূত অবিশ্বাস্য তথ্য জানতে পারছিলাম, ভোটের ফল বেরোনোর পর দেখা গেল সেগুলো প্রায় সর্বাংশে সঠিক তথ্য ছিলো। এই প্রক্রিয়ায় আরও একটা উপকার যে হচ্ছিলো, সেটা তখন বুঝিনি, ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পরও বুঝিনি। বুঝলাম, মির্জাপুরের তৃতীয় সিজন দেখার পর।

বিভিন্ন মাফিয়া ডনদের জেলার নাম বলা হচ্ছিলো, মূল্যহীন গ্রাফিক্স দিয়ে ডনদের চলাচল দেখানো হচ্ছিলো—আর আমার মনে ভেসে উঠছিলো বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রগুলির নাম। রাজপুত যোগী আদিত্যনাথ যে গোরক্ষপুর মঠের প্রোডাক্ট, সেটা যে পূর্বাঞ্চলের মধ্যে পড়ে আর সেই পূর্বাঞ্চলের আসল মালিকানা নিয়েই যে ত্রিপাঠী, পণ্ডিত, শুক্লাদের মতো ব্রাহ্মণ মাফিয়ারা মারামারি করে মরছে, পরিচালকের এই গভীর গোপন বার্তাটি আমার নজরে পড়ছিলো। নজরে পড়ছিলো প্রধানমন্ত্রীর তিনবারের জেতা কেন্দ্র বারাণসীতেই গোটা রাজ্যের মাফিয়াদের গুরুতর দীর্ঘ বৈঠকগুলি হচ্ছে। কালিন ভাইয়ার অনুপস্থিতিতে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মুসলমান জাঠ মাফিয়া পূর্বাঞ্চল দখল করার ছক কষছিল আর মুখ্যমন্ত্রী মাধুরী বলছিলেন তিনি ‘গুঙ্গি গুড়িয়া’ হয়ে থাকবেন না। ফেক এনকাউন্টার বিশেষজ্ঞ পুলিশ কর্তা ‘মন কি বাত’ শোনাচ্ছিলেন। আমি বুঝতে পারছিলাম, পরিচালক একটা দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাপার করছেন, যার সান্ধ্যভাষার মর্মভেদ করতে না পারলে প্রাইম ভিডিও-র সাবস্ক্রিপশন নেওয়া বৃথা।

কেতাব-ই'র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন manuscript.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

এত যে বাজে কথা লিখতে হচ্ছে, তার কারণটা আশা করি এই লেখার গুটিকতক প্রণম্য পাঠক এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন। সেটি হলো, মির্জাপুর সিজন থ্রি দেখাটা স্রেফ সময় নষ্ট। অবান্তর ঘটনাক্রম। লেখার ফরমায়েশ পেয়ে দিশাহারা হয়ে কোথা থেকে কী টোকা যায় খুঁজছিলাম। দেখলাম মূলধারার গণমাধ্যমগুলি মূলত না-পসন্দই ব্যক্ত করেছে। তার কারণ এবারে গল্প প্রায় এগোয়নি বললেই চলে। ১০টি ঘণ্টা নষ্ট হওয়ার পর দেখা যাবে পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় ‘সরণ’ শূন্য। মাঝে কিছু লোক বেঘোরে মারা গেছে। যাদের আগের সিজন অবধি বেশ সম্ভাবনাময় চরিত্র বলে মনে হয়েছিলো। গল্প না এগোনোর কারণ হিসেবে অনেকেই দূষছেন বিজেপির চাপকে। আমরা জানি, মির্জাপুরে পূর্বাঞ্চলকে নেতিবাচক ভাবে দেখানো হয়েছে বলে বিজেপির এক কর্মী মামলা করেছিলেন। এই সিজনকে লোকসভা নির্বাচনের আগে রিলিজ হতে দেওয়া হয়নি। আসল মুখ্যমন্ত্রী আর সিরিজের মুখ্যমন্ত্রী, দু’জনেই উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি চান। দু’জনেই দলে ও মন্ত্রিসভায় বিরোধীদের ঘেরাটোপে আছেন। তফাৎ বলতে যোগী মন খুলে বুলডোজার চালান আর এনকাউন্টার করেন, অন্যদিকে মাধুরী যোগী হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখেন কিন্তু কম বয়সে বার দুয়েক বিধবা হয়ে যাওয়া যুবতী ঠিকমতো পেরে ওঠেন না। হতাশা কাটাতে গোপনে গাঁজা খান। হয়ত, যোগীকে দেখালে উনি এই সিরিজ ভোটের আগে রিলিজ করায় বাধা হতেন না, কিন্তু হায়! সেই ক্ষমতা তাঁর নেই।

অবশ্য তৃতীয় সিজনে এই যে গুরুত্বপূর্ণ লোকদের কম দেখা গেল, লালা, রবিন পটাপট মরে গেল—সম্ভবত তার কারণ একটাই, এঁদের ডেট পাওয়া যাচ্ছে না। শরদ শুক্লা মরেছে বলে আমার মনে হয় না। কালিন ভাইয়া তাঁকে আধমরা করেই রাখতে চাইলেন। চার বছর পর তৃতীয় সিজন আনার মধ্যে কেবল যোগী দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসেননি, মির্জাপুরের বহু অভিনেতা অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে গেছেন, কেউ কেউ বড়ো স্টার হয়ে গেছেন। গল্প যে এসব মাথায় রেখেই বানাতে ও বিগড়ে দিতে হয় তা টিভি সিরিয়ালের দর্শকরা খুব ভালো জানেন। কিন্তু মির্জাপুরের দর্শক তো সিরিয়ালের দর্শক নন, তাই চার বছর অপেক্ষার পর এই কাণ্ডকারখানা দেখে খুবই বিরক্ত হয়েছেন। আর আশায় বুক বেঁধেছেন, চতুর্থ সিজনে সকলেই সব কিছুর বদলা নেবে আর অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের মতোই গোরক্ষপুরের আশেপাশের সব আসন জিতে নেবে বিজেপি, হেরে যাবে বারাণসীর চারদিকের আসনগুলো। বীণা ত্রিপাঠী-মকবুল খানের জুটি রাধিয়াকে সঙ্গে নিয়ে হাত মেলাবে গুড্ডু-গোলুর সঙ্গে, যেভাবে হাত মিলিয়েছেন রাহুল-অখিলেশ।

আর জনগণ? শরদের বাবা রতিশঙ্কর গুড্ডুকে বলেছিলেন, ‘হাম ভি পেলে গ্যায়েথে, তুম ভি পেলে যাওগে’। নেতামন্ত্রী-মাফিয়াদের সঙ্গে গা ঘষাঘষি করে নিজেকে বুদ্ধিমান ভেবে বহু সময় নষ্টের পর শরদ শুক্লা সম্ভবত বাবার কথা বুঝতে পেরেছেন, বিজয় ভার্মার সঙ্গে দোস্তি বাড়াতে তাঁর আর অসুবিধা থাকার কথা নয়; যদি না কোনো নাটকীয় মোড় আসে। কালিন ভাইয়া আর শরদের মায়ের গল্পগাছা একটু অন্যরকম ঠেকেছে এবার। প্রথম দুই সিজনে মুন্না বারবার নিজের মায়ের কথা বলতো, সেসবও তো বলা বাকি রয়ে গেছে পরিচালকের।

কে জানে কী হবে! লালার মৃত্যু রহস্য কি সমাধান হবে পরের সিজনে, গুড্ডুর বাবার কী হবে, কী হবে তাঁর বোনের? নিজস্ব সংকট মিটে যেতে গজগামিনী গুপ্তা কি গুড্ডুকে সংসারী করতে চাইবেন, লালার মেয়ে কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন? এই সিজনের শেষে নারী শক্তির যে উত্থান দেখা গেলো, তাতে আশঙ্কা একটাই। প্রিয়ঙ্কা গান্ধী সুদূর দক্ষিণে ওয়েনাড়ে প্রার্থী হয়ে গেছেন। মোদির মনে আতঙ্ক তৈরি করার ক্ষমতা একা ডিম্পল যাদবের নেই।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

মন্তব্য করুন

লেখক

চলচ্চিত্রমোদী প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী প্রাক্তন সংবাদকর্মী। বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন