প্রকাশিত হল রশীদ হারুণের গুচ্ছ কবিতা— ‘প্যারাডাইম’। নাম কবিতা সহ রয়েছে ‘স্মারকচিহ্ন’, ‘মধ্যরাত’, ‘বিজন পালের বাড়ি’, এবং ‘অন্তর্দর্শন’ কবিতাগুলি।
প্যারাডাইম
আমার গোড়ালি শূন্য আঁকতে-আঁকতে চলে যাচ্ছে
আঙুলের ফুলগুলো ঠেলে। কতদূর যাব, ভাবছি এখন!
পৃথিবী নিজেই গোল-ম্যারাথন— ৯৪০ মিলিয়ন কি.মি.অশ্ব!
এবং অশ্বধ্বনির প্যারাডাইমগুলি অনবরত লিখছি—
শুধুই ক্যালকুলাস! এবং আমার দৃষ্টি দিয়ে
আমাকে আঁকতে গিয়ে অসহায় একটা পালক
উড়ে গেল দর্পণের দিকে।
সময়, কেবলামুখী ডটচিহ্ন—
নিজস্ব তরিকা বুনে যাচ্ছে—
আহা ডটচিহ্ন, ডটচিহ্নের ভেতর পড়ে আছি।
পাতার মর্মরধ্বনি সতর্ক করছে ঝরে পড়ার প্রাজ্ঞতা,
অনুসম্পর্কীয় চিহ্ন। সব ফাংশন সাফাই গাইছে—
অধ্যয়ন শেষ হলে, দূরে, ব্যঞ্জনার বিন্দুশব পড়ে থাকে।
এবং নৈর্ব্যক্তিকতা আর বিমূর্ততা শিখে যাব—
শূন্যের টেবিল ঘিরে বিভ্রান্ত ছায়ার চলক দেখবে তুমি
ইহজীবনে, অভিজ্ঞতার এক অভ্যাসই আমাদের আয়ু!
স্মারকচিহ্ন
এক-কুয়ো অন্ধকার ঢুকিয়ে রেখেছি
তবু দরোজার পর দরোজা আমায় ডাকছে—
‘এই পথে আয়— এই পথে ঝরছে চিহ্ননথি,
ধূসর নক্ষত্র আর ঠাণ্ডা গোধূলির শোকার্ত মর্মর’...
মধ্যরাত
জাহাজ ভাসিয়ে যাচ্ছ—
চলে যাওয়া দেখা মানে—
জলশব্দ; স্রোতে ভাসা কালো মহিষের দল
দূরে, যতদূর দেখি— এপিটাফ লেগে আছে
মেঘের টহল ওড়ে, বিমর্ষ হ্রদের ধার ঘেঁষে—
মধ্যরাত; চলে গেছে বিপন্ন ঘুমসৈনিক
হাওয়ার বেহালা বেজে যাচ্ছে বুকে
জলের জ্যাকেট পরে চেয়ে আছে চোখ
জানালায়…
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
বিজন পালের বাড়ি
ঝুকে থাকা ঘর। শুকনো পাতায় হাওয়ার হিসহিস। নীচে, রোদ-ছায়ার সিরিজ। কুমোরের চাকা। দলামাটির চাঙড়। বিজন পালের বাড়ি— উদোম। উদোম বিজন পাল। তৈজসগুলি তার নয়। সে হাসে। রাধিকা তার বউ। সে-ও হাসে। কিন্তু ন্যাংটো-শিশু কাঁদে। খালি ঘর। ছুড়ে ফেলা ছড়ানো বিড়ির পাছাগুলি চেয়ে আছে। আগুন পুড়ছে ঠোঁটে। সারি সারি কাঁচা হাঁড়িকুঁড়ি। সারি সারি পাকা হাঁড়িকুঁড়ি।
কাচানো মাটির দলায় পাকিয়ে ওঠে হাত আর আঙুলের বিভা। পাতলা হাসির নীচে দলিত অসুখ। কাঁচারঙের শাড়ির কলিজায় ঢুকে আছে বউদি। লালমুখ। ব্লাউজ কোথায়! কামড়ানো হাসি দেখি। তাকে বলি— বউদি, মৃৎশিল্প দারুণ। বউদি বলে— মৃৎশিল্প কী? আমি দুইবার বউদি বউদি বলতেই ডাক শুনলাম বিজন পালের। শুকনো লতা ধরে চালে শুয়ে আছে একজোড়া নিষ্পাপ চালকুমড়া।
উনুনে পুড়ছে মাটি— অসংখ্য শরীর— বউদি ও বিজন পাল আর আমিও মৃৎশিল্পী হয়ে উঠি। কিন্তু মৃৎশিল্প কী? ভাবি—
অন্তর্দর্শন
জানলার ছোট্ট আলো কীভাবে নক্ষত্র হয়, ভাবতে ভাবতে তোমার প্রতিচ্ছবির দৃশ্যবীজ সবুজ পাতার মফস্সল গড়ে। আমি তাঁত-বুনন প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলি— একদমক নক্ষত্র ছুটে আসে আর সাইকেলের প্যাডেল থেকে তোমার পায়ের পাতা নেমে যায়। ছাতার আকৃতি ধরে একটা বাদামগাছ বড়ো হচ্ছে আঙিনায়। পাতার বাতাস টলে যখন চাঁদের যৌনপেট ছুটে আসে, তখনও সাদা লিলেনের মধ্যে জেগে থাকি। ঝাপটা খাওয়া সুগন্ধি-চোখের বুনন কৌশলে অন্তর্বাস নড়ে— দেখি, একটা নরম-নরম-নক্ষত্র সাইকেল চালাতে চালাতে আকাশের প্রান্তে ঢুকে গেল।
আমি একা। চোখে চোখে নরম বিষাদ!
আকাশ সোনালি ডুমুর ছিটিয়ে বসে আছে— পাখি নেই। চেরাই কথার সাদা মেঘগুলি বার বার জুড়ে যেতে চাইছে এবং অন্তর্মুখ তৈরি হলে ভিন্ন বার্তার সংকেতে সব কথা ফিরতে পারে না। যৌথ সম্পাদনা বলে মতবিশ্বাসের মধ্যে জেগে থাকি নিঃসম্বল— মাতাল একটা কুঠুরি উড়ছে। যেন, অন্যমনস্ক তোমার কথা নড়ে। যৌথ পারফরমেন্সও পরস্পরকে দোষারোপ করে নিজের উড্ডীন ডানা খুলতে খুলতে। এবং সবাই ছেড়ে গেলেই প্রকৃত স্বাধীনতার হরফগুলি বের হয়, ঠিক তখনই পাতা-চোখ নড়ে ওঠে আর আমার ভেতর থেকে ঝরে পড়ে নিঃশব্দের বীজ।
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
ওসমান গণি
2 দিন আগেসব গুলো কবিতা, দারুণ পাঠে তৃপ্ত