থরথর করে কেঁপে উঠল রুপালি, খুব পরিচিত লাইনগুলি, কিন্তু উত্তেজনায় মনে পড়ল না। ঘোরের মত লিখল, “কবে কোথায় দেখা করবে বলো।” রুপালি বুঝতে পারে, নিজের ওপর সমস্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে ও, এইভাবে চললে ঘর-সংসার সব গৌণ হয়ে পড়বে, একবার অন্তত দেখা হলে এই উত্তেজনা স্তিমিত হবে বোধহয়!...
সুদীপ সরকারের দুই পর্বের উপন্যাসিকা ‘রামধনু’। আজ অন্তিম পর্ব।
৪
নিতাই আজ সন্ধের আগেই ফিরে এসেছে, এই সময়টা সানি ঘরে থাকে না, সুশীল মাস্টারের কাছে পড়তে যায়। স্কুলের স্যারগুলো মানুষ ভালো, সানিকে বিনা পয়সায় পড়া দেখিয়ে দেয়। সুশীল স্যার আর ধীমান স্যার সপ্তাহে একদিন করে পড়ায়, গরীবের ছেলে, লেখাপড়ায় ভালো, ওঁরা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়েছেন। নিতাই ছেলের লেখাপড়ার ব্যাপারে আর নাক গলায় না, পড়তে চায় পড়ুক, টাকাপয়সা না লাগলে ঠিকই আছে। ওর ইচ্ছে ছিল সানিকে বসাকদের কারখানায় ঢুকিয়ে দেওয়ার, লেদের কাজ শিখলে ভাতের অভাব হত না, সন্ধ্যা বেঁকে বসল আর সানি ও রাজি হল না, গোঁ ধরল, “পড়াশোনা ছাড়ব না, যদি ঝামেলা করো তো বেরিয়ে যাব, স্কুলের দাওয়ায় থাকব।” এর পরে আর ঝামেলা করেনি নিতাই, বাবা হিসেবে কিছুই করতে পারে না ছেলের জন্য, পড়তে যখন চায় পড়ুক। সাড়ে ছ-টার দিকে ফিরবে সন্ধ্যা, মুখোমুখি বোঝাপড়াটা না করলেই নয়, ছেলের সামনে খোলাখুলি সব কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ হয়। হাজার হোক, লেখাপড়া জানা ছেলে, জ্ঞানবুদ্ধি বেশি, তার সামনে সব কথা বলা যায় না। এমনিতে সব জেনেও চুপ থাকে নিতাই, ওর আর সেই দম নেই যে সন্ধ্যাকে আটকে রাখে, মুন্নার সঙ্গে সন্ধ্যাকে নিয়ে লোকে কানাঘুষো করে সেটা ও জানে কিন্তু কাল বিশু এই নিয়ে টিপ্পনী কাটার পর থেকেই মেজাজটা খিঁচরে আছে। নিতাই মাথা গরম করেনি, ঠাণ্ডা গলায় বলেছে, “বিশে, নিজের চরকায় তেল দে গে যা, কার বউ কার সঙ্গে ফুর্তি করছে তাতে তোর কি বে? নিজের বোনটাকে সামলা আগে, তেলি পাড়ার নারান ঘোষের ছেলের সঙ্গে কী চলছে লোকে জানে না ভেবেছিস? আমার মুখ খোলাস না বলে রাখলাম।” কথাগুলো ছুড়ে দিয়েছে নিতাই, জোকের মুখে নুন পড়ার মতো মুখ চুন করে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে গেছে বিশু। কিন্তু কাঁঠাল ভাঙলে তার গন্ধ তো চারদিকে ছড়াবেই। লোকের কথা নিয়ে খুব বেশি ভাবে না নিতাই, অল্প বয়েসে শরীরের রস মরে না চট করে, মুন্না ছেলেটাও খারাপ না, নিতাইকে সম্মান করে, দাদা দাদা করে, সন্ধ্যাকে এদিক-সেদিক ঘুরতে নিয়ে যায়, তাতে কোন শালার কি! তবু, আজকে একটা এসপার-ওসপার করবে নিতাই, ঘুড়ির সুতো বেশি আলগা দিলে ঘুড়ি হাতের বাইরে চলে যায়, অন্য কেউ লটকে নেয় সুতোর টানে। সন্ধ্যা ঘরে ঢুকে নিতাইকে দেখে একটু চমকে গেল, আড়চোখে দেখে বলল, “কি হল, শরীর খারাপ নাকি? এত জলদি ফিরে এসেছ?” নিতাই ঝোপের আড়ালে শিকারের জন্য ওঁত পেতে বসে থাকা বাঘের মতো ঝাপিয়ে পড়ল সন্ধ্যার ওপর, দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করল, “মুন্নার সঙ্গে কোথায় গিসলে কাল? খুব ঢলাঢলি চলছে, না? ভেবেছ আমি কিছু জানতে পারব না?” সন্ধ্যার ডান হাতের কনুই চেপে ধরল নিতাই। নিতাইয়ের হাতে অসম্ভব জোর, রিকশা টেনে টেনে সেই জোর তেমন টোল খায়নি, সন্ধ্যা হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করেও পারল না, মাথায় রাগ চড়ে গেল, গলায় ঝাঁজ নিয়ে বলল, “বেশ করেছি ঢলাঢলি করেছি, তাতে তোমার কী, হ্যাঁ?” সন্ধ্যার হাত ধরে আরও কাছে টানল নিতাই, সন্ধ্যার মুখটা ওর বুকের কাছে চলে এসেছে, অনেকদিন এত কাছ থেকে দেখেনি মেয়েটাকে, আগের মতো ডাগরটি নেই তবে জৌলুস কমেনি একটুও, চোখের তারায় এখনও এক আকাশ আবেদন! সন্ধ্যা উম… করে ককিয়ে উঠল, কনুইয়ের কাছে নিতাই যেন আঙুলগুলো চেপে বসিয়ে দিয়েছে, সন্ধ্যা নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই নিতাই কনুই ছেড়ে বেড় দিয়ে দু-হাতের মধ্যে জাপটে ধরল ওকে, সন্ধ্যা বাধা দিল না একটুও, আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে নিজেকে ছেড়ে দিল নিতাই-এর পেশিবহুল দু-হাতের জিম্মায়। মরুভূমির তপ্ত বালি যেমনভাবে বৃষ্টির জল শুষে নেয় নিমেষে, তেমনভাবেই সন্ধ্যার ঠোঁটের সমস্ত লালিমা শুষে নিল নিতাই, নতুন করে একবার নিজেকে যাচাই করে নেওয়ার নেশায় মশগুল হয়ে উঠল নিতাই কিন্তু সমস্ত আগল ভেঙে পড়ার আগেই এক ঝটকায় নিজেকে সরিয়ে নিল সন্ধ্যা, বুকের আচলটা টেনে নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিল এক লহমায়, এলোমেলো হয়ে পড়া চুলগুলো চুড়ো করে মাথার পিছন দিকে বেঁধে নিয়ে বলল, “নিজের বউকে বিশ্বাস করো না আবার জোর করে আদর করতে চাও, লজ্জা করে না তোমার?” নিতাই ধাতস্থ হয়ে স্ব-মহিমায় ফেরার চেষ্টা করল, “বাজে কথা বলবে না বলে দিলাম, লোকে যা বলছে সব মিথ্যা? আমি জানি না ভেবেছ? ওই হারামিটাকে একদিন মেরে…” কথা শেষ করতে দিল না সন্ধ্যা, চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, “হ্যাঁ, সেটা পারো, তবে তার আগে আমাকে মেরে শান্তি দাও, পরের ছেলের গায় হাত দেওয়ার দরকার নেই।” সন্ধ্যা জানে, মুন্নার বাইকে চড়ে কাল যখন যাচ্ছিল, অনেকেই দেখেছে ওদের, তাতে অবশ্য পরোয়া করে না ও, ভদ্দরলোকেরা ঘরে বাইরে ফষ্টিনস্টি করে বেড়ালে দোষ নেই আর যত দোষ সন্ধ্যার! মুন্না বাইক চালাতে খুব ভালবাসে, ভোলার গ্যরাজ থেকে মাঝে-মাঝেই বাইক নিয়ে এদিক-সেদিক টহল মারে ভট ভট করে। কাল সন্ধ্যাকে জোর করেই তুলেছিল একপ্রকার, সন্ধ্যা আগে কখনো বাইকে চড়েনি, শেষে রাজি হয়েছিল পিছনে বসতে। বেলতলা থেকে সাহাচক হয়ে পটুয়া পাড়ার মোড় ঘুরে তিন চক্কর মেরে নামার পরে মুন্নাকে বলেছিল কথাগুলো, “পিছনে বসে জাপটে ধরে বসার মধ্যে হেব্বি মজা আছে মাইরি”; মুন্না হেসে বলেছে, “আমার তো মনে হচ্ছিল আমি শারুখ আর তুমি রানি, এর পরে আরও দূরে চলে যাব একদিন।” সন্ধ্যা বেশি প্রশ্রয় দেয় না, পুরুষ মানুষের ওই এক দোষ, সুযোগ পেলেই আরও চায়, মুখ ভেংচে উত্তর দিয়েছে, “দূরে চলে যাব! আমার যেন ঘর-সংসার নেই; গেলেই হল, না? এতগুলো বাড়িতে কাজ, একদিন ডুব মারলেই বউদিদের মাথায় রক্ত উঠে যায়। যাও, এখন আর এক মাসের মধ্যে দেখা করবে না, আমার মেলা কাজ আছে।” ভর সন্ধেবেলা নিতাই আর মাথা গরম করল না, সানির ফেরার সময় হয়ে এসেছে, এই নিয়ে আর ঝামেলা না করাই বুদ্ধিমানের কাজ; যা পারে করুক গে, থাকতে যখন হবে একসাথে, ঝামেলা করে লাভ নেই, আর সন্ধ্যার দিকটাও তো ভাবতে হবে, লোকের বাড়ি কাজ করে একটু একটু করে পয়সা জমিয়ে সংসারের উনুনেই তো ঢালছে, রিকশা টেনে আজকাল আর কতই-বা হয়! এখন তো সবাই টোটো নিয়ে নেমে পড়েছে, স্ট্যান্ডে এখন নিতাই, বিশু আর ঝন্টু ছাড়া কেউ রিকশা চালায় না। যারা একটু প্রাইভেটে চলতে চায়, বনেদি মানুষ, তারা ছাড়া রিকশায় ওঠে কে! নিতাই-এর কয়েকজন বাঁধা প্যাসেঞ্জার আছে, রুপালি বউদি যেমন, কোথাও গেলে ওকেই ডেকে নেয়, খুব ভালো লাগে নিতাই-এর, কী সুন্দর ব্যবহার, শিক্ষিত মানুষের চালচলনেই বোঝা যায়। সবাই আবার একরকম হয় না, ঘোষ পাড়ার সামন্তবাবু যেমন, হাইকোর্টের বড়ো উকিল কিন্তু তার হাত দিয়ে জল গড়ায় না, নিজে গাড়ি চালাতে পারেন না, বাজারহাট করতে গেলে নিতাইকে ডেকে নেন কিন্তু হাত উপুড় করতে গেলেই হিসেব। এখন ভরসা ছিল একমাত্র সানি, বসাকদের লেদের কারখানায় কাজটা আরামসে হয়ে যেত, ওদের বাড়ির ছোটো ছেলের মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যায় নিতাই, ওর কথা ফেলত না, নিয়ে নিত সানিকে। কিন্তু পাঁচিল হয়ে দাঁড়াল সন্ধ্যা, “ছেলের দিকে একদম নজর দেবে না, ওর মতো ছেলে এ তল্লাটে নেই, সামনে অনেকগুলো পরীক্ষা আছে, ধীমান স্যার আমাকে ডেকে বলেছে ক-দিন আগেই, ওর নাকি হেব্বি চান্স আছে।” নিতাই মেনে নিয়েছে সন্ধ্যার কথা, ছেলেটাও তেমন জেদি, অন্যদের মতো নয়, সিনেমা টিভি কিছুতে নেই, শুধু বই নিয়ে পড়ে আছে দিনরাত। দেখা যাক, কি হয় শেষপর্যন্ত!
রুপালির কাছে ব্যাপারটা নেশার মতো হয়ে গেছে এখন, রাত এগারোটার দিকে ম্যাসেঞ্জার খুলে সামান্য অপেক্ষা, তারপরেই জাঁকিয়ে বসে ইরোস। রুপালির ভিতরে একটা ঝড় ওঠে তখন, সারা শরীর অবসন্ন হয়ে আসে, শরীরের মজ্জায় মজ্জায়, হাড়ে হাড়ে কাঁপুনি ধরে, হৃদস্পন্দন বেড়ে চলে নিজের খেয়ালে। একটা সময় ছিল যখন মাঝেমধ্যেই পার্টিতে বা বন্ধুদের সঙ্গে গেট টুগেদারে লিকার খাওয়া হয়ে যেত। হুইস্কি বা রাম নিত না ও, এগুলোর হ্যাংওভার মারাত্মক, জিন বা রেড ওয়াইন নিত হিসেব করে, যদিও মেয়ে বড়ো হওয়ার পর থেকে এসব একদমই ছেড়ে দিয়েছে। রুপালি বুঝতে পারে, এই নেশা লিকারের নেশার থেকে কয়েকগুণ বেশি, সবার অলক্ষে, গোপন অভিসারের খেলায় সমস্ত শরীর মন জুড়ে যে নেশার বিচ্ছুরণ তা একান্তে অনুভব করে ও। কলেজে যাওয়ার রাস্তায়, বড়ো গলির মুখটায় মাঝে-মাঝেই একটা লোককে রাস্তায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখে রুপালি, ধেনো মদের নেশায় বুঁদ হয়ে রাস্তায় বেওয়ারিশ বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকা লোকটাকে পথচলতি মানুষ দেখেও দেখে না। নেশা ছুটলে লোকটা নিশ্চয়ই আবার উঠে নিজের বাড়ি যায়, বউকে পেটায় তারপর সন্ধে হলেই আবার খাল পারের ঝুপড়ির ঠেকে গিয়ে নেশা করে। আসলে প্রত্যেক মানুষেরই বোধহয় জীবনে একটা নেশার উপাদান লাগে, নাহলে সব কিছু কেমন ম্যাড়ম্যাড়ে একঘেয়ে হয়ে ওঠে। কয়েকদিন ধরেই ইরোস রুপালিকে অস্থির করে তুলেছে, শুধু নির্বিষ কিছু শব্দের মধ্যে দিয়ে যে এত বিষ ঢালা যায় জানত না রুপালি, সেই বিষের জ্বালা সর্বাঙ্গে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে ও। তা ছাড়া আরও একটা ব্যাপারে রুপালির কৌতূহল বাড়িয়ে তুলেছে অচেনা মানুষটা, ওকে বারে বারে ‘আপেল’ নামে সম্বোধন করে। বাবা ছাড়া এই নামে কেউ কোনোদিন ডাকেনি ওকে, তাহলে কে এই ইরোস! রুপালিকে যেন নিশিতে পেয়েছে আজ, ছোটোবেলায় ঠাকুরমার কাছে কত শুনেছে নিশি ডাকার গল্প, সেই ডাক না কি অমোঘ, উপেক্ষা করা যায় না! নিশিতে পাওয়ার মতো মরিয়া হয়ে উঠল রুপালি, দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে লিখে বসল, “ওয়ান্ট টু মিট, ক্যান্ট ওয়েট।” সুযোগের অপেক্ষায় ছিল ইরোস, চটপট উত্তর এল, “ইয়েস ডার্লিং, সেদিন,
নগ্ন শরীরের মতো লজ্জাহীন আমি,
এক বছর ঘুমবো না, এক বছর স্বপ্নহীন জেগে
বাহান্ন তীর্থের মতো তোমার ও-শরীর ভ্রমণে
পুণ্যবান হব।
থরথর করে কেঁপে উঠল রুপালি, খুব পরিচিত লাইনগুলি, কিন্তু উত্তেজনায় মনে পড়ল না। ঘোরের মত লিখল, “কবে কোথায় দেখা করবে বলো।” রুপালি বুঝতে পারে, নিজের ওপর সমস্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে ও, এইভাবে চললে ঘর-সংসার সব গৌণ হয়ে পড়বে, একবার অন্তত দেখা হলে এই উত্তেজনা স্তিমিত হবে বোধহয়!
ইরোস একটু সময় নিল, তারপর লিখল, “ইয়েস, আমিও মিট করতে চাই, সেদিন তোমাকে…। না, আর কাব্যি নয়, একটা কাজের কথা বলি। ইরোসের শেষ কটা লাইন পড়ে চমকে উঠল রুপালি, আর কত রহস্য লুকিয়ে আছে এই লোকটার সঙ্গে কে জানে! মাথার ভিতর সব ভাবনাগুলো জট পাকিয়ে এল, খানিকক্ষণ সময় নিয়ে ভাবল রুপালি তবে কিছুই ঠাওর করতে পারল না, মোবাইলের স্ক্রিনে চটপট আঙুল চালিয়ে লিখল, “কবে কোথায় জানাও, উইল শিয়োরলি মিট”।
৫
এমনিতেই নতুন এসাইনমেন্ট নিয়ে বেশ চাপে আছে সৃজন। কাজটার ভালো-মন্দের সঙ্গে কোম্পানির গুড উইল জড়িয়ে আছে। তারমধ্যে হঠাৎ করে যে এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে সেটা কে জানত! সকাল গড়িয়ে বেলা বাড়ার আগেই হাঁপাতে হাঁপাতে এসে খবরটা দিল তৃণা, “রাকেশকে পুলিশ ধরেছে, আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না পাপা, কিছু একটা করা দরকার আমাদের।” তৃণার উত্তেজিত গলায় উদ্বেগের ছাপ লক্ষ, করল সৃজন, আকস্মিক এরকম একটা কিছু বিশ্বাস করতে সময় লাগে, একটু ধাতস্থ হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কেন এরেস্ট করেছে? কী করেছে ও? রাজনীতির ব্যাপার নয় তো?” আজকাল বেশ কিছু ছেলে-মেয়ে আবার আলট্রা লেফট রাজনীতি নিয়ে মেতেছে, কী তাদের নীতি আর কী যে চায় তারা, সেসব সাধারণ মানুষের বিচারবোধের বাইরের ব্যাপার। রুপালি তৃণাকে বারে বারে বলেছে, ওইসব ছেলেদের সঙ্গে না মিশতে, কোথা থেকে কিসে জড়িয়ে পরে বলা যায় না। একরাশ উদ্বেগ নিয়ে রুপালিও জিজ্ঞেস করল, “কি বলছিস? এই বয়েসে পুলিশের খাতায় নাম ওঠা মানে তো ক্যারিয়ারটাই গেল। কিন্তু কী করেছে ও? ছেলেটা এমনিতে তো ভালোই শুনেছি।” তৃণা যেটুকু শুনেছে অন্য বন্ধুদের কাছে সেটা বলতে পারল না মা বাবার সামনে। ও জানে, রাকেশ গত রাতে অন্য তিন বন্ধুর সঙ্গে বারে গিয়েছিল, আকণ্ঠ মদ্যপান করে সেখানে কিছু একটা ঘটিয়েছে ওরা, মারপিট ধাক্কাধাক্কিতে রেস্তোরাঁর কিছু আসবাব ভেঙেছে, তা ছাড়া ওখানের দুই একজন কর্মীর গায় হাতও তুলেছে। পুলিশে খবর যেতেই ধরা পড়েছে সব ক-জন। রাতে থানার লকআপে রেখেছিল, সকাল সকাল কোর্টে তুলেছে পুলিশ কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট বেইল দেয়নি, পুলিশ হেফাজত হয়েছে একদিনের। রেখেঢেকে তৃণা বলল, “ঠিক জানি না তবে কোর্টে বেইল হয়নি শুনলাম। ওর বাবা তোমাকে কল করবে বোধহয়, তোমার হেল্প লাগবে ওকে বের করতে।” রুপালি জানে, সৃজনের পুলিশের ওপরমহলে ভালো যোগাযোগ আছে, ওর গুণমুগ্ধ মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সৃজন কিছু বলার আগেই রুপালি ঝাঁজিয়ে উঠল মেয়ের ওপর, “বড়োলোকের বখাটে ছেলে, কোথায় পড়াশোনা করবে, তা না, দেশ উদ্ধার করতে গেছে। এখন দেখ কেমন লাগে, এই জন্যে তোমাকে আমি বারবার সাবধান করি, এইসব ছেলেদের সঙ্গে মিশতে যাবে না। এখন দেখেছ তো; কথায় বলে, পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা!” অনেক ব্যাপারেই রুপালির সঙ্গে একমত হতে পারে না সৃজন, এই ক্ষেত্রেও রুপালির এই ধরনের কথা পছন্দ হল না ওর, রুপালিকে ইশারায় থামিয়ে বলল, “আমিই ওর বাবাকে কল করছি, যা-ই হোক-না-কেন, ছেলেটাকে বের করে আনতে হবে তো; ডিসি নর্থ-এর সঙ্গে কথা বলে দেখি, আশা করি আমার কথা ফেলবে না। কিন্তু পুলিশ কোর্টকে কিভাবে ম্যানেজ করবে কে জানে!” রুপালি আর কথা বাড়ায়নি, বেরোনোর আগে তৃণাকে শুধু বলে গেছে, “পরীক্ষা শেষ মানেই সব কিছু শেষ নয়, আর তুমি এখন কোথাও বেরোবে না বলে রাখলাম, কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পরলে কিন্তু লাইফ উইল বি আ মেস, আ কমপ্লিট হেল। মনে থাকে যেন।” কলেজে এখন পরীক্ষা চলছে, কাজের চাপ আছে বেশ, সময় নষ্ট না করে চটপট বেরিয়ে পড়ল রুপালি।
সকালের দিকে কিছুটা সময় ল্যাবে থাকে রুপালি, সুকুমার এসে বলল, “একটি ছেলে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে, অফিসে খবর নিয়ে জেনেছে আপনি ল্যাবে আছেন, তাই এখানে চলে এসেছে। ভিতরে ডাকব?” সুকুমারকে ইশারায় বারণ করে রুপালি নিজেই ল্যাবের বাইরে এসে দাঁড়াল, ছেলেটাকে আগে কখনো দেখেনি ও, করিডোরের এককোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। রুপালি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ছেলেটা একটা মুখ বন্ধ খাম এগিয়ে ধরল রুপালির সামনে, বিনীতভাবে বলল, “ম্যাডাম, এটা আপনাকে দেওয়ার জন্য এসেছি আমি। আন্টি বলেছেন, আপনি এটা পড়লেই আপনার কাছে সবটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।” রুপালি কিছু বুঝতে পারল না, কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু তোমাকে তো ভাই চিনতে পারলাম না, আর কোন আন্টির কথা বলছ সেটাও বুঝলাম না!” ঝাপু হাতজোড় করে নমস্কারের ভঙ্গিতে বলল, “ম্যাডাম, আপনি আমাকে চিনবেন না, আন্টি বললেন, আপনাকে উনি চেনেন, ওঁর চিঠি পড়লেই আপনি সব বুঝতে পারবেন। এর বেশি আমি কিছুই জানি না।” নমস্কার জানিয়ে চলে গেল ঝাপু। ছন্দা কিছুটা অস্থির হয়েই চিঠি লিখে সব কিছু জানানোর কথা ভেবে রেখেছিল। কিন্তু তার আগে সুমনাকে বলেছিল ব্যাপারটা নিয়ে, পরামর্শ করার মতো লোক আর আছেই-বা কে। সুমনা অত্যন্ত খোলা মনের মেয়ে, সব ব্যাপারেই ওকে বলা যায়। সুমনা নিজেও কম অবাক হয়নি সব কিছু শুনে, ছন্দার জীবনের এই অধ্যায়টা সম্পর্কে জানতে পেরে ওঁর প্রতি শ্রদ্ধা বেড়েছে বই কমেনি। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে সুমনাকে দিয়ে ষ্ট্যাম্প পেপার আনিয়েছে ছন্দা, তাতে নিজের ঘোষণাপত্র লিখে, আলাদা চিঠিতে বিস্তারিত জানিয়ে ঝাপুকে দিয়ে পাঠিয়েছে রুপালির কলেজে, বাড়িতে যাওয়া ঠিক হত না, এমনিতেও রুপালির ফ্ল্যাটের ঠিকানা সঠিক জানে না ছন্দা, ঝাপুকে ভালো করে বুঝিয়ে পাঠিয়েছে, ওর ওপর ভরসা করে ছন্দা, নিষ্পাপ মনে এখনও স্বার্থপরতার ছোঁয়াচ লাগেনি ছেলেটার, ছন্দা একবার বলতেই রাজি হয়ে গিয়েছে ঝাপু, হেসে বলেছে, “এটা কোনো কাজ নাকি, একটা চিঠি দিয়ে আসতে হবে, এই তো! খামটা দাও, আমি কাল সকালেই দিয়ে আসব।” কয়েকদিন ধরেই রুপালির মনমেজাজ বেশ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে, এই নিয়ে কারুর ওপর কোনো ক্ষোভ নেই ওর, কোনো অনুশোচনাও সেভাবে হয়তো নেই, ভালো লাগার যেটুকু উপাদান তা তো তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছে ও, সেই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই ওর মনে। যেটুকু দ্বন্দ্ব তা তো নিজের সঙ্গেই, তাই বোঝাপড়াটাও নিজের সঙ্গেই করতে হবে। তবে ওই আন্টির ব্যাপারটা সারাদিন মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে, কী আছে ওই চিঠিতে কে জানে! অন্যমনস্কতা নিয়ে ক্লাস নেওয়া খুব মুশকিল, প্রিন্সিপালকে শরীর খারাপের কথা বলে শেষের দুটো ক্লাস স্কিপ করেছে রুপালি। কলেজে সবার ভিড়ে খামটা খুলবে না ঠিক করেই নিয়েছিল, পরে সময়মতো খুলে দেখবে কী আছে ওতে।
রাতে সময়মতো খামটা খুলল রুপালি, ছন্দার চিঠি পড়ে চমকে উঠল। রঞ্জনের কু-মতলবের কথা পরিষ্কার করে লিখেছে সন্ধ্যা, যথাসাধ্য খোলসা করে বলেছে হাতিয়ে নেওয়া নথির ব্যাপারে। কিন্তু বাবার অতীতের এই দিকটা আচম্বিতে সামনে এসে পড়ায় চূড়ান্তভাবে আশ্চর্য হল রুপালি। বাবাকে ছোটো থেকে কত নিবিড়ভাবে চিনেছে, জেনেছে কিন্তু সেই জানার মধ্যেও যে কত ফাঁক ছিল তা নতুন করে উপলব্ধি করল ও। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর, মানুষটার প্রতি সম্ভ্রম আরও বেড়ে গেল, সন্ধ্যার বয়ানে শশাঙ্কবাবুর সমস্ত অতীতটা প্রতিভাত হয়ে উঠল ওর সামনে। সন্ধ্যা অকপটে লিখেছে, “হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক ছিল; অত্যন্ত গভীর, যার তল পাওয়া কঠিন কিন্তু সেই সম্পর্ক ছিল নিস্কাম, পবিত্র। উনি গৃহী হয়েও ছিলেন সন্ন্যাসী। স্বাভাবিকভাবেই তোমার কাছে এই ব্যাপারটা খুব ভালো লাগার মতো কোনো বিষয় হতে পারে না জানি কিন্তু তোমার সবটুকু খারাপ লাগা আমার জন্যে রেখো, তোমার বাবার প্রতি তোমার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা যেন অটুট থাকে, এইটুকুই আমার অনুরোধ। এই বয়েসে পৌঁছে সত্যের অপলাপ করার কোনো কারণ বা প্রয়োজন আমার অন্তত নেই, বিশ্বাস করা না-করার অধিকার সম্পূর্ণ তোমার। শেষে বলি, আমি তোমার মা না হলেও মাতৃস্থানীয়া এবং অন্য কারুর মা তো বটে, যদিও মা হিসেবে সন্তানকে মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি বললে ভুল বলা হবে না বোধহয়, তবু মায়ের জাত্যাভিমান থেকে বলি, ভালো থেকো, উন্নীত হোক তোমার জীবন, পরিপূর্ণতায় ভরে উঠুক তোমার আগামী দিনগুলো।” রাত গভীর হল কিন্তু রুপালির ঘুম এল না, নানা কথা ভাবতে ভাবতে জলে ভিজে উঠল দু-চোখের পাতা। ছেলেবেলায় মাকে হারিয়ে ফেলার পর থেকে বাবাই ছিল ওর সব। ভালো খারাপ, ঠিক ভুল-এর মাঝে যে সরু সুতোর ব্যবধান সেটা সারা রাত ধরে হাতড়ে খুঁজে ফিরল রুপালি, সেই খোঁজ অনন্ত কাল ধরে চলতে থাকল, এক রাতের মধ্যেই কত রাত লুকিয়ে থাকে কে জানত!
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
৬
গ্রিন ভ্যালি বারে সময়মতো পৌঁছে গেল রুপালি। জানলার ধার ঘেঁষে টু-সিটার টেবিলের একটা চেয়ার দখল করে বসল শান্তভাবে, ভিতরে ঘূর্ণি ঝড়ের আভাস। ওদের ফ্ল্যাট থেকে জায়গাটা খুব দূরে নয়, অনেক ভেবে স্রেফ রিকশা নিয়ে এসেছে রুপালি। কাচের জানলা দিয়ে বাইরে তাকালে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে নিতাইকে, রাস্তার ওপারের গলির মোড়ের চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে আছে, গলির মুখটা ছেড়ে কোণের দিকে রিকশাটা রেখেছে। রুপালি একশো টাকা দিয়ে রেখেছে নিতাইকে, থাকতে বলেছে, প্রয়োজন হতে পারে। নিতাই এককথায় রাজি হয়েছে, “আমি আছি বউদি, এই বুড়ো হাড়ে এখনও যা জোর আছে তাতে আচ্ছা আচ্ছা তাগড়া লোকেরও ব্যান্ড বাজিয়ে দিতে পারি।” রুপালি সেসব চায় না, লোক জানাজানি হলে হিতে বিপরীত, শুধু একটা সাপোর্ট দরকার বলে নিতাইকে থাকতে বলা। এইসবের মধ্যে সৃজনকে জড়ানো অসম্ভব, বিশেষ করে ফেসবুক চ্যাটের ব্যাপারটা অত্যন্ত গোপন রাখতে হবে নাহলে স্ত্রী হিসেবে সৃজনের সামনে দাঁড়ানোর মুখ থাকবে না। ক্ষণিকের উত্তেজনার বশে নিজেকে অনেকটা নীচে নামিয়ে ফেলেছে, ছোটো করেছে নিজের কাছেই; এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্যেও সময় দরকার। নিতাই-এর কথায় স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিয়েছে রুপালি, “না না সেসব দরকার নেই, প্রয়োজন হলে ডাকব ইশারায়, তুমি জাস্ট পাশে এসে দাঁড়াবে, তাহলেই হবে, বাকিটা আমি সামলে নেব।” ঠিক বারোটার সময় আসার কথা ইরোসের, যেহেতু ও চেনে না ইরোসকে, তাই আগে এসেছে রুপালি। আজকে একটা বোঝাপড়া করেই ফিরবে, দেখা যাক শেষপর্যন্ত কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়! তবে ইরোস যেমন লোক, খুব সন্তর্পণে খেলতে হবে ওর সঙ্গে, আইনগতভাবে যদিও সুবিধা পেলে সেটা রুপালিরই পাওয়ার কথা, কোনো তৃতীয় পক্ষের স্থান সেখানে নেই। ফাঁকা টেবিলে একা একা চুপচাপ বসে থাকা মুশকিল, একটা ব্ল্যাক কফি অর্ডার করল রুপালি, এর মধ্যেই নিশ্চয়ই চলে আসবে। কফিতে চুমুক দিয়ে বাইরের দিকে তাকাল রুপালি, চায়ের দোকানে এখনও বসে রয়েছে নিতাই, বোধহয় একটা বিড়ি ধরিয়েছে। আজকাল নাকি ছেলের ধমক খেয়ে গাঁজা টানা অনেক কমিয়েছে, সন্ধ্যা কথায় কথায় বলছিল একদিন। যদিও বিড়ি টেনে তার থেকে কম ক্ষতির সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না, এত বিজ্ঞাপন, এত প্রচারের পরেও মানুষ কেন যে নেশা করে কে জানে!
“অনেকক্ষণ বসতে হল?” রুপালি বাইরে থেকে মুখ ফিরিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে তাকাল, ডিপ নেভি ব্লু জিন্স আর অফ হোয়াইট ফুল স্লিভ শার্টের ভিতরে ভালোবাসার দেবতা! একঝলক দেখে বেশ সপ্রতিভ আর হ্যান্ডসাম বলেই মনে হয়, তবে শরীরের ওপর নিত্য অযত্নের ছাপ চোখে-মুখে স্পষ্ট। উলটোদিকের চেয়ারে বসার ইঙ্গিত করে রুপালি স্মিত হেসে বলল, “একদম না, আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডের জন্য আমি অনন্তকাল অপেক্ষা করতে পারি।” ছন্দার চিঠি পড়ার পরেই সিউডো রোমান্টিসিসম-এর মায়াময় জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে রুপালি; মনে মনে একটা চিত্রনাট্যর রূপরেখা তৈরি করেই এসেছে এখানে, ভালো কথায় কাজ না হলে ফোঁস করার রাস্তায় যেতে দু-বার ভাববে না ও। কিন্তু বড়ো মাছ খেলিয়ে তুলতে হলে সচেতনভাবে এগোতে হবে, তাড়াহুড়ো করলে পাখি উড়ে যেতে পারে! ইরোস একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকায় খানিকটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল রুপালির, সহজ হওয়ার জন্য আরও দুটো কফি অর্ডার করল রুপালি; এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সপ্রতিভ রাখাটা জরুরি। রুপালির চোখের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে ইরোস ফুট কাটল, “চুল তার কবেকার, অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর…।” খিলখিলিয়ে হেসে উঠল রুপালি, “কিন্তু আমি যে পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে চাইতে পারি না, তবে হ্যাঁ, এটা জিজ্ঞেস করতেই পারি, এতদিন কোথায় ছিলেন।” ইরোস চটপট উত্তর দিল, “এতদিন তোমার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ছিলাম আর এবার…।” বাতুলতা বাড়তে না দিয়ে রুপালি বলল, “থাক, আর কবিতায় কাজ নেই, বাস্তবটা অনেকটা গদ্যের মতো, বাই দা ওয়ে, কী যেন সেদিন বলছিলে তুমি, কী একটা কাগজ, প্রাপ্তিযোগ, একটু পরিষ্কার করে বলো প্লিজ়”, গলায় মাদকতার ছোঁয়া মিশিয়ে বলল রুপালি। “ইয়েস ইয়েস, তোমার বাবা যা রেখে গেছেন সুদে আসলে তা প্রায় লাখ দশেক হবে। আরও এক ভদ্রমহিলা এই টাকার দাবিদার, ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করেছিলেন, বোধহয় পুরোটা হাতিয়ে নেওয়ার মতলব ছিল ওঁর। আমি মাঝে এসে না পড়লে এই টাকার কানাকড়িও তুমি পেতে না।” ঠাণ্ডা গলায় বলল রঞ্জন, “তবে কোনোক্রমে রাজি করিয়েছি তাকে, ওয়ান ফোর্থ পেলেই সে খুশি। আমার হাত দিয়েই নেবে, সামনে আসতে চাইছে না, একদিক থেকে সেটাই ভালো, লোক জানাজানি হোক সেটা কে চায় বলো!”
রুপালি ওর চোখে চোখ রেখে বলল, “ভাগ্যিস তুমি ছিলে ইরোস, নাহলে এতগুলো টাকা স্রেফ হাতিয়ে নিত। তাড়াতাড়ি ব্যাপারটা মিটিয়ে নিতে হবে। তাজ্জব ব্যাপার, আমার বাবা আমার নামে টাকা রেখে গেছেন আর আমি ই জানি না! যাক, দেখি একবার ডকুমেন্টটা।”
কফিতে চুমুক দিল ইরোস, মুচকি হেসে বলল, “সে তুমি দেখতেই পারো তবে সেসব দেখে তুমি কিছু বুঝবে না, এসব ব্যাঙ্কের কাগজপত্র বড্ড জটিল, আমি সব ফিট করেই রেখেছি, আমার ব্যাঙ্ক, আমি ম্যানেজ করে নেব, তুমি শুধু আমার সঙ্গে গিয়ে ম্যানেজারের ঘরে বসে খানকয়েক সই করলেই কাজ শেষ।” রুপালি বেশ খানিকটা বিরক্ত হল কিন্তু ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ঝুলিয়ে বলল, “তা বটে, তুমি যখন আছ চিন্তা কি, আর আমি এসব সত্যি বুঝি না, তবে একবার চোখের দেখা দেখতে চাই, আমার বাবার সইটা তো আছে নীচে, সেটাই আমার কাছে অনেক গো, একটিবার সেটা দেখলেই শান্তি।” এই কথার পর আর আপত্তি চলে না, ফোল্ডার থেকে নথিটা বের করল রঞ্জন, রুপালির হাতে দেওয়ার আগে বলল, “আশা করি তোমার মনে আছে, যা পাবে তার বাকি ওয়ান ফোর্থ আমার, আসলে আমার ওই…”
“আরে একদম, তোমার সেই অরফানেজ-এর বাচ্চাদের জন্য টাকা তো? নিশ্চয়ই দেব, আমার কাছে তো সবটাই পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা।” রঞ্জনকে থামিয়ে বলল রুপালি। হাতে ডকুমেন্টটা নিয়ে ভালো করে পড়ে দেখার সময় চোখে পড়ল, এক নম্বর নমিনি হিসেবে ছন্দা বসু আর দু- নম্বরে রুপালির নাম লেখা আছে। টাকাটা ম্যাচিওর হয়ে গেছে তাও প্রায় বছর দুয়েক। ছন্দা চিঠিতে স্পষ্ট লিখেছে এই ব্যাপারে, কথাগুলো মাথার ভিতর গেঁথে আছে রুপালির, সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা তিন পাতার চিঠিতে নিজের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার করে লিখেছে ছন্দা,
“শশাঙ্কবাবু চিঠিতে যা লিখেছেন তা সহজ করে বলি: উনি রিটায়ারমেন্টের পরে যা পেয়েছিলেন তার একটা সামান্য অংশ আমার নামে ব্যাঙ্কে ডিপোজ়িট করেছিলেন, এবং সেটা সম্পূর্ণ আমার অজান্তেই। আমি জানতে পারলে ওঁকে এই কাজ থেকে বিরত করতাম নিশ্চিত। মারা যাবার মাত্র কিছুদিন আগে একটি চিঠিতে সমস্ত কিছু লিখে ব্যাঙ্কের নথি সমেত আমার কাছে পাঠিয়ে দেন শশাঙ্কবাবু। বাস্তবিক কোনো বাড়তি অর্থের প্রয়োজন আমার ছিল না এবং নিজে রিটায়ার করার পরে যে পরিমাণ অর্থ আমি পেয়েছি তা-ও নেহাত কম নয়। শশাঙ্কবাবু আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, সদ্য স্বামীহারা একজন অসহায় মহিলাকে যে সাহায্য করেছেন তার দাম ওই টাকাপয়সার থেকে বহুগুণ বেশি, তার পরেও এই টাকা উনি আমার নামে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখায় যারপরনাই লজ্জিত হয়েছি, কুণ্ঠা বোধ করেছি তোমাকে জানাতে কারণ তোমার ভুল বোঝার অবকাশ থেকেই যায় স্বাভাবিক কারণে। এই টাকায় যে আমার সামান্যতম অধিকারও নেই সেই বিশ্বাসে আমি অনড় এবং নমিনি হিসেবে তোমার নাম রাখার আগে শশাঙ্কবাবুও নিশ্চয়ই আন্দাজ করে ছিলেন যে এই টাকা আমি ছুঁয়েও দেখব না আর সেক্ষেত্রে এর একমাত্র দাবিদার হিসেবে উনি তোমাকেই ভেবেছেন। আমার উচিত ছিল তোমার সঙ্গে দেখা করে সব কিছু বুঝিয়ে বলা, তোমার জিনিস তোমার হাতেই তুলে দেওয়া, তাহলে হয়তো আজকে এই চিঠি লিখতে হত না আর এই বিড়ম্বনার মধ্যেও পড়তে হত না তোমাকে। এর জন্যে তুমি আমাকে দায়ী করতেই পার আর সে দায় আমি মাথা পেতে নিলাম। আসলে সাহস সঞ্চয় করে তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়ানো সহজ ছিল না। তুমি শিক্ষিত, আর প্রকৃত শিক্ষা মানুষকে উদার করে কিন্তু কোন মেয়ে তার বাবার প্রেমিকার সঙ্গে কথা বলতে চায়, সে অভাগিনী যতই বলুক-না-কেন যে সেই প্রেম ছিল নিস্কাম, নিষ্কলঙ্ক! আমার গুণধর ছেলে সব কিছু হাতিয়ে নিয়েছে তাই বাধ্য হয়েই এই চিঠিতে সব লিখলাম। যেটুকু মনে আছে, ফিক্সড ডিপোজ়িট-এর ম্যাচিওরিটি পিরিয়ড ওভার হয়ে গেছে, এবং নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ আমার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে এই টাকা আমি পুরোটাই তুলে নিতে পারতাম। হয়তো কোনো এক সময়ে তোমাকে সব কিছু জানাতেই হত কিন্তু স্বাভাবিক কুণ্ঠা বোধ থেকেই তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারিনি। এই টাকায় যে আমার কোনো দাবি নেই সেটা এই স্ট্যাম্প পেপারে পরিষ্কার করে লিখে দিয়েছি, নো অবজেকশান হিসেবে আর কিছু লাগবে বলে মনে হয় না, যদি লাগে আমাকে জানিয়ো, সাধ্যমতো থাকব তোমার পাশে। এখন রঞ্জনের হাতে নথি চলে গেছে মানে ও যে-কোনোভাবে টাকা হাতানোর চেষ্টা করবে, তোমার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবে। ওর সমস্ত কথা মিথ্যে বলে জানবে, চিঠির নীচে আমার ফোন নম্বর দিলাম, যদি কোনো প্রয়োজন হয় জানিয়ো, মাতৃস্থানীয়া হিসেবে তোমাকে অনেক আশীর্বাদ করি।”
দু-পাতার কাগজটা নাড়তে নাড়তে রুপালি জিজ্ঞেস করে বসল, “আচ্ছা, এই ছন্দা বসুকে তুমি চেনো?” রঞ্জন আমতা আমতা করে বলল, “না না, আমাদের ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করেছিলেন ভদ্রমহিলা, আমাদের সন্দেহ হয়, আমার নজরে আসতেই তোমাকে জানাই ব্যাপারটা। পুরো জন্ডিস কেস।”
মুখের সামনে চলে আসা ঝুরো চুল গুলো পিছনে সরিয়ে রুপালি জিজ্ঞেস করল, “তাহলে সেই জন্যেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলে ফেসবুকে?”
রঞ্জন চমকে উঠে বলল, “আরে না না, কী যে বলো, আমি সুন্দরের পূজারি, অনেকের মতো তোমার সঙ্গেও ফেসবুকেই আলাপ আর তারপর ভালোলাগা। আসলে মনের মিল তো সবার সঙ্গে হয় না!”
রুপালি হাসল, ডকুমেন্টটা একবার হাতে যখন চলে এসেছে আর কোনো সমস্যা নেই, এবারে ব্যাঙ্কে জমা দিলেই কাজ শেষ। ছন্দার চিঠির কথা মনে পড়ল, ওর কোনো কথা বিশ্বাস করার ব্যাপার নেই। ছন্দার চিঠি পড়ে কখনও মনে হয়নি যে রঞ্জন ব্যাঙ্কে চাকরি করে, আর অরফানেজের গল্পটা যে সম্পূর্ণ মিথ্যে তাতে সন্দেহ নেই। বেলা গড়াতেই বারে লোকের আনাগোনা বাড়ছে আস্তে আস্তে, এখানে বেশি সময় নষ্ট করার মানে হয় না। রুপালি ব্যাঙ্কের কাগজটা চটপট হাত ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে উঠে পড়ল, রঞ্জন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সোজা বার থেকে বেরিয়ে বড়ো রাস্তার ওপর এসে দাঁড়াল। রঞ্জন অসহিষ্ণু হয়ে জিজ্ঞেস করল, “আরে কোথায় চললে? আমার সঙ্গে না গেলে ব্যাঙ্কে কোনো কাজ হবে না, ওই মহিলার ব্যাপারটা ম্যানেজ করতে হবে তো না কি! ওর টাকাটা আমার হাতে দিতে হবে তো কথামতো! আমার অরফানেজের টাকাটা নাহয়…”
রুপালি ঘাড় ঘোরাল, বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “তাই নাকি? মিঃ রঞ্জন, নিজের মাকে তাহলে ওয়ান ফোর্থ দিচ্ছেন? আর কত নীচে নামবেন? এখনই আমার পিছন ছাড়ুন নাহলে ওই যে দেখছেন, প্রস্তুত হয়েই এসেছি আমি, আরও লোক আছে সঙ্গে, পুলিশেও বলা আছে সবটা, একটা ইশারায়…”, নিতাইয়ের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত করল রুপালি। ইশারামতো নিতাই ততক্ষণে রাস্তা পেরিয়ে এসে রুপালির পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছে। প্রমাদ গুনল রঞ্জন, সব খেলা যে এভাবে ভেস্তে যাবে আন্দাজ করতে পারেনি ঘুণাক্ষরেও। বামাল ধরা পরে যাওয়ার পর সিঁধেল চোরের যে অবস্থা হয়, তেমনই হোল রঞ্জনের, মানে মানে কেটে পড়ার আগে শেষ বারের মতো কিছু বলতে যেতেই রুপালি কঠিন গলায় হুঁশিয়ারি দিল, “চলে যান চুপচাপ, কোনো বেচাল করার চেষ্টা করলে ফল ভুগতে হবে।” কথা না বাড়িয়ে হাঁটা দিল রঞ্জন, নিতাইকে আগে থেকেই বলা ছিল, একটা মিটার ট্যাক্সি ধরে দিতেই উঠে পড়ল রুপালি। অনেক হালকা লাগছে আজ, একটা ভূত ঘাড় থেকে নেমেছে এতদিন পর, মোবাইলটা বের করল রুপালি, সবার আগে ছদ্মবেশী রঞ্জনকে আনফ্রেন্ড করতে হবে তারপর ওর প্রোফাইল লক করতে হবে, মোবাইলের টাচ স্ক্রিনে আঙুল ছোঁয়াল রুপালি।
সৃজন নিজেই প্রস্তাবটা দিয়েছিল দিন দুয়েক আগে, রুপালির কাছেও ব্যাপারটা গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও যে ছেলেটা দৃষ্টান্তমূলক কিছু করতে পেরেছে সেটা একবাক্যে সবাই মানতে বাধ্য। পাড়ার ক্লাব থেকেও সানিকে সম্বর্ধনা দেবে বলেছে, সন্ধ্যা সবটা বুঝে উঠতে পারেনি, কিন্তু এটুকু বুঝেছে যে ছেলে সাংঘাতিক একটা কিছু ঘটিয়েছে। সানির স্কুলেও গতকাল ছুটি দিয়ে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ, ধরণী সেন বয়েস স্কুলের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ছেলে ডাক্তারিতে চান্স পেল। রুপালি মেয়েকে নিয়ে কিছুটা আশা-নিরাশার দোলাচলে ছিল কিন্তু তৃণা যে এতটা হতাশ করবে সেটা ভাবেনি ও। ওর বন্ধুদের মধ্যেও কেউই তেমন কিছু করতে পারেনি। সন্ধ্যা আর নিতাই গত পরশু এসেছিল সানিকে নিয়ে, সৃজন আর রুপালির কাছে আশীর্বাদ চাইতে। রুপালি আশীর্বাদ করায় বিশ্বাস করে না কিন্তু মন থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে সানিকে, “তুমি সত্যি আমাদের গর্বিত করেছ, অনেক বড়ো হও তুমি, মানুষের পাশে থেকো সবসময়।”, মন থেকেই বলেছে কথাগুলো।
গত কয়েকদিন ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করে পুরো ব্যাপারটা সামলে নিয়েছে রুপালি, ফিক্সড ডিপোজ়িট থেকে নিজের একাউন্টে নির্বিঘ্নে পুরো টাকাটা ট্র্যান্সফার করে দিয়েছে ব্যাঙ্ক। হঠাৎ করে টাকা পাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে সৃজনকে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলেছে রুপালি, “ব্যাঙ্কের তরফ থেকে যোগাযোগ না করলে জানতেই পারতাম না যে বাবা এতগুলো টাকা রেখে গেছেন মেয়ের নামে। জাগতিক ব্যাপারে উনি সারাজীবনই নির্লিপ্ত ছিলেন, গৃহে থেকেও যেন সন্ন্যাসী! “সৃজন শুধু বলেছে, “তোমার টাকা, তুমি যেমনভাবে চাইবে খরচা করবে, এতে আমার সম্মতি বা মতামতের কোনো জায়গা নেই।” রুপালি বারেবারে সৃজনের কাছে পরামর্শ চেয়েছিল, “এতগুলো টাকা, কিছুটা যদি কোনো ভালো কাজে ব্যবহার করা যায়, ভেবে দেখো!”
“নিতাই-এর ছেলেটা এত ভালো রেজাল্ট করল, ওই পরিবেশ থেকে একটা ছেলের উঠে আসা মানে, জাস্ট কমেন্ডেবেল, এদিকে বাবা-মায়ের পড়ানোর সংগতি নেই, ওকে কিছু সাহায্য করতে পারো। এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে!” সৃজনের উদারতায় মুগ্ধ হয়েছে রুপালি, একটুও আদিখ্যেতা মনে হয়নি। নিতাই আর সন্ধ্যাকে বিকেলের দিকে আসতে বলেছে রুপালি, সামনাসামনি কথা বলবে, সানিকেও থাকতে বলেছে। দু-লাখ টাকার চেক লিখেই রেখেছে রুপালি, মেডিকেলে ভরতির যাবতীয় খরচ এতে হয়ে যাবে আশা করা যায়, যেটুকু বাঁচবে তাতে কিছু বইপত্রও হয়ে হয়ে যাবে নিশ্চয়ই। নিতাইকেও কিছু দেবে ঠিক করে রেখেছে, কথায় কথায় একদিন বলেছিল, “কিছু টাকা পেলে ই-রিকশা নেবে, আজকাল আর রিকশায় ওঠে না কেউ”। সানি ছেলেটা বেশ সংবেদনশীল মনে হয়, কিছু ভেবে না বসে সেই আশঙ্কা একটা আছে বটে, তবে রুপালি বুঝিয়ে বলবে যা বলার, এটা তো ব্যক্তি বিশেষকে সাহায্য নয়, এটা সমাজের জন্য ইনভেস্টমেন্ট, সু-নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন মাত্র। ওরা চলে গেলে বেরোবে রুপালি, সৃজনকে নিয়ে, অনেকদিন পর, দু-জনে বাইরে ঘুরে ডিনার করে ফিরবে রাত করে। তৃণা, ঋতু আর দোলা শান্তিনিকেতন গেছে, ঋতুর মামারবাড়ি প্রান্তিকে, দু-দিন কাটিয়ে ফিরবে। রুপালির মনে আজ আর কোনো মেঘ নেই, দমকা হাওয়ার আভাস নেই, আছে শুধু জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধতা।
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন