সিটং দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াং মহকুমার অন্তর্গত একটি লেপচা গ্রাম। ছবির মত সুন্দর সাজানো, পরিচ্ছন্ন, শান্ত নিরিবিলি একটি ছোট জনপদ। বাড়ির সংখ্যাও কম। সিটং-এর উচ্চতা ৪০০০ ফুটের কাছাকাছি। সিটং থেকে তাকদা/তিনচুলে হয়ে লামাহাট্টা ইকো পার্ক/দার্জিলিং- রঙ্গময় উত্তরবঙ্গের এক রঙিন ভ্রমণ...
উত্তরবঙ্গের সিটং-এ বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। ফলে যা হয়, কোন ট্রেনে টিকিট নাই। অনলাইনে প্রতিটি ট্রেনে ওয়েটিং লিস্টের লম্বা লাইন। কনফার্ম হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। একজন শুভানুধ্যায়ীর কথামত যাদবপুর স্টেশনের কাউন্টারে চলে গেলাম। কাউন্টারে ভদ্রলোকের ব্যবহার খুব ভালো। উনি বললেন, “একটু বেশি দাম দিয়ে এন জি পি থেকে দূরের কোন স্টেশনের টিকিট করে দিচ্ছি, তাতে কনফার্ম হওয়ার চান্স বেশি থাকে।” অগত্যা রাজি হলাম। পদাতিক এক্সপ্রেসে শিয়ালদা থেকে মাথাভাঙা পর্যন্ত চারটি টিকিট কাটলাম। আমি, আমার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে। ওয়েটিং লিস্ট ২৯, ৩০, ৩১, ৩২। ২৬-শে ডিসেম্বর ২০২৩ যখন ট্রেনে উঠলাম তখন দুটি টিকিট কনফার্ম এবং দুটি টিকিট আর এ সি। যাই হোক একটু কষ্ট করে রাত কাটিয়ে পরের দিন ২৭-শে ডিসেম্বর সকাল ১০:৩০-এ নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছালাম। আগে থেকে গাড়ি বলা ছিল। ড্রাইভারের সাথে যোগাযোগ করে আমরা রওনা দিলাম সিটং-এর উদ্দেশ্যে। এন. জে. পি-তে বেশ ভালোই গরম ছিল। শীতের পোশাক ব্যাগের মধ্যে রেখে দিলাম। পরিষ্কার ঝকঝকে মসৃণ রাস্তা, দু’দিকে সবুজ জঙ্গল। ঘণ্টাখানেক যাওয়ার পর সবাই ঠান্ডার রেশ অনুভব করতে লাগলাম। সমতল ছেড়ে পাহাড়ের দিকে এগোতেই ঠান্ডার পরিমাণ বাড়তে শুরু করল। আমরা হাল্কা শীতের পোশাক পরে নিলাম।
কেতাব-ই'র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন manuscript.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
সিটং
সিটং যাওয়ার পথটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা, রাস্তার বেশিরভাগ ঝাউ গাছে আচ্ছাদিত। চড়াই উৎরাই পার হয়ে সিটং পৌছতে প্রায় দু’ঘণ্টা লেগে গেল। মাঝে মাঝে রাস্তা খুব খারাপ। ড্রাইভার খুব সাবধানে গাড়ি চালাচ্ছিল। সিটং দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াং মহকুমার অন্তর্গত একটি লেপচা গ্রাম। ছবির মত সুন্দর সাজানো, পরিচ্ছন্ন, শান্ত নিরিবিলি একটি ছোট জনপদ। বাড়ির সংখ্যাও কম। সিটং-এর উচ্চতা ৪০০০ ফুটের কাছাকাছি। শীতকাল মানেই কমলালেবু, আর এই সময় সিটং ভরে ওঠে কমলালেবুর অপরূপ শোভায়। দার্জিলিং-এর কমলালেবুর সিংহভাগই উৎপন্ন হয় সিটং-এ। আমাদের প্রথম টার্গেট ছিল কমলালেবুর বাগান।
চড়াই উৎরাই পাহাড়ি পথে যেতে যেতে মাঝেমাঝেই কমলালেবু গাছ দেখতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু তাতে ঠিক মন ভরছিল না। আমাদের গাড়ি এসে থামল একটি কমলালেবু বাগানের কাছে। নেটের জাল দিয়ে বেশ কিছুটা জমি ঘেরা রয়েছে। ভিতরে সারি সারি কমলালেবুর গাছ। এই বাগানে প্রবেশ মূল্য ছিল জনপ্রতি ৫০ টাকা। ভেতরে ঢুকে চোখ জুড়িয়ে গেল। কমলা রঙের থোকা থোকা লেবু গাছে ঝুলছে। হাত দেওয়া বারণ। আকারে খুব বড় না হলেও সুন্দর দেখাচ্ছিল। আমরা কমলালেবু হাত দিয়ে ধরে ছবি তুললাম। মনটা খুশিতে ভরে গেল। বুঝতে পারলাম কেন সিটংকে কমলালেবুর দেশ বলে।
কমলালেবুর বাগান থেকে বেরিয়ে আমরা রওনা দিলাম আমাদের পরের গন্তব্য ‘অহলধারা ভিউ পয়েন্ট’। আঁকাবাঁকা পথ ধরে কিছুটা যেতেই পৌঁছে গেলাম ‘অহলধারা ভিউ পয়েন্ট’। এখানে গাড়ির পার্কিং ফি ৫০ টাকা। গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে একটু উপরে উঠে গেলাম। উপরে উঠেই অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভা দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। চারিদিক নানা উচ্চতার পাহাড় দিয়ে ঘেরা। ৩৬০ ডিগ্রি প্যানোরামিক দৃশ্য। পাহাড়ের মাথার উপর সাদা মেঘের আস্তরণ। মেঘলা আকাশ, চারিদিক কুয়াশায় ঘেরা। নীচে রিয়াং নদী আপন মনে বয়ে চলেছে। প্রাণ ভরে নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম। সিটং গ্রাম থেকে অহলধারার দূরত্ব প্রায় ৩০ কি. মি.। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে এখান থেকে পরিষ্কার কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখা যায়। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার জন্য এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সৌভাগ্য আমাদের হোল না। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত এখান থেকে খুব সুন্দর দেখা যায় বলে শুনেছিলাম। নীচে পাহাড়ের খাঁজে অনেক হোমস্টে গড়ে উঠেছে। অনেকে এখানে এই নিরিবিলি পরিবেশে থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে প্রাণ ভরে উপভোগ করেন।
এখান থেকে একটু পেছনের দিকে এসে ডানদিকে কিছুটা রাস্তা যেতেই পৌঁছে গেলাম ‘নামথিং পোখরি লেক’। সামনে হনুমানজির বিশাল মূর্তি। সেলপু পর্বতে অবস্থিত এটি একটি প্রাচীন জলাশয়। বছরে ৬ মাস শুকনো থাকে। বর্ষাকালে জলে ভরে যায়। তখন এই লেক দেখতে খুব সুন্দর লাগে। শীতকালে জল ছিল না। লেকের চারপাশে পাইনের ঘন জঙ্গল। আমাদের গাড়ি লেকের পাশের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলল আমাদের পরবর্তী গন্তব্য সিটং মনেস্টির দিকে।
আপার সিটং-এ শতাব্দী প্রাচীন (প্রায় দু’শো বছরের পুরানো) এক বৌদ্ধ গুম্ফা আর একটি প্রাচীন গির্জা কোন এক অজানা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। শোনা যায় প্রথমে এই গুম্ফা বাঁশ আর কাদা-মাটি দিয়ে তৈরি হয়েছিল। পরবর্তীকালে সিমেন্ট দিয়ে পাকা করা হয়। তবে স্থাপত্যে পুরানো আঙ্গিক বজায় রাখায় প্রাচীন রূপটি কাক্ষিত হয়েছে। এখান থেকে উপরের দিকে তাকাতেই দেখলাম পাহাড়ের বেশ কিছুটা উঁচুতে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো নীল রঙের ‘I LOVE SITTONG’ লেখাটি। ঢালু রাস্তা দিয়ে উপরে উঠে এই লেখার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম।
বেলা অনেক হয়েছে, প্রায় দু’টো। খিদের চোটে পেটে ছুঁচো ডন মারছে। আর দেরি না করে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলল সিটং-এ আগে থেকে বুক করে রাখা হোমস্টের দিকে। এখানে কোন হোটেল নেই। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে প্রচুর হোমস্টে আছে। এই হোমস্টেগুলির আতিথেয়তা অস্বাভাবিক রকমের ভালো। হোমস্টের রুমে আমাদের লাগেজ রেখে হাত পা ধুয়ে একটু বিশ্রামের পর খাওয়ার ডাক পড়ল। ভাত, ডাল, সবজি, চিকেন, পাঁপড়, চাটনি দিয়ে পেট পুরে খাওয়াদাওয়া করে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লাম। আগের রাতে ট্রেনে ভালো ঘুম হয়নি, তারপর সকাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি, খুব ক্লান্ত লাগছিল। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল। ঘণ্টা দুয়েক পরে ঘুম ভেঙে উঠে দেখি অন্ধকার নেমে এসেছে। হোমস্টের ছাদে উঠে বসলাম। ঠান্ডা বেশ ভালোই লাগছে। দিনের বেলা পাহাড়ের ধাপে ধাপে যে বাড়িগুলো দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল সাজানো দেশলাই বাক্সের মত, রাতে সেইসব বাড়িতে আলো জ্বলে উঠেছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে যেন হাজার জোনাকি ফুটে উঠেছে।
রাতে এখানে ঠান্ডা খুব বেশি। সিটং-এর চারপাশে অনেকটা খোলা উপত্যকা। উত্তরের হিমেল বাতাস হু হু করে বইছে। নীচে রুমে নেমে এলাম। কফি আর ভেজ পকোড়া দিয়ে টিফিন সারলাম। গায়ে কম্বল জড়িয়ে ঘরের মধ্যে বসে আছি। সারা উপত্যকা মায়াবী জ্যোৎস্নায় মাখামাখি। বন্ধ জানালার ফাঁকফোঁকর দিয়ে সেই আলো যেন চুইয়ে ঘরের মধ্যে পড়ছে। এখানে বেশি রাত পর্যন্ত কেউ জাগে না। একটু তাড়াতাড়ি সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ৯টার সময় লাঞ্চের জন্য আমাদের ডাক পড়ল। রুটি, ডিমের কারি সহযোগে লাঞ্চ সেরে ১০টার মধ্যে শুয়ে পড়লাম। সারাদিনের ক্লান্তি, কিছুক্ষণের মধ্যে গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন হলাম।
কোথা দিয়ে রাত কেটে গেল বুঝতে পারলাম না। আমার সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস। বিছানা ছেড়ে উঠে হাত মুখ ধুয়ে ছেলে মেয়েকে ঘুম থেকে তুললাম। সবাই রেডি হয়ে হোমস্টের পাশাপাশি এলাকাগুলি ঘুরে দেখতে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে ডানদিক ধরে এগিয়ে চললাম। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বাড়ি দেখতে পেলাম। এখানে মুলত লেপচাদের বাস। পাহাড়ি রাস্তার ঢাল বেয়ে মেঘ কুয়াশার খেলা। কিছূটা দূরে একটি স্কুল দেখতে পেলাম। সারা এলাকা জুড়ে নানা বাহারি ফুলের গাছ।
যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে পাইনের ঘন জঙ্গল। প্রতিটি বাড়ি, হোমস্টে বেশ সাজানো গোছানো, কেয়ারি করা ফুল এবং টবে ঝোলানো নান ধরণের অর্কিড। চারিদিকে নয়নাভিরাম পরিবেশ। প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠোনে কমলালেবু, বাতাবিলেবুর গাছ। পাহাড়ের গায়ে নির্মীয়মাণ অনেক বাড়ি দেখতে পেলাম। ডানদিক থেকে ফিরে বাঁদিকে চলে গেলাম। একটু এগিয়ে একটি ছোট ঝর্ণা দেখতে পেলাম। গতকাল রাতে হোমস্টে থেকে এই ঝর্ণার জলের শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। পাহাড়ের উপর থেকে ঝিরঝির করে জল গড়িয়ে পড়ছে। এই এলাকার অধিবাসীদের ব্যবহারের জন্য জলের উৎস হল এইসব পাহাড়ি ঝর্ণা। সামনে দেখতে পেলাম কিভাবে পাহাড়ের ঢালে পাথর কেটে বাড়ি তৈরি হচ্ছে। সরু বাঁশ গাছের জঙ্গল। অজানা নানা গাছের সারি, সিঙ্কোনা গাছের বাগান। ছবির মত সুন্দর, সাজানো-গোছানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এখানকার গ্রামগুলো। মায়াবি প্রকৃতি যেন হাতছানি দিয়ে ডাক দেয় পাহাড়ের কোলে। এলাকা ঘুরে মধুর স্মৃতি নিয়ে হোমস্টেতে ফিরে এলাম। ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ব তিনচুলে হয়ে তাকদার দিকে।
তাকদা/তিনচুলে
সিটং হোমস্টে থেকে বেরিয়ে আমাদের গাড়ি আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে ছুটে চলল যোগীঘাট সেতুর দিকে। সিটং থেকে প্রায় ২০ কি.মি. দূরে রিয়াং নদীর উপর এই সেতু সিটং ও মংপুকে যুক্ত করেছে। এটি স্টীল দিয়ে বানানো সেতু। এর পাশে ভগ্নপ্রায় অতি প্রাচীন একটি কাঠের সেতু আছে। সেতুর চারিদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার মত। চারিদিক সবুজ পাহাড় দিয়ে ঘেরা। সেতুর নীচে ছোট, বড় পাথরের টুকরো; আর সেই পাথরের ফাঁক দিয়ে ঝিরঝির করে বয়ে চলেছে রিয়াং নদী। আমরা বেশ কিছুটা সময় এখানে কাটালাম। পাথরের টুকরোর উপর বসে, দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। এরপর আমরা রওনা দিলাম মংপুর দিকে।
এখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বাংলো আছে। এই বাংলোতে কবি গ্রীষ্মকালে মাঝেমধ্যে আসতেন। এটি এখন ‘রবীন্দ্র ভবন’ নামে হেরিটেজে পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সালে এখানে একটি সংগ্রহশালা ও জাদুঘর স্থাপিত হয়েছে। ভবনের সামনে একটি সুদৃশ্য গাছবাড়ি আছে। সামনে বাঁদিকে কবিগুরুর একটি আবক্ষ মূর্তি আছে। আমরা যেদিন গিয়েছিলাম ঐদিন ছিল বৃহস্পতিবার। ভবন ঐদিন বন্ধ থাকে। তাই আমরা ভেতরে ঢুকতে পারিনি। বাইরে থেকে ছবি তুলে আমরা বেরিয়ে পড়ি আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ‘লাভার্স ভিউ পয়েন্ট’-এ।
ওখানে পৌঁছে দেখলাম বেশ ভিড়। অনেক খাবারের দোকান আছে। আমরা এখানে টিফিন করে নিলাম। সামনে একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলাম লোহার রেলিং দিয়ে বেশ কিছুটা জায়গা ঘেরা আছে। সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত। নীচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দুদিকে সবুজ স্বপ্নিল পাহাড়। মাঝখান দিয়ে রিয়াং নদী উচ্ছ্বল কিশোরীর মত খিলখিল করে হাসতে হাসতে এগিয়ে চলেছে। বুঝতে পারলাম কেন এটিকে লাভার্স ভিউ পয়েন্ট বলা হয়। কিছু ছবি তুললাম। সেলফিও নিলাম। গাড়ি এগিয়ে চলল পেশক চা বাগানের দিকে।
বেশ কিছুটা চড়াই উৎরাই রাস্তা পার হয়ে পৌঁছে গেলাম পেশক চা বাগানে। চারিদিক খোলামেলা, শান্ত নির্জন পরিবেশ। কয়েকটা খাবারের দোকান আছে। সামনে টিলার মত উঁচু জায়গা, নীচের দিকে অনেকটা সমতল ভূমি। পুরোটা চা গাছে ভর্তি। উল্টোদিকে প্রাচীরের মত পাহাড়ের সারি। সামনের একটি দোকানে পাহাড়ি মেয়েদের রঙিন পোশাক, গয়না, বেতের ঝুড়ি ভাড়ায় পাওয়া যাচ্ছে। জনপ্রতি ১০০ টাকা। অনেকেই এই পোশাক পরে ছবি তুলছে। আমার মেয়ে ও স্ত্রী দু’জনে পাহাড়ি পোশাক, গয়নায় নিজেদের সাজিয়ে নিল। বেতের ঝুড়ি মাথা থেকে পিঠের দিকে ঝুলিয়ে নিল। চা বাগানের মধ্যে নানা কায়দায় অনেক ছবি তুলল। এরপর চা ও বিস্কুট খেয়ে আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম।
এখন আমরা যাব গুরুদোম্বার ভিউ পয়েন্ট। এর জন্য আমাদের আরো উপরের দিকে উঠতে হবে। পাহাড়ের কোল ঘেঁসে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাস্তা সাপের মত এঁকেবেঁকে উপরের দিকে উঠে গেছে। আমাদের গাড়ি সেই রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছে আর আমরা জানালার ফাঁক দিয়ে চারিদিকের সৌন্দর্যকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছি। গুরুদোম্বার ভিউ পয়েন্ট পাহাড়ের একেবারে উপরে বেশ কিছুটা সমতল জায়গা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে চা গাছের জঙ্গল। এখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি প্যানোরামিক দৃশ্য দেখা যায়। যেদিকে চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। ঘন কুয়াশায় ঢাকা। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। আকাশ মেঘলা থাকার জন্য কিছুই দেখা গেল না। তবে কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ের দৃশ্যও বেশ নয়নাভিরাম। বেলা অনেক হয়েছে। লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। আমাদের আজকের মত ঘোরা শেষ। এবার আমরা তিলচুলে হয়ে তাকদা যাব। ওখানে আগে থেকে হোমস্টে বুক করা আছে।
তাকদায় আমাদের হোমস্টেটি ছিল খুব নির্জন জায়গায়। রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে। ঘন পাইনের জঙ্গল। দিনের বেলাতেও চারিদিকে আবছা অন্ধকার। গা ছমছম নিঝুম, নিস্তব্ধ পরিবেশ। একা বাইরে বেরোতে ভয় লাগবে। হোমস্টেতে পৌঁছে তাড়াতাড়ি লাঞ্চ করে নিলাম। হোমস্টেটি বেশ বড়। রুমগুলি সাইজে বেশ বড়। বাথরুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আতিথেয়তা খুবই সুন্দর। অসুবিধা বলতে কাছাকাছি কোথাও যেতে ভয় করবে। শুনেছিলাম এখানে একটি বড় অর্কিড হাউস আছে। কথা বলে জানলাম ওটি এখন বন্ধ আছে। হোমস্টে-র মালিকের নিজস্ব কমলালেবুর বাগান আছে। তাছাড়া একটি ছোট অর্কিড হাউস আছে। এনারা অর্কিড চারা চাষ করে বিক্রি করেন। আমরা বিকেলে কমলালেবুর বাগান ও অর্কিড হাউস ঘুরে দেখলাম। সামনে একটি হাইস্কুল আছে। ঐসময় বন্ধ ছিল। অন্ধকার হতেই হোমস্টের সব আলো জ্বেলে দেওয়া হোল। রঙিন আলোয় হোমস্টে খুব সুন্দর লাগছিল। ঠান্ডা বাতাস বইছিল। আমরা বারান্দায় বসে চা আর পকোড়া দিয়ে টিফিন করলাম। রাতে ভালো ঘুম হয়েছিল। সকালে উঠতে একটু দেরি হয়ে গেল। ঘরের ভিতরে সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে গরম জলে ভালো করে স্নান করলাম। আগের দিন স্নান হয়নি। ব্রেকফাস্ট করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। হোমস্টের পক্ষ থেকে আমাদের উত্তরীয় পরিয়ে বিদায় সম্বর্ধনা জানানো হোল।
লামাহাট্টা ইকো পার্ক/দার্জিলিং
তাকদা থেকে আমরা চললাম লামাহাট্টার দিকে। আজ আকাশ খুব পরিষ্কার। আমাদের ড্রাইভার জানালো আজ রাস্তায় যেতে যেতে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবেন। কথাটা শুনে মন আনন্দে ভরে উঠল। তাকদা, তিনচুলে পেরিয়ে ঘণ্টাখানেক পথ চলার পর রাস্তার একটি বাঁকে এসে গাড়ি দাঁড়াল। ড্রাইভার আঙুল তুলে সামনের দিকে ইশারা করল। তাকিয়ে দেখি সামনে পাহাড়ের রানি শ্বেতশুভ্র
কাঞ্চনজঙ্ঘা! তাড়াতাড়ি গাড়ির দরজা খুলে নীচে নেমে গেলাম। চারিদিকে মেঘমুক্ত রৌদ্রোজ্জ্বল নীল আকাশ, সামনে কাঞ্চনজঙ্ঘার স্লিপিং বুদ্ধার ফুল রেঞ্জ। কাঞ্চনজঙ্ঘার আশপাশের ছোট শৃঙ্গ গুলিও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। মনের আশ মিটিয়ে এই নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করলাম। তিনচুলে আসা সার্থক মনে হোল। প্রচুর ছবি তুললাম। ধীরে ধীরে গাড়ি লামাহাট্টার দিকে এগোতে থাকল। আমাদের সঙ্গী হয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘাও যেন এগিয়ে চলেছে। আমরা সেদিকে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে আছি। ড্রাইভারের ডাকে ঘোর কাটল, “আমরা লামাহাট্টা পৌঁছে গেছি”।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা একটি ছোট গ্রাম ‘লামাহাট্টা’। মেঘ পাহাড়ের কোলে রূপকথার গ্রাম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা প্রায় ৫৭০০ ফুট। মূলত শেরপা, ভুটিয়া, তামাং এবং পাহাড়ি জাতির লোকেদের নিয়ে এই গ্রামটি গড়ে উঠেছে। লামা শব্দের অর্থ হল বৌদ্ধ ভিক্ষু আর হাট্টা কথাটির অর্থ হল বাসস্থান। ভারত সরকার তিব্বতিয় লামাদের বসবাসের জন্য এই জায়গাটি নির্বাচন করেছিলেন। সেখান থেকেই জায়গাটির নাম হয়েছে ‘লামাহাট্টা’। এই গ্রামের মূল আকর্ষণ হোল লামাহাট্টা ইকো পার্ক যেটি ২০১৮ সালে উদ্বোধন করা হয়। পাহাড়ের ঢালে চারিদিকে পাইন ও ধুপি গাছে ঘেরা সুন্দর মনোরম একটি পার্ক। এই পার্কের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। একদিকে বিশাল বিশাল খাড়া পাইনের ঘন জঙ্গল আর অন্যদিকে খাড়া নেমে গিয়েছে গভীর খাদ। পার্ক থেকে সামনের রাস্তার দিকে তাকাতে মেঘমুক্ত খোলা আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখতে পেলাম। নীচের দিকে বিভিন্ন রঙের ফুল ও অর্কিডের বাগান। নানা রঙের প্রজাপতি ফুলের উপর ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাইনের ঘন জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলোর বিচ্ছুরণ এক মায়াবী পরিবেশ তৈরি করেছে। নানা রঙ বেরঙের পতাকা দিয়ে পার্কটি সাজানো। পার্কের উপরের দিকে দুটি হ্রদ আছে। কাউকে যেতে দেখলাম না। জানতে পারলাম জায়গাটা খুব নির্জন। জনমানবহীন গা ছমছমে পরিবেশ। সাহস করে আর গেলাম না। পার্কের নীচে রাস্তার ধারে অনেক খাবারের দোকান। একটি দোকান থেকে মোমো আর চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম দার্জিলিং-এর উদ্দেশ্যে।
রাস্তায় এত জ্যাম ছিল যে এটুকু রাস্তা যেতেই কয়েকঘণ্টা লেগে গেল। এই সময় দার্জিলিং-এ প্রচুর ভিড় হয়। টাইগার হিল যাওয়ার রাস্তার মোড়ে বহুক্ষণ গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। খিদেও পাচ্ছিল। তাই ঠিক করলাম আজ আর কোথাও ঘুরতে যাব না। ড্রাইভার বলল, “আজ ঘুম মনেস্ট্রি দেখে নিন, কাল বাকি জায়গা ঘুরে দেখবেন।” ঘুম স্টেশনের কাছে এই মনেস্ট্রি। ঘুম ভারতের সর্বোচ্চ (প্রায় ৭৪০৭ ফুট) রেলওয়ে স্টেশন। মূল শহর থেকে ৭ কি. মি. দূরে। এই স্টেশন থেকে ৭০০ মিটার উঁচুতে ঘুম মনেস্ট্রি। এর আসল নাম ইগা চেত্তলিং মনেস্ট্রি। এই মনেস্ট্রিতে প্রায় ১৫ ফুট লম্বা বিশাল এবং সুন্দর একটি বৌদ্ধ মৈত্রেয় মূর্তি রয়েছে। ১৮৭৫ সালে লামা শৈরাব গ্যাটস এই মঠটি নির্মাণ করেন। ঘুম মনেস্ট্রি দেখার পর আমরা ম্যালের কাছে ফিরে এলাম। ম্যালের ভিতরে গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাই একটু দূরে গোর্খা রঙ্গ মঞ্চের সামনে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। ম্যালে ঢুকে বাঁদিকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে একটু এগিয়ে আমাদের হোটেল বুক করা ছিল। হোটেলে পৌঁছে মুখ হাত পা ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। লাঞ্চ সেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। বিকেলের দিকে সি.আর.দাশ রোড ধরে হেঁটে চলে গেলাম দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের বাড়ি। বহু পুরানো জীর্ণ শীর্ণ বাড়ি। দেখাশোনা করার মত কাউকে দেখলাম না। অদ্ভূত লাগল, এরকম একটা বাড়িতে তদারকি করার মত কেউ নেই। কত মূল্যবান জিনিসপত্র অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। ১৬-ই জুন ১৯২৫ সালে এই বাড়িতেই দেশবন্ধু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২০০৭ সালের ৫-ই নভেম্বর এই বাড়িটিতে একটি সংগ্রহশালার উদ্বোধন করা হয়। দেশবন্ধুর ব্যবহার্য জিনিসপত্র, মূল্যবান ছবি এই সংগ্রহশালায় স্থান পায়। অবহেলা, ঔদাসীন্য এবং তদারকির অভাবে এগুলি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ওখান থেকে ফিরে হোটেলে টিফিন করে সন্ধ্যের দিকে সবাই ম্যালে গিয়ে বসলাম।
কোন পাহাড়ি এলাকার মত দার্জিলিং-এরও নিজস্ব ম্যাল রয়েছে— পাহাড়ের মধ্যে এক টুকরো সমতলভূমি। এটি দার্জিলিং শহরের প্রাণকেন্দ্র। একদিকে সারিবদ্ধ কিছু পুরানো এবং ঐতিহ্যের দোকান এবং অন্যদিক পাইন গাছ দিয়ে ঘেরা। এখানে নেপালী আদি কবি ভানুভক্ত আচার্যের পূর্ণাবয়ব মূর্তি আছে। একদিকে একটি ছোট খোলা মঞ্চ রয়েছে। ম্যালের ডানদিকে মল মার্কেট ছাড়াও বিভিন্ন দোকান আর বাঁদিক রেলিং দিয়ে ঘেরা। বসার জন্য বেঞ্চ পাতা আছে। সোজা সামনে দু’দিকে দু’টো রাস্তা ঢালু হয়ে নেমে গেছে। রাস্তার দু’ধারে রকমারি দোকান। নামকরা খাবারের দোকান-কেভেন্টারস, গ্লেনারিস ডান দিকের রাস্তায় পড়ে। দু’টো দোকানের সামনে বিশাল লাইন। এখন প্রায় সব বাঙালিই দার্জিলিং-এ বেড়াতে এলে এই দু’টো দোকানে ভিড় জমায়। আমার ছেলেমেয়েও লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ল। স্বাধীনতা দিবস ও প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে ম্যালে কুচকাওয়াজ এবং সেনাবাহিনীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসের প্রদর্শনী হয়। শীতকালে সন্ধ্যের সময় তাই ম্যালে খুব ভিড়। চারিদিকে লোক গিজগিজ করছে। পা ফেলার জায়গা নাই। ম্যাল আড্ডা মারার আদর্শ জায়গা। টুকিটাকি জিনিস কেনাকাটা করে রেলিং-এর ধারে বেঞ্চে বসে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। খুব ক্লান্ত লাগছিল। তাড়াতাড়ি ডিনার খেয়ে ঘুমোতে চলে গেলাম।
পরের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে হোটেল থেকে সূর্যোদয় দেখলাম। হাত মুখ ধুয়ে ম্যালে চলে গেলাম। এত সকালে সারা ম্যাল ফাঁকা। দোকানগুলি সব বন্ধ। রাতের সেই ভিড় নেই। কিছু লোক হাঁটাচলা করছে। জনা সাতেক ছেলে বল নিয়ে খেলা করছে। কিছু লোক বিস্কুটের টুকরো ছড়িয়ে দিচ্ছে। পায়রাগুলো মনের আনন্দে খুঁটে খুঁটে সেগুলো খাচ্ছে। এদিক ওদিক কিছু লোক চা খেতে খেতে গল্প করছে। কয়েকজনকে দেখে মনে হল তাঁরা প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছেন। হাল্কা ছোটাছুটি, ব্যায়াম করছেন। কুয়াশার জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে না… হোটেলে ফিরে এলাম। টিফিন করে আমরা বেরিয়ে পড়ব লেপচা জগতের দিকে।
ব্যাগপত্র গুছিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। গাড়ি এসে পৌঁছায়নি। হাতে সময় ছিল তাই ম্যালে একটু বসলাম। কিছু ছবি তুললাম। আস্তে আস্তে হেঁটে গোর্খা রঙ্গমঞ্চ ভবনের দিকে এগিয়ে গেলাম। যেহেতু ম্যালে গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ তাই আমাদের গাড়ি ওখানে আসবে।
রোদ উঠেছে। দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। কাঞ্চনকে সাথে নিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম বাতাসিয়া লুপের দিকে। বাতাসিয়া লুপে ঢোকার প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা। টিকিট কেটে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলাম। তিনদিক খোলা দৃষ্টিনন্দন জায়গা।
একদিকে পাহাড়ের কোলে খাঁজে খাঁজে দেশলাই বাক্সের মত সাজানো বাড়ি। অপরপ্রান্তে দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘার ফুল রেঞ্জ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। এটি দার্জিলিং-এর একটি দর্শনীয় স্থান। চারিদিকে গোল করে টয়ট্রেনের লাইন পাতা আছে। আমরা এখানে থাকাকালীন একটি টয়ট্রেন-কে বাতাসিয়া লুপ ঘুরে ঘুম স্টেশনের দিকে যেতে দেখলাম। লুপের মাঝে একটি শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ খাড়া দাঁড়িয়ে আছে। পাশে ভারতের জাতীয় পতাকা পতপত করে উড়ছে। রেলিং দিয়ে এলাকাটি ঘেরা আছে। রেলিং-এর গায়ে শহিদ বীর জওয়ানদের নামের ফলক লাগানো আছে। সামনে ব্যানারে একটি লেখায় চোখ আটকে গেল।
When you go house
Tell them of us and say,
for your tomorrow…
We gave our today.
এক অব্যক্ত বেদনায় বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। এক অদ্ভুত অনুভূতিতে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে গেল। চোখ বুঝে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। ঠিক পিছনের দিকে কিছু ভ্রমণপ্রেমী তখন নেপালী পোশাক পরে ‘I LOVE DARJEELING’ লেখার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। ধীর পায়ে নীচে নেমে এলাম।
আমাদের গাড়ি ছুটে চলল জাপানিস্ টেম্পল-পিস প্যাগোডার দিকে। এটি একটি বিশালাকার শ্বেতশুভ্র বৌদ্ধ স্থাপত্য। ১৯৭২ সালের ৩-রা নভেম্বর জাপানী বৌদ্ধ ভিক্ষু ‘নিচিডাতসু ফুজি’ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন এবং ১৯৯২ সালের ১-লা নভেম্বর এটির উদ্বোধন হয়েছিল। এই প্যাগোডার উচ্চতা ২৮.৫ মিটার প্রায় ৯৯ ফুট এবং ব্যাস ২৩ মিটার প্রায় ৭৫ ফুট। এখানে মৈত্রেয় বুদ্ধ সহ চারটি বুদ্ধের অবতার রয়েছে। হু হু করে ঠান্ডা বাতাস বইছে। সামনে বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা…
আমরা এগিয়ে চললাম আমাদের আজকের ডেরা লেপচাজগতের দিকে।
লেপচাজগত
চারিদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ছবির মত সুন্দর একটি গ্রাম এই লেপচাজগত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৯০০ ফুট উঁচুতে। দার্জিলিং থেকে মাত্র ১৯ কি.মি. দূরে। হোমস্টেতে আমাদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ি চলে গেল। ড্রাইভারের বাড়ি সামনে সুখিয়াপোখরিতে। কাল সকালে এসে আমাদের নিয়ে বেরোবে। হোটেলের তিনতলায় আমাদের রুমে ব্যাগপত্র রেখে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চের জন্য নীচ তলায় ডাইনিং রুমে এলাম। খাওয়াদাওয়া সেরে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে পায়ে হেঁটে গ্রাম দেখতে বেরোলাম। রাস্তার দু’ধার ওক, পাইন, রডোডেনড্রনের গাছে মোড়া। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। হিমশীতল বাতাস হু হু করে বইছে। এখানে ঠান্ডা খুব বেশি। পাহাড়ের ঢালে একটু উপরে একদল ছেলেমেয়ে ক্যারাটে অনুশীলন করছে। জানতে পারলাম এদের এখানে ট্রেনিং ক্যাম্প চলছে। আমরা সুউচ্চ পাইন গাছের জঙ্গলে কিছু ছবি তুললাম। জঙ্গলের মধ্যে নানা বাহারি ফুল… পাখির কিচিরমিচির শব্দ… সুন্দর পরিবেশ। একটু দূরে রাস্তার উপর দিয়ে মেঘ ভেসে যাচ্ছে… সে এক মনোরম দৃশ্য। সামনে দিয়ে সরু রাস্তা পাহাড়ের উপরের দিকে উঠে গেছে। এই রাস্তা একেবারে পাহাড়ের উপর পর্যন্ত চলে গেছে। ভোরে ওই উঁচু জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং সূর্যোদয় খুব সুন্দর দেখা যায়। কাল ভোরে দেখতে যাব… নীচে নেমে এলাম। সূর্যদেব পশ্চিম গগনে আস্তে আস্তে ঢলে পড়ছেন। মোবাইলে সেই ছবি তুলে রাখলাম। ধীরে ধীরে সন্ধ্যে হয়ে এল। আমরা হোমস্টের পাশের দোকানে টিফিন করে নিলাম। দূরে পাহাড়ের কোলে দার্জিলিং শহরের রাতের আলো জোনাকির মত জ্বলছে। হোমস্টেতে ফিরে এলাম। জঙ্গলের ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ভেসে আসছে। ঘরের মধ্যে লেপমুড়ি দিয়ে বসে মোবাইল ঘেঁটে সারাদিনের তোলা ছবিগুলো দেখতে থাকলাম। নীচ থেকে ডাক এল ডিনারের জন্য। খাবার উপরে তিনতলায় পাঠিয়ে দেবার জন্য অনুরোধ করলাম। ঠান্ডায় নীচে নামতে ইচ্ছে করছিল না। উপরে ডিনার টেবিলে বসে খেয়েদেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে শুতে চলে গেলাম।
পরের দিন ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে পড়লাম সূর্যোদয় দেখতে যাব বলে। চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিশেষ করে পাহাড়ের যে সরু রাস্তা দিয়ে আমরা উপরে উঠব তার কিছু দেখা যাচ্ছে না। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে অতি সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে চললাম। পাশাপাশি আর কোন লোকজন দেখতে পেলাম না… একটু ভয় ভয় করছে। উপরে উঠে দেখতে পেলাম আমাদের আগে আরো পাঁচজন পৌঁছে গেছে। অন্ধকারে কারো মুখ দেখা যাচ্ছে না। সবাই নিজেদের মধ্যে চুপিস্বরে কথা বলছে। সূর্য ওঠার অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। ধীরে ধীরে আরো কয়েকজন এসে হাজির হোল। আস্তে আস্তে মেঘ পরিষ্কার হতে থাকল। আমরা মোবাইল হাতে সামনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ একজন বলে উঠলেন, “উল্টোদিকে সবাই তাকান।” সবাই ঘুরে তাকালাম… আনন্দে সবাই চেঁচিয়ে উঠল। সূর্যোদয় দেখা না গেলেও সূর্যের প্রথম আলোক ছটায় উদ্ভাসিত কাঞ্চনজঙ্ঘা খুশিতে ঝলমল করছে। পুরো স্লিপিং বুদ্ধা রেঞ্জ দেখা যাচ্ছে। আমরা সবাই সেই মুহূর্তটাকে ক্যামেরা বন্দি করতে থাকলাম। তিনচুলেতে কাঞ্চনজঙ্ঘার এক রূপ দেখেছি, আজ আর এক রূপ দেখলাম। এখানে কাঞ্চনজঙ্ঘার রং সোনালি। আকাশ পরিষ্কারের সাথে সাথে কাঞ্চনজঙ্ঘার রং পরিবর্তন হতে থাকল। সে এক অপূর্ব মনোরম দৃশ্যের সাক্ষী থাকলাম। সবাই বলাবলি করতে লাগল, “আজ আমরা খুব লাকি, এ দৃশ্য সবাই দেখতে পায় না।” খুশি মনে হোমস্টেতে ফিরে এলাম। সকালের খাবার খেয়ে লেপচাজগতকে বিদায় জানিয়ে এগিয়ে চললাম জোড় পোখরির দিকে।
লেপচাজগত থেকে কাছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৫০০ ফুট উচ্চতায় শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে একটি সুন্দর জায়গা। দার্জিলিং থেকে দূরত্ব প্রায় ২৩ কি. মি.। খাড়া পাইন গাছের ঘন জঙ্গলের বুক চিরে আলো আঁধারি রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম জোড় পোখরির দিকে। জোড় মানে দুটি আর পোখরি মানে হ্রদ। অর্থাৎ দুটি হ্রদের সমাহার। এখানে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা জনপ্রতি। পাহাড়ের উপর দুটি হ্রদ, তার স্বচ্ছ জল আর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এটিকে একটি দর্শনীয় স্থান করে গড়ে তুলেছে। হ্রদের মাঝখানে পাথরের পঞ্চনাগ বসানো আছে। প্রচুর হাঁস হ্রদের জলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুরো হ্রদ রেলিং দিয়ে ঘেরা। পাশে একটি পার্ক আছে— মহাদেব ধাম পার্ক। কিছু ফুলের গাছ আছে। গেটের সামনে বাঁদিকে একটি গেস্ট হাউস আছে। পর্যটকরা এখানে এসে থাকতেও পারেন। অনলাইনে বুক করা যায়।
জোড় পোখরির পর আমাদের গাড়ি এসে দাঁড়াল সীমানা ভিউ পয়েন্টে। এটি ভারত ও নেপালের বর্ডার। সে অর্থে এখানে কোন বর্ডার নেই। এদিকের পাহাড় ভারতে অবস্থিত আর ওদিকের পাহাড় নেপালে। এখানে প্রচুর দোকান-দানি আছে। অনেককে কেনাকাটা করতে দেখলাম। আমরাও কিছু গিফট আইটেম কিনে নিলাম। এখানে তেমন কিছু দেখার ছিল না। টিফিন করে গাড়িতে উঠে বসলাম। এরপর গেলাম পশুপতি মার্কেট। এটি নেপালে অবস্থিত। বর্ডারে আমাদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ি পার্কিং-এ চলে গেল।
ভারতের গাড়ি নেপালে ঢোকার অনুমতি নেই। বর্ডারে আঁধার কার্ড দেখিয়ে এন্ট্রি করিয়ে নেপালের গাড়িতে করে মার্কেটের ভিতরে গেলাম। ঢালু রাস্তা… নীচে নেমে গেছে। গাড়ির জন্য ১০০ টাকা জমা দিলাম। এখানে ভারতীয় টাকা চলে। গাড়ি আমাদের নামিয়ে দিয়ে সাম্নের দিকে চলে গেল। আমাদের হাতে একটি টোকেন দিয়ে বলল, “কেনাকাটা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন, ওখানে অনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। এই টোকেন দেখালে অন্য গাড়ি আপনাকে বর্ডারে পৌঁছে দিবে।” বিশাল এলাকা জুড়ে মার্কেট। কিছু শীতের পোশাক, টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনে অন্য গাড়ি ধরে বর্ডারে ফিরে এলাম। আমাদের পরের গন্তব্য গোপালধারা টি গার্ডেন।
এখানে বেশি ভিতরে ঢুকতে দেয় না। বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা আছে। চা বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু ছবি তুললাম। একটি দোকান থেকে বাড়ির জন্য এবং পরিচিতদের দেওয়ার জন্য চা কিনে নিলাম। এখানে বাঙালি হোটেল আছে। কিছু হোমস্টেও আছে। অনেকে এখানে রাত্রিবাস করেন।
এরপর আমরা চললাম আমাদের উত্তরবঙ্গ ভ্রমণের শেষ দর্শনীয় স্থান মিরিকের দিকে। দার্জিলিং জেলার পাহাড়ে অবস্থিত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪৯০৫ ফুট উচ্চতায় একটি অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য শোভিত স্থান। মিরিকের প্রধান আকর্ষণ হোল সুমেন্দু লেক। এটি প্রায় দেড় কি. মি. বিস্তৃত। এই লেকের একদিকে ফুলের বাগান আর অন্যদিক পাইনের জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। দুটি পাড়কে যুক্ত করেছে রামধেনু সেতু। একটি সাড়ে ৩ কি.মি. দীর্ঘ পথ লেকটিকে ঘিরে রেখেছে। এই লেকে বোটে করে জল-বিহার করা যায়। লেকের চারপাশে প্রচুর দোকান গড়ে উঠেছে। লোকজনের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নাই। আমরা এখানে একটি হোটেলে লাঞ্চ করে নিলাম। এখানে গাড়ির পার্কিং ফি ৫০ টাকা। মিরিক-কে বিদায় জানিয়ে আমরা চললাম এন. জে. পি. স্টেশনের দিকে।
সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। আমরা স্টেশনের ওভারব্রিজে অপেক্ষা করতে থাকলাম কোন প্লাটফর্মে ট্রেন আসবে জানা ছিল না। মাইকে ঘোষণা শুনে নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে চলে গেলাম। উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ধরে ফিরে এলাম কোলকাতায়। আমরা একটি ট্রাভেল সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। এন. জে. পি থেকে এন. জে. পি (৪ জনের জন্য)- ৪০,০০০ টাকা। এছাড়া ট্রেন টিকিট, টিফিন, বাড়ি থেকে শিয়ালদা যাতায়াত, পার্কিং ফি, এন্ট্রি ফি, শেষ দিনের লাঞ্চ বাবদ খরচ হয়েছিল প্রায় ১৩,০০০ টাকা। ৪ রাত্রি ৫ দিন চারজনের জন্য মোট খরচ ৫৩,০০০ টাকা।
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
Sanjib Kumar Pakira
3 মাস আগেতোমার লেখা পড়তে পড়তে আমি ও জায়গাগুলি ঘুরে নিলাম। অসাধারণ লেখনি।
স্বপন কুমার মালিক
3 মাস আগেপ্রথমেই বলি আপনার পুরো দার্জিলিং এর বর্ণনা মনে করে দিচ্ছে, দার্জিলিং যেতে হবে না, এতেই হয়ে যাবে।আমাদের এখনও পর্যন্ত দার্জিলিং যাওয়া হয় নি। কিন্তু আপনার বর্ণনা সব টা মনে পড়ছে না, তবে সিটং সুন্দরীর প্রাকৃতিক বর্ণনা মনের মধ্যে একটা সবুজের সশরীরে উপস্থিথি অনুভব করতে পারি। অহলধারা ভিউ পয়েন্টের প্রাকৃতিক দৃশ্যর সারি দেওয়া সজীব গাছগাছালি হৃদয়কে আকৃষ্ট করে। সিটং ও মঙ্গপুকে একটা সেতু দিয়ে জোড়া লাগনো হয়েছে, সেটা এক অপরূপ চিত্রের অবতারণা। পেশক আরও অনেক সার সার চা বাগানের আবির্ভাব মনকে ভরিয়ে দেয়। আপেল বাগানে ঘুরে বেড়ানো, আপেল ধরে ফটো তোলা এটা আমাদের মতো সমতলের মানুষদের কাছে একটা হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনা। আপনার এতো সুন্দর ও মনোরম শীতল শুভ্র কাঞ্চন ঝঙ্ঘার শৃঙ্গগের আকর্ষণীয় বর্ণনা মনকে আন্দোলিত করে। দেশবন্ধুর বাড়ি, যেখানে উনি মৃত্যু কোলে ঢোলে পড়েছেন, ঐ জায়গা তো দেখতেই হবে। কবি গুরুর গ্রীষ্মের অবকাশের জন্যে একটা ঐতিহ্যপূর্ণ বাসস্থান। এই সব কারণে আমাদের দার্জিলিং ট্যুর করতেই হবে। আপনার মতো সৃষ্টি শীল লেখা দার্জিলিং এ সকলকে বেড়াতে যাওয়ার আকর্ষণ তৈরী করবে।
স্বপন কুমার মালিক
3 মাস আগেপ্রথমেই বলি আপনার পুরো দার্জিলিং এর বর্ণনা মনে করে দিচ্ছে, দার্জিলিং যেতে হবে না, এতেই হয়ে যাবে।আমাদের এখনও পর্যন্ত দার্জিলিং যাওয়া হয় নি। কিন্তু আপনার বর্ণনা সব টা মনে পড়ছে না, তবে সিটং সুন্দরীর প্রাকৃতিক বর্ণনা মনের মধ্যে একটা সবুজের সশরীরে উপস্থিথি অনুভব করতে পারি। অহলধারা ভিউ পয়েন্টের প্রাকৃতিক দৃশ্যর সারি দেওয়া সজীব গাছগাছালি হৃদয়কে আকৃষ্ট করে। সিটং ও মঙ্গপুকে একটা সেতু দিয়ে জোড়া লাগনো হয়েছে, সেটা এক অপরূপ চিত্রের অবতারণা। পেশক আরও অনেক সার সার চা বাগানের আবির্ভাব মনকে ভরিয়ে দেয়। আপেল বাগানে ঘুরে বেড়ানো, আপেল ধরে ফটো তোলা এটা আমাদের মতো সমতলের মানুষদের কাছে একটা হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনা। আপনার এতো সুন্দর ও মনোরম শীতল শুভ্র কাঞ্চন ঝঙ্ঘার শৃঙ্গগের আকর্ষণীয় বর্ণনা মনকে আন্দোলিত করে। দেশবন্ধুর বাড়ি, যেখানে উনি মৃত্যু কোলে ঢোলে পড়েছেন, ঐ জায়গা তো দেখতেই হবে। কবি গুরুর গ্রীষ্মের অবকাশের জন্যে একটা ঐতিহ্যপূর্ণ বাসস্থান। এই সব কারণে আমাদের দার্জিলিং ট্যুর করতেই হবে। আপনার মতো সৃষ্টি শীল লেখা দার্জিলিং এ সকলকে বেড়াতে যাওয়ার আকর্ষণ তৈরী করবে।