preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
সকলের জন্য সংবিধান: পর্ব ১
ধারাবাহিক

সকলের জন্য সংবিধান: পর্ব ১

15 Aug, 2025.

সংবিধান নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা, সহজপাঠ্য একটা আলোচনা লেখার জন্য, স্বীকৃত তথা পরিচিত মানুষরাই প্রথম পছন্দ হওয়া উচিত। কিন্তু তেমন একটা কর্মকাণ্ডের মধ্যে জড়াতে স্বীকৃতরা যদি না-ই পেরে ওঠেন, তাহলে কি কাজটাই করা হবে না? এই দ্বিধায় জর্জরিত হয়ে কাজটা তুলেই রাখা হয়েছিল। বেশ কিছুকাল কেটে যাওয়ার পরে, কাজের পরিকল্পনাটা কুলুঙ্গি থেকে নামিয়ে আনার আমাদের যে সিদ্ধান্ত, তা হয়ত অতিস্পর্ধারই শামিল। আমরা এমন কোনো দাবি করছি না, যে আমাদের কাজ অভূতপূর্ব। আমাদের দাবি এইমাত্র, বাংলা ভাষায় সংবিধান চর্চা অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। চর্চার সেই সীমাবদ্ধতার অন্যতম কারণ, জটিলতা। আমরা জটিলকে পরিহার করতে পারব না, কিন্তু তাকে সহজিয়া পথে এনে ফেলার একটা প্রচেষ্টা করতে পারি৷ আমরা তো জানিই, সহজের পথ বড় সরল নয়৷ কিন্তু কেবল সে কারণে পথটাই পরিহার করে চলা, বেঠিক বলে মনে হচ্ছিল আমাদের।
সংবিধানের এক্তিয়ার এড়িয়ে কেউ বাঁচেন না, কেউই না। রাজা কিংবা দিগ্‌গজ, নিরীহ অথবা বুদ্ধিমান, কেউই না। যাকে এড়ানো যায় না, তাকে নিয়ে চর্চা জরুরিই তো! ফলত, আমাদের এই প্রচেষ্টা। আশা: এই চর্চা, অনেকান্ত হবে।

সংবিধান শব্দটা জানেন না, এমন লেখাপড়া করা মানুষের সংখ্যা বিরল। তার কারণ এই নয় যে সংবিধান সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার ব্যাপারে আমাদের বুনিয়াদি শিক্ষায় সক্রিয় কোনো ভূমিকা রাখা হয়। তা সত্ত্বেও, গণমাধ্যম, রাজনীতির আঙিনা, এসবের মধ্যে থেকে সংবিধান, সাংবিধানিক—এসব শব্দ সরগরম হয়ে ওঠে। এতে সংবিধান সম্পর্কে কোনো স্বচ্ছ ধারণা গড়ে ওঠে না বলে সংশয়ের কারণ রয়েছে। সংবিধান নিয়ে জানাবোঝায় কোনো সাধারণ নাগরিক যদি উদ্যোগী হন, তাহলে তিনি সামান্য শ্রমে বিষয়টা বুঝে উঠতে পারবেন, এমনটাও সচরাচর ঘটে না। তার অন্যতম কারণ, জটিলতা। সেই জটিলতার ফাঁস এড়িয়ে সংবিধান সম্পর্কে ন্যূনতম সম্যক ধারণা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ধৈর্য্য ধারণ অধিকাংশ লেখাপড়া জানা নাগরিকের পক্ষেও সম্ভব নয়। এদিকে সংবিধান, সাংবিধানিক-অসাংবিধানিক, সংবিধান সংশোধন, এমনকী সংবিধান পরিবর্তন করে দেওয়ার শঙ্কা এসব শব্দাবলি ক্রমাগত চলে আসছে সংবাদমাধ্যমে, রাজনীতির ভাষণে, দৈনন্দিন জীবনযাপনে—যেগুলি এড়িয়ে থাকাও সম্ভব হচ্ছে না। এই রকম সময়ে, আমরা চেষ্টা করছি, সকলের জন্য সংবিধান শীর্ষক একটা রচনার। এই শীর্ষনাম-এর দুটি দিক। প্রথমত, সকলের বোধগম্য করে তোলা, দ্বিতীয়ত, সংবিধান যে সকলের জন্যই সে কথা আরেকবার উচ্চারণ করা। এ উচ্চারণের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা প্রচারধর্মিতা নেই, এ কেবল সংবিধানের অন্যতম সুরটি আরেকবার গুনগুনিয়ে ওঠা।

এ কথাও বলে রাখা উচিত যে, আমরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বা পটু নই। আমরা সরল ভাষায় ভারতের সম্পূর্ণ সংবিধান লিখব, এরকমটাও নয়। আমরা চেষ্টা করব, মোটামুটি সহজ-সরলভাবে কিছু জরুরি প্রসঙ্গ উত্থাপন করে রাখা। তাতে হয়ত কিছু বাদ পড়ে যাবে, কিছু ভ্রান্তি থেকে যাওয়াও অসম্ভব নয়। বহুরকম সীমাবদ্ধতা ও ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ শুরু করা হচ্ছে। কাজটা চলবে ধারাবাহিকভাবে।

সংবিধান সংশোধন

ভারতের সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর নমনীয়তা। নমনীয়তা মানে, এক্ষেত্রে, কার্যত, সংশোধনের সুযোগ। সারা পৃথিবীর সব দেশেই সংবিধান রয়েছে। সেগুলির কোনোটিতে সংশোধনী আনা হয়নি এমন নয়। এক্ষেত্রে ভারতের সংবিধান অনন্য, কারণ দুনিয়ার আর কোনো দেশে এতবার সংশোধন হয়নি, যতবার ভারতের সংবিধানের ক্ষেত্রে হয়েছে। ভারতের সংবিধান কার্যকর হয়, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি। আজ পর্যন্ত, তা সংশোধিত হয়েছে ১০৬ বার। প্রথমবার সংবিধান সংশোধিত হয়, সংবিধান কার্যকর হওয়ার ঠিক পরের বছর, ১৯৫১ সালে। শেষবারের, অর্থাৎ ১০৬ তম বারের সংশোধন ঘটে ২০২৩ সালে। মনে রাখতে হবে, এই সংশোধনীগুলি বহুক্ষেত্রেই সাময়িক, অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্যই কার্যকর। ১০৬ তম সংশোধনীর কথাই যদি ধরা হয়, তাতে বলা হয়েছে, মহিলাদের জন্য লোকসভা ও রাজ্যের বিধানসভাগুলিতে ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত হবে। এই বিলটি, সংসদে গৃহীত হবার পর, প্রথামাফিক রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় এবং ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩-এ তা অনুমোদিত হয়। এই সংরক্ষণ কিন্তু চিরকালীন নয়। এর মেয়াদ ১৫ বছর। অর্থাৎ, এই সংশোধনীটি ২০৩৮ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এর পরেও যদি এই সংরক্ষণ কার্যকর রাখতে হয়, তাহলে নতুন করে কার্যক্রম জারি রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।

সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এরকম নজির আগেও রয়েছে। তফশিলি জাতি ও জনজাতিদের (শিডিউল্ড কাস্ট ও শিডিউল্ড ট্রাইব) জন্য সংরক্ষণের মেয়াদ বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। আবার একইভাবে, সংসদে ইঙ্গ-ভারতীয় (অ্যাংলো ইন্ডিয়ান) দের জন্য দুটি আসন সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা ছিল সংবিধান কার্যকর হওয়ার সময় থেকে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সেই ব্যবস্থার অবলুপ্তি ঘটানো হয়। তার কারণও ছিল। ২০১১ সালে যে জনগণনা কার্যক্রম হয়েছিল, দেখা গিয়েছিল, তাতে অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের জনসংখ্যা ছিল নগণ্য। ফলে, লোকসভায় তাঁদের প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নটি অবান্তর হয়ে পড়ে। এই প্রসঙ্গেই প্রাথমিকভাবে উল্লেখ করে রাখা উচিত যে, তফশিলি জাতি ও জনজাতিদের জন্য যে সংরক্ষণ, সেই সংরক্ষণও আপাতত ২০৩০ সাল পর্যন্ত কার্যকর।

আমরা শেষ থেকে শুরু করে ফেলেছি, কথায় কথায়। এই ধারালেখটি এরকমভাবেই সাজানো যাক তাহলে। শুরুতে সংবিধানের প্রস্তাবনা, তার পর, পরপর গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ (আর্টিকেল) আলোচনা, এরকম প্রথামাফিক না করে, প্রয়োজনমত, গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনাটা এগোতে থাকুক।

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

সংবিধানের ভাষা

এখানে একটা জরুরি প্রসঙ্গের কথা থাকা প্রয়োজন। সংবিধান, ভারতের সংবিধান লেখা হয়েছিল ইংরেজি ভাষায়। পরবর্তীকালে তা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে, সরকারি উদ্যোগেই। কারো কারো এমন ধারণা থাকতে পারে, সংবিধান হিন্দি ভাষায় লেখা হয়েছিল, কিন্তু তা ঠিক নয়। ভারতে তখন বা এখন কোনো একটি রাষ্ট্রভাষা ছিল না বা নেই। সংবিধান প্রণেতারা সকলেই ইংরেজি ভাষাতেই উচ্চশিক্ষা লাভ করেছিলেন, ভারতে চলমান ইংরেজ রাজত্বের সুবাদে। ভারতের সংবিধানের বাংলা অনুবাদও এ পর্যন্ত তিন বার করা হয়েছে, সরকারি উদ্যোগে। আমাদের এই উদ্যোগ, আবারও বলার, বাংলা ভাষায় সংবিধানের অনুবাদ নয়। আমরা চেষ্টা করছি সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলিকে আমাদের সাধ্য অনুসারে সকলের বোঝার উপযোগী করে লিখে রাখার।

আগের অনুচ্ছেদের অনুবাদ প্রসঙ্গ উল্লেখের একটা প্রয়োজন রয়েছে। যেহেতু ইংরেজি ভাষায় সংবিধান লেখা হয়েছে, তার অনুবাদ করতে গেলে কিছুটা অর্থ বদলে যেতে পারে। যেমন অনুচ্ছেদ। সংবিধানে ইংরেজিতে আর্টিকেল শব্দটা লেখা রয়েছে। বাংলায় তা অনুচ্ছেদ হিসেবে স্বীকৃত। আমরা সাধারণভাবে, এরকম স্বীকৃত শব্দই ব্যবহার করব। তবে সর্বদা তেমনটা করলে হয়ত বোঝার ক্ষেত্রে অসুবিধাও থেকে যাবে। যেমন, সংবিধানের সরকারি বাংলা অনুবাদে, সেভিং অফ সার্টেন লজ-এর অনুবাদ করা হয়েছে, কোন কোন বিধির ব্যাবৃত্তি। এরকম বঙ্গানুবাদের নিশ্চিত কারণ রয়েছে। তবে তা বোঝার ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধার সৃষ্টি করবে। যাই হোক, অনুচ্ছেদ বা আর্টিকেল বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা এখানে লিখে রাখা যাক।

সংবিধানের প্রতিটি অনুচ্ছেদ কোনো না কোনো ভাগ (পার্ট)-এর অন্তর্গত। ভাগগুলি সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত। প্রতিটি ভাগের অন্তর্গত অনুচ্ছেদগুলি এক একটি সংখ্যা দিয়ে ধার্য করা হয়েছে। এক একটি ভাগ একএকটি বিষয়ের। এক একটি অনুচ্ছেদ আবার সেই বিষয়ের মধ্যেকার এক একটি প্রসঙ্গের। এই সংখ্যাগত অনুচ্ছেদগুলির মধ্যে আবার বিভিন্ন উপবিভাগ রয়েছে। একটু উদাহরণ দিলে বিষয়টি হয়ত স্পষ্ট বেশি হবে।

মৌলিক অধিকার

সংবিধানের তৃতীয় ভাগে রয়েছে মৌলিক অধিকার প্রসঙ্গ। ১২ থেকে ৩৫ নং অনুচ্ছেদ এই ভাগের অন্তর্ভুক্ত। এই অনুচ্ছেদগুলিতে মৌলিক অধিকার-এর বিভিন্ন প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো অনুচ্ছেদ বিভিন্ন সময়ে অপসারিত (অমিটেড)ও হয়েছে। যেমন, ৩১ নং অনুচ্ছেদ, যাতে ছিল বাধ্যতামূলকভাবে সম্পত্তি অর্জন (কম্পালসরি অ্যাকুইজিশন অফ প্রপার্টি), তা বাদ গিয়েছে ১৯৭৮ সালের ৪৪ তম সংবিধান সংশোধনীতে। বাদ গিয়েছে ৩১ ঘ অনুচ্ছেদও। ওই অনুচ্ছেদে ছিল, দেশের সার্বভৌমত্ব ও সংহতি বিরোধী কাজে যুক্ত থাকার কারণে যদি কোনো আইন বলবৎ হয়, তবে তা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। এই অনুচ্ছেদটি, ১৯৭৭ সালে, সংবিধানের ৪৩ তম সংশোধনীতে বাতিল করা হয়। এরকম উদাহরণ গোটা সংবিধান জুড়েই রয়েছে।

সংবিধান নিয়ে আলোচনা ও বোঝাপড়ার জন্য এ ধরনের কিছু জটিলতার মুখে আমাদের পড়তেই হবে। আমরা তবুও জটিলতা পরিহার করার চেষ্টা করব।

এই প্রসঙ্গগুলি হয়ত আরো একবার আমাদের আলোচনায় উঠে আসবে। ধারাবাহিক আলোচনার শুরুর ধারায়, আমরা কথাগুলি বলে রাখছি কিছুটা কথার পিঠে কথার মত করে, যাতে কথা বলা শুরু করা যায়। এটা কোনো কাঠামোর বিন্যাস নয়, আমরা খুব কড়া কোনো কাঠামো তৈরিও করতে চাইছি না। একটু আলগা ভাবেই সংবিধান নিয়ে কথা শুরু হোক।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

মন্তব্য করুন

লেখক

আলোচক একজন অনধ্যাপক। নাতিশিক্ষিত, ভূয়োদর্শী। বয়সকালে বিভিন্নরকম সংঘে জড়িত ছিলেন। সেইসব সংঘযাপনের বর্ণময় তথা বর্ণহীন স্মৃতি ও অভিজ্ঞতাই আলোচককে এ ধরনের দুঃসাহসিক প্রকল্পপথে যেতে ইন্ধন জোগায় এবং উজ্জীবিত করে।

অন্যান্য লেখা