জীবনানন্দ দাশ
“তোমার কবিত্বশক্তি আছে তাতে সন্দেহমাত্র নেই—কিন্তু ভাষা প্রভৃতি নিয়ে এত জবরদস্তি কর কেন বুঝিতে পারিনে। কাব্যের মুদ্রাদোষটা ওস্তাদিকে পরিহাসিত করে। বড় জাতের রচনার মধ্যে একটা শান্তি আছে, যেখানে তার ব্যাঘাত দেখি সেখানে তার স্থায়িত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ জন্মায়। জোর দেখানো যে জোরের প্রমাণ তা নয় বরঞ্চ উল্টো।”
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ কাব্যগ্রন্থের পাঠপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এ চিঠি তাঁকে পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কালের হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, জীবনানন্দের স্থায়িত্ব সম্পর্কে কবিগুরুর সন্দেহ ছিল অমূলক। ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ (১৯৩৬), ‘বনলতা সেন’ (১৯৪২), ‘মহাপৃথিবী’ (১৯৪৪), ‘সাতটি তারার তিমির’ (১৯৪৮), ‘রূপসী বাংলা’ (রচনাকাল ১৯৩৪, প্রকাশকাল ১৯৫৭), ‘বেলা অবেলা কালবেলা’ (১৯৬১), এসব কাব্যগ্রন্থ কবিতা পাঠকের কাছে অমলিন সংগ্রহ। আবহমান বাংলার চিত্ররূপ ও অনুপুঙ্ক্ষ সৌন্দর্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ হিসেবে প্রতিভাত হয়েছেন। জীবনানন্দের শিল্পজগতে বিপন্ন মানবতার ছবি এবং আধুনিকতার অবক্ষয়, সংশয়বোধ বারবার জায়গা করে নিয়েছে। তাঁর ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়। এ ছাড়া জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটিও ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৪) লাভ করে। ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে যে জীবনের সূচনা হয়েছিল, কলকাতা নগরীর রাস্তায় ট্রামের ধাক্কাজনিত দুর্ঘটনায় সে মহাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর। মধ্যবর্তী জীবন জুড়ে রয়ে গিয়েছে অসংখ্য রচনা, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, যা যে-কোনো মননশীল পাঠকের কাছে দুর্মূল্য সম্পদবিশেষ।