শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বর্তমানকালের বাঙালি মননশীল তথা ঋদ্ধ পাঠককুলের অনেকের কাছেই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬-১৯৩৮)-এর সাহিত্যকর্ম খুব উচ্চাসনে অবস্থিত নয়। কিন্তু অনস্বীকার্য, বাঙালির অন্দরমহলে বাংলা বইকে প্রবিষ্ট করার অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। দু দশক আগেও, সদর-মফসসলে তাঁর বই পাওয়া যেত মনিহারি দোকানেও। পান-সিগারেট-জর্দার সঙ্গে। ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় তাঁর লেখার অনুবাদ, তাঁর জনপ্রিয়তার প্রমাণ, আর সে সব অনুবাদ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগারে লব্ধ হওয়া, জনপ্রিয়তার প্রাতিষ্ঠনিকতার স্বীকৃতি। ফলে, আঙ্কিক হিসেবেই, শরৎচন্দ্র একজন সফল লেখক। ভাগলপুরে ছেলেবেলায় পাঠশালায় শিক্ষালাভ, অর্থাভাবে পরীক্ষায় না-বসতে পারা, পরে বার্মা পাড়ি, সেখান থেকে ফিরে হাওড়ায় অধিষ্ঠিত হওয়া, সব মিলিয়ে শরৎচন্দ্রের জীবনই তো উপন্যাসোপম। তাঁর রচিত মহেশ বা অভাগীর স্বর্গের মত ছোট গল্প, দারিদ্রের সঙ্গে তাঁর সংঘাতের দলিল যদি হয়, তবে পল্লীসমাজের রমা বা শেষ প্রশ্নের কমল সে সময়ে দাঁড়িয়ে নারীর যে সাধারণীকৃত চরিত্র—তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শামিল। শরৎচন্দ্র তাই বাংলা ভাষার পাঠকের কাছে, গুরুত্বপূর্ণই হয়ে থেকেছে ও থাকবে।